অ্যাসিডিটির সমস্যা কারও কারও জীবনকে জেরবার করে তুলতে পারে। মুঠো মুঠো অ্যান্টাসিড, জিনট্যাক / রেনট্যাক বা ওমেপ্রাজল গ্রুপের ওষুধ খাওয়াই সার। পরিণামে দেখা যায় অ্যাসিড এর সমস্যা তো কমেই না বরং ওই ওষুধগুলির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বইতে হয়। দেখা যায়, অ্যান্টাসিড খাওয়ার ফলে অকারণ রাগ হয়। এমনকি অতিরিক্ত জিনট্যাক / রেনট্যাক দাম্পত্য জীবনেও প্রভাব ফেলে। আবার মাত্রাজোল হাড়কে ভঙ্গুর করে তোলে। তাই আমাদের উচিত অ্যাসিডের সঠিক কারণ খুঁজে বের করা। প্রয়োজন কম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার চিকিৎসা পদ্ধতি আয়ুৰ্বেদক হোমিওপ্যাথির সাহায্য নেওয়া।
‘অ্যাসিডিটি’ কিন্তু শারীরিক সমস্যার এক বহিঃ প্রকাশ। প্রকৃত পক্ষে আমাদের পাকস্থলীর গা থেকে অ্যাসিড নির্গত হয়। এই অ্যাসিড আবার হজমে সাহায্য করে। যখনই পাকস্থলীর গা থেকে প্রচুর পরিমাণে অ্যাসিড নির্গত হয়, তখনই দেখা দেয় অ্যাসিডিটির সমস্যা।
Table of Contents
অ্যাসিডিটির হাত থেকে স্বস্তি পেতে কিছু ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে :-
১) দেখা যায় কলাতে থাকে অ্যালকেলাইন অ্যাশ যৌগ। এই যৌগ কিন্তু অ্যাসিডকে প্রতিহত করতে পারে। তাই অ্যাসিডে রোজ একটি করে ফল উপকারী।
২) শাক-সবজি ও বিভিন্ন ধরনের ফলে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন-বি ও ভিটামিন-ই থাকে। এগুলি হজমে সাহায্য করে।
৩) অ্যাসিডতে গুড় খুবই উপকারী। একটুখানি গুড় মুখে দিয়ে চুষতে শুরু করলে অ্যাসিড কমে যায় ৷
৪) অ্যাসিডিটিতে আবার আদা উপকারী। তাই খাদ্যের সঙ্গে একটুখানি আদা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা দরকার ।
৫) দেখা যায় খাওয়ার ৩-৪ ঘন্টা পরে শুতে গেলে অ্যাসিড এর প্রকোপ অনেকটাই কমে। হোমিওপ্যাথি অ্যাসিডের ভালো চিকিৎসা রয়েছে। অ্যাসিডে যে হোমিও ওষুধ ব্যবহৃত হয়। সেগুলি আলোচনা করা হল। তবে চিকিৎসা করা উচিত যে কোন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের অধীনে। কারণ চিকিৎসকরাই পারেন এক রোগের সঙ্গে অন্য রোগের সম্পর্ক বুঝে সঠিক ওষুধ নির্বাচন করতে।
- ক্যালকেরিয়া কার্ব :- মুখ টক্ টক্ স্বাদ, খাওয়ার পরই অস্বস্তি, বমিভাব, জিভে সাদা বা হলুদ ময়লা, তেষ্টা কম।
- কার্বো ভেজ :- টক ‘গন্ধের ঢেকুর, পায়খানা পাতলা, দুর্বল শরীর, ঘুম ঘুম ভাব, পেটে বায়ু জমে, পেট গড় গড়, ছর ছর করে ।
- লাইকোপোডিয়াম :- ‘পেটে বায়ু, বিকাল ৪টার পর বাড়ে, অল্প খেলেও পেট ফুলে ওঠে, লিভারের গণ্ডগোল, রাতে বার বার প্রসাব।
- আইরিস ভার্স :- পেট বুক জ্বালা, টক বমি, মুখ থেকে পেট পর্যন্ত জ্বালা ৷
- সালফিউরিক অ্যাসিড :- বুক জ্বালা, টক ঢেকুর, ঘামে টক গন্ধ, পাতলা পায়খানা, মলে দুর্গন্ধ ।
- ন্যাটফক্স :- পেট ব্যাথা, টক ঢেকুর, বমি।
- ফসফরাস :- যেটা খাওয়া হয়েছে, তারই ঢেকুর, খিদে বেশি, রাতে ঘাম, পেটে বায়ু জমে, রোগ পুরোনো হলে। খুব মাত্রায় প্রয়োগ করা যায়।
- নাক্স ভমিকা :- মদ্যপান, খাওয়া-দাওয়ার অনিয়ম, রাত্রি জাগরণ, হোটেল রেস্তোরাতে খাওয়ার ফলে।
- রবিনিয়া :- তেতো ঢেকুর, পেট জ্বালা, কোষ্ঠকাঠিন্য
- আমলকি :- অনিদ্রা, চুল পাকা, প্রস্রাব সমস্যা, আমবাত, দৃষ্টি শক্তির হ্রাস ও সাদা। স্রাব। তবে অ্যাসিডের রোগীদের কখনোই ধোঁয়া ওঠা ভাত বা চা কফি খাওয়া উচিত নয়। এই রোগে বেশি পরিমানে জল খাওয়া দরকার। গবেষণায় দেখা যায়, ছোটবেলায় বিশেষ করে শরীর যখন বিকশিত হয়, তখনকার পেটের গন্ডগোল পরবর্তীকালে বড়সড় সমস্যা ডেকে আনতে পারে। বিশেষ করে ডিপ্রেশানের মতো মানসিক সমস্যার। স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষক ডাঃ পঙ্কজ পাশরিচা মস্তিষ্কের সঙ্গে পেটের একটি বিশেষ সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছেন। তাই মন খুশি রাখতে পেটের সমস্যা থেকে দূরে থাকতে হবে। সুতরাং অ্যাসিডিটি থেকে নিজেকে রক্ষা করতে হবে।