Friday, September 13, 2024
Homeস্বাস্থ্য পরামর্শহার্ট ভালো রাখতে বদলান খাদ্যাভ্যাস

হার্ট ভালো রাখতে বদলান খাদ্যাভ্যাস

হার্ট হচ্ছে একটি পাম্প। এই পাম্পের মাধ্যমে সারাদিন সারারাত গোটা শরীরে রক্ত চলাচল করে। হার্টের পুষ্টি দরকার। তিনটি শিরা দিয়ে রক্ত চলাচল করে এই হার্টকে পুষ্টি জোগায়। শিরাগুলিতে যদি ব্লকেজ হয় বা কোনও কারণে বন্ধ হয়ে যায় তখন রক্ত সরবরাহ ব্যাহত হয় এবং হার্টের পুষ্টিও হয় না। এটাই হার্টের অসুখ। তাছাড়া হার্টের যে ভাল্ভ আছে, তার মুখ সরু হয়ে যায়। কখনও কখনও রক্ত সাধারণভাবে যেদিকে প্রবাহিত হয় তার উল্টোদিকে প্রবাহিত হতে পারে। এটিও একধরনের হার্টের অসুখ।

কী কী কারণে হার্টের অসুখ হতে পারে:- 

হার্টের অসুখ অনেকগুলি কারণে হতে পারে। এক তো কিছু আছে হার্টের জন্মগত ত্রুটি। সেটি জন্ম থেকেই থাকে। এ ছাড়া ছোটবেলায় রিউম্যাটিক ফিভার হলে হার্টের ভাল্ভ খারাপ হতে পারে। কিছু গলার (টনসিলের) ইনফেকশন আছে যার জন্য স্টেপটোকক্কাস ব্যাকটিরিয়া দায়ী। এই ইনফেকশন হার্টকে প্রভাবিত করে। হার্টের যেখানে ভাল্ভ আছে সেখানে ড্যামেজ বা ক্ষতি করে। এই জ্বরে গাঁটে গাঁটে ব্যথা হয়। যদি এই জ্বরের ঠিকমতো চিকিৎসা না হয় তা হলে পরবর্তীকালে ভাল্ভ ড্যামেজ হতে পারে। এ ছাড়া হার্টের শিরায় ফ্যাট জমে শিরা সরু হয়ে যায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে এই শিরা সরু হয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়।

কখন থেকে হার্টের পরীক্ষা করা উচিত:- 

একজন মানুষের চল্লিশ বছর বয়স থেকে হার্টের চেক-আপ শুরু করা দরকার। টেস্টগুলির মধ্যে লিপিড প্রোফাইল, সুগার, ই সি জি, ট্রেডমিল, ইকো কার্ডিওগ্রাম করা দরকার। কোনও কিছু না থাকলে তিন বছর অন্তর অন্তর এই পরীক্ষাগুলি করানো উচিত।

হার্টকে সুস্থ রাখা যায় কীভাবে:- 

বর্তমান জীবনযাপন পদ্ধতি হার্টের অসুখকে নিকটবর্তী করে। সে জন্য জীবন যাপন পদ্ধতি পাল্টাতে হবে। খাওয়াদাওয়া পরিমিত হবে। জাঙ্ক ফুড খাওয়া চলবে না। ওজন নির্ধারিত সীমার মধ্যে রাখতে হবে। ওজন বেশি থাকলে তা কমাতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। সেটা দিনে ৪০-৪৫ মিনিট হাঁটাই হোক বা জিম হোক। প্রাণিজ খাবার গ্রহণ সীমিত রাখতে হবে। মাছ ও মুরগির মাংস চলতে পারে, কিন্তু মটন বা অন্যান্য রেড মিট একদম নয়। ডবল টোনড দুধ খেতে হবে। কিন্তু চিজ, ঘি, মাখন পরিহার্য। ভাজা খাবার খাওয়া উচিত নয়। প্রচুর পরিমাণে ফল ও সবজি খেতে হবে। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড যুক্ত খাবার খেতে হবে। এটি হার্টের পক্ষে খুব উপকারী। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সামুদ্রিক মাছে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। বিভিন্ন রকমের ডাল খাওয়া দরকার।

হার্টের অসুখ সারানো সম্ভব:- 

যদি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে ওজন রাখা যায়, যদি ব্লাড প্রেসার সীমার মধ্যে রাখা যায়, যদি নিয়মিত ব্যায়াম করা যায়, যদি ব্লাড সুগার সীমার মধ্যে রাখা যায়, যদি কোলেস্টেরল স্বাভাবিক অবস্থায় থাকে তা হলে ওষুধের সাহায্যে হার্টের অসুখ সারানো সম্ভব।

হার্টের ক্যালসিফিকেশন বলতে কি বোঝায়? 

শরীরে কোলেস্টেরল বেশি থাকলে করোনারি আর্টারিতে ফ্যাটের সঙ্গে ক্যালসিয়াম জমে শিরা সরু হয়ে যায়। একেই ক্যালসিফিকেশন বলে। তবে কম বয়সে ক্যালসিয়াম খাওয়ার সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই।

হার্ট ডিজিজ সারানো সম্ভব?

অবশ্যই, যদি ঠিকমতো ওষুধ খাওয়া যায়। যদি ব্লাড সুগার ও কোলেস্টেরল নির্ধারিত সীমার মধ্যে রাখা যায়। যদি শরীরের ওজন স্বাভাবিক থাকে ও সর্বোপরি খাদ্যাভ্যাস সঠিক রাখা যায় (ফ্যাট বর্জন, লো কোলেস্টেরল যুক্ত খাবার গ্রহণ। ট্র্যান্স- ফ্যাটযুক্ত খাদ্য বর্জন যা অতিরিক্ত ভাজা খাবারে পাওয়া যায়)। এরই সঙ্গে চাই নিয়মিত ব্যায়াম ও সংযত আহার। তাহলেই সুস্থ হার্টের অধিকারী হওয়া যাবে।

কী করবেন সুস্থ হৃদয়ের জন্য

১) কায়িক পরিশ্রম করুন রোজ। প্রত্যেক দিন সকালে হাঁটুন এক ঘণ্টা বা জিমে যান।

২) ফ্যাট পরিহার করুন। উদ্ভিজ্জ তেল ব্যবহার করুন রান্নার জন্য, রোজ পাঁচ চা-চামচের মধ্যে (৭৫০ মিলিলিটার মাসে)।

৩) প্রচুর শাকসবজি খান। ৫ ভাগ ফল খান (১ ভাগ মানে কাটা ফল এক বাটি)। বেসন, বাজরা, জোয়ার, মুড়ি, খই খান। রাজমা, চানা ও সব রকমের ডাল খান। আটার রুটি খান। অঙ্কুর ওঠা ছোলা ও মুগ খান। সিদ্ধ ভাত, মাছ, মুরগির মাংস খান। ডিমের সাদা অংশ খান, অবশ্যই ভেজে নয়।

৪) ডবল টোনড অথবা লো ফ্যাট দুধ খান- ১ লিটার রোজ। দই বা ছানা খান।

৫) প্রচুর পরিমাণে জল খান। মদ্যপান ১ পেগ দিনে, তার বেশি একদম না।

৬) পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম, বিশ্রামও।

৭) মুখমণ্ডল ও দাঁত অবশ্যই পরিষ্কার রাখবেন। ৬ মাসে একবার ডেন্টিস্ট দেখান।

৮) নির্ধারিত সীমার মধ্যে ব্লাডপ্রেশার ও ব্লাড সুগার রাখুন। 

কী করবেন না

১) ধূমপান বর্জন, তার সঙ্গে জর্দা, সুপুরি, গুল, খৈনি, নস্যি ও পান মশলা বর্জনীয়।

২) পেট ভরে খাবেন না।

৩) কী কী খাবেন না- ঘি, বাটার, ভাজা খাবার, বনস্পতি, ডালডা, কুসুম, মার্জারিন, ভাজা মাছ, ভাজা চিকেন, ফ্রায়েড রাইস, লুচি, পুরি, পরোটা, বিরিয়ানি, ভুজিয়া, সিঙাড়া, কচুরি, মিষ্টি দই, চিজ, ফ্যাটযুক্ত পনির, চিনি, মিষ্টি, মধু, গুড়, আইসক্রিম, চকলেট, কেক, কোল্ড ড্রিঙ্ক, ফ্রুট জুস, মাটন, বিফ, ডিমের হলুদ অংশ, ময়দা, বিস্কুট ও সাদা রুটি (ময়দার)।

৪) খাওয়ার দু’ঘণ্টার মধ্যে ব্যায়াম পরিহার্য।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular