রোগীরা চিকিৎসকদের কাছে নানা ধরনের রোগ নিয়ে আসেন। কেউ কেউ মাথা ব্যথা, মাথা ঘোরার সমস্যা নিয়েও ডাক্তারের কাছে এসে থাকেন। অনেক সময় সমস্যা এমনই হয় যে দু’পায়ের শক্তি কমে যায় এবং রোগী টলে পড়ে যান। কোনো কোনো রোগী এসে এমনও বলেন ‘ডাক্তারবাবু হাঁটতে পারি না, মাথা ঘোরে, পা টলে’। তাই যখনই এ ধরনের উপসর্গ দেখা দেবে তখনই কিন্তু দেরি না করে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা দরকার। কারণ সামান্য মাথা ঘোরা, মাথা ব্যথাই প্রচন্ড আকার ধারণ করে জীবন অতিষ্ট করে তুলতে পারে। মাথা ঘোরার কারণ অনেক থাকে, আবার কখনও কখনও কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। আবার অনেক সময় খুব সাধারণ কোনো কারণে মাথা ঘুরতে পারে, মাথাব্যথা হতে পারে। যেমন অতিরিক্ত চিন্তা, স্ট্রেস ইত্যাদি। কখনও গুরুতর রোগের কারণে এমন হতে পারে, যেমন ব্রেন টিউমার।
প্রথমেই আলোচনা করা যাক মাথা ব্যথা নিয়ে। মাথার কোথায় কোথায় ব্যথা? করোটির যে কোনো স্থানে ব্যথা হতে পারে, পুরো কপাল জুড়ে চোখের ওপর দিকে, অথবা মাথার ঠিক মাঝখানে বা মাথার পিছনে ব্যথা হতে পারে।
Table of Contents
মাথাব্যথার পিছনে অন্য কী কী কারণ থাকতে পারে
মস্তিষ্কের ধমনী বা শিরার অসুখ, ব্রেন বা স্নায়ুর সমস্যা, ব্রেন যে পাতলা পর্দা দিয়ে ঢাকা থাকে সেই মেনিনজেসের অসুখ কিংবা মাথার পেশির অসুখ, উচ্চ রক্তচাপ, সাইনাসের প্রদাহ, যেকোনো ভাইরাসের সংক্রমণ, দৃষ্টিশক্তির অসুবিধা, দুশ্চিন্তা, মানসিক চাপ, মাথায় কোনো আঘাত অথবা মাইগ্রেনের কারণেও মাথাব্যথা দেখা যায়। মনে রাখবেন, মাইগ্রেনে মাথার একদিকে ব্যথা শুরু হয় সঙ্গে বমি এবং চোখে দেখার অসুবিধে থাকে। কিছুদিন ভালো থাকার পর আবার হঠাৎ ব্যথা শুরু হয়। কানের সমস্যা মিনিয়ার সিনড্রোমের কারণেও মাথাব্যথা হতে পারে।
মাথা হঠাৎ করে ঘোরার পেছনে সম্ভাব্য কারণ
লাইট হেডেডনেস, গিডিনেস অথবা ডিজিনেস অর্থাৎ মাথাটা হালকা হয়ে যাওয়া কিংবা ভারী হয়ে যাওয়া তার সাথে মাথাটা ঘুরছে, সেই সময় পা টলে গিয়ে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক সময় বেশিই থাকে। বাচ্চা থেকে বৃদ্ধ যে কোনো বয়সের মানুষ এই ধরনের সমস্যায় পড়তে পারেন। যেটা খুব কমন, বিশেষত গরমের সময় — ভীষণ গরম অথচ জলটা কম খাওয়া হয়। ঠান্ডা থেকে গরম, গরম থেকে ঠান্ডা— আবহাওয়া পরিবর্তন হলে একটা হালকা মাথা ব্যথা শুরু হয়। অতিরিক্ত গরমে মাথা ঘোরার সাথে মাথাটা ভার লাগে, চারপাশটা অন্ধকার মনে হয়, সেই সময় পা টা টলে যেতে পারে। সেই জন্য গরমকালে প্রচুর জল খেতে বলা হয়। শুধু জল নয়, ও.আর.এস খেতেও বলা হয়। এই সময় হালকা সুতির জামা- কাপড় পরতে বলা হয় যাতে হাওয়া পাস করতে পারে। মাথায় ছাতা ও সাথে জলের বোতল থাকা একান্ত দরকার।
আজকাল আমরা সবাই কম্পিউটার ব্যবহার করি। অনেকক্ষণ কম্পিউটারের দিকে তাকিয়ে কাজ করার ফলে দুটো জিনিস হতে পারে, সার্ভাইক্যাল স্পন্ডিলোসিস এবং লো ব্যাক পেন সার্ভাইক্যাল স্পন্ডিলোসিস থেকে মাথা ব্যথার সমস্যা যেকোনো সময় হতে পারে।
আর একটি পরিচিত অসুখ হল অ্যানিমিয়া ৷ বিশেষ করে মহিলাদের মধ্যে অ্যানিমিয়া বেশি দেখা যায়। অ্যানিমিয়া থেকে ডিজিনেস হতে পারে। ঘাড়ের স্নায়ুতে চাপ পড়লে সার্ভাইক্যাল মায়লোপ্যাথি হলেও ব্যথা হতে পারে। পেটে গ্যাস, অম্বল হলেও মাথা ঘুরতে দেখা যায়।
রক্তচাপ বৃদ্ধির জন্য মাথা ঘুরতে পারে। সেজন্য যাদের ফ্যামিলিতে রক্তচাপ বৃদ্ধির ইতিহাস থাকে তাদের মাঝে মাঝে ব্লাডপ্রেসার পরীক্ষা করা দরকার এবং প্রেসার বাড়লে তার চিকিৎসা করা দরকার।
যাদের ডায়াবেটিস আছে, রক্তচাপ আছে, তাদের নিয়মিত ওষুধ তো খেতেই হবে তার সাথে চেক-আপটা জরুরি। যদি মাথা ঘোরার লক্ষণ দেখা যায় ওষুধ খাওয়া সত্ত্বেও, তাহলে অবিলম্বে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ দরকারে ওষুধ পরিবর্তন জরুরি। এই সমস্ত মাথাব্যথার কারণ, মাথা ঘোরার চিকিৎসার আগে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলাটা জরুরি।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা
কেন মাথা ঘুরছে বা মাথা ব্যথা হচ্ছে তা আগে পরীক্ষা করে ধরতে হবে। প্রথমত, রক্ত পরীক্ষা করে সুগার আছে কি না দেখতে হবে। রুটিন ব্লাড টেস্ট, টি.সি, ডি.সি., ই.এস.আর, হিমোগ্লোবিন চেক করতে হবে। ব্লাডপ্রেসার পরীক্ষা করতে হবে। শুধু শুয়ে বা বসে ব্লাড প্রেসার চেক করলে হবে না। শুয়ে, বসে এবং দাঁড়িয়ে এই তিনভাবে ব্লাড প্রেসার চেক করা দরকার ।
- ডি-হাইড্রেশনের জন্য মাথা ঘোরার সমস্যা হতে পারে। সেইজন্য ও.আর.এস. খুব প্রয়োজন। জল খেতে হবে বেশি। ইলেকট্রালের জল, গ্লুকোজের জল, ডাবের জল খেতে হবে, যাতে সোডিয়াম- পটাসিয়াম শরীরে পৌঁছে।
- বেশি তেল, ঝাল, মশলা, খুব গরম এবং স্পাইসি খাবার এড়িয়ে চলা দরকার।
- যাদের সার্ভাইক্যাল স্পন্ডিলোসিস আছে তাদের এক্স-রে করে দেখা উচিত। দরকারে কিছু ব্যায়াম ও ফিজিওথেরাপি করলে উপকার হবে।
- মিনিয়ারস সিনড্রোম থাকলে নাক-কান-গলার বিশেষজ্ঞদের দ্বারা ডায়াগনোসিস করে চিকিৎসা করতে হবে।
- সার্ভাইক্যাল মেলানোপ্যাথির কারণে মাথাঘোরা, মাথা ব্যথা থাকলে এক্স-রে ও এম.আর.আই করে সমস্যার গুরুত্ব বুঝে চিকিৎসা করতে হবে।
- গ্যাস, অম্বল থেকে মাথাঘোরা হলে গুরুপাক দ্রব্য বর্জন করে সহজপাচ্য খাবার গ্রহণ করতে হবে।
- যে সমস্ত মানুষ ক্রনিক রোগে ভুগে থাকেন তাদের সঠিক ডোজে ঠিক ঠিক নিয়ম মেনে ওষুধগুলো গ্রহণ করতে হবে।
- অনেক সময় কড়া ডোজের ওষুধ গ্রহণ করার কারণে মাথা ঘোরার সমস্যা হতে পারে, সেক্ষেত্রে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে ওষুধ নিন।
- দুর্বলতা থাকলে শরীরে মাথা ঘোরার সমস্যা, পা টলে যাওয়া ইত্যাদি হতে পারে। এক্ষেত্রে ভিটামিন বি-১২, ফোলিক অ্যাসিড গ্রহণ করা দরকার।
মাথা ঘুরলে কী করবেন
মাথা ঘোরার সমস্যা দেখা দিলে সত্বর ডাক্তার দেখান। নির্দেশমতো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসা করান। যদি ওপরের প্রেসার ১৮০ এবং নীচের দিকে ১০০ মি.মি-র বেশি হয় তাহলে ব্লাডপ্রেসারের ওষুধ নিতে হবে ডাক্তারের পরামর্শ মতো। নুন, ডিম, ঘি, মাখন, মাংস, তেল, ঝাল খাওয়া কমিয়ে ফেলুন। মাথা ব্যথা ও মাথা ঘোরার জন্য নির্দিষ্ট ট্যাবলেট নিতে হবে। কিন্তু সেই ট্যাবলেট নিজের ইচ্ছেমতো নয়, ডাক্তারের নির্দেশমতো।