Monday, September 16, 2024
Homeস্বাস্থ্য পরামর্শপ্যানক্রিয়াটাইটিস: কারণ, লক্ষণ এবং চিকিত্সা

প্যানক্রিয়াটাইটিস: কারণ, লক্ষণ এবং চিকিত্সা

প্যানক্রিয়াসে জটিলতা সম্বন্ধে অনেকের কোন ধারনা নেই। এই রোগের কারণ, উপসর্গ, রোগ সনাক্তকরণ, চিকিৎসা, সবই অন্ধকারে। কিন্তু একটু সচেতন হলে এই রোগ হাতের বাইরে চলে যাবে না। প্যানক্রিয়াস থেকে ক্ষরণ হওয়া উৎসেচক গুলি ক্ষুদ্রান্তে গিয়ে সক্রিয় — হয়ে খাবার ফাবিয়াকে সাহায্য করে। এই উৎকেচগুলি বিশেষত ট্রিপসিন, কোন কারণে ক্ষুদ্রান্তের বদলে প্যানক্রিয়াস সক্রিয় হলে প্যানক্রিয়াস অর্থাৎ অগ্নাশয়ের কোষগুলির দহন হয়। যাকে চিকিৎসা পরিভাষায় প্যানক্রিয়াটাইটিস বলে। এই প্যানক্রিয়াটাইটিস দু-ধরনের হয়। অ্যাকিউট প্যানক্রিয়াটাইটিস ও ক্রনিক প্যানক্রিয়াটাইটিস। অসুখটা হঠাৎ করে হলে তাকে অ্যাকিউট প্যানক্রিয়াটাইটিস বলে। এক্ষেত্রে রোগটি কয়েকদিন থাকে। সময়মতো সঠিক চিকিৎসা না হলে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। আবার বহু বছর ধরে রোগ কষ্ট থাকলে থাকে ক্রনিক প্যানক্রিয়াটাইটিস বলে।

প্যানক্রিয়াটাইটিস এর উপসর্গ : 

প্যাক্রিয়াটাইটিসের প্রধান উপসর্গ হল পেটের – উপরের দিকে যন্ত্রনা। যা ক্রমেই পিছনের দিকে ছড়িয়ে যায়। খাবার খাওয়া মাত্র বমি হয়ে যায়। আর সব খাবারে আঁশটে গন্ধ পায়। কখনও কখনও অগ্নাশয় থেকে রক্তক্ষরণ হতে পারে। বাইরে থেকে তা নাও বোঝা যেতে পারে। তবে ডাক্তারি পরীক্ষায় তা ধরা পড়ে। পেটের অত্যাধিক যন্ত্রনার ফলে রক্তচাপ বাড়ে আবার বমির মাধ্যমে দেহের জলীয় অংশ বেরিয়ে গেলে ও রক্তক্ষরণের কারণে রক্তচাপ কমে যায়। এবং সঙ্গে সাধারণ পেটের অসুখের অন্যান্য উপসর্গ থাকে। কখনও কখনও জন্ডিস হয়। এমনকি ক্রনিক প্যানক্রিয়াটাইটিসের কারণে ডায়াবেটিস ও প্যানক্রিয়াসে ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে। প্যানক্রিয়াটিক এনজাইমের অভাবে বদহজম এই অসুখের পরিচিত উপসর্গ। নির্দিষ্ট কারণ ছাড়া দেহের ওজন অস্বাভাবিক হারে কমে গেলে সতর্কতা হওয়া দরকার।

প্যানক্রিয়াটাইটিস এর কারণ : 

৮০ শতাংশ প্যানক্রিয়াটাইটিস মদ্যপান অথবা গলব্লাডারে স্টোনের কারনে হয়। গলস্টোন যেমন অ্যাকিউট প্যাংক্রিয়াটাইটিসের প্রধান কারণ। কিছু কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় অগ্নাশয় কোষের দহন হয়। যেমন AIDS এর ওষুধ ডিডানোসিস, পেন্টামিডিন, কোমোথেরাপি ব্যবহৃত এল-অ্যাসপারজিন, অ্যাজাফিঅক্সিন প্রভৃতি ওষুধ এমনকী কোলোস্টেরল কমানোর ওষুধ স্ট্যাটিনসের প্রভাবেও প্যাক্রিয়াটাইটিস হতে পারে। কখনও কখনও এই ওষুধ বংশগত। আবার ভয় উদ্বেগ প্রভৃতি মানসিক কারণ ও মাশস, অটোইমিউন ডিজিও, রক্তে ক্যালসিয়াম ও ট্রাইগ্লিসারাইডের আধিক্য, স্টেরয়েড এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, অত্যাধিক উষ্ণ আবহাওয়া প্রভৃতি কারণে প্যানক্রিয়াটাইটিস হতে পারে। এছাড়াও প্যানক্রিয়াসের গঠনের জন্মগত ত্রুটিও এই রোগের অন্যতম কারণ। 

রোগ সনাক্তকরণ

প্রাথমিকভাবে পেটে ব্যথার ধরণ দেখে চিকিৎসক রোগ সম্পর্কে ধারণা করতে পারেন। রক্তের অ্যাসাইলেন অথবা লাইজেন এর মাত্রা পরীক্ষা করে বোঝা যায়। পেটে আলট্রা সোনোগ্রাফি করে অগ্নাশয়ের ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়। এভাবে প্যানক্রিয়াটাইটিস এর কারণ ও প্রভৃতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। গলস্টোন কিংবা অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার আছে কিনা জানা যায়। রোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে সিটি স্ক্যান করা দরকার।

প্যানক্রিয়াটাইটিস এর চিকিৎসা

রোগের প্রকৃতি ও তীব্রতা অনুযায়ী চিকিৎসা করা হয়। ব্যথা কমাতে মরফিন ব্যবহার করা হয়। রোগীকে মুখ দিয়ে যতটা সম্ভব কম খাবার খাওয়ানো হয়। অ্যাকিউট প্যানক্রিয়াটাইটিস এর ক্ষেত্রে কেবলমাত্র স্যালাইনের মাধ্যমে পুষ্টি সরবরাহ করা হয়। স্নেহ জাতীয় খাবার খাওয়া পুরোপুরি নিষিদ্ধ। ইন্ট্রাভেনাস পদ্ধতি ফ্লুইড ও ইলেকট্রোলাইট সরবরাহ করা হয়। একই সঙ্গে রোগের আসল কারণ নির্মূল করার জন্য চিকিৎসা করা প্রয়োজন। যেমন: 

  • গলস্টোনের কারণে প্যাংক্রিয়াটাইটিস হলে সবার আগে অস্ত্রোপচার করে গলস্টোন অপসারণ করা জরুরী। এক্ষেত্রে ল্যাপারোস্কোপিক সাজারিতে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়। 
  • আবার ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের কারণে প্যাক্রিয়াটাইটিস হলে অ্যান্টিবাওটিক প্রয়োগ করে চিকিৎসা করা হয়। রোগের জটিলতা এড়াতে নিয়মিত রোগীর শরীরের উপর নজরদার রাখা দরকার।
25

প্যানক্রিয়াটাইটিস এর জটিলতা 

প্যানক্রিয়াটাইটিস একটা জটিল অসুখ। যন্ত্রনা, রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যাওয়া, ক্যালসিয়ামের পরিমাণ কমে যাওয়া তো আছেই। সঙ্গে রক্তক্ষরণের ফলে ডিহাইড্রেশন হয়। খাদ্যনালী থেকে তরল লিক করে পেটের গহ্বরে জমা হয়। এর ফলে কিডনি ফেলিওর এর মতো জটিলতা দেখা দিতে পারে। শ্বাসকষ্ট এবং শ্বাস নেওয়ার সময় অসহ্য যন্ত্রনা হয় যা থেকে ফুসফুস অকেজো পর্যন্ত হয়ে যায়। প্যানক্রিয়াস থেকে ক্ষরণ হওয়া উৎসেচ ফুসফুসকে আক্রান্ত করে যার প্রভাবে ইনফ্লামেশন হতে পারে। একবার এই রোগের উপশম হওয়ার পর আবার হতে পারে। প্যাক্রিয়াটাইটিসের ফলে প্যানক্রিয়াটিক এনজাইম গুলি জমা হয়ে সিস্টের মতো আকার ধারণ করে যা আক্রান্ত অংশকে আড়াল করে রাখে। এর কারণে ব্যথা হয় সংক্রমিত অংশ থেকে রক্তক্ষরণ হয়। পিত্তনালীর মুখে বাধা সৃষ্টি হওয়ায় জন্ডিসের সম্ভাবনা থাকে। প্যানক্রিয়াটাইটিস এর সঙ্গে ডায়াবেটিসের সম্পর্ক যেহেতু অগ্নাশয়ের আইলেটস অফ ল্যাঙ্গারহ্যান্সের বিটা কোষ থেকে ইনসুলিন ক্ষরণ হয় যা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে তাই প্যানক্রিয়াসের সংক্রমণে স্বাভাবিক ইনসুলিন ক্ষরণ বাধা পায়। ফলে এই রোগে ইনসুলিন নিয়ন্ত্রন করে তাই প্যানক্রিয়াটাইটিসের সংক্রমণে স্বাভাবিক ইনসুলিন ক্ষরণ বাধা পায়। ফলে এই রোগে ইনসুলিন নিয়ন্ত্রিত অর্থাৎ টাইপ-১ ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা থাকে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular