Tuesday, September 17, 2024
Homeনবজাতক শিশুর যত্ন ও পরিচর্যাPostnatal Care: প্রসবোত্তর পরিচর্যা

Postnatal Care: প্রসবোত্তর পরিচর্যা

সন্তান জন্মের পর ছয় সপ্তাহ সময়, যাকে আমরা পুয়ারপেরিয়াস বলি, সেই সময়টাতে মায়েদের শরীরের বিশেষ যত্ন এবং খেয়াল রাখা দরকার। তাই, এই সময়ের স্বাভাবিক শারীরিক পরিবর্তনের কিছু জ্ঞান থাকা দরকার। আমাদের দেশে বিশেষ করে নর্মাল ডেলিভারি হলে মায়েরা মাস দেড়েক সম্পূর্ণ বিশ্রামে থেকে নিজেদের শরীরের যত্ন নেওয়ার প্রয়োজনও মনে করেন না। এই সময় জরায়ু, প্রসবদ্বার, লিগামেন্ট ও মাসল্ প্রভৃতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। তাই যথেষ্ট বিশ্রামের প্রয়োজন। প্রসবের পর প্রসূতি যতদিন শয্যায় থাকে সম্পূর্ণ সূস্থ না হয়, সেই সময়কে লেইং ইন পিরিয়ড বলে। সাধারণত হাসপাতালে স্বাভাবিক প্রসব বলে একদিন পর ছুটি দেওয়া হয়। কিন্তু অপারেশন হলে দিন পাঁচেক রাখা হয়। এই সময় কয়েকটা ব্যাপারে নজর দিতে হবে।

  • বিশ্রাম, পরিচ্ছন্নতা, খাদ্য।
  • পায়খানা, প্রস্রাব, লোকিয়া ডিসচার্জ দেহের তাপমাত্রা, নাড়ির গতি ও রক্তের চাপ।
  • সেলাই থাকলে ঠিকমতো যত্ন, তার সাথে নবজাতক শিশুর যত্ন।
  • ছয় সপ্তাহ পর একবার পুরো শারীরিক পরীক্ষা।

বিশ্রাম, পরিচ্ছন্নতা খাদ্য :-

প্রসবের ধকল কাটিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় আসার জন্য বিশ্রামের বিশেষ প্রয়োজন। এরপর রয়েছে, বাচ্চার দেখাশোনার ব্যাপার। তাই রাত্রে ঠিকমতো ঘুম হয় না- সেজন্য দিনের বেলায় ঘুমানোর দরকার। সংসারের কাজও বেশি করা উচিত নয়। মা ও শিশুর বিছানা ও জামাকাপড় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা দরকার। যতদিন, লোকিয়া স্রাব হতে থাকবে, ততদিন জীবানুমুক্ত প্যাড ব্যবহার করা উচিত। যদি সেলাই থাকে বা না থাকলেও প্রতিবার বাথরুম যাওয়ার পর উষ্ণ জলে ডেটল দিয়ে পরিস্কার করে প্যাড নিতে হবে। সেলাই থাকলে বিশেষভাবে ড্রেসিং করতে হবে। যতদিন সেলাই শুকাচ্ছে।

বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানোর আগে ও পরে সবসময় ফোটানো জল স্তন ও নিপল পরিস্কার করতে হবে। যারা প্রথম মা হয়েছেন তাদের জানা দরকার, প্রথম ২ দিন বুকে দুধ আসে না, তবে তার পরিবর্তে হলুদ রং এর তরল পদার্থ কলোস্ট্রাম বের হয়। এটা শিশুর পক্ষে উপকারী কারণ এতে প্রোটিন বেশি থাকে এবং মায়ের শরীর থেকে অনেক অ্যান্টিবডি শিশুর শরীরে আসে যা অনেক রোগ প্রতিষেধক। প্রত্যেক মা তার ৬ মাস থেকে ১ বছরের বাচ্চাকে অন্য খাবারের সঙ্গে বুকের দুধ নিতে পারেন। শিশু ও মাকে একই সঙ্গে রাখা ভালো এতে উভয়ের বন্ধন মজবুত হবে। প্রসবের পূর্বের তুলনায় পরে ৭০০ ক্যালরি খাদ্য বাড়তি প্রয়োজন। তাই স্বাভাবিক খাবার নিয়মিত পরিমাণ মতো খেতে হবে তার সাথে প্রতিদিন অন্তত আধ লিটার দুধ খাওয়া উচিত।

স্বাভাবিক আমিষ খাদ্য তালিকা- 

সকাল :- প্রাতঃরাশ-টোস্ট পাউরুটি ৩-৪ পিস অথবা আটার রুটি। তার সঙ্গে মাখন বা জেলি। অথবা কম মশলা দিয়ে রান্না সবজি রুটির সঙ্গে, ডিম সেদ্ধ ১ টা চা, অবশ্যই এক কাপ দুধ।

দুপুর :- সাদাভাত, পরিমাণ মতো, অথবা রুটি ৫-৬টি ডাল ৫০ গ্রাম। মাছ/ মাংস। সপ্তাহে ১ দিন ৫০-৭৫ গ্রাম। সবজি-১০০ গ্রাম। 

বিকেলে:- মরশুমি ফল-২৫-৫০ গ্রাম, বিস্কুট-১৫ গ্রাম, চা-দুধ- ১ কাপ অথবা ছানা। 

রাত্রি:- দুপুরের মত তার সাথে হরলিকস বা চিকিৎসক প্রদত্ত কোন ড্রিঙ্কস খাওয়া উচিত।

পায়খানা প্রসাব ও যোনিপথে স্রাব প্রসবের পর কয়েকদিন কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে তার জন্য বেশি করে জল খেতে হয়। লোকিয়া ডিসচার্জ প্রথম দুদিন লাল থাকে। পরে আস্তে আস্তে গোলাপী পরে হলুদ থেকে সাদাটে হয়ে যায়। অত্যাধিক স্রাব বা তার সঙ্গে দুর্গন্ধ অথবা তলপেটে ব্যথা হলে, সেটার জন্য বিশেষ পরীক্ষা করা দরকার হাসপাতালে থাকাকালীন শিশুকে বি সি জি টিকা দেওয়া হয়। তারপর সময় অনুযায়ী টিকা দেওয়া হয়। ছয় সপ্তাহ পর মার ও বাচ্চার পুরো পরীক্ষা করা দরকার যেমন- নাড়ির গতি, রক্তচাপ, তাপমাত্রা। হৃদস্পন্দন, যোনিদ্বার, সেলাই, লোকিয়া স্রাব, জরায়ুর সাইজ ইত্যাদি। একজন নতুন মা যখন বাচ্চাকে পুরো বুকের দুধ খাওয়ায় তখন মালিক নাও হতে পারে। তাই ঐ সময় কিছু ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে গর্ভে সন্তান আসতে পারে। এছাড়াও মাকে কিছু ব্যয়াম করতে হয় যাতে শরীরের ঢিলে অবস্থায় গর্ভের পূর্বাবস্থায় আস্তে আস্তে ফিরে যাবে। 

প্রসবের পর অস্বাভাবিকতা-

অতিরিক্ত রক্তস্রাব-রক্তস্রাব প্রসবের পর ২-৩ সপ্তাহ চলতে পারে। এর বেশি দিন চলতে থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। তবে ১-২ দিনের মধ্যে যদি অত্যাধিক স্রাব হয় তাহলে বুঝতে হবে ভিতরে প্লাসেন্টার কিছু অংশ অথবা পাতলা পর্দা থাকে তার অংশ থাকতে পারে, সেক্ষেত্রে সেটা বার করার ব্যবস্থা নিতে হবে। অথবা, জরায়ু ঠিকমতো সঙ্কোচন করতে না পারলে জরায়ু সাইজে বেড়ে যেতে পারে। তৎক্ষণাৎ সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

প্রসবের পর জ্বর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে-জননতন্ত্রের ইনফেকশন হলে, মূত্রাশয় বা মূত্রনালীতে ইনফেকশন এর জন্য। প্রসবদ্বারে কোন ক্ষত বা আলসারেশন, জরায়ুর মুখে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আলসারেশনের মাধ্যমে জীবানুর প্রবেশ ঘটে। এছাড়া প্রসবের সময় জীবানুমুক্ত যন্ত্রপাতি ব্যবহার না করলে, সেখান থেকে ইনফেকশন হতে পারে। এই প্রকার ইনফেকশনের জন্য ভালো অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হবে তার সাথে রক্তশূন্যতা থাকলে তার চিকিৎসাও করতে হবে।

গর্ভাবস্থায় বা প্রসবকালে কিডনিতে জীবানু সংক্রমণ হতে পারে। কাঁপুনি দিয়ে জ্বর, ঘনঘন প্রস্রাব এবং প্রস্রাবের সময় জ্বালা বা ব্যথা হতে পারে, এক্ষেত্রে জল বেশি খেতে হবে। তাতে ঠিক না হলে প্রস্রাব পরীক্ষা করে সঠিক অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হবে।

প্রসবের পর স্তনে ইনফেকশন হতে পারে। স্তন ফুলে ওঠে, লাল হয়ে শক্ত হয় এবং ব্যথা হয়। দুধ ঠিকমতো নিঃসৃত হয় না। সময়মতো চিকিৎসা না করলে পেকে গিয়ে অ্যাবসেস হয়। তখন অপারেশন করতে হয়। প্রস্রব হওয়া পর্যন্ত যতটা সাবধানে থাকতে হয় তেমনি, প্রসবোত্তর পরিচর্যা ও খুব গুরুত্বপূর্ণ। বাচ্চা ও মাকে শারীরিক ও মানসিক সুস্থ রাখাও পরিবারের অন্যান্যদের দায়িত্ব।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular