Thursday, July 4, 2024
Homeমহিলাদের স্বাস্থ্যআজকের দূর্গাদের রোগবালাই

আজকের দূর্গাদের রোগবালাই

আজকের মেয়েরা তো স্বয়ং দুর্গা। প্রত্যেকে এক একজন দশভূজা। ঘরে-বাইরে কত কিছু তাকে সামলাতে হয়। নিজের অফিসের ডেডলাইন থেকে বরের ট্যুরের ব্যাগ গোছানো, মেয়ের স্কুলের প্রোজেক্ট তৈরি থেকে কাজের মাসির কামাই, শশুর মশাইয়ের পেনশন থেকে মায়ের ছানি অপারেশন— সর্বত্রই চোখ বুজে যার ওপর ভরসা করা যায় সেই আধুনিকা গৃহবধুটিকে দুর্গা ছাড়া আর কী বলা যায়।

এমন সাতশো দিকে সামাল দিতে দিতে নিজের ওপর অনিবার্য অবহেলা এবং তার থেকে নানা রোগ বালাই— খুচরো থেকে বড়সড়। এখানে তেমনই কিছু সমস্যা নিয়ে সচেতন করা হল তোমাকে— আজকের মা দুর্গাকে। এই তালিকা আরও আরও দীর্ঘ করা যেতেই পারত, হয়তো করা উচিতও। সে সম্ভাবনা ভবিষ্যতের জন্য তোলা থাক। আপাতত এই গুটি দুয়েক নিয়েই কথা বলা যাক।

মাইগ্রেন

দুর্গার বন্ধুরা কোনও আউটিংয়ের প্রোগ্রামে ওকে বড় একটা ডাকে না। ডাকলেও অবধারিত টিপ্পনী কাটে, ‘দেখিস তোর মাথাটা যেন ঠিক থাকে।’ অমর্ত্য মুখে যথেষ্ট সহানুভূতি দেখালেও হাবেভাবে নিজের বিরক্তিটা বুঝিয়ে দেয়। অবশ্য অন্যদের আর দোষ কী, দুর্গার নিজেরই নিজের ওপর বিরক্ত লাগে, হঠাৎ হাজির হওয়া নিজের মাথাব্যথার ওপর।

উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ঠিক আগে আগে একদিন শুরু হয়েছিল। তারপর থেকে ছাড়ান নেই। মাঝে মাঝে মাস কয়েক একদম ঠিক থাকে। মনে হয় আপদ বিদেয় হল বুঝি। ও বাবা, তারপর আবার হঠাৎ একদিন হাজির। মাথার একদিকে দপদপে ব্যথা, নামতে নামতে চোখের ওপর অবধি, সঙ্গে বিচ্ছিরি গা গুলোনো। চার- পাঁচ ঘণ্টায় কোনওবার রেহাই দিল, তো কোনোবার টানা চলল আড়াই-তিন দিন ধরে। মাঝে ঘর অন্ধকার করে চুপচাপ খানিকক্ষণ ঘুমিয়ে নিতে পারলে সাময়িক নিষ্কৃতি।

ঠাকুমা বলতেন, আধকপালে— তোর এলাহাবাদের পিসিরও আছে। ডাক্তার কাকু একবার চোখ দেখাতে পাঠালেন, একবার সাইনাসের এক্স-রে করালেন। তারপর রায় দিয়েছিলেন, এটা মাইগ্রেন— কিছু পাওয়া যাবে না জানি, তবু নিশ্চিত হওয়ার জন্য একটা ব্রেন স্ক্যান করে নিও। 

বাস্তবিক, মাথা ব্যথার শতেক কারণের মধ্যে সাইনোসাইটিস, চশমার পাওয়ার, ব্রেনে সমস্যা এমনতরো কোনও শারীরিক কারণই যখন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, তখন আমরা তাকে বলি ‘প্রাইমারি হেডেক’। এই ‘প্রাইমারি হেডেক’ -এর মধ্যে সবচেয়ে কমন ‘টেনশন হেডেক’(৬৯%)।

লক্ষণ মিলিয়ে মাইগ্রেন ডায়াগনোসিসের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট নিয়ম ঠিক করা হয়েছে। নীচের ১নং তালিকা থেকে অন্তত দুটি, এবং ২নং তালিকা থেকে অন্তত একটি মাথাব্যথার লক্ষণ মিলে গেলেই তাকে মাইগ্রেন বলা হবে— 

তালিকা-১ :

  • মাথা বা কপালের একদিকে ব্যথা। 
  • দপদপে (থ্রবিং) ব্যথা। 
  • চলাফেরা করলে ব্যথা বাড়ে। 
  • মাঝে-মাঝে অতিরিক্ত বা অসহ্য ব্যথা। 

তালিকা-২ :

  • সঙ্গে গা গুলানো বা বমি। 
  • জোরালো আলো বা শব্দে সমস্যা।

                                                                                                                                                                                                                                              এছাড়া যারা দীর্ঘকাল মাইগ্রেনে কষ্ট পাচ্ছেন, তারা এই ব্যথার আর একটি বৈশিষ্ট্যের কথা জানেন। ঝড়ের পূর্বাভাসের মতো, মাইগ্রেন ভুক্তভোগীকে জানান দিয়ে আসে। কারও শরীরে এক অদ্ভুত অস্বস্তিকর অনুভূতি হয়, কারও চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। মোদ্দা কথা, দীর্ঘদিন ভুগে ভুগে তারা শরীরে এক আগাম বিপদের ‘গন্ধ’ পান। এমন লক্ষণকে ডাক্তারি পরিভাষায় বলে ‘অরা’ (Aura)

এই ‘অরা’ মাইগ্রেনের এতই জরুরি এক লক্ষণ যে মাইগ্রেন ডায়াগনোসিসের জন্য এটিকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হয়। সেই বিচারে মাইগ্রেন হল মূলত তিনটি লক্ষণের সমষ্টি—এক, অরা + দুই, মাথার একদিকে (ডান বা বাম) যন্ত্রণা + তিন, গা-গুলোনো বা বমি।

মাইগ্রেন মূলত কমবয়সীদের রোগ এবং মূলত মেয়েদের রোগ। প্রায় ১৫-২০% মহিলারা যেখানে মাইগ্রেনে কষ্ট পান, ছেলেরা সেখানে মাত্র ৬% আক্রান্ত। সাধারণত মাইগ্রেনের প্রথম অ্যাটাক হয় ছেলেবেলায়, থুড়ি মেয়েবেলায় বা বয়ঃসন্ধির সময়। ৪০ বছরের পর মাইগ্রেন শুরু হওয়ার সম্ভাবনা ১০ শতাংশেরও কম। 

যারা মাইগ্রেনে ভোগেন তাদের প্রায় প্রত্যেকের নিজস্ব কিছু ‘ট্রিগারিং ফ্যাক্টর’ থাকে। অর্থাৎ কিছু বিশেষ খাবার বা ওষুধ বা পরিস্থিতি, যা মাইগ্রেনকে ডেকে আনে। অবশ্যই সবার ক্ষেত্রে সবগুলো খাটবে না, তবু মাইগ্রেনের কয়েকটি কমন ‘ট্রিগারিং ফ্যাক্টর’ হল : চিজ চকোলেট, রেড ওয়াইন, গর্ভরোধক পিল, ঋতুচক্রের কোনও বিশেষ সময়— কারও শুরুর দিকে, কারও বা মাঝামাঝি, মানসিক উচাটন, অনভ্যস্ত পরিশ্রম।

মাইগ্রেন যে কেন হয় তা নিয়ে বিজ্ঞানীরা এখনও কোনও সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি । তবে কিছু সম্ভাবনার কথা বলা হয়। যেমন—

  • বংশগতির একটা প্রভাব অনেক ক্ষেত্রেই রয়েছে। মানে মা-বাবা বা অন্য নিকট কোনও আত্মীয়ের মাইগ্রেন থাকলে সন্তানের হবার আশঙ্কা বেশি।
  • মহিলারা বেশি ভুগছেন, গর্ভরোধক পিল একটা ‘ট্রিগারিং ফ্যাক্টর’, মাসিক ঋতুচক্রের সঙ্গে সম্পর্ক আছে— এইসব কারণে মনে করা হয়, মেয়েদের হরমোন কোনওভাবে মাইগ্রেনের কার্য- কারণের সঙ্গে যুক্ত।
  • মস্তিষ্কে রক্ত সংবহনের সঙ্গেও একটা সম্পর্ক থাকতে পারে। এই প্রসঙ্গে বলে রাখা ভালো, যারা মাইগ্রেনে ভোগেন, বিশেষত যাদের অ্যাটাকের আগে অরা’ হয়, তাদের স্ট্রোক হবার আশঙ্কা সামান্য বেশি। আর সঙ্গে স্মোকিংয়ে অভ্যস্ত হলে বা নিয়মিত ওরাল পিল খেলে এই আশঙ্কা আরও বাড়ে ৷

চিকিৎসা

একটা কথা তো সাধারণ বুদ্ধিতেই বোঝা যাচ্ছে, নিজের ক্ষেত্রে কোন কোন ‘ট্রিগারিং ফ্যাক্টর’ কাজ করে সেটা অভিজ্ঞতা থেকে বুঝে নিয়ে সেগুলো এড়িয়ে চলা। মাইগ্রেন চিকিৎসায় এটিই এখনও সবচেয়ে জরুরি ধাপ।

তাছাড়া এখন প্রচুর ওষুধ বেরিয়েছে যেগুলি মাইগ্রেন অ্যাটাকের সংখ্যা এবং যন্ত্রণার আতিশয্য দুটোকেই অনেকটা সামলে রাখতে পারে। বয়স, ওজন, কষ্টের ধরন এইসব দেখে ওষুধ ঠিক করতে হয়।

পারিবারিক ডাক্তারবাবুর সাহায্য নিয়ে এই রোগীরা এখন অনেক সফলভাবে মাইগ্রেন সামলাতে পারছেন।

যেমন আমাদের দুর্গা। মেয়েটি এখন এক্কেবারে বদলে গেছে— হাসিখুশি, টগবগে। হালকা মাথায় জীবনটা এনজয় করছে। সত্যি। আপনাদের নেক্সট প্রোগ্রামে নিশ্চিন্তে দুর্গাকে ডাকতে পারেন। ওর মাইগ্রেন নিয়ে আপনাদের আর কোনও মাথাব্যথা করতে হবে না। ও নিজেই সামলে নিতে পারবে।

টয়লেট সমস্যা

আদতে কুবুদ্ধিটা দিয়েছিল অতসীদি। জ্যাঠতুতো দিদি। দুর্গা তখন সবে স্কুল সার্ভিস কমিশনে কোয়ালিফাই করে একটা স্কুলে চাকরি পেয়েছে। হাওড়া থেকে মিনিট চল্লিশের ট্রেন জার্নি, মাধ্যমিকে প্রায় সবাই ফার্স্ট ডিভিশন, পলিটিক্যাল দাদা-দিদিদের উৎপাত নেই— স্কুলটার এই সব অ্যাডভান্টেজ নিয়েই ও খুশি ছিল। কিন্তু ক’দিন পরেই বয়েজ স্কুলের একমাত্র দিদিমণি হিসাবে কিছু কিছু অনিবার্য অস্বস্তি শুরু হল। টিচার্সরুম ভর্তি পুরুষ মাস্টারমশাইয়ের মাঝে একা মেয়ে থাকার অস্বস্তি তো আছেই। কিন্তু সবচেয়ে বড় সমস্যা টয়লেট নিয়ে। 

অতসীদি চটজলদি সমাধান বাতলে দিল, এতে আর অসুবিধার কী আছে। আমারও তো একই অবস্থা। 

-ধ্যাৎ, কী যে বলো অতসীদি, তোমাদের কেমন কেতাদুরস্ত এসি অফিস। তাছাড়া অতজন মহিলা কর্মী। তার পাশে আমি মফস্সল স্কুলে একমাত্র লেডি টিচার। কীসে আর কীসে।

-কিন্তু টয়লেটের ক্ষেত্রে তেমন কোনও তফাৎ নেই সোনা, অতসীদি একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বলে, আমাদের ফ্রন্ট অফিস দেখে টয়লেট সম্পর্কে ধারণা করতে যাস না। সেটা তোদের মতোই একইরকম নরক।

-তাহলে তোমরা কী করো?

-জাস্ট যাই না।

-মানে? তোমাদের ওয়ার্কিং আওয়ার্স তো আমাদের চেয়েও বেশি। দুর্গার আঁতকে ওঠা দেখে অতসীদি মুচকি হাসে, -তাতে কী, অভ্যাস হয়ে গেছে। বাড়ি থেকে বেরোবার সময় এক চুমুক জল খাই। অফিসে পারতপক্ষে জল-চা- কফি-কোল্ড ড্রিঙ্কস মুখে তুলি না। ব্যাস, অভ্যেস হয়ে গেছে।

অভ্যাস করতে শুরু করল দূর্গাও। ছেলেবেলা থেকে অতসীদি ওর আদর্শ। তার লেখাপড়া, ড্রেস সেন্স, অ্যাকসেন্ট সব কিছুই নকল করার চেষ্টা করত সে। এখন নকল করা শুরু হল তার টয়লেট হ্যাবিটও।

ফল পাওয়া গেল মাস কয়েকের মধ্যেই। পিরিয়ডের সময় অতি দীর্ঘ সময় অপরিচ্ছন্নতা বয়ে বেড়াবার বাধ্যবাধকতা সমস্যাটাকে আরোই ফার্স্ট ফরোয়ার্ড করল যেন। বারবার টয়লেট পাওয়ার বেগ, বেগ এলেই তলপেটে চিনচিনে ব্যথা, টয়লেট করার সময় ইউরিনারি ট্রাক্টে ইনফ্লামেশন, টয়লেট শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও মনে হচ্ছে খানিকটা প্রস্রাব পেটে রয়ে গেল, প্রস্রাবে ঘোলাটে রং আর ঝাঁঝালো দুর্গন্ধ।

ডাক্তারবাবু বললেন, ইউরিনারি ট্রাক্টে ইনফেকশন (ইউ.টি.আই)। নামেই মালুম রোগটা কেমন ধারা। ইনফেকশন প্রথমে শুরু হয় মুত্রনালী বা ইউরেথ্রায় (ইউরেথ্রাইটিস), সেখান থেকে ওপর দিকে উঠতে উঠতে মূত্রথলিতে (সিস্টাইটিস)। ঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু না হলে ইনফেকশন আরও ভেতর দিকে উঠে খোদ কিডনিকেও কাবু করতে পারে (পায়োলোনেফ্রাইটিস)।

uti

মেয়েরাই টার্গেট

এই ইউ.টি.আই মূলত মেয়েদের রোগ। এক বছর বয়স পেরিয়ে যাওয়ার পর পুরুষ মানুষ আর বড় একটা এই সমস্যায় ভোগে না। একমাত্র বছর ষাটেক বয়স হয়ে যাওয়ার পর প্রস্টেটের সমস্যা শুরু হলে কখনও কখনও ইউ.টি.আই দেখা দিতে পারে। আর মেয়েদের ক্ষেত্রে প্রজননক্ষম বয়সটাই এই রোগের পক্ষে সবচেয়ে বড় মওকা। বলা হয়, দু’জন মহিলার মধ্যে গড়ে অন্তত একজন তাদের জীবনে কোনো না কোনো সময় ইউ.টি.আই-তে আক্রান্ত হন।

আসলে মেয়েদের বেশি ইউ.টি.আই হওয়ার কারণ তাদের ছোট এবং স্ট্রেট মুত্রনালী। মূত্রথলি বাব্লাডার থেকে প্রস্রাব- মুখ অবধি মূত্রনালীর দৈর্ঘ্য মেয়েদের শরীরে যেখানে মাত্র চার সেমি-র কাছাকাছি, ছেলেদের শরীরে সেটি ১৫-২৯ সেমি। ফলে মেয়েদের ক্ষেত্রে রোগ-জীবাণু অল্প চেষ্টাতেই সোজা মুত্রথলিতে ঢুকে আক্রমণ শানাতে পারছে।

আর মুত্রনালীর মুখের কাছে তো ব্যাক্টেরিয়া- ফাঙ্গাসের ছড়াছড়ি। স্বাভাবিক সময়েই সেখানে ঘাটি গেড়ে থাকে কিছু জীবাণু। পিরিয়ডের সময় বা ইন্টারকোর্সের পর তার পরিমাণ অনেকটা বেড়ে যায়, কাছেই মলদ্বার থাকায় বহিরাগত জীবাণুও সহজে চলে আসতে পারে, আর সবচেয়ে বড় সমস্যা তৈরি হয় অপরিচ্ছন্নতা থেকে। মানে শরীরের অপরিচ্ছন্নতা শুধু নয়, সে ব্যাপারে অনেকেই সচেতন সে তো জানি। কিন্তু অপরিচ্ছন্ন টয়লেটে হাজির রোগ-জীবাণুও একটু সুযোগ পেলেই মুত্রনালীতে সেঁধিয়ে গিয়ে ওই চার সেমি পথ পেরিয়ে সোজা ভেতর দিকে ছড়িয়ে পড়ে।

এই কারণটার জন্যই অতসীদিকে দোষ দেওয়া যাচ্ছে না। নোংরা টয়লেট ব্যবহার করার জন্যও একই ইউ.টি.আই-এর শিকার হতে পারত দুর্গা বা অতসীদি বা তার সহকর্মীরা। সুতরাং টয়লেট থেকে সাবধান।

দেশি ভঙ্গি নাকি বিদেশি

উবু হয়ে বসা বা স্কোয়াটিংকে বলে এশিয় ভঙ্গি। আর কমোড চেয়ারের মতো বসা মূলত ইউরোপীয় ভঙ্গি। এর মধ্যে কোন ভঙ্গি টয়লেটের পক্ষে আদর্শ তা নিয়ে নানা মত। তবু সাধারণভাবে বলা যায় কোলন এবং পেলভিসের গঠনগত বৈশিষ্ট্যের কথা মাথায় রেখে দেশি ভঙ্গিটির প্রতিই বিশেষজ্ঞদের পাল্লা ভারি। এই ভঙ্গিতে অভ্যস্ত হলে হার্নিয়া আর প্রোলাপ্সের আশঙ্কা নাকি কিছুটা কম থাকে কিন্তু টয়লেট অপরিচ্ছন্ন থাকলে দেশি ভঙ্গিতে প্রস্রাব-মুখ সোর্স-অফ-ইনফেকশনের অনেক কাছাকাছি আসতে বাধ্য হয়। তাতে ইউ.টি.আই-এর আশঙ্কা বাড়ে। সেদিক থেকে বিচার করলে অফিস-কাছারিতে বা পাবলিক টয়লেটে বিদেশি ধারার কমোড হওয়াই তবু নিরাপদ কোনও কোনও ভুক্তভোগী বাড়ির বাইরে দেশি-বিদেশি যে ব্যবস্থাই থাকুক, নিজেরা চেয়ারে বসা আর দাঁড়ানোর মাঝামাঝি একটা ভঙ্গিতে রপ্ত হওয়ার পক্ষপাতী। পোশাক পারমিট করলে এতে আপত্তির কিছু নেই।

হাত ধোওয়া

হাত ধোওয়ার কোনও বিকল্প নেই। দুটি আলাদা আলাদা সমীক্ষার কথা বলি। একটিতে দেখা যাচ্ছে পাবলিক টয়লেটের ফ্লাশ-হ্যান্ডেলে গড়ে প্রতি স্কোয়ার ইঞ্চিতে ৪০,০০০ নানা জাতের জীবাণু থাকে। সবগুলোই যে সমান মারাত্মক ব্যাক্টেরিয়া বা ভাইরাস তা নিশ্চয় নয়, তবু সংখ্যাটা একবার কল্পনা করুন। আর দ্বিতীয় সার্ভের ফলাফল আরোই আঁতকে দেওয়ার মতো। অ্যারিজোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজিস্ট ডঃ কেলি রেনল্ডস্ অফিস- কম্পিউটারের ওপর সমীক্ষা চালিয়ে সিদ্ধান্ত টেনেছেন অর্ধেক কী-বোর্ডেই মুত্রের অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে।

এই দুই গুরুগম্ভীর সমীক্ষা থেকে যে মূল সমাধানটি বেরিয়ে এল সে-কথাটি কিন্তু ছেলেবেলা থেকে বড়রা যে আমাদের কতবার বলেছেন তার হিসেব নেই। টয়লেট থেকে বেরোবার সময় হাত দুটি সাবান দিয়ে ভালো করে ঘষে ঘষে ধোওয়া আর তরাপর পরিষ্কার সুতির কাপড়ে মোছা। সুতরাং টয়লেটে ঝুলিয়ে রাখা টিস্যু পেপার বা বেসিনের পাশে আটকানো হ্যান্ড ড্রয়ারের চেয়ে নিজস্ব রুমাল বা তোয়ালেই অনেক নিরাপদ। অফিসের টয়লেটে যদি অটো- ফ্লাশিংয়ের ব্যবস্থা থাকে তবু রক্ষে, তা না হলে এই সাবেকি সাবধানতার আজও কোনও বিকল্প নেই।

steps of hand washing

যাদের বারবার ইনফেকশন হচ্ছে

বছরে তিন বা তার চেয়েও বেশিবার ইউ.টি.আই হলে একটু লম্বা কোর্সের অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হয়, আর তার সঙ্গে বাড়তি সাবধানতা সাধারণভাবে সবাই নিলেই ভালো। যেমন-

  • দিনে অন্তত দু’ থেকে আড়াই লিটার জল খাওয়া।
  • টয়লেটের বেগ বেশিক্ষণ চেপে না রাখা। বেশি কষ্টের সময় প্রত্যেকবার টয়লেট করার ১০-১৫ মিনিট পর আর একবার ইউরিনেট করা ভালো।
  • ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা। ইন্টারকোর্সের আগে ও পরে একবার করে ইউরিনেট করে নেওয়া উচিত।
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular