Home স্বাস্থ্য পরামর্শ Arthritis: নাছোড়বান্দা বাতের ব্যাথা

Arthritis: নাছোড়বান্দা বাতের ব্যাথা

Types of Arthritis and its treatment

জীবনের বিভিন্ন সময়েই বিভিন্ন রোগের ব্যথাতে আমরা কাবু হয়ে পড়ি। তখন মুঠো মুঠো ডাক্তারি ভাষাতে যাকে বলে ‘ওভার দ্য কাউন্টার’ গোছের বেদনা নিবারক বা অ্যানালজেসিক গোত্রের ট্যাবলেট ক্যাপসুল গলাধঃকরণ করে আমাদেরকে সাময়িকভাবে সেই ব্যথার শুলক্ষেপণ থেকে রেহাই পাওয়ার উপায় খুঁজতে হয়। বদহজমে পেটের ব্যথা, আমাশয়ের মোচড় মারা ব্যথা, ইনফ্লুয়েঞ্জা, চিকুনগুনিয়া, সর্দি জ্বরে সারা গা হাত পা ব্যথার অভিজ্ঞতা, অথবা হঠাৎ হাত-পা মচকে গিয়ে ব্যথার অভিজ্ঞতা হয়নি এরকম মানুষকে বোধহয় হাত গোনা যেতে পারে। তবে, এইসব ব্যথা যদি বিভিন্ন রোগের উপসর্গ চলে গেলেও দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, কোনও ওষুধ পত্রের প্রভাব উপেক্ষা করে টিঁকে থাকে, তখনই সেই ব্যথা হয়ে ওঠে আতঙ্কের অশনি সংকেত। এই ধরণের নাছোড়বান্দা ব্যথা থেকে জন্ম নেয় মানসিক অবসাদ, ক্লান্তি এবং অনেক সময় মানসিক প্রতিবন্ধকতাও। অনেক সময়ই সঠিক চিকিৎসার অভাবে এই ধরণের ব্যথার রোগীরা হয়ে পড়ছেন অসহায়, জীবন্মৃত। সম্প্রতি এই ধরণের দীর্ঘস্থায়ী ব্যথাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, ফাইব্রোমায়ালজিয়া নামে। 

গেঁটে বাত (রিউম্যাটিজম) এর রোগীদের প্রায় ১৫ শতাংশই এই চিরস্থায়ী বেদনা-উপসর্গের শিকার। ফাইব্রোমায়ালজিয়া সাধারণতঃ মানবশরীরে কমপক্ষে তিন মাসের মতো টিকে থাকে। আরো বেশি দিনও থাকতে পারে এই রোগটি। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত এবং শর্করার মাত্রা, হৃদস্পন্দন, কিডনি-সবকিছুই স্বাভাবিক থাকে। সাধারণতঃ মাথার পিছন দিকে দুই কাঁধের মাঝামাঝি স্থানে, ঘাড়ে, বুকের উপরের দিকে, কনুই পর্যন্ত হাতের অংশ, নিতম্বের পেশিসমূহ এবং হাঁটুর পিছনদিকে দেখা যায় ফাইব্রোমায়ালজিয়ার ব্যথা, দেহের দুই দিকেই সমানভাবে ছড়ায় এই ব্যথা। কোমরের নিচের দিকেও দেখা দেয় ফাইব্রোমায়ালজিয়া। যদি দেহের এইসব জায়গাতে জোরে চাপ দেওয়া যায়, তাহলে রোগী বা রোগিনী, অসহ্য ব্যথা অনুভব করেন। ঘুম ও চোখের পাতা থেকে বিদায় নেয় তাঁদের। সুতরাং, ক্রমাগত অনিদ্রা আর ক্লান্তি, এইসব রোগীর কাজকর্মের সক্ষমতার ওপরও বিরূপ প্রভাব ফেলতে শুরু করে। সবসময় এই ব্যথা থাকে না। তাই, রোগাক্রান্ত ব্যক্তির পরিচিতরা মনে করেন-কাজের ভয়ে ব্যথা আর অসুস্থতার অভিনয় করছেন তিনি। 

ফাইব্রোমায়ালজিয়াতে আক্রান্ত রোগী বা রোগিনীদের দেহের ওজনও বাড়তে থাকে অনিয়ন্ত্রিত হারে। মাথাব্যথা আর পেটখারাপ, পাতলা পায়খানা (ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম) হয়ে ওঠে তাঁদের দুর্ভাগ্যজনক চিরসাথী। অনেক সময়, কোনও অঙ্গের শল্যচিকিৎসা ঠিকমতো না হলে, ভাইরাসঘটিত রোগের সঠিক প্রতিষেধক বা অ্যান্টিবায়োটিক না প্রয়োগ করা হলেও এই ফাইব্রোমায়ালজিয়া দেখা দিতে পারে। এই রোগাক্রান্ত ব্যক্তিদের আায়ুগুলিও ঠিকমতো মস্তিষ্কে উদ্দীপনা প্রবাহক অংশ বা ইউরোরিসেপটরের মাধ্যমে ব্যথার অনুভূতি গুলোকে পাঠাতে পারে না। ফলে রোগাক্রান্ত ব্যক্তি বুঝতে পারেন না-দেহের ঠিক কোন জায়গাতে তাঁদের ব্যথাটা সবচেয়ে বেশি। এই রোগে আক্রান্ত হলে অ্যাসপিরিন, প্যারাসিটামল বা নন স্টেরয়েডাল অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি জাতীয় ওষুধ প্রয়োগ করেও এই রোগে ব্যথার প্রকোপ কমানো যায় না। অবশ্য গ্যাবাপেনটিন এবং প্রেগাব্যালিন এই ওষুধদুটি ফাইব্রোমায়ালজিয়া জাত বেদনা, কিছুটা কমাতে পারে বলে প্রমানিত হয়েছে। কেননা, এই ওষুধগুলি মস্তিষ্কে ব্যথার প্রকৃতিকে বুঝতে সক্ষম, স্নায়ু উদ্দীপনা পরিবহনকারী রাসায়নিকগুলোর পরিমানের অদলবদল ঘটায়। অবশ্য, এই ধরণের ওষুধগুলি থেকে গ্যাসট্রাইটিস মাথাঘোরা, দুর্বলতা, ওজন বৃদ্ধি এমনকি সবসময় ঝিমুনি ভাব দেখা দেয় রোগাক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে। এই

ফাইব্রোমায়ালজিয়া ব্যাধিতে রোগাক্রান্ত ব্যক্তির পেশী তন্ত্র বা অস্থিসন্ধিতে কোনও ক্ষতি বা বিকৃতি দেখা দেয় না। চিকিৎসকের মতে যেহেতু রোগটির নির্দিষ্ট কোনও প্রতিবিধান নেই, সেই জন্য আমাদের প্রচলিত জীবনধারাকে কিছুটা ঢেলে সাজানোর জন্য পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা। তাহলে আর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াযুক্ত ওষুধের ওপর নির্ভর করতে হবে না আমাদের। 

  • প্রথমত কোনও নির্ভরযোগ্য, সহৃদয় বন্ধুর কাছে আমরা শারীরিক অস্বাচ্ছন্দ্যর কথা বলে দুশ্চিন্তামুক্ত হতে পারি। সেরকম বন্ধুস্থানীয় কাউকে না পেলে কোনও পেশাদার মনস্তাত্বিক বা উপদেষ্টার সাহায্য বা পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।
  • দ্বিতীয়তঃ যোগাভ্যাসের মাধ্যমে ও ধ্যান প্রাণায়ামের সাহায্যে মানসিক দুশ্চিন্তা ও অবসাদ কমানো যায়। 
  • তৃতীয়তঃ ফাইব্রোমায়ালজিয়ার বিস্তার কমানোর জন্য রাতে কমপক্ষে ৭ থেকে ৮ ঘন্টা গভীর ঘুম অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। প্রতিরাতে একইসময়ে ঘুমোলে ভালো হয়। দিনের বেলা ঘুমোলে রাতে অতটা ঘুমোনোর দরকার নেই। শোবার ঘরে কম্পিউটার, টেলিভিশন এবং অন্যান্য বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি না রাখাটাই মঙ্গল।
  • চতুর্থত : স্বাস্থ্যকর ও সুপাচ্য খাবার খেতে হবে। দেহে যাতে বেশিমাত্রাতে ক্যাফেইন নামক ক্ষতিকারক উপক্ষার বা অ্যালকলয়েড না জমা হতে পারে, সেজন্য চা কফি ও সফট ড্রিংকস পান করার মাত্রা, অনেকটাই কমিয়ে দিতে হবে। দিনে ৫-৬ বার ফল ও টাটকা সবজি খেতে হবে।
  • পঞ্চমতঃ দৌড়ঝাঁপ, হাঁটা, সাইকেল চালানো, সাঁতার কাটা এবং যোগ ব্যায়াম নিয়মিতভাবে অভ্যাস করলে শরীরের পেশিগুলির মধ্যেকার মায়োফাইব্রিল তত্ত্বগুলির মধ্যে জড়তা কেটে গিয়ে সামঞ্জস্য আসে। এর ফলে পেশিগুলিতে আর ব্যথাও হয় না। দেহের যে যে স্থানে ব্যথা হবে, সেই স্থানগুলোতে বলপয়েন্ট কলম দিয়ে দাগ দিতে হবে। একটি প্লাস্টিকের ব্যাগে বরফের টুকরো নিয়ে সেই ব্যাগটি ওই জায়গাগুলিতে চেপে ধরতে হবে। তাহলে সঙ্গে সঙ্গেই আরাম পাওয়া যাবে। এছাড়া ব্যথার জায়গাগুলোতে আয়ুর্বেদিক তেল ম্যাসাজ করলেও ব্যথা গ্রস্থ পেশিগুলো যথেষ্ট শিথিল ও সাবলীল হয়ে আসে।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Exit mobile version