Tuesday, September 17, 2024
Homeমহিলাদের স্বাস্থ্যগর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস : লক্ষণ, কারণ, শিশুর ঝুঁকি ও চিকিৎসা

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস : লক্ষণ, কারণ, শিশুর ঝুঁকি ও চিকিৎসা

ক্রমে একটা ধারণা হয়েছে বিশ্বাসে ধারণাটা কি? না, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মহিলারা মা হতে পারবেন না। কিংবা মা হলেও সুস্থ সবল শিশুর জন্ম দিতে পারবেন না, এমন ধারণা, অনেক মহিলাকেই এগিয়ে দিয়েছে গভীরতর মানসিক অস্থিরতার পথে। জেনে খুশি হবেন যদি বলি ধারণাটা নিতান্তই ভুল। জেনে রাখুন, যেসব মহিলা ডায়াবেটিসে ভুগছেন তাদের সুবিধা বা অসুবিধা সবার ক্ষেত্রে সমান নয়। কারণ ডায়াবেটিস মূলত তিন ধরণের হয়ে থাকে। শৈশব থেকেই হতে পারে ইনসুলিন নির্ভর ডায়াবেটিস। কিন্তু ইনসুলিন নির্ভর নয় এমন ভাবেটিস দেখা দেয় সাধারণভাবে পঁচিশের পরে। আর জেস্টশনাল ডায়াবেটিস দেখা যায় কেবল মাত্র সন্তান সম্ভবা মহিলাদের ক্ষেত্রেই। ফলে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মহিলারা ‘মা’ হতে চাইলে কটি জরুরী বিষয় জেনে নিতে হবে। ডায়াবেটিস এখন এতই চেনা জানা যে প্রায়

সবাই জানেন এই রোগে আক্রান্ত হলে মানবদেহের কোষসমূহ উৎপন্ন কোষ থেকে শক্তি নির্গমনের ক্ষমতা হারায়। স্বাভাবিকভাবেই যে পরিমাণ গ্লুকোজ আমাদের দেহে আসে তার বেশির ভাগটাই এই অক্ষমতার ফলে রক্তেই থেকে যায়। অগ্নাশয়ের আইলেটস অব ল্যাঙ্গারহ্যান্স থেকে নিঃসৃত উৎসেচক ইনসুলিন এই গ্লুকোজ ভেঙে শক্তির মুক্তিই ঘটায় না, প্রয়োজন হয় ফ্যাট ও প্রোটিনের বিপাকেও। ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রেই উৎসচকটি খুবই কম পরিমাণ নিঃসৃত হয় অথবা একেবারেই হয় না। কিন্তু সন্তান ধারণের পর একজন মহিলার দরকার হয় প্রচুর পরিমাণ ক্যালরির। এই ক্যালরি তো আসে গ্লুকোজ ভেঙেই। গ্লুকোজ ভাঙতে চাই ইনসুলিন। ফলে এটা তো স্বাভাবিকই যে অধিক পরিমাণে ইনসুলিনের ক্ষরণ না ঘটলে প্রয়োজনীয় শক্তির অভাব ঘটবে। আর তাতেই বৃদ্ধি ব্যাহত হবে ভ্রুণের। 

ডায়াবেটিসের দুটি অবস্থার কথা ভাবা যাক। প্রথম ক্ষেত্রেই ইনসুলিনের নিঃসরণ একেবারেই হয় না। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে নিঃসরণ হয় খুবই কম পরিমাণে। প্রথম ক্ষেত্রে আক্রান্তকে নিয়মিত ইনসুলিন নিতে হয় রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে। সন্তান ধারণের পরে এই ইনসুলিন গ্রহণের পরিমাণ বাড়িয়ে নিতে হয়। কিন্তু সন্তান জন্মানোর পরে এই পরিমাণ। আবার পূর্বের মতো করে নিতে হয়। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে ওষুধের মাধ্যমে গ্লুকোজের মাত্রা ঠিক রাখা হয়। এদের ক্ষেত্রে সন্তান ধারণের আগে। থেকেই ইনসুলিনের অতিরিক্ত ডোজ ইনজেকশনের মাধ্যমে দেওয়া হয়। ইনজেকশন শুরু হলে ওরাল ডোজ বন্ধ করে দিতে হয়। কারণ ওষুধ ইনসুলিন তৈরী করেনা,অগ্নাশয়ে উৎপন্ন ইসনুলিনকে নির্গমনে সাহায্য করে। ফলে অতিরিক্ত ইনসুলিনের চাহিদা ইনজেকশনের মাধ্যমেই পূরণ করতে হয়। 

অতিরিক্ত ইনসুলিন ছাড়া যেমন মা সুস্থ্য থাকতে পারনে না, তেমনই বৃদ্ধি ব্যাহত হয় ভ্রূণেরও। শুধু এই কারণেই গর্ভপাত থেকে মৃত্যু পর্যন্ত অত্যন্ত স্বাভাবিক ঘটনা। ফলে দুটি ক্ষেত্রেই অতিরিক্ত ইনসুলিন গ্রহণের মাত্রাও সময় পূর্বনির্ধারিত হওয়া আবশ্যিক। ভ্রূণের বৃদ্ধির সাথে সাথে এই মাত্রা বাড়বে। তবে সেই পরিমাণ ঠিক করবেন চিকিৎসক। এখানে অনুমান বা নিজের বুদ্ধির প্রয়োগ কখনই গ্রহণযোগ্য নয়। 

জেন্টশনাল ডায়াবেটিস দেখা যায় কেবল সন্তান সম্ভবা মায়েদের ক্ষেত্রেই। সন্তান ধারণের পূর্বে মায়েদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিক থাকলেও সন্তান ধারণের পর রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেশি হয়ে যায়। এ সব ক্ষেত্রে ডায়াবেটিসের সাধারণ লক্ষণ যেমন পরিভিপসিয়া ধরা পড়ে না। কিন্তু প্রয়োজন হয় অতিরিক্ত ইনসুলিনের। চিকিৎসকেরা সাধারণত এই ধরণের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মহিলাদের কোনো ওষুধ বা ইনসুলিন ইনজেকশনের সুপারিশ করেন না। সুষম খাদ্য, নিয়মিত যোগাভ্যাস এবং সময়মতো নিরীক্ষণই এক্ষেত্রে যথেষ্ট। পরিমিত সুষম খাদ্য একজন সন্তান সম্ভবা মহিলার ক্ষেত্রে অত্যন্ত জরুরি। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মহিলাদের ক্ষেত্রে এটি আরও বেশী জরুরী। 

সাধারণ মহিলার দৈনিক চাহিদা তার শারীরিক ওজনের ৩০ গুণ ক্যালরি। অর্থাৎ একজন মহিলার ওজন যদি ৬০ কিলোগ্রাম হয় তাহলে তার দৈনিক শক্তির প্রয়োজন হবে ৬০ X ৩০ – ১৮০০ ক্যালরি। কিন্তু সন্তান সম্ভবা মহিলাদের এর থেকে অনেক বেশি ক্যালরি শক্তির প্রয়োজন হয়। মা হতে চলেছেন এমন মহিলাদের জন্য একটি আদর্শ খাদ্য তালিকায় থাকা প্রয়োজন অধিক পরিমাণে দানাশস্য, ডাল এবং প্রচুর পরিমানে সবুজ শাকসবজি। সঙ্গে থাকতে হবে স্যালাড ও শুকনো ফল। ডায়াবেটিসে আক্রান্তরা রুটির সাথে শাক, ভাতও খেতে পারেন। ভাতের সাথে শাক থাকলে আমাদের পাকস্থলিতে ভাতের পচন হয় ধীরে ধীরে। এতে সুবিধে এই রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ দ্রুত বাড়তে পারেনা। যারা আমিষ খেতে অভ্যস্ত তারা চিকেন কিংবা মাছ খাবেন। তবে সময়ের পার্থক্য রেখে। খাসির মাংস এই সময় না খাওয়াই ভাল। ডায়াবেটিক মহিলারা এরসাথে আম, কলা, আঙুর বাদ দিয়ে অন্য ফলও খাবেন। ফলে থাকে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট, ফ্রুকটোজ, প্রচুর ভিটামিন এবং জলে দ্রবীভূত হয় এমন ফাইবার। এই সময় স্নেহজাতীয় খাদ্য শরীরে অতিরিক্ত সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা ফ্রায়েডরাইস, পুরী, পরোটা, সিঙ্গারা, পকোড়া এবং নারকেল ও বাদামকে খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিয়েছেন। পুরো খাদ্যকে যদি ছোট ছোট ভাবে ভেঙে ফেলা যায় তাহলে গ্লুকোজের বৃদ্ধি হয় না। মনে রাখতে হবে ভ্রূনের বৃদ্ধির সাথে সাথে খাদ্যের পরিমাণ বাড়িয়ে যেতে হবে। প্রথম তিন মাসে মহিলাদের ওজন ২-৩ কেজি বৃদ্ধি পায়। যদি দ্বিতীয় পর্যায়ে ওজন ৫-৬ কেজি বৃদ্ধি পায় তাহলে বুঝতে হবে ভ্রূণ স্বাভাবিক নিয়মে বৃদ্ধি পাচ্ছে। শেষের তিন মাসে এই বৃদ্ধি হবে আরও ৩-৪ কেজি অর্থাৎ নয় মাসের শেষে মায়ের ওজন ১০-১২ কেজি পর্যন্ত বৃদ্ধি হয়। এই বৃদ্ধিরজন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য অনুযায়ী ইনসুলিন গ্রহণের মাত্রাও বাড়িয়ে যেতে হবে যাতে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ স্বাভাবিক থাকে। 
চিকিৎসকের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা এসব ক্ষেত্রে খুবই জরুরী। চিকিৎসকই পরামর্শ দেবেন ঠিক কখন ইউরিন সুগারের মাত্রা পরীক্ষা করা প্রয়োজন। কখন দেখে নিতে হবে অ্যালবুমিনের উপস্থিতি। মনে রাখতে হবে ইউরিনারি ট্র্যাকে কোনো ইনফেকশন থাকলে বা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন এমন মহিলাদের ক্ষেত্রে ইউরিন অ্যালবুমিন পাওয়া যেতে পারে। যদি সত্যিই অ্যালবুমিন পাওয়া যায় তাহলে চিকিৎসকের দীর্ঘ তত্ত্বাবধান  জরুরী হয়ে পড়ে। ডায়াবেটিক মাতৃত্বে একটি বড় সমস্যা আসতে পারে এক্লাম্পসিয়া থেকে। এর প্রভাব মারাত্মক। এক্লাম্পসিয়া এমন কয়েকটি ক্ষতিকর এবং বিষাক্ত পদার্থের জন্ম দেয় যাদের প্রভাব রেচন তন্ত্রের ক্ষতি হয়, যার পরিণতিতে মা এবং ভ্রূণ উভয়েরই মৃত্যু হতে পারে। ইউরিনে অ্যালবুমিন কিন্তু এক্লাম্পসিয়া কে চিহ্নিত করে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular