Home পারম্পরিক ঔষধি ওষুধ থেকে অ্যালার্জি? অবহেলায় চরম বিপদ।

ওষুধ থেকে অ্যালার্জি? অবহেলায় চরম বিপদ।

পরিবেশ দূষণ সহ নানা কারণে বাড়ছে অ্যালার্জির সমস্যা। অনেকের মধ্যে দেখা দিচ্ছে শ্বাসকষ্ট। যদিও একটু সতর্ক হলেই এই সমস্যা প্রতিরোধ করা যায়। 

অ্যালার্জি কী

দূষণের ফলে বিশ্বজুড়েই বাড়ছে অ্যালার্জির প্রবণতা। অ্যালার্জির জন্য অল্পস্বল্প থেকে মারাত্মক অর্থাৎ জীবন সংশয়ের মতো অবস্থা দেখা দিতে পারে। আমাদের শরীরকে বাইরের বিভিন্ন জীবাণু থেকে রক্ষা করে শরীরের ইমিউন সিস্টেম। আর এই ইমিউন সিস্টেম ঠিকমতো কাজ করতে না পারলে কিছু আপাত নিরীহ উপাদানই তখন অ্যালার্জির সৃষ্টি করে। এই উপাদান গুলোকে বলে অ্যালার্জেন। অ্যালার্জেনগুলো ইমিউন সিস্টেমের সংস্পর্শে এলে ইমিউনোগ্লোবিন-ই নামে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। আর এই অ্যান্টিবডি বিভিন্ন কোষে গেলে সেখান থেকে হিস্টামিন এবং অন্যান্য রাসায়নিক নিঃসৃত হয়। এর থেকেই দেখা দেয় অ্যালার্জি।

অ্যালার্জির লক্ষণ

অ্যালার্জির লক্ষণ প্রকট হতে পারে নাক, ফুসফুস, গলা, সাইনাস, কান, পাকস্থলি অথবা ত্বকে। কারো কারো অ্যালার্জির জন্য অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্টও হয়। অ্যালার্জি কখনো কখনো জটিল হয়ে জীবন সংশয় পর্যন্ত ঘটাতে পারে। এই অবস্থাকে বলে অ্যানাফিল্যাক্সিস । অ্যালার্জির জন্য বহু কিছু দায়ী। এর মধ্যে খুব সাধারণ কারণগুলো হল ফুলের রেণু, ধুলো, খাবার, পোকামাকড়ের কামড়, ধোঁয়া, ওষুধ, দুধ ইত্যাদি।

রোগ নির্ণয়

এই সমস্যা দেখা দিলে একজন অভিজ্ঞ অ্যালার্জি বিশেষজ্ঞ বা ইমিউনোলজিস্টকে দেখানো দরকার। রোগলক্ষণ শুনে তিনি প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করে চিকিৎসা করবেন। এছাড়া রোগী কী কী করলে ভালোভাবে জীবন কাটাতে পারবে সে সম্পর্কেও সঠিক পথ দেখাতে পারবেন।

Homeopathy on Allergy

ওষুধেও অ্যালার্জি?

অনেক সময় এক রোগ সারাতে এসে অন্য সমস্যা হাজির হয়। অর্থাৎ বেশ কিছু ওষুধ আছে যার থেকে অ্যালার্জি দেখা দিতে পারে। এও ঠিক, একই ওষুধে সবার যে একরকম শারীরিক প্রতিক্রিয়া হবে তা নয়। দেখা গেছে ৫-১০% ব্যক্তির ওষুধ থেকে এই সমস্যা হয়। ইমিউন সিস্টেমের অতি সক্রিয়তায় ওষুধ থেকে অ্যালার্জি হলেও তা কোনোভাবে ওই সিস্টেমের ব্যাঘাত ঘটায় না। যেসব ওষুধে অ্যালার্জির প্রবণতা বাড়ে সেগুলো হল- অ্যান্টিবায়োটিক যেমন পেনিসিলিন, অ্যাসপিরিন এবং নন স্টেরয়েডাল অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি মেডিকেশন যেমন আইবুপ্রোফেন, অ্যান্টিকনভালস্যান্টস্, মোনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি থেরাপি, কেমোথেরাপি ইত্যাদি।

অ্যালার্জির আশঙ্কা আরও বেড়ে যায়, নিয়মিত এইসব ওষুধ ব্যবহার করলে। আর মুখে খাওয়ার তুলনায় ত্বকে লাগালে বা ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে ওষুধ নিলে এই সমস্যা অনেক বেড়ে যায় ৷

ওষুধে অ্যালার্জির লক্ষণ

  • বমি হয়ে যাওয়া, কেমোথেরাপির জন্য হলে চুল পড়ে। 
  • অ্যাসপিরিন, অ্যান্টিবায়োটিক থেকে হলে, পেটের গন্ডগোল উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসায় অ্যাঞ্জিওটেনসিন কনভার্টিং এনজাইম বা এস ইনবিহিটর ব্যবহারে কাশি, চোখ, মুখ ও জিভে ফোলাভাব দেখা দেয়।

অন্য কিছু ক্ষেত্রেও এই ধরনের সমস্যা হয় বলে এই উপসর্গগুলো ওষুধের জন্য না কি অন্য কোনো কারণে দেখা দিচ্ছে তা বুঝতে অসুবিধা হয়। ওষুধের জন্য অ্যালার্জি হলে এছাড়াও যে সমস্ত লক্ষণ দেখা দেয় তা হল –

  • স্কিন র‍্যাশ, চুলকানি, শ্বাসকষ্ট, ফোলাভাব—বিশেষ করে মুখে।

অ্যানাফাইল্যাকসিস খুব জটিল এক সমস্যা । এই অ্যালার্জি হলে মুখ ফোলে, রক্তচাপ কমে এবং আরও বড় জটিলতা দেখা দিতে পারে। এরকম ক্ষেত্রে ঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু হওয়া – দরকার। না হলে প্রাণ সংশয় পর্যন্ত হতে পারে। অন্য ধরনের অ্যালার্জির সঙ্গে অ্যানাফাইল্যাকসিসের পার্থক্য হল এর উপসর্গ। যা শরীরের বিভিন্ন অংশে দেখা দিতে পারে। যদি অ্যালার্জির চিকিৎসার জন্য নিয়মিত খাওয়া ওষুধগুলো বন্ধ করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

ওষুধ থেকে অ্যালার্জি হয়েছে কি না জানার জন্য চিকিৎসক জিজ্ঞাসা করতে পারেন,কখন এই উপসর্গ দেখা দিয়েছে, কী ধরনের সমস্যা হচ্ছে, কতদিন ধরে এই অসুবিধা ভোগ করছে, আর রোগী কী কী ওষুধ খায় ইত্যাদি। যদি কারো কোনো বিশেষ ওষুধে অ্যালার্জি হয় এটা জানা যায় কিংবা আগে কোনও ওষুধ খেয়ে সাংঘাতিক কোনো সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে অ্যালার্জি বিশেষজ্ঞ বা ইমিউনোলজিস্ট তার চিকিৎসার উপযুক্ত পথ দেখাতে পারেন। চিকিৎসায় ভবিষ্যতে এ ধরনের সমস্যা থেকে দূরে থাকা যায়।

ওষুধ থেকে অ্যালার্জির চিকিৎসা ও ম্যানেজমেন্ট

যদি কারো জানা থাকে যে তার ওষুধে অ্যালার্জি হয় বা তার অ্যালার্জির জন্য দায়ী ওষুধই, তাহলে অল্প সমস্যা হলেই চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা দরকার। অন্যথায় রোগের উপসর্গ বেড়ে গেলে রোগী মারাও যেতে পারে।

কোন ওষুধে সমস্যা হয় জানতে পারলে চিকিৎসক সেই বিশেষ ওষুধ পাল্টে দিতে পারেন। জটিল অবস্থায় প্রয়োজনমতো অ্যান্টিহিস্টামিন, কর্টিকোস্টেরয়েড ইত্যাদি ওষুধ দিতে হতে পারে। অ্যালার্জি পরীক্ষার জন্য বিভিন্ন পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার পরামর্শ দিতে পারেন তিনি। কোনো ওষুধে অ্যালার্জি থাকলে ডেন্টিস্ট বা অন্য কোনও অসুস্থতার চিকিৎসার জন্য গেলে ডাক্তারবাবুকে সেকথা জানাতে ভুললে চলবে না।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Exit mobile version