Tuesday, September 24, 2024
Homeনবজাতক শিশুর যত্ন ও পরিচর্যাHigh-risk pregnancy : শেষ বিচারের দায়িত্ব আপনারই

High-risk pregnancy : শেষ বিচারের দায়িত্ব আপনারই

আমার প্রেগনেন্সি হাই-রিস্ক নাকি লো-রিস্ক, কীভাবে বুঝব? 

এটা মনে রাখা দরকার কয়েকটা ফ্যাক্টর আছে যা গর্ভবতী অবস্থায় আপনাকে এবং আপনার অনাগত সন্তানকে বিপদ বা ঝুঁকির মুখোমুখি দাঁড় করাতে পারে। খেয়াল করে দেখুন তার দু’য়েকটা হয়ত আপনার নিয়ন্ত্রণেই আছে। ধূমপানের নেশা থাকলে বন্ধ করতে হবে। যখন তখন দোকান থেকে ওষুধ কিনে খাওয়া সম্পূর্ণ বন্ধ। তবে আকারে বড় সন্তান বা গর্ভে যমজ সন্তান থাকলে তাতে আপনার কোনও হাত নেই। সেজন্যই যত্নশীল অ্যান্টিনেটাল মনিটরিং বড়সড় বিপদ এড়াতে সহায়তা করতে পারে। আমরা আরও একটা ব্যাপার খেয়াল রাখি, অন্তত দ্বিতীয়বার প্রেগনেন্সির সময় থেকে। আগেরবার যা যা হয়েছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পরের বার তেমন তেমনই হয়।

সাধারণ কয়েকটা ঝুঁকি

  • অতিরিক্ত মদ্যপানের অভ্যাস (ভারতীয় মহিলাদের কমই।)
  • ধূমপান (দেখা যাচ্ছে, ইদানীং এই প্রবণতা বাড়ছে ভারতীয় মহিলাদের।)
  • যদি আপনি ভীষণ রোগা নয়ত অতিরিক্ত মোটা হন। 
  • খাওয়া-দাওয়া ঠিকমতো করেন না, ম্যাল-নিউট্রিশন আছে শারীরিক অসুস্থতার জন্য ইতিমধ্যেই যদি আপনার মেডিক্যাল ট্রিটমেন্ট চলে ৷

যে-সব ঝুঁকির জন্য আপনার নিবিড় অ্যান্টিনেটাল কেয়ার প্রয়োজন

  • যদি আগের প্রেগনেন্সিতে প্রি-টার্ম বেবি (৩৭ সপ্তাহের আগে) জন্মে থাকে। 
  • আগেরবার গর্ভে এমন সন্তান জন্মেছে যার অস্বাভাবিকতা ছিল। 
  • আপনার ডায়াবেটিস এবং/ অথবা উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। 
  • আগে থ্রম্বোসিস (অতিরিক্ত ব্লাড ক্লট) হয়েছে

কখন ডেলিভারির ব্যাপারে বেশি যত্নবান হবেন 

  • বেশ বড় মাপের গর্ভস্থ শিশু (আনুমানিক ওজন ৪ কেজি/ সাড়ে ৮ পাউন্ড)
  • বড্ড ছোট মাপের শিশু (ওজন আড়াই কেজি/সাড়ে ৫ পাউন্ডের কম)
  • গৰ্ভস্থ সন্তান যদি যমজ থাকে
  • ব্রিচ প্রেজেন্টেশন অর্থাৎ জরায়ুতে শিশুর অবস্থান, মাথা জরায়ুমুখে থাকার পরিবর্তে ওপরের দিকে)
  • আগের ডেলিভারি যদি সিজারিয়ান হয়ে থাকে
  • আগের ডেলিভারিতে যদি অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়ে থাকে 
  • প্রেগনেন্সিতে দারুণ বেশি ব্লাড প্রেসার (প্রি-এক্লাম্পশিয়া
  • ডায়াবেটিস
do you have a high risk pregnancy questions to help you 1

লো-রিস্ক প্রেগনেন্সি

ওপরে যা উল্লেখ করা হল তেমন কোনও সমস্যা যদি আদৌ না থাকে, তবে ঝুঁকি নেই বলেই ধরে নেওয়া যায়। তা ছাড়া পূর্ববর্তী প্রেগনেন্সি এবং ডেলিভারিতে যদি কোনও সমস্যা না হয়ে থাকে, তবে ঝুঁকি নেই ভেবে বাড়িতে বসে থাকা চলবে না। যতবার অ্যান্টিনেটাল চেক-আপে আসা উচিত, আসবেন। আপনার এবং আপনার বাড়ন্ত ভ্রূণের স্বাস্থ্যের ওপর নিয়মিত নজর রাখতে হয় ডাক্তারের।

স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন

আমার কি আদৌ বিশেষ সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা বা স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন প্রয়োজন হতে পারে ?

গর্ভস্থ সন্তানের কোনও অসঙ্গতি বা বার্থ ডিফেক্ট হতে পারে এমন ধরা পড়লে তবেই সাধারণত আপনাকে এই সব বিশেষ পরীক্ষা করার কথা বলা হতে পারে। অনেক সময় বয়স একটা ফ্যাক্টর (৩৫ বছরের বেশি যদি হয়)। আবার সাধারণ আল্ট্রাসাউন্ড স্ক্যান করে যদি কোনও সমস্যা ডাক্তারের চোখে পড়ে। আপনার কিংবা আপনার স্বামীর যদি কোনও জন্মগত অসুখ থাকে। আগের প্রেগনেন্সিতে কোনও এমন শিশু গর্ভে ধারণ করেছেন যার বার্থ ডিফেক্ট বা ত্রুটি ধরা পড়েছিল। 

কী কী পরীক্ষা করতে হবে?

কয়েকটা পরীক্ষা করলেই সমস্যাগুলো ধরা পড়বে। রক্ত পরীক্ষায় বোঝা যাবে ডাউন’স সিনড্রোম বা স্পাইনা বাই-ফিডা। ডায়াবেটিস তো রক্ত পরীক্ষাতেই বোঝা যায়। আলট্রাসাউন্ড স্ক্যান সম্পর্কে অহেতুক ভয় পাওয়ার কারণ নেই। তাতে সন্তান ঠিকমতো বাড়ছে কিনা সেটা ধরা পড়বে। এবার ধরা যাক ব্লাড টেস্ট বা স্ক্যান রিপোর্টে তেমন কিছু বের হল না। তখন অ্যামনায়োসেন্টেসিস করানো হতে পারে। জরায়ুর মধ্যে থেকে তরল বা ফ্লুইড সংগ্রহ করা হয়।

এতে কী কী ধরা যায়?

তিন ধরনের ত্রুটি ধরা পড়ে। কনজেনিটাল, ক্রোমোজমাল এবং জেনেটিক। ১৮ থেকে ২২ সপ্তাহের মধ্যে আল্ট্রাসাউন্ড স্ক্যান হলেই কনজেনিটাল অ্যাবনর্মালিটি বোঝা যায়। ক্রোমোজমাল এবং জেনেটিক ত্রুটি ধরা পড়ে ইনভেসিভ পদ্ধতি যেমন, অ্যামনায়োসেন্টেসিস, কর্ডোসেন্টেসিস এবং কোরিওনিক ভিলাস স্যাম্পলিংয়ে (সি ভি এস)।

কনজেনিটাল অ্যাবনর্মালিটি কী কী ধরনের?

এটা হলে বুঝতে হবে শিশুর শারীরিক সমস্যা দেখা দিয়েছে। যেমন হেয়ার লিপ, হার্ট বা ব্রেনে ত্রুটি, স্পাইনা বাই-ফিডা, হাত বা পায়ের অনুপস্থিতি নয়ত বাড়তি আঙুল। এগুলো হওয়ার কোনও জেনেটিক বা ক্রোমোজমাল কারণ কিন্তু নেই। অনেক সময় আমরা কেন এমন হল তার ব্যাখ্যা দেওয়ার মতো নির্দিষ্ট কারণই খুঁজে পাই না। মায়ের রুবেলা বা জার্মান মিজল্স হলে কখনও কখনও এমনটা হতে পারে। কনজেনিটাল যে-সব ত্রুটি তার জন্য অনেকসময় সুষম খাদ্যের অভাবকে দায়ী করা হয়। যেমন ডায়েটে ফোলিক অ্যাসিড-এর অভাব। প্রেগনেন্সির প্রাথমিক পর্বে উল্টোপাল্টা ওষুধ খেয়ে ফেললেও এমনটা হতে পারে।

ধরুন কনজেনিটাল অ্যাবনর্মালিটি আছে, এমন নির্ণয় হল। তা হলে? 

ঠোঁটে ফাঁক, বাড়তি আঙুল বা ক্লাব ফুট (কুশ পা)- এগুলো শিশু জন্মানোর পর শল্যচিকিৎসায় বা অন্য উপায়ে সমাধান করা যায়। তা ছাড়া মনে রাখবেন এমন শিশুদের আর কোনও বড়সড় সমস্যা থাকে না। খুব বড় ধরনের কোনও ত্রুটি থাকলে যেমন হার্টে বড় কোনও সমস্যা বা ব্রেন ও স্পাইনাল কর্ডের অসঙ্গতি, তা হলে মিসক্যারেজ হয়ে যায় অধিকাংশ সময়ে। এমনকী ২৪ সপ্তাহের মধ্যে শিশুর মৃত্যুও হতে পারে গর্ভেই। তবে এমন হলে নিশ্চয় আপনাকে বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠানো হবে।

আমায় স্পেশাল টেস্ট করাতেই হবে?

সমস্যা হচ্ছে এখন এত অত্যাধুনিক ব্যবস্থাপনা এসে গেছে যে সরল সত্যটা আর লুকোনোর কোনও জায়গা থাকছে না। পরীক্ষা বা বিশেষ ধরনের টেস্ট করলেই স্পষ্ট ছবি আমাদের সামনে চলে আসে। হয়ত তার ফলাফল আপনাকে আদৌ খুশি করবে না, বরং বিষাদে মুড়ে দিতে পারে। দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে দু-একটা পরীক্ষার পরই অনেকে বলেন, ডাক্তারবাবু আর এগোবেন না।

High Risk Pregnancy 1

রেজাল্ট যখন পজিটিভ

রোগীদের এটা আগে বলার এবং বিশেষ করে বোঝানোর চেষ্টা করা হয় যে ঠিকঠাক মনস্থির করে নিন। কোনও অসঙ্গতি ধরা পড়লে কী করবেন? প্রেগনেন্সি এগোতে দেবেন কি? আসলে গভীর সঙ্কট হতে পারে অথবা যে অনাগত আসছে তার প্রচুর জন্মগত সমস্যা আছে এমন জানলে প্রয়োজনে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতেই হয়। ফলাফল হাতে পাব অথচ তার ভিত্তিতে কোনও সিদ্ধান্ত নেব না, এটা বুদ্ধিমত্তা না। তা হলে স্পেশাল টেস্ট করানোর কোনও অর্থই হয় না।

সিদ্ধান্ত নেওয়া অবশ্যই কষ্টকর, আমরা ডাক্তারেরা রোগী বা তাঁদের পরিবারের যে দোলাচল তৈরি হয় সে ব্যাপারে সহানুভূতিশীল। আমরা বিশ্বাস করি পরীক্ষার ফল জানার পর প্রেগনেন্সি শেষ করে দেওয়ার সিদ্ধান্তটা বিরাট একটা মানসিক ধাক্কা। শুধু পরীক্ষার ভিত্তিতে এক খণ্ড স্বপ্ন জলাঞ্জলি দেব, এমনটা ভাবতে বসেন রোগীর পরিবার। তাঁরা অনেক পরিচিত এবং ডাক্তারি বিষয়ে ততটা অভিজ্ঞ নন এমন লোকজনের সঙ্গে কথা বলে ফেলেন। যদি ভাল জায়গা থেকে উপযুক্ত যন্ত্র ও বিশেষজ্ঞের সামনে পরীক্ষা করানো হয়, তবে তাঁর পরামর্শটাই শিরোধার্য করা উচিত। বাজারচলতি মতামতের সঙ্গে ডাক্তারি মতামত অনেক সময়েই মেলে না। তবে দেখেছি অনেক দম্পতি যখন বুঝে যান কোনও পরিস্থিতিতেই এবারের গর্ভধারণে সম্পূর্ণ সুস্থ সন্তানের জন্ম দেওয়া সম্ভব না, তখন তাঁরা গর্ভপাতের ব্যাপারেই মনটা শক্ত করে ফেলেন। তার পক্ষেই মত দেন। সাহসী কোনও কোনও দম্পতি গোটা ব্যাপারটা ভাল করে আমাদের কাছে বুঝে নিয়ে এমনই সিদ্ধান্ত নেন যে যা হয় হোক, এবারই সন্তানের জন্ম দেব। প্রয়োজন হলে ভবিষ্যতে সেই শিশুকে বিশেষ যত্ন বা ট্রেনিং দিয়ে মানুষ করার চেষ্টা করব। সারাজীবন তার দেখভাল করার মতো ব্যবস্থা রেখে যাব। তাঁরা আসলে টার্মিনেশন অফ প্রেগনেন্সির মতো কঠিন সিদ্ধান্তটা আদৌ নিতে চান না। আমি সবসময় পরামর্শ দিই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ভালভাবে বিশেষজ্ঞের সামনে বসুন। তাঁর সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করুন। ব্যাপারটা বুঝুন। যে শিশু আসছে ভবিষ্যতে তার জীবনধারণ কতটা কষ্টকর এবং ক্লেশের হতে পারে সেটা বুঝে নেওয়া দরকার, ভারতে স্পেশাল এডুকেটর বা চ্যালেঞ্জড চাইল্ডদের যত্ন নেওয়ার সংস্থা বা হাসপাতাল এখন অবশ্য বাড়ছে। তবে বিদেশের পর্যায়ে সেগুলোর গুণমান পৌঁছতে এখনও অনেকটা পথ। তাই শেষ বিচারের দায়িত্ব আপনারই।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular