হার্ট বড় হওয়ার পেছনে মূলত দুটো কারণ আছে। জন্মগত কারণ ও অর্জিত কারণ।
Table of Contents
হার্ট বড় হওয়া বোঝার উপায়
দু’টো উপায় আছে, বুকের এক্স-রে এবং অন্যান্য মেডিকেল পরীক্ষার সাহায্যে। জন্মগত হার্ট বড় হওয়াকে বলে কনজেনিটাল এনলার্জড হার্ট। দেখতে অনেকটা কলসির মতো। কী কারণে হার্ট বড় হতে পারে জন্মগত হার্ট ভালভে যদি রোগ থাকে তাকে বলা হয় অ্যাট্রিয়ালাইজেশন অফ দি ভেন্ট্রিকল। ডানদিকের ওপরের চেম্বার এবং ডানদিকের নীচের চেম্বার এক হয়ে যায়। কারণ ডানদিকের ওপরের চেম্বার এবং ডানদিকের নীচের চেম্বারের মধ্যে যে হার্ট ভালভ থাকে তাকে বলে ট্রাইকাসপিড ভালভ। এটা দু’রকম হতে পারে। সাইনোটিক বা অ্যাসাইনোটিক। মানে ব্লু বেবি বা পিঙ্ক বেবি।
- আর একটা কারণে হার্ট এনলার্জড হতে পারে সেটা হল এসিনমেঞ্জার সিনড্রোম।
- এছাড়াও পালমোনারি ভালভ যদি তৈরি না হয় তাহলেও হার্ট বড় হতে পারে। ট্রান্স-পজিশন অফ দি গ্রেট ভেসেলস-এর জন্যও হার্ট বড় হতে পারে।
সমস্যা
এগুলোর কারণে বাচ্চার গ্রোথ হয় না, বাচ্চা খেতে চায় না, বাচ্চা মাঝেমধ্যে অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। রেকারেন্ট চেষ্ট সংক্রমণ হতে পারে, হার্ট ফেলিওর হতে পারে। এইসব বাচ্চা বেশিদিন বাঁচে না৷
অ্যাকোয়ার্ড হার্ট ডিজিজ
জন্মের পর অনেক সময় নানান রোগে হার্ট বড় হতে পারে। তাকে বলে অ্যাকোয়ার্ড এনলার্জড হার্ট।
হার্টের দুটো কভারিং আছে। একটাকে বলে ভিসেরাল পেরিকার্ডিয়াম, আর একটা হল পেরাইটাল পেরিকার্ডিয়াম। এই দুটো পেরিকার্ডিয়ামের মধ্যে কতকগুলো লিঙ্ক আছে। হার্টটা যখন মুভ করে তখন দুটোর মধ্যে যাতে কোনো ঘষাঘষি না লাগে তার জন্য এই স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা। কিন্তু কখনও কখনও পেরিকার্ডিয়ামে সংক্রমণ হয়।
কী কী কারণে সংক্রমণ হতে পারে
- টিবি।
- ভাইরাল সংক্রমণ।
- কোলাজেন ডিজিজ।
- অ্যানিমিয়া।
- কিডনি ফেলিওর ইত্যাদি।
সংক্রমণ হলে কী হবে
সংক্রমণ হলে পেরিকার্ডিয়ামে জল জমে যায় তখন তাকে পেরিকার্ডিয়াল ইফিউসন বলে। পেরিকার্ডিয়াল ইফিউসন হলে একটা জরুরি অবস্থা তৈরি হয়, তাকে বলে কার্ডিয়াক ট্যামপোনেড। কার্ডিয়াক ট্যাপমোনেড জীবন সংশয় হতে পারে। হাত-পা ফুলে যায়, নিঃশ্বাসের কষ্ট হয়। রোগী নড়াচড়া করতে পারে না, শুতে পারে না, খেতে পারে না, বসে বসে হাঁপায়।
পেরিকার্ডিয়াম থেকে যদি জল তাড়াতাড়ি বার না করে দেওয়া যায় তাহলেই মুশকিল। শুধু জল বার করে দিলেই হবে না, কেন জল জমেছে সেটা পরীক্ষা করে বার করতে হবে ও তার চিকিৎসা করতে হবে।
ক্রনিক হার্ট ফেলিওর
দু’টো কারণে হতে পারে। একটা হচ্ছে অ্যাকোয়ার্ড রিউম্যাটিক ভালভিওলার হার্ট ডিজিজ। হার্ট এক্ষেত্রে বড় হয়ে যায়। রোগীর নিঃশ্বাসের কষ্ট, হাঁটাচলা করতে পারে না, খেতে পারে না, হাত-পা ফুলে যায়, লিভার বড় হয়, হার্টে জল জমতে পারে।
করোনারি ইস্কিমিক হার্ট ডিজিজ
হার্ট অ্যাটাকের পর হার্ট বড় হয়ে যেতে পারে। হার্ট ভালো পাম্প করতে পারে না। অল্পতেই রোগী হাঁপিয়ে পড়ে, সিঁড়িতে উঠতে পারে না, বুকে ব্যথা হয়। খাওয়া-দাওয়া করলে নিঃশ্বাস নিতে পারে না, স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারে না। এর চিকিৎসা হল বাইপাস সার্জারি, অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি ইত্যাদি।
হাইপারটেন্সি হার্ট ডিজিজ
ব্লাডপ্রেসার বেশি থাকলে হার্ট বড় হয় কিন্তু সেক্ষেত্রে রোগীর হার্টের মাসলগুলো মোটা হয়ে যায়। এখানে হঠাৎ হঠাৎ বাঁদিকের হার্টকে ফেল করতে দেখা যায়। পালমোনারি ইডিমায় নিঃশ্বাসের কষ্ট হয়। যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে পাঠানোর প্রয়োজন হয়।
কার্ডিয়াক মায়োপ্যাথি
হার্ট মাসলের রোগ এটা। এটা দু’রকমের হতে পারে। জন্মগত এবং ভাইরাস সংক্রমণ ঘটিত। এখানে হার্ট বড় হয় কিন্তু এর চিকিৎসা আসলে কিছু নেই। অনেক রকমভাবে চেষ্টা করা হয়। ডুয়েল চেম্বার পেস মেকার, কার্ডিওমায়োপ্লাস্টি, হার্ট ট্রান্সপ্ল্যান্ট প্রভৃতি।
শরীরের অন্যান্য অসুখের কারণে যেমন সিভিয়ার অ্যানিমিয়া, কিডনি ফেলিওর, মিক্সিডিমা, হাইপোথাইরয়েডিজম ও নানা ধরনের কোলাজেন ডিজিজের কারণে হার্ট বড় হতে পারে। বড় হলে অন্যান্য অসুবিধের সাথে হার্ট বড় হওয়ার অসুবিধেও থাকবে। সিস্টেমিক ডিজিজের চিকিৎসা করলে অনেকটা বেটার হবে।
হার্ট বড় হয়ে গেলে তাকে ছোট করা যায় না। কিন্তু নিঃশ্বাসের কষ্ট বা অন্য অসুবিধে থেকে রিলিফ দেওয়া যায় যদি চিকিৎসা ঠিকমতো করা যায়।