Home স্বাস্থ্য পরামর্শ উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেশার: কীভাবে হয়, কাদের ঝুঁকি বেশি?

উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেশার: কীভাবে হয়, কাদের ঝুঁকি বেশি?

প্রেসার দু’রকম— হাইপ্রেসার ও লো-প্রেসার। হাই-প্রেসারের সমস্যাটাই মূলত বেশি দেখা যায়। প্রথম দিকে যখন প্রেসার বাড়ে রোগী সাধারণত বুঝতে পারে না। কারণ কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না। অবশ্য প্রেসার খুব বেশি বেড়ে গেলে কিছু ক্ষেত্রে রোগী বুঝতে পারে। যেমন হাঁফ ধরা, মাথার পিছন দিকে দপদপ করে একটা ব্যথা। অনেকদিন ধরে হাইপ্রেসার থাকলে চোখে দেখারও সমস্যা হয়। চোখের ভেতর যে রেটিনা, সেই রেটিনায় কিছু পরিবর্তন হয় ফলে দৃষ্টিশক্তির ক্ষতি হতে পারে। এছাড়া কিডনির সমস্যা, হার্টের সমস্যাও তৈরি হয়। খুব বেশি প্রেসারের কারণে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক হতে পারে।

নির্দিষ্ট একটা বয়সের পর সবারই প্রেসার চেক করা উচিত। যাতে হঠাৎ কোনো বিপদ না ঘটে। ক্রনিক লো প্রেসার খুব রেয়ার। তবে কারো কারো প্রেসার কোনো কারণে ফল করতে পারে। এমনিতে প্রেসার একটু নীচের দিকে থাকা ভালো। অবশ্য সেটা যদি খুব কমে যায় তাহলে চিন্তার কারণ তো বটেই। খুব ডিপ্রেশন হলে অনেক সময় লো প্রেসার হতে পারে। প্রেসার ওপরেরটা ৯০ বা ১০০ এবং নীচেরটা ৭০ থাকলে সেটা নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। 

প্রসঙ্গত, হার্ট হল আমাদের দেহের একটি পাম্পিং স্টেশন। হার্ট যখন সঙ্কুচিত হয় তখন যে ধমনী দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হয়, সেই ধমনীর দেওয়ালে চাপ সৃষ্টি হয়। আবার প্রসারিত হলেও অল্প চাপ তৈরি হয়। রক্তনালীর দেওয়ালে প্রবাহিত রক্তের এই যে চাপ, একেই বলে রক্তচাপ। স্বাভাবিক অবস্থায় রক্তচাপ ওপরে অর্থাৎ সিস্টোলিক ১২০ এবং নীচে অর্থাৎ ডায়াস্টোলিক ৮০ মিলিমিটার অফ মার্কারি।

রক্তচাপ বাড়লে যেমন মুশকিল, তেমনি মুশকিল খুব বেশি কমে গেলেও। ক্রনিক নিম্ন রক্তচাপ বলে কোনো অসুখ নেই। অনেক সময় রক্তচাপ সাধারণভাবে বেশ কম থাকলে অনেকে মনে করেন তিনি লো প্রেসারে ভুগছেন। এই ধারণাটা ঠিক নয়। কারণ ওটাই তাদের স্বাভাবিক রক্তচাপ এবং খুশি হওয়া উচিত এই কারণে যে স্ট্রোক বা ওই জাতীয় অসুখ হওয়ার সম্ভাবনা তাদের প্রায় থাকে না বললেই চলে।

তবে কোনো কোনো অবস্থায় রক্তচাপ হঠাৎ করে খুব কমে যেতে পারে। যেমন হার্ট অ্যাটাকের পরে সাংঘাতিক জীবাণু সংক্রমণে, প্যানক্রিয়াটাইটিস খুব রক্তক্ষরণের পরে বা গ্যাস্ট্রোএনট্রাইটিস হলে। এইসব ক্ষেত্রে সঙ্গে সঙ্গে রোগীর চিকিৎসা করতে হবে। এছাড়া ডিহাইড্রেশন হলেও রক্তচাপ কমে।

রক্তচাপ বেড়ে যাবার কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। প্রাথমিকভাবে কোনো উপসর্গ না থাকায় অধিকাংশ ব্যক্তিই সাধারণত রক্তচাপ কতটা সেটা পরীক্ষা করান না। অন্য কোনো রোগ দেখাতে গিয়ে ডাক্তারবাবুরা রক্তচাপ মেপে ওই চাপ বৃদ্ধির ব্যাপারটা জানতে পারেন।

উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ

  • হঠাৎ করে খুব বেশি ঘাম, সঙ্গে অস্থিরতা ও ক্লান্তি।
  • নাক দিয়ে প্রচন্ড রক্তপাত।
  • ক্রমাগত অনিদ্রা ও অস্থিরতা।
  • পা ও পায়ের পাতা মাঝে মধ্যে ফুলে যাওয়া।
  • কারণে-অকারণে রেগে যাওয়া।
  • বুকে চাপ ধরা ব্যথা।

এইসব কারণগুলো দেখা দিলে ব্লাডপ্রেসার চেক করলে হাইপ্রেসার ধরা পড়ে।

ব্লাডপ্রেসার বেড়ে যাওয়ার বিপদ

ব্লাড প্রেসার বেড়ে গেলে বিশেষ করে ১৮০ থেকে ২০০ মি.মি ওপরের দিকে এবং নীচের মাত্রা ১১০-১২০ মি.মি হলে সাবধান। এটা জীবনহানিকর অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে। অক্ষিপটে রক্তক্ষরণ, মস্তিষ্কে পক্ষাঘাত এবং রেনাল ফেলিওর হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই সতর্ক হওয়া দরকার।

রক্তচাপ বাড়লে তার প্রভাব পড়তে পারে দেহের অন্যান্য অঙ্গেও। সে জন্য নানা ধরনের পরীক্ষার প্রয়োজন হয়। রক্তে ইউরিয়া, কোলেস্টেরল, সুগার, প্রস্রাবে অ্যালবুমিন ও রক্তকণিকার উপস্থিতি এবং কালচার সেনসিটিভিটি, বুকের এক্স-রে, ই.সি.জি, ইকোকার্ডিওগ্রাম, আলট্রাসোনোগ্রাম ইত্যাদি পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে।

উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসার জন্য বহু ভালো ওষুধ আছে এবং যে কোনো মাত্রার উচ্চ রক্তচাপই উপযুক্ত চিকিৎসার সাহায্যে নিয়ন্ত্রণ করে স্বাভাবিক রেখে দেওয়া যায়। ওষুধের সঙ্গে সঙ্গে শারীরিক পরিশ্রম যেমন নিয়মিত হাঁটা, সাইকেল চালানো বা যোগা ও ফ্রি-হ্যান্ড এক্সারসাইজ করলে উচ্চরক্তচাপ কিছুটা কমে। প্রতিদিন সকালে চার কিমি হাঁটলে রক্তচাপ যেমন কিছুটা কমে, তেমনই উচ্চ রক্তচাপজনিত জটিলতাও অনেক কমে যায়। নিয়মিত হাঁটলে হার্টের রোগের সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।

Hypertension

কীভাবে সামলাবেন রক্তচাপ 

রক্তচাপ বাড়ে টেনশন বা মানসিক উত্তেজনা দুশ্চিন্তার জন্য। তাই এমন কিছু করা উচিত নয় যাতে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। প্রয়োজন হলে ডাক্তারবাবুর পরামর্শে টেনশন কমাবার ওষুধ খেতে হবে। রাতে অনিদ্রা ও দিনে অতিরিক্ত পরিশ্রম ব্লাডপ্রেসার বাড়তে সাহায্য করে। খাওয়া-দাওয়ার দিকে নজর দেবেন কারণ ফাস্টফুড, ঘি, মাখন, তৈলাক্ত খাদ্য, ডিম, রেডমিট রক্তচাপ বাড়তে সাহায্য করে।

রক্তচাপ যাতে না বাড়ে তার জন্য সাবধানতা

  • ধূমপান না করা।
  • নিয়মিত কায়িক পরিশ্রম করা। 
  • পরিমিত আহার ও নিদ্রা।
  • পরিমিত মদ্যপান (না করতে পারলে সবথেকে ভালো)।
  • অতিরিক্ত লবণ খাওয়া থেকে বিরত থাকা । 
  • প্রেসার বেশি হলে বিশ্রাম।
  • মাথা ঘুরলে, গা-বমি করলে, মাথা টললে বুঝতে হবে রক্তচাপ বেড়েছে। সঙ্গে সঙ্গে প্রেসার চেক করে ডাক্তার নির্দেশিত ওষুধ খেতে হবে।

লবণ ও বেশিমাত্রায় মশলাযুক্ত খাবার খাবেন না। হাই ব্লাডপ্রেসারের সঙ্গে বুকে ব্যথা হলে সাবধান। কারণ হাই ব্লাডপ্রেসারের জন্য হার্টের সমস্যা হতে পারে। অনেক সময় হার্ট ফেলিওরের কারণ হয় হাই প্রেসার।

রিস্ক ফ্যাক্টর কাদের হয়

  • যাদের বাড়িতে বাবা-মা বা ভাই-বোনের প্রেসার আছে তাদের ক্ষেত্রে প্রেসার বাড়ার সম্ভাবনা বেশি। 
  • খুব হেলদি অর্থাৎ মোটা মানুষদের প্রেসার বাড়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। 
  • কিডনির সমস্যা কিংবা ডায়াবেটিস থাকলেও প্রেসার বাড়তে পারে। 
  • ধূমপান বা যেকোনোরকম তামাক হাই প্রেসারের সম্ভাবনা ও প্রেসারের জটিলতাকে বাড়িয়ে দেয়
  • নুন খাবার প্রবণতায় রিস্ক বেশি থাকে। হাই প্রেসার থাকলে সেক্ষেত্রে প্রেসার বেড়ে যাবার সম্ভাবনা খুব বেশি।

লাইফ স্টাইল মডিফিকেশন ও স্বাস্থ্য সম্বন্ধে সচেতন থাকলে যার পঁয়তাল্লিশ বছরে হাই প্রেসার আসত তার প্রেসার আসার সময়কে সহজেই দশ-পনেরো বছর কমিয়ে ফেলা যায়। আর হ্যাঁ, যারা প্রেসারের বড়ি খান সেটা নিয়মিত খাবেন। ডাক্তারের নির্দেশ ছাড়া বন্ধ করবেন না।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Exit mobile version