সাধারণভাবে যে-কোনও বয়সের যে-কোনও সুস্থ মানুষ লাইপোসাকশন করাতে পারেন। লাইপোসাকশন করার আগে দেখে নেওয়া হয় মানুষটির মধ্যে কোনও রকম অসুস্থতা যেমন, ডায়াবেটিস, হার্টের রোগ কিংবা হাইপারটেনশন রয়েছে কিনা। এই সব রোগ থাকলে লাইপোসাকশন করা যায় না এমনটা নয়, তবে নিয়ন্ত্রণ করে এগোতে হয়। এ ছাড়াও মানুষটি ইকোস্প্রিন জাতীয় কোনও ওষুধ খান কিনা তাও দেখে নেওয়া হয়। শরীরের বিভিন্ন অংশের মেদ কমাতে বা বডি লাইন কারেকশন করতে আসেন যাঁরা, লাইপোসাকশনের আগে তাঁদের সঙ্গে একটি প্রাথমিক আলোচনা সেরে নেওয়া হয়। উৎসাহী মানুষটিকে জানানো হয় কোন বিকল্পটি তাঁর পক্ষে সবচেয়ে ভাল। অর্থাৎ, শরীরের কোন অংশ থেকে কতটা মেদ বের করে আনা তার পক্ষে সুপ্রযুক্ত।
Table of Contents
অস্ত্রোপচারে যা করা হয়
লাইপোসাকশনের আগে মানুষটিকে অজ্ঞান করে নেওয়া হয়। শরীরের যে অংশের মেদ বের করা হবে সেখানে মোটামুটি ০.৫ সেমি ব্যাসের চেয়েও ছোট কয়েকটি ফুটো করা হয়। সেই ফুটো দিয়ে এক ধরনের তরল রাসায়নিক (ওষুধ মিশ্রিত লবণ জল) উচ্চচাপে শরীরের ভেতরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এই রাসায়নিক মেদকে ভেঙে ফেলার পাশাপাশি সেগুলিকে নরমও করে তোলে। তার পরে ইস্পাতের তৈরি সরু পাইপের মতো ক্যানোলা ও উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি নিষ্কাশন যন্ত্রের সাহায্য নিয়ে আধা তরল অবস্থায় মেদকে বের করে আনা হয়। যে ফটোগুলি করা হল সেগুলির কোনও দাগ পরে থাকে না তাই এই অপারেশনকে স্কারলেস সার্জারিও বলে। তার পরে শরীর থেকে দ্রুত অনেকটা মেদ বের করে আনার কারণে সেই অঞ্চলের চামড়া সাময়িকভাবে ঢিলে হয়ে যায়। সেই চামড়ার কোঁচকানো বা ভাঁজ হয়ে যাওয়া রুখতে অস্ত্রোপচারের পরে টাইট জ্যাকেট বা বেল্টের মতো একটা বিশেষ ধরনের পোশাক পরানো হয়। ক্ষতের আকার ও নিষ্কাশিত মেদের পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে বিশেষ পোশাকটি কতদিন ধরে পরে থাকতে হবে তা নির্ধারিত হয়। মোটামুটি ভাবে ৬-৮ সপ্তাহ থেকে ৩-৪ মাস পোশাকটি পরে থাকতে হতে পারে। একটু বেশি বয়সে তলপেটে লাইপোসাকশন করলে চামড়া ঝুলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, সেক্ষেত্রে কিছুটা চামড়া কেটে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। একে অ্যাবডোমিনোপ্লাস্টি বা মিনি- অ্যাবডোমিনোপ্লাস্টি বলা হয়। তবে এরকম অস্ত্রোপচারে রোগীকে আরও এক/দুই দিন হাসপাতালে থাকতে হয় এবং সম্পূর্ণ সেরে উঠতেও একটু বেশি সময় লাগে।
লাইপোসাকশনের কয়েকটি বিশেষ দিক
কয়েকটি বিশেষ ক্ষেত্রে লাইপোসাকশন করে উপকার পাওয়া যাচ্ছে। পুরুষের বর্ধিত স্তন-ইদানীং অতিরিক্ত মেদের কারণে ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সী বহু যুবকের স্তনদ্বয় মেয়েদের মতো (Gynecomastia) বেড়ে যাচ্ছে। লাইপোসাকশনের সাহায্যে স্তন অঞ্চলের অতিরিক্ত মেদ বের করে দিয়ে আধ ইঞ্চি মতো কেটে বর্ধিত ব্রেস্ট ডিস্ক বাদ দিলে উপকার হয়। দুটি কাজ একসঙ্গে করা হয়। এর জন্য শরীরে কোনও দাগ থাকে না। সকালে ভর্তি করিয়ে রোগীকে বিকেলবেলা ছেড়ে দেওয়া হয়। সামান্য হলেও যেহেতু শরীর থেকে মেদ বের করে নেওয়া হল তাই মাস দেড়েক একটি প্রেসার গার্মেন্টস পরতে বলা হয়। এর সঙ্গে অনেক সার্জেন বুকের কিছুটা মেদও বের করে আনেন।
ডাবল চিন
ডাবল চিন ঠিক করার ক্ষেত্রে লাইপোসাকশন কার্যকর। অস্ত্রোপচারের পরে একটি চিন ব্যান্ড পরে থাকতে হয়। কাজের ক্ষেত্রে এই ব্যান্ড পরে থাকা অস্বস্তিকর বলে ব্যান্ডটি বাড়িতে পরে থাকলেই চলে।
মহিলাদের স্তন
মহিলাদের স্তনেও লাইপোসাকশন করা হয়। স্তনের আকার ছোট করতে এর ব্যবহার বাড়ছে।
পেশি প্রদর্শন
যাঁরা পেশি প্রদর্শনের জন্য শরীরে সিক্স প্যাক বা এইট প্যাক বানাতে চান তারা ব্যায়ামের পাশাপাশি লাইপোসাকশনেরও সাহায্য নিতে পারেন। একে সিক্স প্যাক বা এইট প্যাক লাইপোসাকশন বলা হয়।
ডায়াবেটিস
ডায়াবেটিস আক্রান্তের ওজন কমলে ওষুধ ভাল কাজ করে। একজন ডায়াবেটিক মানুষ এই অস্ত্রোপচারের দ্বারা শারীরিক সৌন্দর্য ফিরে পাওয়ার পাশাপাশি অসুস্থতার ক্ষেত্রেও উপকার পেতে পারেন। মেদ বেরিয়ে এলে ওজন কমে, তাই মানুষটির বডি মাস ইনডেক্স (বি এম আই)-ও কমতে বাধ্য।