Home স্বাস্থ্য পরামর্শ খিদের খুঁটিনাটি

খিদের খুঁটিনাটি

মানব শরীরের খিদে নামক ব্যাপারটা বেশ গোলমেলে। কার যে কেমন ভাবে কখন কখন খিদে পাবে সেটা ব্যক্তিভেদে তফাত থাকে। কারও একটু খেলেই পেট ফুলে যায়, মুখে অরুচি, সারাদিনে খাবার ইচ্ছাই থাকে না। কারও আবার এক ঘন্টা পরপর খেলেও বলেন না ঠিক করে খাওয়া হল না। তাই, সঠিক বুঝি না কেন যে খিদে পায়, আর কেনই বা পায় না। 

খিদে না হলে খিদে বাড়াবার ওষুধ কতটা কার্যকর

আমরা যাকে বাংলায় খিদে বলি। সাহেবরা তার দুটো নাম দিয়েছে হাঙ্গার আর অ্যাপেটাইট। এখন প্রশ্ন হল হাঙ্গার এবং অ্যাপেটাইটের মধ্যে পার্থক্য কি? দুটো কারণে খিদে পায় এক শারীরিক প্রয়োজনে স্বাভাবিকভাবেই খিদে পেয়ে থাকে, ইংরাজিতে যাকে বলে, অ্যাপেটাইট। আর যদি কোনো খাবার দেখে বা খাদ্যের গন্ধ শুঁকে শরীরের প্রয়োজন না থাকলেও খিদে পায় তখন তাকে বলা হয় হাঙ্গার। অ্যাপেটাইট শরীরের স্বাভাবিক ব্যাপার। আর হাঙ্গার মূলত শরীরের ক্ষতি করে।

আমরা যখন খাদ্য গ্রহণ করি। তখন তা পাকস্থলীতে গিয়ে ধীরে ধীরে জমা হতে থাকে। এবং পাকস্থলীর আয়তনও কিছুটা বৃদ্ধি পায়। এইভাবে পাকস্থলীর আয়তন নির্দিষ্ট পরিমাণে বাড়লে। পাকস্থলীতে অবস্থিত স্নায়ু আমাদের মাথায় সংকেত পাঠায় যে ভর্তি হয়ে গেছে, তখন আমাদেরও খাবার ইচ্ছে কমে যায়। এর পরে আবার নির্দিষ্ট সময় পরে পাকস্থলী খালি হয়ে গেলে পাকস্থলীর স্নায়ুর মাধ্যমে সেই সংকেত আমাদের মাথায় পৌঁছায় এবং আমাদের আবার খিদে পায়। এছাড়াও কিছু কারণ আছে, যার জন্য খিদে পায় এবং খিদে কমে যায়। আমাদের মস্তিষ্কে হাইপোথ্যালামাস অংশটি আরও অনেক কাজের সাথে সাথে আমাদের খিদেও নিয়ন্ত্রণ করে। হাইপোথ্যালামাসের ভেতরে দিকের অংশটিকে বলে স্যাটাইটি সেন্টার এবং বাইরের দিকের অংশটিকে বলে ফিডিং সেন্টার। ফিডিং সেন্টার যদি কোনো কারণে উত্তেজিত হয়ে পড়ে তখন আমাদের খিদে পায়। আর স্যাটাইটি সেন্টার যদি উত্তেজিত হয়, তখন আমাদের খিদে কমে যায়। আর হাইপোথ্যালামাসকে নিয়ন্ত্রণ করে কিছু হরমোন সংকেত। আমাদের শরীরের অ্যাডিপোজ কলা থেকে নির্গত হয় লেপাটিন নামে একটি হরমোন। এই হরমোনটি যখন মস্তিষ্কে গিয়ে পৌঁছায় তখন সেখানে সে নিউরোপেপটাইড ওয়াই নামের একটি রাসয়নিক পদার্থের মুক্তি ঘটায়। এই রাসায়নিক পদার্থটি গিয়ে পৌঁছায় আমাদের মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাসে। এখানে হাইপোথ্যালামাসের ফিডিং সেন্টারের ওপর ক্রিয়া করে খাওয়ার ইচ্ছেটাই কমিয়ে দেয়। ফলে আমাদেরও খিদে কমে যায়। আবার ফিডিং সেন্টার যখন উত্তেজিত হয় তখন খিদে পায়।

কিন্তু খাবার লোভ কেন হয়? 

খিদে শুধুমাত্র শারীরিক চাহিদার ওপর নির্ভরশীল নয়, নির্ভর করে, আমাদের পারিপার্শ্বিক পরিবেশের ওপর। যেমন পেটভর্তি থাকলেও মুখোরোচক খাবার দেখলেই খেতে ইচ্ছা করে। এভাবেই আমাদের খাবার লোভ হয় এবং এমনভাবে খেতে খেতেই মোটা হতে থাকি।

আবার কিছু কিছু অসুখের কারণেও খিদে একেবারে কমে যায়। অনেক সময় দেখা যায় যে পাকস্থলীর নড়াচড়া ঠিকমতো না হবার জন্য খাদ্য গ্রহণের অনেকক্ষণ পরেও পাকস্থলী প্রসারিত হয়ে থাকে। ফলে আর খিদে পায় না। অনেক সময় কেউ মানসিক অবসাদে ভুগলেও খিদে কমে যেতে পারে। এছাড়া, পাকস্থলী, অন্ত্র, মস্তিষ্কের বিভিন্ন অসুখেও খিদে কমে যেতে পারে।

আবার কিছু রোগ আছে যার জন্য খিদে বেড়ে যায়। এছাড়া, মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাসে যদি টিউমার বা অন্য কোনো বাধার সৃষ্টি হয় তখন রোগীর খিদে বেড়ে যায় এবং তিনি মোটা হয়ে যান। হঠাৎ হঠাৎ রোগীর মধ্যে গোগ্রাসে খাবার একটা প্রবণতা সৃষ্টি হয়। কিন্তু বেশি খেয়ে ফেলার পর তারা বুঝতে পারে যে বেশি খাওয়া হয়ে গেছে, তখন গলায় আঙুল দিয়ে বমি করে।

অতিরিক্ত খাওয়ার জন্য যদি ক্রমশ মোটা হতে থাকেন বা অন্য সমস্যা হয় তাহলে আপনি নিজে থেকেই খাদ্যাভাসকে নিয়ন্ত্রণ করুন বা নিয়মিত যোগাসন করুন, ধীরে ধীরে স্বাভাবিক ওজনে ফিরে আসবেন। কিন্তু, খিদে না হওয়ার জন্য টনিক খাওয়া একেবারেই উচিত নয়। মনে রাখবেন, টনিক থেকে তেমন কোনো উপকার পাওয়া যায় না। টনিকে তেমন কোন উপকার পাওয়া যায় না। টনিকে থাকে কিছু ভিটামিন আর বেশ কিছুটা অ্যালকোহল, যদিও ভিটামিনের ঘনত্ব খুব কম। যা কোনো কাজে লাগে না। তবে ভিটামিনের অভাবে খিদে কমে গেলে, ভিটামিন ক্যাপসুল খেলে বেশি কাজ দেয়। খিদে বাড়াবার জন্য সাধারণত ডাক্তারবাবুরা সাইপ্রোহেষ্টাডিন ওষুধ ব্যবহার করেন, যা হাইপোথ্যালামাসে কাজ করে খিদে বাড়ায়। এই ওষুধে বেশ ঘুম ঘুম পায়। অ্যালার্টনেস কমে যায়, কিন্তু ওষুধটি বন্ধ করে দিলে। খিদে খিদে ভাবও চলে যায়। হাইপোথ্যালানাস অ্যাড্রিনালিন গ্রন্থি থেকে হরমোণ নিঃসরণ করাবার জন্য নিজে হরমোণ নিঃসৃত করে, এই ওষুধটি দীর্ঘদিন ব্যবহারে অ্যাড্রিনালিন গ্রন্থির কার্যকরিতা কমে যায়। তাই খিদে হওয়া বা না হওয়া নিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। খিদে বাড়ানোর ওষুধ খেয়ে খিদে বাড়ে না বরং অসুখে আক্রান্ত হতে পারেন।

প্রাকৃতিক কারণেও খিদে কমে যেতে পারে 

হয়ত কোনো কারণে শরীর খারাপ যাচ্ছে, বা অত্যাধিক গরমে খাওয়ার ইচ্ছা চলে যায়-এইসব সাময়িক সমস্যা। এর জন্য চিকিৎসার প্রয়োজন নেই। এই সময় বরং কদিন জল বেশী করে বা নুন চিনির জল সরবত খেয়ে নিন ভালো লাগবে। সবশেষে দৈনন্দিন খাদ্যাভাসে সাধারণ ভিটামিন যুক্ত সুষম আহার করুন। তেল মশলা চর্বিযুক্ত খাবার না খাওয়াই ভালো। খিদে নিয়ে বেশী ভাববেন না। যদি দেখেন যে আপনার শরীরের ওজনের বিশেষ হেরফের হচ্ছে না তাহলে ধরে নেবেন আপনার পুষ্টি ঠিকই হচ্ছে। যদি দীর্ঘদিন আপনি ঠিকমত খেতে না পারেন তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Exit mobile version