স্ট্রোক কী
হার্ট অনবরত শরীরের সমস্ত কোষে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত সরবরাহ করে আমাদের বেঁচে থাকতে সাহায্য করে। এই রক্ত পৌঁছনোর কাজ করে বিভিন্ন ধমনী। কারও যদি মাত্রাতিরিক্ত কোলেস্টেরল থাকে তাহলে তা ধমনীর ভেতর জমে গিয়ে রক্ত চলাচলের পথ সরু বা একেবারে বন্ধ করে দিতে পারে। আর অক্সিজেন ঠিকমতো পৌঁছতে না পারলে মস্তিষ্কের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত বা অকেজো হয়ে গিয়ে রোগী সাময়িকভাবে অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। এই শারীরিক সমস্যাকেই স্ট্রোক বলা হয়।
মস্তিষ্কের ধমনীতে যদি কোনো ব্লাড ক্লট বা রক্তের ডেলা আটকে যায় এবং স্ট্রোকের লক্ষণ দেখা দেয় তাহলে এই অবস্থাকে বলা হয় ইস্কেমিক স্ট্রোক। রক্তের ডেলা মস্তিষ্কের সূক্ষ্ম আর্টারিতে আটকে গেলে তাকে বলা হয় এম্বোলিক স্ট্রোক বা এম্বোলাস। আর দুর্বল ধমনী যদি রক্তচাপ সামলাতে না পারে বা রক্তের ডেলা আটকে ধমনী ফেটে গিয়ে যদি রক্তপাত শুরু হয় তাকে হেমারেজিক স্ট্রোক নামে চিহ্নিত করা হয়। কারো আবার সাময়িকভাবে রক্ত চলাচলে বিঘ্ন ঘটতে পারে। একে বলে ট্রানসিয়েন্ট ইস্কেমিক অ্যাটাক।
Table of Contents
ওজন বেশি থাকলে, বয়স পঞ্চান্ন’র ওপরে হলে, পরিবারে স্ট্রোকের কোনো ইতিহাস থাকলে, কোনোরকম শরীরচর্চা না করলে, ধূমপান, মদের নেশা কিংবা অহেতুক ওষুধ খাওয়ার অভ্যাস থাকলে তাদের স্ট্রোকের আশঙ্কা অনেক বেশি থাকে।
স্ট্রোক কতরকম হয়
স্ট্রোক মূলত দু’রকম— ইস্কেমিক এবং হেমারেজিক। ৮৫% স্ট্রোক হল ইস্কেমিক। এই স্ট্রোক হয় যখন মস্তিষ্কের ধমনী সরু হয়ে যায় বা একেবারে বন্ধ হয়ে গিয়ে রক্তচলাচলে বাধার সৃষ্টি করে তখন। আর যদি ধমনী ফেটে গিয়ে রক্তপাত শুরু হয় তাহলে তাকে বলে হেমারেজিক স্ট্রোক। এই ধরনের স্ট্রোকের জন্য দায়ী হাই ব্লাডপ্রেসার, অ্যানিউরিজম ইত্যাদি।
ব্রেন স্ট্রোকের লক্ষণ কী
কোনোরকম উপসর্গ ছাড়াই স্ট্রোক হতে পারে। তবে সাধারণত যে লক্ষণগুলো স্ট্রোকে দেখা যায় তা হল-
- কথা জড়িয়ে যাওয়া, ঠিকমতো কিছু বুঝতে না পারা।
- শরীরের যেকোনো একদিকের মুখ, জিভের অংশ, হাত, পা প্যারালিসিস বা অবশ হয়ে যাওয়া।
- হঠাৎ করে একটা চোখে কম দেখা বা একটা জিনিসকে দুটো দেখা।
- প্রচন্ড মাথার যন্ত্রণা, বমি বা বমিভাব হওয়া।
- রক্তচাপ বৃদ্ধিও স্ট্রোকের জন্য দায়ী হতে পারে।
হেমারেজিক স্ট্রোকে ধমনী ফেটে গিয়ে রক্তপাত হয় বলে অসহ্য মাথা যন্ত্রণা হয়, বমি হয়, রোগী অজ্ঞান হয়ে যায়। কাজেই এই ধরনের লক্ষণ দেখলে যত তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যায় ততই ভালো। এতে রোগী সুস্থ হয়ে উঠতে পারে দ্রুত।
স্ট্রোকের চিকিৎসা এবং রিহ্যাবিলিটেশন কীভাবে করা হয়
ইস্কেমিক স্ট্রোকের ক্ষেত্রে ধমনীগুলো সরু হয়ে যায় বলে মস্তিষ্কে রক্ত ঠিকমতো পৌঁছয় না। আগে তেমন কোনো চিকিৎসা ছিল না। ব্রেনে রক্ত চলাচলের ব্যবস্থা করা হত যাতে ভবিষ্যতে আবার স্ট্রোক না হয়। তবে এখন এর ভালো চিকিৎসার সুযোগ আছে। একটা ইঞ্জেকশনের মাধ্যমেই জমে যাওয়া রক্ত গলানো যায়। রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে পারে উপযুক্ত চিকিৎসায়। তবে এই ইঞ্জেকশন দিতে হবে স্ট্রোক হওয়ার তিন থেকে সাড়ে চার ঘণ্টার মধ্যে। এছাড়াও এখন এক বিশেষ ধরনের তারের সাহায্যে জমাট বাঁধা রক্ত বাইরে বের করে আনা যায়। আর এ ধরনের সমস্যা যাতে না হয় সেইজন্য কিছু ওষুধ দীর্ঘদিন খেতে হয়। যেমন রক্ত তরল রাখার জন্য অ্যাসপিরিন জাতীয় ট্যাবলেট ও আরো কিছু ওষুধ আছে যেগুলো খেলে উপকার পাওয়া যায়। আর সুস্থ থাকতে কিছু ভালো কাজের সঙ্গে নিজেকে `যুক্ত রাখা দরকার ।
ব্রেন স্ট্রোক প্রতিরোধের উপায় কী
ব্রেন স্ট্রোকের রিস্ক ফ্যাক্টরগুলো হল ডায়াবেটিস, হাই ব্লাডপ্রেসার, কোলেস্টেরল, ধূমপান, বসে বসে কাজ করার অভ্যাস, শরীরচর্চা না করা এরকম নানা বিষয়। কাজেই এসব থেকে দূরে থাকা দরকার। আর তা থাকতে হলে একটা স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে অভ্যস্ত হতে হবে। ফাস্টফুড এড়িয়ে খেতে হবে সুষম খাবার। বেশি করে ফল, সবুজ সবজি। এছাড়া এক্সারসাইজ করতে হবে, হাঁটতে হবে। এসব করলে হার্ট সুস্থ রাখা যায়। এড়ানো যায় স্ট্রোকও।