ভারতের শিশুমৃত্যুর হার পৃথিবীর অন্যান্য অনুন্নত দেশের চাইতে কোন অংশে কম নয়। এটা যেমন আমাদের লজ্জা তেমনি শঙ্কার বিষয়ও বটে। এটা আমাদের লজ্জা কারণ আমরা তৃতীয় বিশ্বের উন্নতশীল দেশ হয়েও আমাদের বিভিন্ন কারণে শিশু মৃত্যুর হার কমাতে অক্ষম হয়েছে। এটা আমাদের শঙ্কার বিষয় কারণ এভাবে চলতে থাকলে আমাদের স্বাস্থ্যের এবং পারিবারিক মেরুদন্ড দুদিনেই ভেঙে পড়বে।
ভারতের শিশু মৃত্যুর অন্যতম কারণ হল অপুষ্টি, অর্জীনতা, মাতার স্বাস্থ্যহানি, উপযুক্ত সময়ের আগে প্রসব ইনফেকশন, জন্মগত ত্রুটি ও অসুখ প্রভৃতি। প্রত্যেকটি কারণ নির্ভর করে সামাজিক পরিস্থিতি, শিক্ষার অভাব, প্রভৃতি দায়ীই। কিছু পরিস্থিতি আছে যা থেকে শিশু মৃত্যু অব্যহতি পায় না। শুধু এইটুকু দূরে সরিয়ে রাখতে পারলে আমরা কিন্তু আমাদের শিশুমৃত্যুর হার কমিয়ে ফেলতে পারি।
অসুস্থ ভারতীয় শিশুরা সাধারণত জন্মের ২৮ দিনের মধ্যে মারা যায়। জন্মগত কিছু রোগ জন্ডিস, বিলিয়ারি এ্যট্রেসিরা, ডায়ারিয়া, টিটেনাস, ইনফেকশন অন্যতম কারন। অপুষ্টি, কম ওজন, অনাহার প্রভৃতি দ্বিতীয় কারণ। পরবর্তী পর্যায়ের মৃত্যুর কারণ যাই হোক সেটা এই মুহূর্তের আলোচ্য বিষয় নয়। শিশুর জন্মের প্রথম মাসের মৃত্যু সত্যিই ভয়ঙ্কর। আমাদের এ বিষয়ে অনেক বেশি যত্নবান হওয়া প্রয়োজন।
প্রসঙ্গত একটি বিশেষ বিষয়ের প্রতি আলোকপাত করা যেতেই পারে। সেটি হল স্বাস্থ্য সচেতনার ব্যাপার। একটু লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে সেই সব পরিবারেই শিশুরাই মৃত্যু মুখে পতিত হচ্ছে যাদের পরিবার, বিশেষত বাবা মা স্বাস্থ্য সম্বন্ধে বিশেষ সচেতন নয়। অনেকাংশেই শিক্ষার অভাব তাদের মধ্যে লক্ষ্য করা যায়। স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সঠিক চিন্তাভাবনা প্রতিটি বাবা মার মধ্যে সঠিকভাবে উন্মেষিত হলে আমরা শিশু মৃত্যুকে অনেকাংশেই ঠেকাতে পারতাম।
উদানীসতা তার মধ্যে অন্যতম কারণ। দেখা যায় প্রসূতি হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেরি। গ্রামাঞ্চলের হাসপাতালে প্রসব সংক্রান্ত সঠিক পরিকাঠামো নেই, যাতায়াত ব্যবস্থা অনুন্নত, তৎপরতার অভাব। সবশেষে মানতেই হবে আমাদের আর্থিক দুর্বলতার ব্যাপারটাও। অর্থাভাব অনেক সময়ই অনেক সদিচ্ছার অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। প্রসঙ্গত আর একটি বিষয়ে এখানে আলোকপাত করা যেতে পারে। তা হল অজ্ঞতা। বলা ভাল বিষয়টি সম্বন্ধেই সঠিকভাবে না জানা। যেমন ধরুন হোমিওপ্যাথির ভূমিকা। একাংশ মানুষ অধিকাংশ সময়ই জানতে পারে না। যে এই সকল শিশুরা অনেক বেশি সুরক্ষিত থাকতে যদি তাদের হোমিও চিকিৎসকের আওতায় আনা যেত। আমার এ বক্তব্য খুব একটা দুঃসাহসিক হল কিনা জানি না, তবে আমি মনে করি হোমিওপ্যাথির আরোগ্যকারী ক্ষমতা সম্বন্ধে সঠিক ধারণা না থাকার জন্য এ কথাটা বাতুলতা পর্যায়ে চলে যেতে পারে।