Home পারম্পরিক ঔষধি Throat Cancer Symptoms | গলা শুনে ক্যান্সার নির্ণয় | 2024

Throat Cancer Symptoms | গলা শুনে ক্যান্সার নির্ণয় | 2024

টেলিফোনে ক্যানসার নির্ণয়। এও কি সম্ভব? তাও আবার ইন্টারনেট-টেলিফোন নয়, রোগীর এক্স-রে, সিটি স্ক্যানের ছবি-দূর থেকে দেখার কোনো সুযোগই নেই। শুধুমাত্র রোগীর গলা শুনে (সেটা অবশ্য টেলিফোন ছাড়াও, সরাসরি শোনা যেতে পারে। যখন রোগী ডাক্তারের সামনে বসে কথা বলছেন) অভিজ্ঞ অঙ্কোলজিস্ট বললেন, আপনার কিছু পরীক্ষা- নিরীক্ষা প্রয়োজন। ব্যাপারটা ভালো বুঝছি না । এ কি ডাক্তারি নিদান নাকি ম্যাজিক না অন্য কিছু ? কিন্তু বিশ্বাস করুন, বহু ক্যানসার রোগীর রোগ নির্ণয় এভাবে হয়েছে এবং এখনও হয়ে থাকে বাকি লেখাটা পড়লেই বুঝবেন যে ব্যাপারটা পুরোপুরি বৈজ্ঞানিক তথ্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত, বুজরুকি নয় মোটেই।

ঘটনাটা বুঝিয়ে বলি। আমাদের গলার শব্দ তৈরি হয় ল্যারিংস বা স্বরযন্ত্র নামক অঙ্গে । এই যন্ত্রটি থাকে আমাদের গলায়, ঠিক মধ্যরেখা বরাবর। ল্যারিংস যন্ত্রে ভোকাল কর্ড বা স্বরতন্ত্রী নামে দুটো দড়ির মতো শক্ত তন্তু থাকে। একটি বাঁদিকে এবং অন্যটি ডানদিকে। ফুসফুস থেকে নির্গত শ্বাসবায়ুতে আমরা কম্পন উৎপন্ন করি এই স্বরতন্ত্রী দুটোকে ইচ্ছামতো নাড়িয়ে। বায়ুতে উদ্ভুত কম্পনই আমাদের গলার স্বর হিসেবে শোনা যায়। উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি যে সেতার বা গিটারের তারের কম্পন যেমন পার্শ্ববর্তী বায়ুস্তরে কম্পন সৃষ্টি করে ও আমরা বাদ্যযন্ত্রের আওয়াজ শুনি, সেরকমই স্বরতন্ত্রী বা ভোকাল কর্ডের কম্পন যে আওয়াজ সৃষ্টি করে সেটাই আমাদের গলার আওয়াজ ।

এখন প্রশ্ন, সেতারের তারের কম্পন তো আমাদের আঙুলের চাপে হয় কিন্তু স্বরতন্ত্রী দুটো কীভাবে কাঁপবে? শরীরবিজ্ঞানীরা এই প্রশ্নের উত্তর বহুদিন আগেই খুঁজে পেয়েছেন। ডান এবং বাঁ-দিকের স্বরতন্ত্রীদ্বয় দুটো নির্দিষ্ট স্নায়ু দ্বারা পরিচালিত হয়। এই স্নায়ুদুটোর নাম লেফট এবং রাইট রেকারেন্ট ল্যারিঞ্জিয়াল নার্ভ। এই নার্ভদুটোর মাধ্যমে আমাদের মস্তিষ্ক থেকে আদেশ পৌঁছয় স্বরযন্ত্রে—ঠিক কতটা নড়বে বা কাপবে স্বরতন্ত্রীদ্বয়। একচুল এদিক ওদিক হবার উপায় নেই। এভাবেই ঠিক যে স্বরটি প্রয়োজন সেটা আমরা উৎপন্ন করে থাকি।

এর সঙ্গে ক্যানসারের কি সম্পর্ক ?

সেটাই এবার বুঝিয়ে বলি। যে দুটো রেকারেন্ট ল্যারিঞ্জিয়াল নার্ভের কথা বলেছি, দুটোই ভেগাস নামক একটা বড় নার্ভের শাখা। ভেগাস নার্ভের উৎপত্তি আমাদের মস্তিষ্কের সুষুম্নাশীর্যক অঞ্চলে এবং আমাদের মস্তিষ্কের নির্দেশ এভাবেই ল্যারিংস বা স্বরযন্ত্রে পৌঁছয়। কিন্তু গন্ডগোল করেছে ওই বাঁ-দিকের নার্ভটি যার নাম লেফট রেকারেন্ট ল্যারিঞ্জিয়াল নার্ভ এই নার্ভটি ভেগাস নার্ভ থেকে বেরিয়েছে বুকের ভেতর, হৃৎযন্ত্রের কাছাকাছি। তারপরে যেন ওর নিজের কাজের কথা মনে পড়েছে। সে তখনই পাক খেয়ে ওপর দিকে (অর্থাৎ গলার দিকে) চলে গেছে। গলাতেই তো থাকে ল্যারিংস অর্থাৎ ওর কর্মস্থান। ডানদিকের নার্ভটি অবশ্য সাদাসিধে। গলাতেই তার জন্ম এবং উৎপত্তির পরে সে সরাসরি স্বরযন্ত্রে প্রবেশ করে।

এখন যত বিপত্তি ওই বাঁ-দিকের নার্ভটার জন্য। বুকের ভেতর যে অংশে তার উৎপত্তি, তার নাম মিডিয়াস্টিনাম। শরীরের এই অংশটি ক্যানসারের লীলাভূমি হিসেবে কুখ্যাত। খুব কম করেও পাঁচ থেকে সাত রকম ক্যানসার এখানে ছড়িয়ে যায়। এই ক্যানসারের নামগুলো এই ফাঁকে দেখে নেওয়া যাক—

এইসব উৎকট ক্যানসারগুলো সাধারণত একটু দূরে বুকের মধ্যে বা পেটের মধ্যে উৎপন্ন হয় কিন্তু খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে মিডিয়াস্টিনাম অঞ্চলে।

Throat Cancer Symptoms

কেন এরকম হয় ?

কারণ ওই অঞ্চলে বেশ কিছু লসিকা গ্রন্থি বা লিম্ফনোড থাকে যারা ক্যানসার কোষকে আশ্রয় দেয়। এদের নিরাপদ আশ্রয়ে ক্যানসার কোষ প্রবলভাবে বংশবৃদ্ধি করে এবং মিডিয়াস্টিনামের লসিকাগ্রন্থিগুলো আকারে বাড়তে থাকে। এই বৃহদাকার গ্রন্থিগুলোর চাপ গিয়ে পড়ে ওই রেকারেন্ট ল্যারিঞ্জিয়াল নার্ভের ওপর। নার্ভ বা স্নায়ু খুব দুর্বল বস্তু। সহজেই সে কর্মক্ষমতা হারায়, যাকে ডাক্তারি পরিভাষায় আমরা বলি নার্ভ পলসি। এবার মনে করে দেখুন ওই নার্ভটির কাজটা কী? না স্বরতন্ত্রীর কম্পন উৎপাদন। সুতরাং ওই কাজটি অংশত ব্যাহত হবে। সুতরাং এবার গলা থেকে যা স্বর বেরোবে তা একটা অদ্ভুত রকম ফ্যাসফেঁসে ধরনের, যাকে আমরা বলি হর্স ভয়েস। এই বিশেষ স্বরটি শুনেই অভিজ্ঞ ক্যানসার বিশেষজ্ঞ সন্দিহান হয়ে ওঠেন, বুকের ভেতরের মিডিয়াস্টিনাম অংশের ছবি (এক্স-রে বা সি.টি. স্ক্যান) তুলে বুঝতে চান ওখানে কোনো ক্যানসার এসে বাসা বেঁধেছে কি না ।

এই পর্যন্ত পড়ে যদি আপনার মনে হয় যে গলার স্বর ফ্যাসফেঁসে হলেই শরীরে বাসা বেঁধেছে মারণরোগ, তা কিন্তু আদপেই নয়। ল্যারিনজাইটিস অ্যালার্জি, ভোকাল নডিউল (স্বরযন্ত্রের একরকম টিউমার যা ক্যানসার নয়) এগুলোই কিন্তু গলার স্বরভঙ্গে র প্রধান কারণ। কিন্তু এগুলো সাধারণত ই.এন.টি বিশেষজ্ঞের পরীক্ষায় সহজেই ধরা পড়ে ও যথাবিধ চিকিৎসায় সম্পূর্ণভাবে নিরাময় হয়। কিন্তু ক্যানসার বিশেষজ্ঞ হিসেবে দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় দেখেছি যে মিডিয়াস্টিনামের টিউমার সহজে ধরা পড়ে না। এর কারণ স্বরভঙ্গ বা স্বরের পরিবর্তন খুব দ্রুত হয় না। ক্যানসার রেকারেন্ট ল্যারিঞ্জিয়াল নার্ভের ওপর যত চাপ দেয়, তত নার্ভটি কর্মক্ষমতা হারাতে থাকে। এই ব্যাপারটা বেশ কয়েক মাস ধরে এত ধীরে ধীরে হতে পারে যে রোগী বা তার পরিজনেরা সহজে স্বর পরিবর্তন হচ্ছে, বোঝেনইনা। ই.এন.টি বিশেষজ্ঞ বিভিন্ন পরীক্ষায় স্বতযন্ত্রের কোনো অসুখ, খুঁজে পান না, ফলে সঠিক রোগ নির্ণয়ে বিলম্ব হয় ।

এবার তাহলে একটি সংক্ষিপ্ত নির্দেশিকা বা গাইডলাইন দিই, স্বরের কোনো পরিবর্তন বুঝতে পারলে ঠিক কী কী করবেন ?

অধিকাংশ মানুষই স্বরভঙ্গ বা স্বরপরিবর্তন হয়ে থাকলে দু’-একদিন গার্গল ইত্যাদি করেন এবং তারপর ই.এন.টি বিশেষজ্ঞের কাছে যান। নিশ্চিন্ত থাকুন। যদি স্বরযন্ত্র (ল্যারিংস) বা ফ্যারিংসের কোনো রোগ এমনকী ক্যানসারও হয়ে থাকে তবে ই.এন.টি বিশেষজ্ঞ তা ঠিকই চিহ্নিত করবেন। যদি স্বরযন্ত্রের ক্যানসার সন্দেহ করেন, তবে তিনিই রোগীকে ক্যানসার বিশেষজ্ঞ বা অঙ্কোলজিস্টের কাছে পাঠাবেন। এটাই চিকিৎসা বিজ্ঞানের স্বীকৃত প্রথা। আর যদি আপাতদৃষ্টিতে কিছু না পাওয়া যায়, শুধুমাত্র স্বরতন্ত্রীর স্থিতাবস্থা বা ভোকাল পলসি, সেক্ষেত্রে অঙ্কোলজিস্টের উপদেশ নেওয়া অবশ্য কর্তব্য।

অঙ্কোলজিস্টরা ঠিক কী করবে?

প্রথমে আপনাকে ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা করে দেখবে যে শরীরের কোথাও কোনো ক্যানসারের চিহ্ন আছে কি না। অনেক ক্ষেত্রেই যে এসব ক্যানসার কোনো ব্যথা-যন্ত্রণা বা অন্য কোনো উপসর্গ দেয় না। এরপর বিশেষ কতগুলো ছবি তুলে দেখার চেষ্টা করবে আপনার বুকের ভিতর মিডিয়াস্টিনামে কোনো টিউমার বাসা বেঁধেছে কি না। এই সময় আমরা শরীরের অন্যান্য অঙ্গ -প্রত্যঙ্গেরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পারি। অনেকে অভিযোগ করেন, গলা ফ্যাসফেঁসে হয়েছে বলে ডাক্তারবাবু পেটের সি.টি.স্ক্যান করতে দিলেন কেন? অনেকেই এসবের মধ্যে ডাক্তার ও ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের অশুভ সম্পর্ক দেখে ফেলেন। কিন্তু ক্যানসার সন্দেহ হলে সম্ভাব্য উৎপত্তিস্থলগুলোর খোঁজখবর নেওয়াই চিকিৎসা বিজ্ঞানের নিয়ম। আজকের দিনে পেট-সি. টি. স্ক্যান বলে একরকম পরীক্ষা আছে যা এই কাজে খুবই দরকারি।

শরীরের ভেতর ক্যানসারকে চিহ্নিতকরণই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। যত দ্রুত এটা হবে, ততই আরোগ্যলাভের সম্ভাবনা বেশি। চিহ্নিতকরণ ও সনাক্তকরণ হয়ে গেলে চিকিৎসার প্রশ্ন। অল্প কথায় বলতে গেলে এ ধরনের ক্যানসারে সাধারণত সার্জারি বা অপারেশন সম্ভবপর হয় না। তাই মূলত চিকিৎসা করা হবে রেডিয়েশন থেরাপি এবং প্রয়োজনমতো কেমোথেরাপি দিয়ে। ঠিক কী ধরনের রেডিয়েশন বা কেমোথেরাপি এবং কী ডোজে  তা দেওয়া প্রয়োজন—এই প্রশ্নটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অভিজ্ঞ অঙ্কোলজিস্টই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন।

পরিশেষে কিন্তু আবার বলি যে, সব বুকের ক্যানসার কিন্তু এইভাবে গলা শুনে ডায়াগনোসিস করা যায় না। তাই গলা ভাঙা ছাড়াও অন্য যে কোনো সিম্পটম (যেমন কাশি, বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট) হলে সঠিকভাবে, চিকিৎসাবিজ্ঞানের অনুমোদিত পথেই তার অনুসন্ধান তৎক্ষণা করা উচিত। আমাদের দেশে বিভিন্নরকম বুকের ক্যানসার যে হারে বেড়ে চলেছে সেটা ভেবে দেখলে এছাড়া অন্য কোনো  পথ নেই। 

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Exit mobile version