Wednesday, September 18, 2024
Homeনবজাতক শিশুর যত্ন ও পরিচর্যাশিশুর ত্বকের যত্ন : শিশুর ত্বক রক্ষার কিছু প্রয়োজনীয় টিপস

শিশুর ত্বকের যত্ন : শিশুর ত্বক রক্ষার কিছু প্রয়োজনীয় টিপস

ঋতু পরিবর্তনে আমাদের দেশের আবহাওয়ায় নানা রদবদল ঘটে। গ্রীষ্মের প্রচন্ড উত্তাপ কিংবা বর্ষার ভেজা স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ার পরে শীতকালে পরিবেশ শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে যায়। এই পরিবর্তনে, বিশেষ করে শীতের সময় শিশুর ত্বকে নানা সমস্যা দেখা দেয়। যে-সব শিশুর ত্বক শুষ্ক প্রকৃতির শীতের রুক্ষ আবহাওয়া তাদের ত্বকের শুষ্কতা আরও বাড়িয়ে দেয়। এই কারণে সোরিয়াসিস, ইকথায়োসিস, অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিস ইত্যাদি চর্মরোগ হতে দেখা যায়। আবহাওয়া একটু গরম হতে না হতেই অর্থাৎ সামান্য গরম পড়তেই এই সব রোগ নিজে থেকেই কমতে থাকে। 

ভাইরাস সংক্রমণ

ভাইরাস ঘটিত জ্বরে আক্রান্ত শিশুদের ত্বকে লাল লাল র‍্যাশের সৃষ্টি হয়। আক্রান্ত ত্বক ভীষণ চুলকায় এবং তার সঙ্গে জ্বরের পরিমাণ বেড়ে যায়। তা ছাড়া শীতকালে যদি কারো গায়ে অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিস কিংবা সোরিয়াসিস হয়, তবে শীত অবসানে তাদের মাথায় অনেক সময় প্রবল আকারের খুশকি দেখা যায় ৷

ব্যাকটিরিয়া সংক্রমণ

অনেক সময় বাচ্চাদের মধ্যে ব্যাকটেরিয়া জনিত সংক্রমণ যেমন, ছোট ছোট ফোড়া, ফুসকুড়ি, স্কেবিজ ইত্যাদি রোগের সম্ভাবনা দেখা যায় ৷ পরবর্তীকালে আবহাওয়া একটু গরম হলে রোগগুলির প্রাবল্য শীতকালের তুলনায় কমে যায়। এই সময় অনেক বাচ্চার গায়ে হালকা সাদা সাদা দাগ ফুটে ওঠে। ত্বকে সরাসরি আলট্রা ভায়োলেট রশ্মি এসে পড়লে মূলত এই ধরনের সমস্যা হয়। একে ‘পলিমরফিক লাইট ইরাপশন‘ বলে। যে বাচ্চাদের প্রতিদিন সূর্যালোকে বেরোতে হয় যেমন, স্কুলপড়ুয়া বাচ্চা, তাদের মধ্যে এই ধরনের ইরাপশন দেখা যায়।

শিশুর ত্বক ভালো রাখার টিপস: 

শীতের বাতাসে আর্দ্রতা খুব কম থাকে। সেই শুষ্ক বাতাস হিমেল হাওয়ার সঙ্গী হয়ে শিশু ত্বকের জলকণা শুয়ে নেয়। জলীয় অংশের অভাবে শীতকালে শিশুর ত্বক তাই শুষ্ক ও খসখসে হয়ে পড়ে। এ সময় তাদের হাত, পা, মুখ কিংবা ঠোঁটে টান ধরে। আদ্রতা জনিত এ সমস্যার কথা শিশুরা মুখ ফুটে বলতে পারে না। তার ফলে সঠিক যত্নের অভাবে এই শুকনো ত্বক থেকে নানা ধরনের সমস্যার সূত্রপাত হয়। শিশুর ত্বক সুস্থ রাখতে নিচের টিপস গুলো মনে রাখুন।

How do you take care of a neonatal skin

সাবান: 

অনিয়মিত হলেও শীতকালে সাবান ব্যবহারের প্রয়োজন রয়েছে। এই সময় সবরকম সাবান ব্যবহার করা যায়। তবে যাদের ত্বক রুক্ষ ও খসখসে তাদের ক্ষেত্রে গ্লিসারিন জাতীয় সাবান ব্যবহারে সবচেয়ে ভাল ফল পাওয়া যায়। এতে ত্বক ভিজে ও নরম থাকে। 

তেল: 

বডি মেসেজ অয়েল হিসেবে নারকেল তেল তুলনাহীন। বিশেষজ্ঞরা আজকাল এই তেল মাখিয়ে মালিশ করতে বলছেন। তবে কখনই সর্ষের তেল মাখানো যাবে না। সর্ষের তেল ত্বকে ক্ষতিকর প্রদাহের সৃষ্টি করে। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে সর্ষের তেল মাখিয়ে শিশুকে রোদে রাখলে ত্বক কালো হয়ে যায়। স্নানের সময় বাথ অয়েল ব্যবহার শীতপ্রধান দেশে খুবই জনপ্রিয়। এক্ষেত্রে স্নানের জলে বাথ অয়েল মিশিয়ে স্নান করাতে হয়।

স্নানের জল: 

শিশুদের কোনও সময়েই কনকনে ঠান্ডা জলে স্নান করানো উচিত নয়। হালকা গরম জলে স্নান করালে শিশুর ত্বক ভাল থাকে। ঈষদুষ্ণ অর্থাৎ না গরম না ঠান্ডা জলই শিশুর ত্বকের পক্ষে আদর্শ।

শ্যাম্পু 

চুল যাতে রুক্ষ না হয়ে যায় সে দিকে নজর রাখা দরকার। সপ্তাহে দুইবার শ্যাম্পু করানো উচিত। এতে চুল পরিষ্কার থাকে। তবে মাথা-সহ ত্বকের যে-কোনও অংশ খুব জোরে জোরে ঘসা উচিত নয়। এর পরে যে-কোনও ধরনের নারকেল তেল মাখালে চুল রুক্ষ হয় না। 

ঠোঁট: 

শীতের শুষ্ক আবহাওয়ায় শুকিয়ে গিয়ে ফেটে যাওয়া ঠোঁটে কখনই জিভ লাগানো উচিত নয়। শিশুদের এই ব্যাপারে বোঝানো দরকার। বুঝতে না চাইলে নজর রাখা উচিত। ঠোঁটে গ্লিসারিন, ভেসলিন বা নারকেল তেল মাখানো যেতে পারে।

খাবার: 

ডায়েটে যাতে ভিটামিন-এ ও ভিটামিন-সি বেশি পরিমাণে থাকে সেদিকে নজর দিতে হবে। প্রতিদিনের খাদ্যে প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি ও ফলমূল থাকা দরকার। শিশুর খাদ্যে এ দুটো জিনিস নিয়মিত ভাবে থাকলে ত্বক ভালো থাকে।

পোশাক: 

পোশাক সব সময় পরিষ্কার থাকা বাঞ্ছনীয়। পরিচ্ছন্নতার কোনও বিকল্প থাকতে পারে না। শিশুদের পোশাক পরিষ্কার করবার সময় ডেটল কিংবা স্যাভলন ব্যবহার করলে সংক্রমণের সম্ভাবনা কমে যায়। সুতির ঢিলেঢালা পোশাক শিশুদের পক্ষে উপকারী। শরীর বেশিক্ষণ খোলা না রাখাই ভাল।

ক্রিম: 

শিশুদের শরীরে ক্রিম লাগানো ভালো। বিশেষ করে যে-সব শিশুর ছোট থেকে অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিস বা সোরিয়াসিস হয় তাদের সারা বছর ধরে ইমোলিয়েন্ট জাতীয় ক্রিম ব্যবহারে উপকার পাওয়া যায়।

Ketoconazole Cream For Baby Face

বড়দের ত্বক ভাল রাখার টিপস: 

মানুষের শরীরের সত্তর ভাগই জল। জলকণাকে ত্বকের প্রাণ বলা চলে। সেই জল শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে থাকে। বাতাসের জলীয় ভাগ কমে গেলে শরীরের বিভিন্ন অংশের সঙ্গে সঙ্গে হাত, পা ও ঠোঁটের জলীয় অংশও উধাও হয়ে যায়। জলীয় অংশের অভাবে শরীরের ওই অঞ্চলগুলি ফাটতে শুরু করে। তাই শীত আসার আগে থেকেই ত্বকের পরিচর্যা শুরু করা উচিত।

সাবান: 

যে-কোনও ধরনের সাবান ব্যবহার করা যেতে পারে। কিন্তু সবচেয়ে ভাল গ্লিসারিন জাতীয় সাবান ব্যবহার করা। এতে ত্বক ভিজে ও নরম থাকে।

তেল: 

তেলের মধ্যে শ্রেষ্ঠ নারকেল তেল। মাখতে হলে নারকেল তেল মাখাই ভালো। এ ছাড়াও স্নানের পরে যে-কোনও ধরনের ময়েশ্চারাইজার মাখা যায়।

স্নানের জল: 

স্নানের জল ঈষদুষ্ণ হওয়া দরকার, অর্থাৎ না ঠান্ডা না গরম। ওই জলই ত্বকের পক্ষে আদর্শ।

শ্যাম্পু:

সপ্তাহে দুইবার শ্যাম্পু ব্যবহার করা উচিত। দরকার মতো কন্ডিশনার ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে চুল রুক্ষ হয়ে যাবে না। চুলের স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ভাব বজায় থাকবে।

খাবার: 

প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি ও ফলমূল খেতে হবে। ভিটামিন-এ ও ভিটামিন-সি বেশি পরিমাণে থাকলে ত্বক ভালো থাকে।

পোশাক: 

স্নানের পরে কোনও সময় বেশিক্ষণ খালি গায়ে থাকা উচিত নয়। সব সময় সুতির পোশাক পরা ভালো। অনেকের সিন্থেটিক পোশাকে অ্যালার্জি হয়।

ক্রিম: 

স্নানের পরে নারকেল তেল বা কোল্ড ক্রিম মাখা উচিত।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular