Friday, July 5, 2024
Homeস্বাস্থ্য পরামর্শস্বাস্থ্যসম্পর্কিত খবরগ্রামীণ জীবনের স্বাস্থ্য সমস্যা

গ্রামীণ জীবনের স্বাস্থ্য সমস্যা

গ্রামীণ মানুষের স্বাস্থ্য ভালোরাখার উপায় জেনে নেওয়ার আগে স্বাস্থ্য কাকে বলে তা একটু বলে দেওয়া দরকার। শারীরিক, মানসিক, সামাজিক এবং আধ্যাত্মিক সবমিলিয়ে এক সুস্থতা, তা আমাদের সঠিক সময়ে সঠিক কাজ ঠিকমতো সুসম্পন্ন করতে সাহায্য করে। আর স্বাস্থ্যবান? নিছক রোগহীনতা বা পেটানো চেহারা, কোনো কষ্ট দেহে নেই, এদেরকে স্বাস্থ্যবান বলে না।

গ্রামীণ মানুষের স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপায় জেনে নেওয়ার আগে জানা দরকার স্বাস্থ্য কোথায় কোথায় খারাপ বেশি হয়, শরীরের কোথায় যন্ত্রণা হলে হঠাৎ ইমার্জেন্সি দেখা দেয়। মনের ঘরে ঘোর সমস্যা, দ্বিধা-দ্বন্দ্ব পরাজয়- সহজকথা আত্মহত্যা। বিষ খেয়ে মরা, গলায় দড়ি দেওয়ার ইচ্ছে, আগুনে পুড়ে মরা সেগুলো মনের, সেই রোগের কথা জেনে নেওয়া দরকার। নেশার কবলে পড়ে দেহ ও মন উৎফুল্ল করতে গিয়ে শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক রোগের শিকার হওয়া, এও এক মানসিক বিকার। ওপথে পা বাড়ানো, সঙ্গদোষ মানে কুসঙ্গ, ভুজঙ্গের সাথে বসবাস, তা দূর করার জন্য ঘরে- বাইরে সবাইকে কঠিনভাবে সংশোধন করতে হবে। একে অপরকে সাহায্য করা, পাশে গিয়ে দাঁড়ানো, ভালো পরামর্শ দেওয়া, ভালো যুক্তি, ভালো করে বোঝানো, অভিজ্ঞ-বিজ্ঞ লোকজনের পরামর্শ, সঠিক পথে চলা, উচিত-অনুচিত মানা এগুলো সামাজিক ব্যাধি সারানোর উপায়। কেউ পড়ে গেলে তুলে ধরা, কারো ঘরে আগুন লাগলে জলের বালতি ভরে নিয়ে গিয়ে নেভানোর চেষ্টা, কারো বাড়িতে বিপদ হলে কান্নাকাটি চিৎকার চেঁচামেচি বা ভিড় না বাড়িয়ে, সময় নষ্ট না করে তাড়াতাড়ি চিকিৎসার ব্যবস্থা বা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া এগুলো সামাজিক স্বাস্থ্যের ভালো লক্ষণ। তাই আমাদের ভালো অভ্যাস অতি শৈশব বা ছোটবেলা থেকে দেখে এবং হাতেনাতে করে প্রত্যেককে শিখতে হবে। চোখে দেখতে পায় না এমন ব্যক্তিকে হাত ধরে রাস্তা পার করে দেওয়ার মধ্যে সামাজিক স্বাস্থ্যলাভ হয়। 

আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্যটি বেশ বিতর্কের ব্যাপার-স্যাপার। অপরের ধর্মমত, ধর্মপথকে, ধর্মচর্চার ক্ষেত্র মসজিদ, মন্দির, গীর্জা, নামাজ, কীর্তন, প্রেয়ার এগুলোতে অশ্রদ্ধা দেখানো, বিরূপ মন্তব্য করা চলবে না। ‘যত মত তত পথ’। দেখতে হবে অপরের যেন অসুবিধে বা ক্ষতি না হয়। উচ্চরবে মাইক বা মিউজিক বক্স অপরের কান ঝালাপালা না করে বা শব্দদূষণে রোগ উৎপন্ন না হয়। মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার অভ্যাস আমাদের গড়ে তুলতে হবে। ভালো চিন্তা, ভালো কথা বলা, ভালো বই পড়া, ভালো প্রোগ্রাম রেডিও, টিভি, মোবাইলে শোনা ও দেখা। লেখা, মেসেজ, খবর সবকিছুর ভালো চর্চায় নিজেকে শিক্ষিত করে তোলা।

গ্রামীণ মানুষের প্রধান স্বাস্থ্য সমস্যা গড়িমসি। ভুল কাজ করা, সময় নষ্ট করা। ‘ডু ইট নাউ’। এখনই করুন। যা করার তা ঠিকভাবে এখনই করুন। আজকের মধ্যেই করুন। ‘সময় চলিয়া যায় নদীর স্রোতের প্রায়‘। সচেতন হোন। “এখনই যা কিছু করিতে হবে করে ফেলো ঠিক“।

খালি পায়ে হাঁটার কুফল ভেজা মাটি, কাদা রাস্তায় গ্রামীণ মানুষ দু’পায়ে কোনোরকম জুতো বা চটি না পরে মাঠেঘাটে, যত্রতত্র চলাফেরা, কাজকর্ম, জীবনযাত্রা, ধর্মীয় সংস্কার, পিতামাতার প্রিয়জন বিয়োগে রীতিনীতি বাধ্যতামূলকভাবে পালন এবং দিনাতিপাত করার ফলে যে রোগের শিকার হন, তার নাম হল হুকওয়ার্ম বা বড়শিকাটা কৃমির সংক্রমণ। ফলে, রক্তহীনতা, মূৰ্চ্ছা, মাথাঘোরা, কর্মহীন জীবন, পা ফোলা, অকালে হার্ট ফেলিওর এরূপ নানা রোগে আক্রান্ত হন। হতে পারে হাঁপানি, কাশি, জ্বর, গরহজম, মানসিক বৈকল্য, শারীরিক দুর্বলতা, সামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়া দীনদরিদ্র মানুষ। রোগ প্রতিরোধে পায়ে আচ্ছাদন রবারের জুতো পরা দরকার। বর্ষার পরে এবং বছরের যেকোনো সময় মল পরীক্ষা করে, অথবা না করে প্রতি বছর অ্যালবেন্ডাজোল ট্যাবলেট চারশো মিলিগ্রাম, রোগাক্রান্তদের পরপর তিনদিন, কিংবা রোগপ্রতিরোধে বছরে একদিন, একবার ওই ট্যাবলেট চিবিয়ে খাবেন। ছোট শিশুদের, বিলো ফোর ইয়ারস, খাওয়া নিষেধ অথবা মল পরীক্ষার পর কম মাত্রায় খাওয়ানো দরকার হতে পারে। খালি পায়ে হাঁটার কুফল হিসেবে পায়ে কাঁটা, পেরেক, গাছের বা বাঁশের গোঁজ পায়ে ফুটে টিটেনাস হবার সম্ভাবনা বেড়ে যেতে পারে। টিটেনাসের টক্সয়েড ভ্যাকসিন, নিয়মিত সিডিউল একটি, দুটি, তিনটি ডোজ এবং প্রতি পাঁচ বছর ছাড়া একটি বুস্টার ডোজ সারাজীবন নিতে থাকতে হবে। এবং তাহলে টিটেনাস ধনুষ্টঙ্কার রোগ থেকে বাঁচা যেতে পারে। পায়ে শক্ত জুতো, খড়ম পরে কাজ করাও লাভজনক হতে পারে। রোগজীবাণু ক্লোস্টিডিয়াম ওয়েলসাই জীবাণুর সংক্রমণে পচা ঘা, ময়েস্ট গ্যাংগ্রিন রোধে জুতো পরা দরকার এবং এই রোগের ভ্যাকসিন নেই। চিকিৎসা আছে এবং করা দরকার।

খালিপায়ে জল-কাদায় দিনরাত কাজ করার ফলে পায়ে দাদ, হাজা, নখকুনি হতে পারে। পায়ে শুকনো জুতো পরার অভ্যাস, এবং পায়ে অ্যান্টি ফাঙ্গাল মলম, লোশন, পাউডার বিশুদ্ধভাবে লাগানো, ব্যবহার, নিয়মিত ও প্রত্যহ দরকার। স্টেরয়েড মলম কখনো লাগাবেন না। বেগুনি লোশন জেনসিয়ান ভায়োলেট লাগালে খুব সহজে রোগ সারানো ও প্রতিরোধের কাজ হতে পারে।

খালিপায়ে হাঁটাচলার ফলে পা ফাটতে পারে। সেক্ষেত্রে ভ্যাসলিন, অ্যান্টিবায়োটিক মলম, পাউডার লাগানো দরকার। জুতো অবশ্যই পরা দরকার। মোটা মোজা দু’পায়ে পরে শীতকালে দিন বা রাত্রি অতিবাহিত করা দরকার। খালি পায়ে হাঁটার অভ্যাস ত্যাগ করুন।

বলা-কওয়া নেই, আচমকা সমস্যা, বিপদ ঘটে গেলে কী করবেন?

একজন পরিচিত বা অপরিচিত মানুষের দুর্ঘটনা ঘটছে, আপনি প্রত্যক্ষদর্শী, দেখছেন আপনার চোখের সামনে একজন মানুষ বিপদে পড়েছেন, কিংবা মরেই গেছে, তাকে ছুঁয়ে, দেখবেন কিংবা দেখবেন না, তাড়াতাড়ি দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে। সঠিক ডিসিশন না নিলে আপনি ছোঁয়াছুঁয়ির ফলে বিপদে পড়তে পারেন, এমনকী প্রাণ হারাতেও পারেন, কী সেই বিপদ? বিপদের গন্ধ সঠিকভাবে না বুঝলে আপনি মহাবিপদে পড়বেন, প্রাণ হারাতে পারেন। নৌকো ঝড়ে ভেঙে খানখান, ডুবে গেছে কিছু অংশ, কিছু কাঠের অংশ ভেসে যাচ্ছে এদিক ওদিকে জলের স্রোতে ভেসে যাচ্ছে শিশু, ভেসে সাঁতার দিচ্ছে মা। মায়ের হাত ছাড়া কাকে আগে ধরবেন? আগে কাঠ ধরে নিজে বাঁচবেন পরক্ষণেই শিশুকে ধরে নেবেন। তবে নিজেকে রক্ষা করার ফলে দু’জনে বাঁচবেন। বিপদ সমুদ্রে মৃত্যুর ঝুঁকি প্রবল। উদ্ধারকারীকে নিজেকে রক্ষা করতেই হবে, নইলে পৃথিবীর ইতিহাসে অনেকেই বিস্ময়কর কাজ করে সাহসী ও সাহসিকতার পুরস্কার পেতেন না।

বৈদ্যুতিক তারে বিদ্যুৎ প্রবাহে শক খেয়ে কেউ কেউ বড়বড় চোখ বের করে মরে। জীবন্ত মনে হয়। তাকে ছুঁতে যাবেন না। ছুঁয়ে একজন, তারপর আরও একজন, এভাবে দু’-তিনজন চোখ বের করে মরে স্থিরচিত্র হয়ে গেছেন। এক্ষেত্রে না ছোঁয়াই উচিত। শুকনো বাঁশ, শুকনো কাঠ দিয়ে ছাড়ানোর চেষ্টা, আরো সাহায্য করার জন্য লোকজনকে ডেকে, অথবা মোবাইলে কল করে বিদ্যুতের মেইন সুইচ বন্ধ করা। বিদ্যুৎপ্রবাহ থেকে জীবন্ত লাইফ তারকে বিদ্যুৎহীন আগে করতেই হবে। নইলে উদ্ধারকারী মরে যাবেন। ছটফট করে মরছে একটি লোক, কারেন্ট ইলেকট্রিক তারে রয়েছে, হাত দিতে যাবেন না। লোকজন ডাকুন, চিৎকার করুন, সঠিকভাবে উদ্ধার করুন।

জলে ডুবে গেলে, সাঁতার না জানা মানুষ, ভয়ংকর ময়ালসাপ যেভাবে ছাগলকে পেঁচিয়ে জাপ্টে ধরে, সেভাবে গলা জড়িয়ে ধরতে পারে। এবং উদ্ধারকারী সাঁতার জানা ব্যক্তির প্রাণ সংশয় হতে পারে। গলাটেপা অবস্থায় আপনি একটিও কথা বলতে পারলেন না, আপনি জ্ঞান হারালেন, ডুবলেন, মরলেন এবং সেও মরে গেল। লাভ কারো হল না। বাঁশ বাড়িয়ে দেওয়া, হাত বাড়িয়ে দেওয়া, ডুবে থইহারা মানুষের চুল- হাত-পা ধরে টান মেরে তোলা, তারপর দ্রুতবেগে জল বের করা, কৃত্রিম শ্বাসকার্য চালানো প্রয়োজন সঠিক পদ্ধতিতে। এবং চিকিৎসার জন্য হসপিটালে নিয়ে যাওয়া। 

মাথায় তাল, নারকেল, বেল, বড় কোনো ফল পড়ার আঘাতকে অবহলো নয়, অজ্ঞান হওয়া, বমি ও যন্ত্রণা ভেতরের হেমারেজ নির্দেশ করে। হাসপাতালে নিয়ে যান। নেকেড অর্থাৎ আচ্ছাদনহীন মোটা তারে বিদ্যুৎ প্রবাহ নিয়ে সারা রাত মাঠে বিদ্যুতের হাজার হাজার টিউব আলো জ্বেলে, বিরাট ম্যারাপ বেঁধে যাত্রা-থিয়েটার, মায়ের গান, মনসামঙ্গল, বিচিত্রানুষ্ঠান করতে গিয়ে জেনারেটর ম্যান বা মাইক ম্যান, সাবধানী সতর্কতায় বেড়া, ডেঞ্জার সিগনাল, নানা আলো, মরা কংকাল, মাথার খুলি হাড়ের গুণিতক চিহ্ন এরূপ বিপদ সংকেত, জ্বালিয়ে ও টাঙিয়ে রাখুন। 

বিপদসংকেত দিন— গভীর পুকুরের জলের অনেকটা দূরে। সাঁতার না জানা ব্যক্তি, ছেলেমেয়ে, মানুষ, পুকুরের দিঘির, সরোবরের জলে নামবেন না। সমুদ্রে নামবেন না। কোনো নদী, সমুদ্র বা ধর্মীয় পুকুরের জল ছোঁবেন না।

গ্রামাঞ্চলে মাঠে ফসল কাটার আগে, ফল পাড়ার আগে, সবজি কেটে নিয়ে বিক্রি করার আগে কখনও কেউ বিষ ছড়াবেন না। ফুলে ফলে বিষ ছড়ানো যাবে না। বীজশোধন, মাটিশোধন, জল শোধন এরূপ পরামর্শের জন্য কৃষিবিজ্ঞানী, অঞ্চলপ্রধান বা ব্লক অফিসে পরামর্শ নেবেন। যিনি বিষ ছড়ান, তাদেরও বিপদ। খালিগায়ে কোনোদিনও বিষ ছড়াতে যাবেন না। অর্গানো ফসফরাস, ফলিডল, টেপাডিন, ডিমেক্রন, আরও অনেক আছে—এদের জলীয় দ্রবণ, পাউডার, হাতে-পায়ে গায়ের চামড়ার মধ্য দিয়ে, চোখ- কান-মুখ-নাক দিয়ে দেহে স্বল্প মাত্রায় ঢুকে অনেককে অবসন্ন, নিস্তেজ করে। বেশি হলে আরো বিষক্রিয়ায় বুকধড়পড়, হার্ট ব্লক, এসব হতে পারে। এ সমস্ত বিষ খেয়ে আত্মঘাতী হলে – গ্রামের মানুষকে দ্রুতবেগে উদ্ধার করতে হবে। হসপিটালে মোটরসাইকেল বা গাড়িতে করে নিয়ে যেতে হবে। দ্রুত ফার্স্ট এড করতে করতে নিয়ে যেতে হতে পারে। পালস রেট কমে গেলে, বিট কমে গেলে অ্যাট্রোপিন ইঞ্জেকশন আই.এম, আই.ভিদু’টো তিনটে পুশ করতে করতে রোগীকে হসপিটালে নিয়ে যেতে থাকুন। ইঞ্জেকশন দিয়ে হার্ট রেট বাড়ছে কি না মিনিটে মিনিটে দেখতে হয়। গ্রামীণ চিকিৎসক চিকিৎসা করতে করতে অন্য একটি মোটর সাইকেলে বা গাড়িতে করে দ্রুত হসপিটালে যাবেন। চিকিৎসা বন্ধ করা যাবে না। যতক্ষণ রোগীর স্টেবল কন্ডিশন না হয়। হসপিটালে আরো চিকিৎসা—স্টমাক ওয়াশ, অক্সিজেন, স্যালাইন।

বিদ্যুৎ শক থেকে মৃতপ্রায় উদ্ধার করা ব্যক্তিকেও চিকিৎসা করতে থাকা অবস্থায় গাড়িতে করে হসপিটাল নিয়ে যেতে হবে। মৃত্যুঝুঁকি সর্বদা সর্বত্র রয়েছে। হাত-পা গুটিয়ে দূরে সরে থাকা, দূরে ঠেলে দেওয়া আমাদের সামাজিক স্বাস্থ্যের মধ্যে পড়ে না। তাই প্রত্যেকে প্রাথমিক চিকিৎসা, উদ্ধারকার্য, ফায়ার ব্রিগেড— এদের বিষয়ে শিখে নিন। প্রাণ বাঁচান।

যখন গ্রামে সুতীব্র শীতের রাতে দরজা- জানালা বন্ধ রেখে সবাই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন, তখন যদি কারোর ঘরের ভিতর অগ্নিকান্ড হয়, কাথা-কাপড়-মশারিতে আগুন লেগে যায়, ভয়ংকর আততায়ীর মতো আগুনের শিখায় পোড়াবেগুন হয়ে যায় একটি নিঃশব্দ অসহায় মানুষ অথবা তার পরিবার। তখন তাদেরকে উদ্ধার কে করবে? শীতকালে অগ্নিকান্ড যখন ভয়াবহ হয়, তখন আগুনে পোড়া মানুষকে উদ্ধার করা আবশ্যক। ঠান্ডা জলে ভিজিয়ে তোলা, ভিজিয়ে রাখা শীতল পোশাকে ঢেকে। অথবা পোড়া হাত- পা-আঙুল-মুখকে জলে ডুবিয়ে রাখার ব্যবস্থা করা। এবং এরপর হসপিটালে স্থানান্তরিত করা। 

গরম ফুটন্ত দুধ, তাল খেজুরের রস, বিশাল কড়াই ভর্তি ডাল-ভাত, খিচুড়ি কিংবা লঙ্গরখানার গরম খাবারের পাত্র, এসবে শিশু বা বড়রা পড়ে গিয়ে সেদ্ধ হতে পারেন। সেক্ষেত্রেও উদ্ধার। শীতল পরিষ্কার জলে আক্রান্ত মানুষ কিংবা দেহকে চুবিয়ে রেখে চিকিৎসাগারে রোগীকে স্থানান্তরিত করতে হবে। এসকল ক্ষেত্রে যন্ত্রণানাশক ইঞ্জেকশন (ডলোনেক্স) এবং জীবনদায়ী ইঞ্জেকশন, স্যালাইন, প্রয়োজনে অক্সিজেন সহ কৃত্রিম শ্বাসকার্য চালানো যেতে পারে। এরপর সময় নষ্ট না করে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া, গ্রামের প্রধান, সদস্য কিংবা পুলিশকে জানানো। ফায়ার ব্রিগেডকে আধা-শহরে আগুন নেভাতে আজকাল পাওয়া যাচ্ছে।

বজ্রবিদ্যুৎ-এর ঝলকে মুক্তমাঠের কর্তব্যরত কৃষক কর্মীবৃন্দ অজ্ঞান, জ্ঞানহারা এমনকী বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যেতে পারেন। বজ্রনাদ শব্দে কানের পর্দা ফেটে বধির হতে পারেন, হার্ট বিকল, হার্ট ব্লক, হার্ট অ্যাটাক সবকিছু হতে পারে। মৌচাকের মতো কালো মেঘ থেকে বিদ্যুতের উৎপাতে আগেভাগে সরে পড়াই ভালো, অন্যথায় তরল মেঘের পর্দার বিদ্যুৎ মানুষের সুপরিবাহী বিদ্যুৎবাহী দেহকে আবেশে বিদ্যুৎ আবিষ্ট এবং আকর্ষণে আকৃষ্ট করে। তাই পলায়নের চেয়ে মাঠের গভীর স্থানে, আল, বাঁধের পাশে লম্বা হয়ে শুয়ে থাকা ভালো। কোনো আচ্ছাদিত স্থান, গাছের তলায়, গাছের গায়ে গা লাগিয়ে বসা, দেওয়ালে ঠেস দিয়ে বসা— এগুলো নিরাপদ নয়। খোলা আকাশের নীচে মাঠের গভীরস্থানে মাটির সাথে মাটি হয়ে নির্জীব শুয়ে থাকুন। বৃষ্টি হলে ভালো, বাজ পড়া থামলে বাড়ির পথ ধরুন। 

শিলাবৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা পেতে মাথা ঝুড়িতে ঢেকে বসে বা শুয়ে থাকুন। বজ্রপাতে আক্রান্ত ব্যক্তিকে উদ্ধার করে হসপিটালে নিয়ে যেতে থাকুন। জীবনদায়ী ইঞ্জেকশন, কার্ডিয়াক ম্যাসাজ, মুখে মুখ লাগিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস চালনা করতে থাকুন।

কুকুর-বেড়ালের কামড়, এমনকী শেয়াল বা অন্য মাংসাশী প্রাণী, হতে পারে সুন্দরবনের বাঘ, হায়না, কুমীর, রক্তচোষা বাদুড় (মশা-মাছি-জোঁক নয় কিন্তু)। এ সমস্ত প্রাণীর কামড়ে মানুষের ভয় জলাতঙ্ক এবং টিটেনাসের। সাবান ও পরিষ্কার জলে ধুয়ে আয়োডিন জাতীয় মলম-ড্রেসিং, ব্যথা-যন্ত্রণার ওষুধ, ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। জন্তুটি পাগল হলে লাল ঝরা, চুপচাপ, চোখ লাল অথচ বলা-কওয়া নেই দৌড়ে এসে কামড় দিয়ে গেল—এসব ক্ষেত্রে র‍্যাবিস ইমিউনোগ্লোবিন ইঞ্জেকশন কামড়ানো স্থানের চারদিকে এবং দেহপেশি যেমন বাহুতে (রিগ) জীবনদায়ী রোগ প্রতিরোধে দেওয়া হয়। অনেক সময় গরুর কামড় নিয়ে মানুষ চিন্তিত হয়ে পড়েন। এসব ক্ষেত্রে হসপিটালে, জেলা সদরে ভারপ্রাপ্ত চিকিৎসকের কাছে অথবা পাস্তুর ইনস্টিটিউটে গিয়ে পরামর্শ নিতে হতে পারে। এ.আর.ভি ইঞ্জেকশন রোগ প্রতিরোধে নির্দিষ্ট নিয়মে নেওয়া উচিত। কামড় সৃষ্টিকারী প্রাণী, মানুষ জলাতঙ্ক রোগগ্রস্ত হলে এ.আর.ভি এবং রিগ ইঞ্জেকশন নিতে হবে। তিনটি ইঞ্জেকশন নিয়ে এবং কামড় সৃষ্টিকারী উপদ্রুত প্রাণী দশদিন বেঁচে থাকলে আর অতিরিক্ত ইঞ্জেকশন প্রয়োজন নেই বলা হয়। মাংসাশী প্রাণীরা, রক্তচোষা প্রাণীরা অতি সহজে জলাতঙ্ক রোগের কবলে পড়তে পারে। দাঁতে মুখের লালায় জলাতঙ্ক জীবাণু বেশি থাকে।

Poisoning Snake Bite

বোলতা ও ভিমরুলের হুল দংশনে বিষক্রিয়া তীব্র ক্ষারকীয়, তাই টকজাতীয় রস যেমন লেবু, ভিনিগার, টক দই দংশন স্থানে ঘষে লাগালে দ্রুত আরাম হয়। মাকড়শার কামড়েও তদ্রুপ। ট্যারেন্টুলা, বড় কালো মাকড়শার তীব্র ভেনাম নার্ভ পথে দ্রুত ছড়াতে পারে। বাঁধন তীব্র দিলেও লাভ হয় না। দেরি হলে গ্যাংগ্রিন, আঙুলে বা দংশনস্থানে পচন, জমাট রক্ত থেকে ফুসফুসে এমবলিজম, শ্বাসকষ্ট, হঠাৎ মৃত্যু ঘটতে পারে। সাপে কামড়ালেও বাঁধনে একই কুফল। লাভের চেয়ে লোকসান বেশি। বিষধর সাপ দু’প্রকার— ফণাযুক্ত এবং ফণাহীন। সন্দেহ হলেই সাপে কামড়ানো রোগীকে হাড়ভাঙা রোগীর চেয়ে বেশি সাবধানে হাসপাতালে নিয়ে যান। কামড়ানো হাত-পা নাড়ানো চলবে না, কাঠ বা স্কেল দিয়ে স্প্লিন্ট বাধুন। রোগীর হাঁটাচলা, দৌড়ানো চলবে না। পেশি সংকোচনে বিষ দ্রুত ছড়ায়। গোখরোর বিষ দ্রুত ছড়ায়। কালাচ, বোড়া সাপের বিষ স্লো অর্থাৎ আস্তে আস্তে ছড়ায় । জীবনদায়ী ওষুধ, ইঞ্জেকশন, যেমন স্টেরয়েড দিয়ে মোটর সাইকেলে, দ্রুতযানে, গাড়িতে বসিয়ে রোগীকে তাড়তাড়ি মহকুমা বা সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। ফোনে, মোবাইলে অন্যকেও কমিউনিকেট করুন, আগে একজন দ্রুত এগিয়ে যান। হসপিটালে এমার্জেন্সিতে তৎপর চিকিৎসক মাল্টিভেনম সেরাম বা অ্যান্টি ভেনম স্পেসিফিক সেরাম, ইঞ্জেকশন রেডি রাখবেন। দ্রুত চিকিৎসা সঠিকভাবে করুন। রক্তচোষা জোঁকের কামড়ে ভয় নেই। রক্ত বন্ধ না হলে হসপিটালের শরণাপন্ন হতে হবে, কোনো বিষ নেই, তাই বিষহরি ওষুধ, এবং প্রয়োজনীয় ড্রেসিং দরকার। শিশু, বৃদ্ধ, দুর্বল ব্যক্তিরা যেকোনো সময় বেশি রিস্কের, তাই তাদের যত্ন বেশি দরকার। মাঠেঘাটে বনে জঙ্গলে সকাল- সাঁঝে আলো জ্বেলে আলোয় পথ দেখে হাঁটুন। সকাল, সাঁঝে সাপেরা খাবারের খোঁজে ঘোরে। তাই সাবধানী সচেতন হোন। সঠিক এবং দ্রুত চিকিৎসা করুন।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular