চিকিৎসা শাস্ত্রে রোগীর ওপর বিশ্বাস রেখে রোগ নির্ণয় করে রোগীর চিকিৎসা করতে হয়। তাই একই ওষুধ, একই ডোজে, একই সমস্যায় একাধিক রোগীকে দিলেও ফল কিন্তু এক হয় না। কারও ক্ষেত্রে ভালো ফল হয়, কারও ক্ষেত্রে কোনো কাজই হয় না। আবার কারও ক্ষেত্রে দেখা যায় সামান্য কাজ হল, পুরো রোগ সারল না। এমন হতেই পারে। কারণ ব্যক্তিবিশেষে পার্থক্য আছে। ফলে তাদের ক্ষেত্রে ওষুধের ফলও সবসময় একই হবে আশা করা যায় না।
যে রোগীর যে ওষুধে কাজ হয় তার সেই ওষুধটা খেয়ে যাওয়ার একটা প্রবণতা থাকে। সেই কারণে হয় তিনি ডাক্তারের কাছে যান কিংবা নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ওষুধ চালিয়ে যেতে থাকেন। আবার কখনো কখনো টিভি দেখে বা কাগজ পড়ে কিছু মানুষ বিভিন্ন ধরনের ওষুধ খাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সেইসব সিদ্ধান্ত কখনো ভালো হয়, কখনো ভালো হয় না। যাদের কাজ হয় না অর্থাৎ সমস্যা কমে না, তারা হয়তো ওষুধ বন্ধ করে দেন। অথবা অন্য ডাক্তারবাবুর কাছে চলে যান। সেখানে হয়তো ওষুধ পরিবর্তনও করতে হয়। আর যাদের কাজ হয়, তারা ওষুধ চালিয়েই যান। তাছাড়া আমাদের দেশে হোমিওপ্যাথি, কবিরাজি, ইউনানি, জলপড়া ইত্যাদি নানা ধরনের চিকিৎসা আছে। যার যেমন ইচ্ছে সে তার আর্থিক ক্ষমতা, মানসিক প্রস্তুতি ইত্যাদির ওপর নির্ভর করে চিকিৎসা করাতে পারেন। এটা তার অধিকার। ডাক্তারের কথা মানতেই হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা এদেশে নেই। বিদেশে অনেক জায়গায় সেন্ট্রাল হেল্থ সার্ভিস আছে। যেমন ইংল্যান্ডে একজন ডাক্তার কোনো রোগীকে দেখলে তিনি যতক্ষণ না অন্য ডাক্তারের কাছে রেফার করছেন ততক্ষণ রোগী অন্য ডাক্তারের কাছে যেতে পারবেন না। সেখানে পয়সা দিয়ে চিকিৎসা করতে হয় না। কিন্তু আমাদের দেশে চিকিৎসা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত স্বাধীনতা।
Table of Contents
কোন ধরনের সমস্যায় মানুষ নিজেই ওষুধ নির্বাচন করেন?
সাধারণত ছোটখাটো রোগে যেমন এক-দু’ দিনের জ্বর, সর্দিকাশি, পেট খারাপ, গা-হাত-পা ব্যথা ইত্যাদির সমস্যায় মানুষ ডাক্তারের কাছে না গিয়ে ওষুধের দোকান থেকেই, কখনো বিক্রেতার পরামর্শ মতো অথবা কখনো নিজের বুদ্ধিমত্তায় প্যারাসিটামল, অ্যান্টিবায়োটিক, পেনকিলার ইত্যাদি কিনে খেয়ে যান।
কী কী সমস্যা হতে পারে ?
সবসময় যে সমসা হবে তা কিন্তু নয়। তবে ওষুধের ওপর সমস্যা নির্ভর করে। যেমন অ্যান্টিবায়োটিক ডাক্তারের পরামর্শ মতো ঠিক ডোজে না খেলে তার অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স তৈরি হতে পারে। আবার সাধারণ পেনকিলার না খেয়ে কেউ যদি কড়া মাত্রার (হাই পাওয়ার) পেনকিলার খেয়ে নেন তবে কিন্তু তার সমস্যা হবেই।
অ্যান্টিবায়োটিক দু’ চারটে খেয়ে নিলে অনেক সময়ই তো রোগটি নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। তাহলে অসুবিধা কোথায় ?
হ্যাঁ, উপসর্গটি হয়তো কমে যায়। কিন্তু রোগটি নির্মূল হয় না। কিছুদিন পরেই রোগটি আবার প্রকাশ পাবে। তখন বেশিরভাগ সময়েই সেই অ্যান্টিবায়োটিকে আর কাজ হয় না। সেক্ষেত্রে ডাক্তারবাবুকে দেখতে হয় একটায় রেজিস্ট্যান্স না সবগুলোতেই রেজিস্ট্যান্স। যদি সবগুলোতেই রেজিস্ট্যান্স হয়ে যায়, তবে চিকিৎসা করা কিন্তু খুবই কঠিন হয়ে পড়ে।
অনেক সময় দেখা যায় জ্বর হচ্ছে বা পেট খারাপ হচ্ছে। ডাক্তারবাবু কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না। তখন কোনোরকম বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা ছাড়াই ডাক্তারবাবুই যদি অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করেন, তা থেকেও কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স তৈরি হতে পারে।
অ্যান্টিবায়োটিক ছাড়া অন্যান্য ওষুধের ক্ষেত্রেও কি একই সমস্যা দেখা যায় ?
অন্যান্য ওষুধের ক্ষেত্রে রেজিস্ট্যান্স তৈরি না হলেও অসম্পূর্ণ চিকিৎসার ফলে রোগটি আবার ফিরে আসে।
অনেক সময় দেখা যায় কিছু ওষুধ মানুষ দিনের পর দিন খেয়ে যান। এর কি সত্যিই প্রয়োজনীয়তা আছে?
কিছু অসুখ আছে যা সারে না। তাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। সেইসব ক্ষেত্রে ডাক্তারবাবু, প্রয়োজনানুযায়ী আজীবন ওষুধ প্রেসক্রাইব করতে পারেন। কিন্তু কিছু কিছু সমস্যায় রোগী নিজেই ওষুধ নির্বাচন করেন। হয়তো কখনো ডাক্তারবাবু দিয়েছিলেন তাতে তিনি উপকার পেয়েছিলেন। তা তিনি মনে রেখে দিয়েছিলেন। শুধু ওই অসুখই নয়, ওই অসুখের মতো অন্য অসুখেও তিনি তা ব্যবহার করে যান। সেক্ষেত্রে অসম্পূর্ণ চিকিৎসা হবে কিংবা অর্থের অপচয় ঘটবে। তবে কিছু ওষুধ আছে যা মানুষকে উৎফুল্ল করে, শান্তি দেয়। যেমন ঘুমের ওষুধ, দুশ্চিন্তা কমানোর ওষুধ ইত্যাদি। এগুলো একবার শুরু করলে মানুষ তা খেয়েই চলে। এইভাবে তার ওপর একটা নির্ভরশীলতা তৈরি হয়।
এই ভাবে মানুষ যে ওষুধের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন তা থেকে সে কীভাবে মুক্ত হবে ?
এই নির্ভরশীলতা দু’ ধরনের হয়। মানসিক নির্ভরশীলতা ও শারীরিক নির্ভরশীলতা। শারীরিক নির্ভরশীলতা থেকে বেরিয়ে আসা কঠিন। কিন্তু মানসিক নির্ভরশীলতা থেকে চেষ্টা করলে বেরোনো সম্ভব। মানসিকভাবে দুর্বলদেরই এই ধরনের নির্ভলশীল হতে দেখা যায়। যেমন কোনো কোনো মানুষ ভিটামিন, টনিক ইত্যাদি দিনের পর দিন অকারণে খেয়ে যান। কেউ আবার ওজন, মাসল ইত্যাদি বাড়ানোর জন্য অ্যানাবলিক স্টেরয়েড নেন। অনেকে নানা ধরনের শারীরিক স্বস্তির জন্য নিয়মিত বিভিন্ন ধরনের হরমোন ইঞ্জেকশন নিয়ে থাকেন। যেমন অনিয়মিত রজঃস্রাবে এ ধরনের হরমোনের প্রয়োগ দেখা যায় ৷
এ ধরনের নির্ভরশীলতায় সমস্যা কী?
নির্ভরশীলতা বলতে দীর্ঘদিন একই ওষুধ খেয়ে যাচ্ছেন, শুধু তাই নয়, অনেকে ওষুধ যখন তখন খেয়ে ফেলেন। যেমন মাথা ব্যথার ওষুধ। মানুষ জেনে গেল যে কোন ওষুধে মাথা ব্যথা কমল। তারপর থেকে সে মাথা ব্যথা হলেই সেই ওষুধটাই খেয়ে থাকে। অনেক সময় এমন হতে পারে যে, তার মাথা ব্যথার কারণ হয়তো অন্য। কিন্তু ওষুধ খেয়ে ফেলায় তা চাপা পড়ে যাচ্ছে। এরকম চলতে থাকলে যদি তার ব্রেন টিউমারের মতো খারাপ রোগ হয়ে থাকে তবে যখন তা ধরা পড়বে তখন আর করার কিছুই থাকবে না। কিংবা ব্লাড ভেসেলের অস্বাভাবিকতা যেমন অ্যানুরিজম থাকলে তা যখন ফেটে গিয়ে রোগী জ্ঞান হারিয়ে ফেলবে তখন বিপত্তির শেষ থাকবে না।
আবার কোনো খারাপ রোগ নেই, কিন্তু সাধারণ কারণে মাথা ব্যথা হচ্ছে, এমন ক্ষেত্রেও সমস্যা হতে পারে। ঘন ঘন ব্যথার ওষুধ খাওয়ায় আলসার হতে পারে। আর অর্থের অপচয় তো আছেই। সাধারণভাবে দেখা যায় এই ব্যাপারে সঠিক জ্ঞানের অভাব, অর্থাভাব অথবা বদ অভ্যাস থেকে এই ধরনের সমস্যা তৈরি হয়। তবে হ্যাঁ, সবসময় হয়তো ডাক্তারের কাছে যাওয়া সম্ভব হয় না। তখন দু’ একবার এভাবে কষ্ট কমালেও বারংবার এভাবে ওষুধ খাওয়া একেবারেই উচিত নয়।
আরেকটি ওষুধের ক্ষেত্রে হামেশাই সমস্যা হতে দেখা যায়। তা হল ঘুমের ওষুধ। ঘুম হচ্ছে না, এমন হলেই অনেক মানুষ অ্যালপ্রাজোলাম জাতীয় ওষুধ খেতে শুরু করেন। আর একবার শুরু করলে সে যখন দেখে ভালো আছে, তখন সে তা চাপিয়ে যেতে থাকে। এইভাবে একটা দিয়ে শুরু করলে তা আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে। এমন রোগীও আছেন যিনি দিনে দশ-বারোটা পর্যন্ত ঘুমের ওষুধ খাচ্ছেন, তবু তার ঘুম আসছে না। সেক্ষেত্রে তিনি বাধ্য হয়ে ডাক্তারের শরণাপন্ন হন। কিন্তু আগে তিনি ঘুম না আসার কারণ নির্ণয়ের চেষ্টাই করেননি। যখন তিনি ডাক্তারবাবুর কাছে গেলেন তখন দেখা গেল দীর্ঘদিন ধরে ইচ্ছেমতো ওষুধ খাওয়ায় তার ক্ষেত্রে ওষুধের কোনো ডোজই কাজ করছে না।
সবার তো এই সমস্যা হয় না, কারো কারো ক্ষেত্রে হয় কেন ?
প্রথমেই বলেছি, সাধারণত ভীতু, প্যানিকগ্রস্ত, দুর্বল মনের মানুষের ক্ষেত্রেই এমন ঘটে। তারা ওষুধ না থাকলে অসহায়, অসুস্থ বোধ করেন। এছাড়া কিছু ওষুধ আছে যা হল হ্যাবিট ফরমিং ড্রাগ। তার মধ্যে ঘুমের ওষুধ এক নম্বরে। দ্বিতীয় হল পেনকিলার বা ব্যথা কমানোর ওষুধ। ঘুমের ওষুধ যেমন বাড়তে থাকে, তেমনি ব্যথা কমার ওষুধ যারা ব্যবহার করেন তারা ব্যথা হওয়া মাত্রই ওষুধ খেয়ে নিশ্চিন্ত হয়ে যান। কিন্তু খেতে খেতে তারও সহ্যসীমাটা বেড়ে যায়। ফলে অনেক বেশি ডোজে ওষুধ দিতে হয়। যার ফলে নানা সমস্যা হতে পারে।
অনেক সময় মানসিক রোগের ক্ষেত্রে ডাক্তারবাবুরা দীর্ঘদিন ধরে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। তাতে ক্ষতি হয় না?
প্রথমত, চিকিৎসা শুধু উপসর্গ ভিত্তিক হয় না। উপসর্গের কারণ যাচাই করা দরকার। রোগীর মানসিক পরিস্থিতি, পরিবেশ, জীবনযাত্রা সবকিছু জেনে বুঝে তবেই চিকিৎসা করা উচিত। এই ধরনের রোগীর উত্তেজনা বা অস্থিরতা মানসিক কারণেও হতে পারে, আবার শারীরিক সমস্যায় হতে পারে। সুতরাং তা নির্ণয় করে চিকিৎসা করা উচিত। মানসিক কারণে হলে তাকে ঘুম পাড়িয়ে রাখলেই তো চলবে না। তাকে দৈনন্দিন কাজকর্ম চালাবার অবস্থায় রাখতে হবে। সেক্ষেত্রে তাকে যে ঘুমের ওষুধ দেওয়া হয়েছিল তা ধীরে ধীরে তুলে নিতে হবে। এই ওষুধ বন্ধ করার সময়েও রোগী আবার উত্তেজিত হয়ে পড়তে পারে। তখন তাকে সাইকিয়াট্রিস্ট দেখিয়ে তার চিকিৎসা করাতে হবে।
ড্রাগের ওপর নির্ভরশীলতা তৈরি হলে আর কী কী সমস্যা হতে পারে ?
মানুষ সাধারণত ঘুমের ওষুধ, ব্যথার ওষুধ, বমি, ডায়রিয়া, গ্যাস, অম্বল ইত্যাদির ওষুধ যখন, তখন যেমন ইচ্ছে খেয়ে থাকে। আর তা থেকেই ডিপেন্ডেন্সি তৈরি হয়। যেমন কারো হয়তো ঢেকুর উঠল, আর সঙ্গে সঙ্গেই সে একটা গ্যাস-অম্বলের ওষুধ খেয়ে নিল। আবার কেউ হয়তো কোনো গুরুত্বই দিল না। দুটি ক্ষেত্রেই দেখা যেতে পারে স্টমাকে ক্যানসারের কারণেই হয়তো গ্যাসের সমস্যা হচ্ছে। তাই নিজে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয় ৷
অনেকে আছেন যারা খিদে হচ্ছে না বলে সবসময় ভিটামিন খেয়ে যাচ্ছেন। কারণ তাদের বিশ্বাস ভিটামিন শরীরে শক্তি এনে দেবে। কিন্তু ভিটামিন তো সাপ্লিমেন্টাল ফুড যা প্রয়োজন অনুযায়ী দিতে হবে। অন্যথায় নয়। ক্যালোরি আসবে খাবার থেকে, ভিটামনি থেকে নয়।
ঘুমের ওষুধ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের ওপর তেমন কোনো প্রভাব না ফেললেও এর থেকে ড্রাগ ডিপেন্ডেন্সি ও তার বিষক্রিয়া থেকে চারিত্রিক ব্যবহারে গোলমাল হয়।
আবার কড়া ব্যথা কমানোর ওষুধ, যার মধ্যে অ্যাসপিরিন আছে তা কেউ খেয়ে যেতে থাকলে ব্যথা হয়তো কম থাকবে, কষ্ট কমবে, কিন্তু পেটে আলসার থাকলে তা থেকে রক্তপাত হতে পারে। কিডনির সমস্যাও হতে দেখা যায়।
ব্যথার জন্য বিভিন্ন এনসেইস কিংবা ডাইক্লোফেনাক গ্রুপের ওষুধ তো মানুষ হামেশাই খেয়ে থাকেন। তা থেকেও কিন্তু পেটের গন্ডগোল ও কিডনির সমস্যা হতে পারে।
পেটের সমস্যায় মেট্রোনিডাজোল জাতীয় ওষুধ খাওয়ার প্রবণতা এখন খুবই বেশি। কিন্তু বারে বারে এই ওষুধ খেলে তা থেকে গ্যাস্ট্রোইনস্টেস্টিনাল ট্রাক্টের ক্ষতি হয়। তার জন্য বমি, খিদে না হওয়া, মাথা ঘোরা ইত্যাদি সমস্যা দেখা যায়।
আবার দীর্ঘদিন ধরে যদি কেউ অ্যান্টাসিড, প্রধানত পিপিআই (যা আমাদের অ্যাসিড নিঃসরণ কমিয়ে দেয়) খায় তবে তার শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গিয়ে স্টমাকে সংক্রমণ হতে পারে। কারণ অ্যাসিড আমাদের
শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা বজায় রাখে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় হাইপার অ্যাসিডিটির সমস্যা খাবারের হেরফেরেই হচ্ছে, আলসার নেই।
অনেক সময় দেখা যায় কিছু কিছু মানুষ আছেন যারা কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ নিজের কাছে রেখে দেন। হয়তো ওষুধটি খাবেন না, কিন্তু কাছে না থাকলে নার্ভাস বোধ করেন। এর কারণ কী ?
হ্যাঁ, এই ধরনের সমস্যাকে বলে অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার। এর মধ্যে প্যানিক ডিসঅর্ডার, অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার ও ডিপ্রেসিভ ডিসঅর্ডার ইত্যাদি দেখা যায়। এগুলো অনেকের মধ্যে থাকে। সেসব ক্ষেত্রে অনেকে যখন-তখন ওষুধ খায়। অনেকে আবার ওষুধ না খেয়ে সঙ্গে রেখে দেন। এক্ষেত্রেও ওষুধটা তাকে ভরসা, শক্তি জোগায়।
একটু বয়স হয়ে গেলেই মানুষ বেশি ওষুধ-নির্ভর হয়ে পড়ে। এর কারণ কী ?
এর প্রধান কারণ বয়স হলে মানুষের শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ফলে সংক্রমণের হার বেড়ে যায়। কিন্তু এইসময় নিজে ওষুধ খাওয়া বেশি বিপজ্জনক। ব্যথার ওষুধ খেলে তা থেকে কিডনির সমস্যা হয়ে যেতে পারে কিংবা অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ খেলে তা থেকে পেটে আলসার হওয়া অস্বাভাবিক নয়। আর অ্যান্টিবায়োটিক খেলে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স হতে পারে ৷
আজকাল ক্যালসিয়াম খাওয়ার প্রবণতা খুবই দেখা যায়। একটু বয়স হলেই মহিলারা ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই ক্যালসিয়াম খেতে শুরু করেন। এবং আজীবন খেয়ে চলেন। এটাও কি একধরনের ওষুধ নির্ভরশীলতা ?
আমাদের দেশে প্রচুর সূর্যালোক থাকা সত্ত্বেও শহরের বাসিন্দাদের প্রায় প্রত্যেকের শরীরেই ভিটামিন-ডি’র অভাব দেখা যায়। সম্ভবত আমাদের জীবনযাত্রার গোলমালই এর কারণ। ফলে মহিলারা একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর থেকেই ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খেতে শুরু করেন। বয়স্কদের ক্ষেত্রে কারো যদি কিডনির সমস্যা থেকে থাকে, তবে এই ক্যালসিয়াম অনেক সময় ক্ষতিকর হতে পারে। ডোজ না জেনে নিজের খুশিমতো বা ওষুধ কোম্পানির নির্দেশমতো ক্যালসিয়াম খেলে তা রক্তনালীতে জমে গিয়ে রক্তের ফ্লো কমিয়ে দিতে পারে। তবে কিডনির সমস্যাই বেশি দেখা যায়। যদি কোনো মহিলার অস্টিওপোরোসিস হয়ে থাকে, তবে তাকে তার চিকিৎসা করাতে হবে। ক্যালসিয়াম খেয়ে গেলে চলবে না।
অসুখের ব্যাপারে মানুষ চূড়ান্ত উদাসীন। কেউ ডাক্তারের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পুরো ওষুধ খেয়ে ভালো হয়ে গেলে আর ফলোআপ করে না। পরে সমস্যা হলে এমনকী ওই ধরনের সমস্যা হলেও আগের ওষুধই কিনে খেয়ে নেয়। বাস্তবে হয়তো তার ওই ওষুধটির প্রয়োজনই নেই। এইভাবে অপ্রয়োজনীয় ওষুধ বা নির্দিষ্ট ডোজ ছাড়া ওষুধ দীর্ঘদিন খেলেই ওষুধ নির্ভরশীলতা বা ড্রাগ ডিপেন্ডেন্সি এবং তা থেকে ড্রাগ অ্যাডিকশন তৈরি হয়। তাই রোগীদের যেমন সচেতন হওয়া দরকার, একই ভাবে ডাক্তারবাবুদেরও উচিত রোগীর মানসিক অবস্থা, শারীরিক পরিস্থিতি, তার পরিবেশ, জীবনযাত্রা সবকিছু বিবেচনা করে সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় করে এবং প্রেসক্রিপশনে পরিষ্কারভাবে লিখে রোগীকে বুঝিয়ে বলে দিতে হবে যে, এই ওষুধ যে ক’দিন বলা আছে ততদিন খেয়ে ফলো আপে আসতে হবে। তাহলে হয়তো রোগী তার ইচ্ছামতো ওষুধ খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।