Home মানসিক স্বাস্থ্য Kleptomania : ক্লেপটোম্যানিয়া বা স্বভাবচোর

Kleptomania : ক্লেপটোম্যানিয়া বা স্বভাবচোর

0

কোনও অভাব না থাকা সত্ত্বেও চুরি করা? চুরি করা বস্তুটির কি কোনও প্রয়োজন থাকে না? চুরি করার জন্য কি প্রচণ্ড মনঃকষ্টে ভোগেন? কয়েকদিনের জন্য কি বিষণ্ণতা গ্রাস করে?

ব্যাপারটা মোটামুটি বন্ধু-বান্ধব মহলে অনেকেই জেনে গেছে, তাই রিয়া কারও বাড়িতে এলে সবাই সতর্ক হয়ে যায়। বিকাশ নিজেও জানে রিয়ার এই অদ্ভুত অভ্যাসের ব্যাপারটা। তাই পারতপক্ষে রিয়াকে কোথাও নিয়ে বেরোবার আগে বিশ-বার ভাবে। বিকাশ ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ার। শিবপুরের নামী ছাত্র, আকাশছোঁয়া মাইনে। স্ত্রী রিয়ার ফ্যামিলিও যথেষ্ট হাই-ফাই। বাবা-দাদারা প্রত্যেকেই অত্যন্ত প্রতিষ্ঠিত, সল্টলেকে বড় বাড়ি, দু’খানা বিদেশি গাড়ি, কাকে অভাব বলে রিয়া জানে না। ব্যাপারটা প্রথমে চোখে পড়ে বিকাশেরই। বিয়ের পর বড় পিসিমার বাড়িতে ওরা নেমন্তন্ন রক্ষা করতে গেছে, যেমন যায় নব দম্পতিরা। ফেরার সময় রিয়া সবার অজান্তে একটা কাচের শো-পিস ব্যাগে লুকিয়ে ফেলে। এর পর বেশ কয়েক সপ্তাহ কেটে গেছে। বিকাশ একদিন অফিস বেরোবার সময় কিছু একটা খুঁজতে গিয়ে আলমারির এক কোণে সেই শো-পিসটা দেখে, দেখে চিনতে পারে তক্ষুনি। কারণ, বড় পিসিমার বাড়িতে বিকাশের যাতায়াত একদম ছোট থেকে। ফলে, ওদের বাড়ির ভেতরে কোথায় কি রাখা আছে বা থাকে তা বিকাশ খুব ভালভাবেই জানে। আর তা ছাড়া যে শো-পিসটা ওর আলমারিতে বিকাশ আবিষ্কার করে সেটা বড় পিসিমার অত্যন্ত শখের। ওটা পিসেমশাই বিদেশ থেকে এনে দিয়েছিলেন। তাই ওর একটা অন্য মূল্য আছে বড় পিসিমার কাছে। ও রিয়াকে ব্যাপারটা জিজ্ঞেস করে। রিয়া প্রথমে না না বলে অস্বীকার করলেও পরে স্বীকার করে এবং ভীষণ ভাবে ভেঙে পড়ে। বিকাশ সেবারের মতো কিল খেয়ে কিল হজম করে, কারণ লোককে তো আর বলতে পারবে না ওর বউ চোর। এর পরে আরও কয়েকবার এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। এমনকী একবার অত্যন্ত বড় একটা শপিং মলেও এ ঘটনা ঘটাতে গিয়ে রিয়া ধরা পড়ে যায়। দোকানদারের এরকম অভিজ্ঞতা থাকায় এবং বিকাশ ওদের পূর্বপরিচিত বলে ব্যাপারটা খুব সহজে মিটে যায়। কিন্তু বিকাশ বুঝতে পারে এটা রিয়ার স্বভাব এবং এটা একটা মানসিক রোগ হলেও হতে পারে। এর পর কয়েকদিন পরে বিকাশ রিয়াকে বুঝিয়ে সোজাসুজি মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যায় এবং ঘটনাগুলো সবিস্তারে তাকে বলে। তিনি বিকাশকে আশ্বস্ত করে বলেন ওর স্ত্রী চোর নয়। যেটা করে, সেটা একটা মানসিক রোগ, এবং ওই রোগের লক্ষণ চুরি করা। অবাক হচ্ছেন? মনোবিজ্ঞানের পরিভাষায় এই অসুখটির নাম- ক্লেপটোম্যানিয়া

ক্লেপটোম্যানিয়া কী ?

ক্লেপটোম্যানিয়া হল এমন একটি মানসিক রোগ, যখন রোগী অভাব এবং প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও অন্যের কোনও বস্তু চুরি করে। 

সমস্যাটি কখন শুরু হয় ?

এই মানসিক সমস্যাটি সাধারণত ১৮-১৯ বছর বয়সে শুরু হয়। 

কতজন এর শিকার ?

ক্লেপটোম্যানিয়া অসুখটি বিরল এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অসুখটি রোগী এবং রোগীর বাড়ির লোক খুব নিখুঁত ভাবে গোপন করেন লোকলজ্জার ভয়ে। ফলে, এই রোগের সংখ্যা সঠিক ভাবে নিরূপণ করা যায় না। সমীক্ষাও করা যায় না যথাযথ ভাবে। বুঝতেই পারছেন কে আর যেচে বলতে যাবে আমার প্রিয়জনটি একজন স্বভাবচোর। তবে দেখা গেছে, ছেলেদের থেকে মেয়েরাই এই রোগের বেশি শিকার । 

Kleptomania

ক্লেপটোম্যানিয়া-র উপসর্গ 

কোনও অভাব না থাকা সত্ত্বেও চুরি করে চুরি-করা বস্তুটির কোনও প্রয়োজন থাকে না। চুরি করার জন্য প্রচণ্ড মনঃকষ্টে ভোগে → বিষণ্ণতা গ্রাস করে কয়েকদিনের জন্যে কখনও কখনও এমন কাজ করে ফেলে যেটা সমাজ অনুমোদন করে না ৷

সামাজিক সমস্যা না বললেও বুঝতে অসুবিধে হয় না এই অসুখটি কতখানি সামাজিকভাবে বিপজ্জনক। একটা পরিবারের মান-সম্ভ্রম সবকিছু এক মুহূর্তেই ধ্বংস হয়ে যেতে পারে একজন ক্লেপটোম্যানিয়াকের জন্যে। আমরা কেস হিস্ট্রিতে দেখেছি পৃথিবীর বহু মান্যগণ্য মানুষ এমনকী জনপ্রিয় জননেতা থেকে শুরু করে হলিউডের স্টার পর্যন্ত এই রোগের শিকার হয়েছেন। কেউ কেউ হেনস্থাও হয়েছেন কখনও কখনও । 

ক্লেপটোম্যানিয়া-র চিকিৎসা

ক্লেপটোম্যানিয়ার চিকিৎসা রীতিমতো জটিল এবং কঠিন। কারণ, এর সঙ্গে ফ্রন্টাল লোব সিনড্রোমের এবং ডিমেনশিয়া রোগের মতো আরও কয়েকটি রোগের উপসর্গ লুকিয়ে থাকে। তার ওপর রোগীরা প্রত্যেকেই প্রায় আর্থিকভাবে সচ্ছল বলে এদের দিয়ে মুখ খোলানো শক্ত। সাধারণত এই ধরনের রোগীদের মেজর ডিপ্রেশন এবং বর্ডার লাইন পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার থাকে। হয়ত অবসেসিভ-কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার এর সঙ্গেও একটা সংযোগ সূত্র থাকতে পারে। ডাক্তাররা যে পদ্ধতিগুলোর ওপর সবচেয়ে নির্ভর করে তা হল:-

  1. প্রথমে একটি সাপোর্ট সিস্টেম তৈরি করা 
  2. মেডিসিন বা ওষুধ প্রয়োগ 
  3. বিহেভিয়ারাল থেরাপি 
  4. সাইকোলজিকাল কাউন্সেলিং। 

মনে রাখবেন এই ধরনের মানসিক রোগে ভোগা মানুষগুলি যেমন তাদের প্রিয়জনের কাছে সমস্যা, তেমনই তারা নিজেদের কাছেও নিজেরা কখনও কখনও সমস্যা হয়ে ওঠেন। ফলে, কেউ কেউ আত্মহত্যা বা আত্মধ্বংসের মতো মর্মান্তিক পথ বেছে নেন। তাই একজন সচেতন মানুষ হিসেবে আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত এদের প্রতি যথাযথ সহানুভূতি দেখানো । আমাদের কোনও আচরণেই এই মানসিক রোগে ভোগা মানুষগুলো যেন কষ্ট না পান, সমাজের মূল স্রোত থেকে নিজেদের যেন সরিয়ে না নেন।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Exit mobile version