Tuesday, September 17, 2024
Homeপারম্পরিক ঔষধিবাংলাদেশের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার ইতিহাস

বাংলাদেশের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার ইতিহাস

চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসের আধুনিক যুগে এক ধরণের বিশেষ বৈশিষ্ট্য সমন্বিত চিকিৎসা পদ্ধতির আবিষ্কারক জার্মানীর প্রখ্যাত অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসক ডাঃ ক্রিশ্চিয়ান ফেড্রিক স্যামুয়েল হ্যানিম্যান (১৭৫৫-১৮৪৩) ১৯৭০ সালে এ চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কারের পর পরবর্তী সময়ে বিশ্বব্যাপী এর চিকিৎসা। শিক্ষা ও গবেষণার বিকাশ হয়। ১৯৮৩ সাল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউ এইচ ও) হোমিওপ্যাথিক বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি হিসাবে স্বীকৃতি দান করে। বাংলাদেশে হোমিওপ্যাথি বিকাশের ঘটনা বিবরণ সংযোগ আলোচনা করছি।

haniman

১৮১০ সালে অবিভক্ত বাংলায় হোমিওপ্যাথির প্রথম আগমন ঘটে। তখন খ্রীষ্টান মিশনারীরা এদেশে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার সূত্রপাত ঘটনা। পরবর্তী এদেশের কিছু গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তান কলেজের সংখ্যা ছিল ৩৭টা। ২০১১ এদেশে হোমিওপ্যাথি সরকারী স্বীকৃতি লাভ করে। তখন হোমিওপ্যাথি প্রাকটিমানর্স অ্যাক্ট ১৯৬৫ পাশ হয়। বোর্ড অভ হোমিওপ্যাথিক সিস্টেম অফ মেডিসিন করাচী গঠিত হয়। বোর্ড পূর্ব পাকিস্তান হতে ৫টা ও পশ্চিম পাকিস্তানের ৪টা কলেজে স্বীকৃতি প্রদান করে। ১৯৭২ সালে বোর্ড অফ হোমিওপ্যাথিক সিস্টেম হোমিওপ্যাথি বোর্ড গঠিত হয় ৷ ডাঃ নরুল ওহাব ছিলেন এর প্রথম প্রেসিডেন্ট। ৪ বছর মেয়াদী ডি এইচ এম এস (ডিপ্লোমা ইন হোমিওপ্যাথিক মেডিসিন এন্ড সার্জারি) কোর্স শিক্ষা দেয়া হয়। শিক্ষা শেষে কলেজ হাসপাতাল ইন্টার্ন চিকিৎসক হিসাবে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে বোর্ড সম্মিলিত হোমিওপ্যাথিদের চিকিৎসকের মেয়াদর ও সাক্ষাৎকারের ফলাফল বিবেচনা করে যোগ্যতা সম্পন্ন চিকিৎসকের তালিকা ভুক্ত করে। বোর্ড এখন ডি এইচ এম এস চিকিৎসকদের রেজিস্ট্রেশন ও সদন প্রদান, এ কোর্সের শিক্ষা ও দেশে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার মান নিয়ন্ত্রণ করেছেন।

১৯৭৮ সালে ঢাকার বাংলাদেশ হোমিওপাথিক মেডিক্যাল কলেজে বি এইচ এম এস (ব্যাচেলর ইন হোমিওপ্যাথিক মেডিসিন এন্ড সার্জারি) কোর্স চালু হয়। ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক প্যারামেডিকেল বোর্ড সরকার অনুমোদিত The Royel Harbe Tourndasion এর হোমিও সহকারী প্রশিক্ষণ প্রকল্প নামে অভিহিত। এই বোর্ডের অধীনে ৪টি কোর্স চালু আছে। যথা এল এইচ, এইচ সি এল, এইচ পি সি, এইচ এন সি প্রতিটি কোর্স থেকে ৬ মাস ইন্টার্নশিপের ব্যবস্থা আছে। বর্তমানে দেশে ৬৮ প্যারামেডিকেল কলেজ চালু আছে। ১৯৮০ সালে দ্বায়া অধিদপ্তরের অধীনে ঢাকার মিরপুর ১৪ নং সেকশনে বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্প প্রতিষ্ঠিত হয়। এদেশে হোমিওপ্যাথির বৃহত্তম উন্নয়নের লক্ষ্যে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়।

258

১৯৮২ সালে হোমিওপ্যাথি ওষুধ সর্বপ্রথম বাংলাদেশের অর্ন্তভূক্ত হয়। ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক প্র্যাকটিশনার্স অর্ডিন্যান্স পাশ হয়। এ সময় ওষুধ প্রশাসনে ‘হোমিওপ্যাথিক এক্সপার্ট’ পদ সৃষ্টি করা হয়।

১৯৮৪ সালে প্রশাসন হোমিওপ্যাথির নামে যাবতীয় পেটেন্ট, টনিক, মিশ্র বা কম্পাউন্ড ও ওবাচ্য প্রয়োগের উৎপাদন, আমদানি, মজুদ, প্রদর্শন ও বিতরণ আইনত দন্ডনীয় অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করে। প্রশাসন এ সময়ে বাজারে ৬৯ টা ওষুধ প্রস্তুতকারকের ৭৮০ টা ওষুধ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

১৯৮৪ সালে হোমিওপ্যাথি বোর্ড চিকিৎসকের চিকিৎসা গতি মালা, দায়িত্ব ও কর্তব্য বিষয় পুস্তিকা কোর্ড অব হোমিওপ্যাথিক এথিক্স, প্রনয়ন করে। তা অনুমোদনের জন্য ১৯৮৫ সালে সরকারের নিকট প্রেরণ করা হয়। এ নীতি মালাতে এ ধরণের যাবতীয় ওষুধ আইনত নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়

১৯৮৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বি এইচ এম এস কোর্সকে স্বীকৃতি প্রদান করে ও বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভুক্ত করে। ১৯৮৮ সালের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনে হোমিও ও ভেষজ চিকিৎসা পরিদপ্তর স্থাপিত হয়।

১৯৮৯ সালে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ব্যবস্থা। উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে ঢাকার মীরপুরের ১৪ নং সেকশানে সরকারী হোমিওপ্যাথিক ডিগ্রী কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপিত হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এর প্রশাসন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৯২ সালের ৭ই ডিসেম্বর কলেজ ও হাসপাতাল রাজস্বখাতে স্থানান্তর সমাজ হয়েছে। এ কলেজ ও বাংলাদেশ, হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ এস এস সি ও এইচ এস সিতে বিজ্ঞান বিভাগের পাশ করা ছাত্র ছাত্রীরা ৫ বছর মেয়াদী বি এইচ এম এস শিক্ষা কোর্সে অধ্যায়ন করে। পাশ করায় তাদেরকে যথাক্রমে নিজ নিজ কলেজ দুটোর ১০০ ও ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসা হিসেবে ১ বছর প্রশিক্ষন গ্রহণ করতে হয়। ১৯৯৭ সাল এপ্রিল হতে দি পিপলস্ ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশ, এ ডি এইচ এম এস চিকিৎসকদের এইচ সি এইচ (হেয়ার সার্টিফিকেট কোর্স ইন হোমিওপ্যাথি) কোর্সে ১ বছর শিক্ষা দেওয়া হয়। অন্যদিকে এখানে বি এইচ এম এস চিকিৎসককে ১ বছর মেয়াদী পি জি ডি (পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন হোমিওপ্যাথি কোর্স ২-৩ বছর মেয়াদী এম ডি (ডক্টর অফ মেডিসিন) কোনও এম ফিল (মাস্টার অফ ফিলসপি) এবং বি এইচ এম এস ও পি জি ডি চিকিৎসকদের ২-৩ বছর মেয়াদী পি এইচ ডি (ডক্টর অফ ফিলসপি) কোর্সে দেওয়া হচ্ছে। ১৯৯৯ সালের জুলাই হতে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পরিদপ্তরের পরিকল্পনা কার্যকারিতা ও তত্বাবধানে এইচ পি এস প্রি প্রকল্প গ্রহন করা হয়। প্রকল্পের অধীনে নির্বাচিত ৪৫টা জেলা হাসপাতালে হোমিওপ্যাথি, ইউনানী ও  আয়ুর্বেদিক স্নাতক পাশ চিকিৎসকদের যোগদানের ব্যবস্থা করা হয়। 

বিকল্প চিকিৎসা ব্যবস্থার মাধ্যমে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়, দেশীয় ভেষজ উদ্ভিদ উৎপাদন এ বিষয়ে কুটির শিল্পে নিয়োজিত শ্রমিকের উন্নয়নে উৎসাহিত করা এবং বিকল্প চিকিৎসা ব্যবস্থার দ্বীয়া মান সম্পন্ন সেবা দানের লক্ষ্যে এ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বাংলাদেশের হোমিওপ্যাথি বিকাশের ক্ষেত্রে ভারতের চিকিৎসকের অবদান আছে। তারা হল ডাঃ রাজেন্দ্রলাল দত্ত, ডাঃ মহেন্দ্রলাল সরকার, ডাঃ প্রতাপচন্দ্র মজুমদার, ডাঃ মহেশ ভট্টাচার্য্য, ডাঃ ডি এন দে, ডাঃ দিওয়ান জয়চাঁদ, ডাঃ চন্দ্রশেখর কালি, ডাঃ নরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, ডাঃ নীলমনি ঘটক, ডাঃ জে এন কাঞ্জিলাল, ডাঃ জে এন মজুমদার, ডাঃ দিওয়ান হরিশচাঁদ, ডাঃ যুগল কিশোর, ডাঃ এ সি দত্ত। অধুনা বাংলাদেশের হোমিওপ্যাথি উন্নয়ন ভারতে যে চিকিৎসক ঝড় তুলেছেন তিনি হলেন ডাঃ প্রকাশ মল্লিক তিনি ওয়াও ফেডারেশন। সব হোমিওপ্যাথি বিশেষ কয়েকটি দেশে কাজ করে চলেছে বাংলাদেশের কয়েকটা জেলা এই প্রতিষ্ঠানের প্রভাব আছে ডাঃ মল্লিকের লেখা বইগুলি বাংলাদেশে বিশেষভাবে সমাদৃত। বাংলাদেশের যে চিকিৎসকের নাম উল্লেখ করতে হয় ডাঃ নুরুল ওহাব, ডাঃ মা হামিদ, ডাঃ রবীন দত্ত, ডাঃ নারায়ণ চন্দ্র মিত্র, ডাঃ এম এম ওয়াজিউল্লাহ, ডাঃ চন্দীপদ চক্রবর্তী, ডাঃ ডি বি খান, ডাঃ জাকির হোসেন চৌধুরী, ডাঃ মোহম্মদ হোসেন, ডাঃ এ সালী, ডাঃ হরিমোহন চৌধুরী, ডাঃ সিরাজুল ইসলাম, ডাঃ এ মালেক, গুরুদাস সরকার প্রমুখ। পাকিস্তানের ডাঃ ইউ এস পাশা, শ্রীলঙ্কার ডাঃ সি ভি এম ফেরিয়া এবং আরও অনেকে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular