সন্তান সম্ভবার শেষ মাসিক শুরু হওয়ার দিন থেকে নিয়ে চল্লিশ সপ্তাহ পর প্রসব হলে সেটি হচ্ছে স্বাভাবিক প্রসব। কিন্তু উনত্রিশ থেকে সাইত্রিশ সপ্তাহের মধ্যে শিশুর জন্ম হলে তাকে অকাল প্রসব বলা হয়। নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে যে প্রসব হয়, তাকে প্রি-ম্যাচিওর বোধি বলা হয়। পরিপূর্ণ সময়ের আগে প্রসব ঠিক কেন হয় তার সঠিক কারণ এখনও জানা যায়নি। তবু কিছু ঝুঁকি থাকার জন্য এই ধরণের প্রসব হতে পারে।
অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তান সম্ভবার এই প্রি-ম্যাচিওর প্রসব হতে পারে। বেশি টেনশন থাকলেও এই ধরণের প্রসব হতে পারে। তাছাড়া ওজন কম থাকলে, যমজ বা একাধিক বাচ্চা গর্ভে থাকলেও হতে পারে অকালে প্রসব।
অতিরিক্ত ঝুঁকিপূর্ণ, কারণগুলির মধ্যে ভ্যাজাইনায় ইনফেকশন, কোনো রকমের জটিল রোগ অর্থাৎ হাইপারটেনশন, কিডনির সমস্যা বা হার্টের কোনো অসুখ থাকলে, অ্যানিমিয়া ইত্যাদি থাকলে অকালে প্রসব হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অ্যামনিয়োটিক ফ্লুইড অর্থাৎ জল যদি বেশি থাকে জরায়ুর মধ্যে বা জল আগে- থেকে যদি ভাঙতে শুরু করে তাহলেও এরকম প্রসব হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
জরায়ুর কোনো বিকৃতির কারণেও প্রি-ম্যাচিওর প্রসব হতে পারে। জরায়ুর সার্ভিস ঠিকমতো প্রসারিত না হলেও, অর্থাৎ, সারভাইকাল ইনকম্পিটেন্সির জন্যও প্রি-ম্যাচিওর প্রসব হতে পারে।
Table of Contents
মা বা শিশুর প্রাণ সংশয়ের আশঙ্কা
প্রি-ম্যাচিওর প্রসবে প্রাণ সংশয়ের আশঙ্কা বেশি থাকে শিশুর। মায়ের ততটা নয়। প্রি-ম্যাচিওর শিশুরা সাধারণত স্বাভাবিক শ্বাস প্রশ্বাস নিতে পারে না। ডাক্তারি ভাষায় যাকে বলা যায় রেসপিরেটরি ডিসট্রেস সিনড্রম। তারপর হাইপার থারসিয়া অর্থাৎ নব জাতকের শরীরের তাপমাত্রা খুব বেড়ে যায়৷ হাইপোগ্লাইসেমিয়া অর্থাৎ রক্তে সুগারের পরিমাণ কমে যায়, জন্ডিস, ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। রেটিনোপ্যাথি অর্থাৎ রেটিনা ড্যামেজ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই রকম শিশু খুব কমই বাঁচে।
বারংবার প্রি-ম্যাচিওর প্রসবের সম্ভাবনা
হ্যাঁ একই মহিলার ক্ষেত্রে বারংবার প্রি-ম্যাচিওর প্রসবের সম্ভাবনাটা বেশি থাকে।
প্রতিরোধের উপায়
প্রি-ম্যাচিওর প্রসবের নির্দিষ্ট কারণ যেহেতু কিছু জানা যাইনি, তাই প্রতিরোধ সম্বন্ধেও বিশেষ কিছু বলা যাবে না। তবে সাধারণত কিছু সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকাটা খুবই জরুরি, যাতে ভ্যাজাইনাল ইনফেকশন হতে না পারে। অন্তত দিনে দু-ঘণ্টা বিশ্রাম নেওয়া প্রয়োজন যদিও সংসারের ঝক্কি ঝামেলা সামলাতে হয় বেশি মেয়েদেরই তবুও নিয়ম করে অন্তত দু-ঘন্টা বিশ্রাম নিতেই হবে। আর রাতে আট ঘণ্টা ঘুম। এই সময় পুষ্টিতে ভরপুর খাদ্য খাওয়া জরুরি। প্রচুর পরিমাণে। শাকসবজি, দুধ, ফলমূল খেতে হবে। আর প্রয়োজন নিয়মিত চেক আপ। সন্তান সম্ভবা হওয়ার প্রথম থেকেই চিকিৎসককে দেখিয়ে তার পরামর্শ মতো চলা দরকার।
চিকিৎসা
চিকিৎসক আলট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে বুঝতে পারলে সন্তান সম্ভবাকে হাসপাতাল বা নার্সিংহোমে ভর্তি করে নেন। চেষ্টা করেন কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা যাতে না হয়। জরায়ুর সংকোচনটা কমানোর চেষ্টা করা হয়। তবে অনেক চিকিৎসকই জরায়ুকে প্রসারিত করার জন্য ওষুধ ব্যবহার করেন তবে ওষুধ জরায়ুর প্রসারন ঘটাতে কতটা সক্ষম তা নিয়ে সন্দেহ আছে। অনেক সময় আসন্ন প্রসবার মানসিক উৎকন্ঠা কাটানোর জন্য ওষুধ প্রয়োগ করা হয়।
পরামর্শ
প্রি-ম্যাচিওর প্রসবের কারণ অজানা হলেও মা-বাবা দুজনকেই সচেতন হতে হবে। যাতে ভাবী সন্তানটি সুষ্ঠুভাবে পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হতে পারে। আর তার জন্য প্রয়োজন নিয়মিত চেক আপ, চিকিৎসকের পরামর্শ মতো চলা, খুব ভারী কাজ না করা, পুষ্টিকর খাদ্য খাওয়া এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম। আর যেটি প্রয়োজন সেটি হচ্ছে সন্তান সম্ভবার প্রতি পরিবারের সহানুভূতি। মানসিক প্রশান্তি।