বাড়ন্ত শিশুদের মধ্যে মাঝেমাঝে কাশি ও বুকে দমবন্ধভাব হওয়াটা স্বাভাবিক ব্যাপার, কিন্তু আপনার সোনামণির বারবার কাশি হলে, কাফ সিরাপ এবং অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ দিয়ে চিকিৎসায় বাস্তবিকই কোনো তফাৎ না পেলে বুঝতে হবে সমস্যাটা দূষণ বা দুর্বল প্রতিরোধ ক্ষমতা বা কোনো সংক্রমণের কারণে হয়নি। এটা হয়তো হাঁপানি। আসলে ছেলেবেলায় সচরাচর যে সব রোগ সাধারণত দেখা যায় এটা তার অন্যতম। ভারতে প্রতি দশজন শিশুর মধ্যে একজনের তা আছে। আর সে হয়তো আপনার আদরের সোনামণি।
প্রখ্যাত শিশু বিশেষজ্ঞরা বলেন যে, ছেলেবেলার হাঁপানি সহজে এবং সফলভাবে দমন করা যায়, কিন্তু আপনার শিশুর চিকিৎসা শুরু – করানোর আগে, আপনার সকল সন্দেহ দূর করাটা গুরুত্বপূর্ণ। অনেক বাবা-মা’ই মনে করেন এটা কী করে হাঁপানি হতে পারে? আমার বাচ্চার তো হাঁপানির অ্যাটাক হয়নি, এটা খারাপ ধরনের কোনো কাশি নয় তো? অনেক লোকেরই ধারণা যে, কারও হাঁপানি থাকলে সে সবসময় দমবন্ধভাব বা শ্বাসকষ্টে ভোগে। আসলে তা নয়। শিশুদের মধ্যে হাঁপানির সবচেয়ে লক্ষণীয় উপসর্গ কিন্তু দমবন্ধভাব নয়, বারবার ঘুরেফিরে আসা এক ধরনের কাশি। হাঁপানি থাকা এমন অনেক ভাগ্যবান শিশু আছে যাদের কখনও হাঁপানির অ্যাটাকে ভুগতে হয়নি। কিন্তু হাঁপানির সঠিক চিকিৎসা না হলে,তার অ্যাটাকে ভোগার প্রবল সম্ভাবনা থাকে। সেজন্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আপনার শিশুর চিকিৎসা শুরু করে দেওয়া ভালো। কাশিকে কখনোই উপেক্ষা করা উচিত নয়।
Table of Contents
কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যা আপনার ডাক্তারবাবু আপনাকে জানাতে চান—
আপনি কি কাশি নিয়ে ভুগছেন এবং শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে?
- আপনার কি বারবার কাশি আসে আর যায় ?
- এটা কি মাঝে মাঝেই রাত্রে শুরু হয় এবং খারাপের দিকে যায় ?
উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, তাহলে কিন্তু আপনার কাশির পিছনের কারণ হাঁপানি হতে পারে।
আপনার ফুসফুসে আপনি হাওয়া টিউবগুলো দিয়ে শ্বাস নেন। কখনও কখনও বিভিন্ন কারণে, আপনার শিশুর হাওয়া টিউবে ফোলাভাব থেকে বা সর্দি জমে টিউবগুলো সংকীর্ণ হয়ে যায়, এবং আপনার শিশুর কাশি হতে থাকে এবং শ্বাস নিতে কষ্ট হয়।
ছোট ছোট শিশু এবং কিশোরদের ক্ষেত্রে হাঁপানি রোগের প্রকাশ সচরাচর যেভাবে দেখা যায় সেইভাবে ঘটতে পারে। কয়েকমাস অন্তর রোগীদের শ্বাসকষ্ট, আবার এমনও হতে পারে কোনো কোনো রোগী প্রায় প্রতিদিনই শ্বাসকষ্টের শিকার হয়। এই দুটো দলের মধ্যে কেউ কেউ এমনও থাকে যাদের মধ্যে কেবলমাত্র রাত্রিকালীন উপসর্গ (প্রধানত কাশি) দেখা দেয় ৷ এছাড়া আরও এক গোষ্ঠীর শিশুও দেখা যায়, যারা কফজনিত হাঁপানিতে ভোগে। কোনো কোনো শিশুর শ্বাসপ্রশ্বাস চলাকালে ফোঁস ফোঁস শব্দ হয় (হুইজিং), কেবলমাত্র ভাইরাস সংক্রমণের দরুন, কারো কারো ক্ষেত্রে ভুলবশত ব্রঙ্কিওলাইটিস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, আবার অনেকের ক্ষেত্রে ধরে নেওয়া হয় তারা শ্বাসকষ্টজনিত ব্রঙ্কাইটিসের শিকার। মনে রাখতে হবে এগুলো সবই হাঁপানির যাবতীয় লক্ষণের অংশ বিশেষ।
ব্যাপকতা
শিশুদের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী হাঁপানি রোগ খুবই ব্যাপকভাবে দেখা যায়। পাশ্চাত্যে এবং অস্ট্রেলিয়ায় প্রায় পাঁচ থেকে দশ শতাংশ (যাদের বয়স পাঁচ থেকে চোদ্দ) শিশু এই রোগে কষ্ট পায়। আবার এদের মধ্যে পঁচিশ শতাংশের রোগ কষ্টকর এবং পঁচিশ শতাংশের রোগ খুবই তীব্র। আমাদের দেশে ব্যাপকতা কতটা তার যথাযথ হিসেব নেই। উত্তর ভারতে শিশুদের মধ্যে হাঁপানি রোগের প্রকোপ খুবই কম, মোট শিশুর এক থেকে দু’শতাংশ। শিশুদের হাঁপানি রোগটা যদিও খুবই সাধারণ ঘটনা, তবে মৃত্যুর হার খুবই কম। শিশুদের হাঁপানির ধরন বয়স্কদের হাঁপানির থেকে অনেক বেশি আলাদা হয়। বহু শিশু শ্বাস-সংক্রান্ত সংক্রমণের দরুন শ্বাসকষ্টে ভোগে এবং ওই সময় বায়ু চলাচল পথে যথেষ্ট বাধা লক্ষ করা যায়। শিশুদের ক্ষেত্রে এ বিষয়টা প্রায়শই দেখা যায়। এমন অবস্থায় তারা দু’-একদিন জ্বর, গলা ভাঙা এবং সর্দিতে ভোগে, তিন থেকে চারদিন চলে ফোঁসফোঁসানি শব্দসহ শ্বাসকষ্ট, তারপর রোগমুক্ত হয়। এ ধরনের ঘটনা বছরে কয়েকবার ঘটতে পারে। শিশুদের মধ্যে যাদের বয়স এক বছরের কম তাদের তিন থেকে সাত শতাংশ মাত্র পরবর্তী জীবনে হাঁপানির শিকার হয়। এই শিশুদের বিরাট সংখ্যক দুই থেকে তিনবার আক্রান্ত হওয়ার পর রোগমুক্ত হয়। এক থেকে তিন বছর বয়সের মধ্যে যাদের শ্বাসকষ্ট হয়, পরবর্তীকালে তাদের আঠেরো শতাংশ তথাকথিত হাঁপানিতে আক্রান্ত হয়। তিন বছর বয়সের পর যাদের শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় তাদের বিয়াল্লিশ শতাংশ হয়ে পড়ে নিয়মিত হাঁপানি রোগী। শিশুরা যত কম বয়সে শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়, তাদের হাঁপানির সম্ভাবনা ততই বেশি থাকে। চল্লিশ বছর বয়সের পর যারা হাঁপানিতে আক্রান্ত হয়, তারা সারা জীবন এ রোগে ভুগে থাকে। মোটামুটি নিশ্চিতভাবে বলা যায়, যে সব শিশু পাঁচ বছর বয়সের আগে হাঁপানিতে আক্রান্ত হয়, বয়স বাড়ার সঙ্গে তাদের শ্বাসকষ্ট হ্রাস পায়।
পরিবেশগত কারণও হাপানি ঘটায়। আবহাওয়াজনিত এবং অন্যান্য কারণও গুরুত্বপূর্ণ। স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া যুক্ত অঞ্চলে বসবাস করলে রোগটির সম্ভাবনা বাড়ে। শীত এবং শুষ্ক আবহাওয়া এদের জন্য ক্ষতিকর। যাদের হাঁপানির সম্ভাবনা রয়েছে তাদের ঘরবাড়িতে ধুলো, ছত্রাক, জীবাণু এবং গৃহপালিত পোষ্যপ্রাণী ও পরিবেশের বিভিন্ন অ্যালার্জিকারক বস্তু হাঁপানি ঘটাতে সাহায্য করে। সচ্ছল এবং শহুরে মানুষের মধ্যে হাঁপানির প্রকোপ অনেক বেশি। তুলনায় আদিম সমাজে যেমন পাপুয়া নিউগিনির পার্বত্য অঞ্চলের অধিবাসী বা এসকিমোদের মধ্যে প্রকোপ কম। পরিবেশ দূষণ এবং ভাইরাস সংক্রমণ হাঁপানি সৃষ্টি করে এবং তার স্থায়িত্ব বাড়ায়।
শিশুদের বয়স বাড়ার সঙ্গে হাঁপানির প্রাবল্য কি হ্রাস পায়, কোনো কোনো শিশুর বয়স বাড়লে হাঁপানি থাকে না? তবে কার থাকবে না, সেটা বলা শক্ত।
কাদের হাঁপানি হয়
বাবা-মায়ের হাঁপানি থাকলে, তাদের সন্তানদের হাঁপনি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এটা জিনঘটিত রোগ। এ রোগে লজ্জা বা সংকোচের কিছু নেই। বহু বিখ্যাত ক্রীড়াব্যক্তিত্ব এবং বিশিষ্টজনের হাঁপানি রোগটা রয়েছে। তবে হাঁপানিতে মৃত্যু হার খুবই কম।
শিশুদের শ্বাস-প্রশ্বাসের টান মানেই কি হাঁপানি
যে সব পরিবার হাঁপানিগ্রস্ত তাদের শিশু এবং কিশোর সন্তান-সন্ততির হাঁপানি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। শিশুদের মধ্যে প্রচন্ড রকম ভাইরাস সংক্রমণ (সিনসিটিয়াল ভাইরাস) খুবই ঘটে, এবং তার ফলে তাদের মধ্যে শ্বাসের টান দেখা যায়। পরবর্তীকালে তাদের মধ্যে কারা হাঁপানিগ্রস্ত হতে পারে সে সম্পর্কে কোনো ভবিষ্যৎবাণী করা সম্ভব নয়। যেসব শিশু বুকে অস্বস্তি বোধ করে এবং শ্বাসের টানে কষ্ট পায় এবং শ্বাসকষ্টের আরাম হয় না, তাদের ব্যাপারে সাবধান হওয়া উচিত। এ ধরনের শিশুদের সব সময় উপযুক্ত চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে রাখা বিধেয়।
হাঁপানি কি প্রতিরোধ করা যায়
হ্যাঁ, ভালোভাবেই প্রতিরোধ করা যায়, যদি রোগী নির্দেশগুলো মেনে চলে।
কীসে কীসে হাঁপানি বাড়ে
যদিও হাঁপানি পরিবারগত হতে পারে, তবে হাঁপানিযুক্ত অনেক মানুষ আছেন যাদের কোনো আত্মীয়ের রোগটা নেই। কিন্তু ফুসফুস অতিরিক্ত সংবেদনশীল, এটি প্রতিক্রিয়া করে যখন এগুলোর সংস্পর্শে আসে, যেমন সাধারণ সর্দিকাশি, রঙ, স্প্রে, ধুলো, সিগারেট বা যেকোনো ধরনের ধোঁয়া, বাষ্প, দূষণ এবং পেশাগত পরিবেশ। আবহাওয়ার যেকোনো পরিবর্তন গরম কিংবা ঠান্ডা অবস্থা। এছাড়া পরাগ, ছত্রাক, বাড়ির ধুলো, পশুর লোম অথবা কিছু নির্দিষ্ট খাবার যা অ্যালার্জি তৈরি করে। অত্যধিক ব্যায়াম, যেকোনো শারীরিক শ্রম যেমন সিঁড়ি ওঠা, দৌড়ানো প্রভৃতি। আবেগ, রাগ, উদ্বেগ অথবা খুশি ইত্যাদিও হাঁপানির সহায়ক হতে পারে।
হাঁপানির চিকিৎসা কি সহজ
সঠিক ধরনের চিকিৎসা হলে তা সহজ ও সফল দুটোই হয়। সফলতা মানে আপনি নিজের শিশুসোনার জন্য স্বাভাবিক এবং সক্রিয় জীবন আশা করতে পারবেন। সে সচল থাকবে, খেলবে, কাশির জন্য জেগে না থেকে নিশ্চিন্তে ঘুমোবে, নিয়মিত স্কুলে যাবে, তার খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারেও কোনো বিধিনিষেধ থাকবে না। তাই আপনি নিশ্চয়ই জানতে চাইবেন যে, সঠিক চিকিৎসা কী? ইনহেলারের সাহায্যে হাঁপানি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। এটা একটা পকেট সাইজের যন্ত্র, যা আপনার শিশুকে ভালোভাবে শ্বাস নেওয়ায় সাহায্য করে। এবং শ্বাস গ্রহণের দ্বারা হাঁপানির ওষুধ তার ফুসফুসের মধ্যে সরাসরি পৌঁছয়।
এই কাশি এবং শ্বাসকষ্ট ওষুধ দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। যা দুই ধরনের হয়। যেমন— উপশমকারী ওষুধ :
- কাশি এবং শ্বাসকষ্ট থেকে অবিলম্বে উপশম দেবে।
- এগুলো প্রচন্ড কাশি এবং শ্বাসকষ্টের সময়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া শ্বাসপথ খুলে দেয়।
- এগুলো শুধুমাত্র আপৎকালীন অবস্থাতেই নেওয়ার প্রয়োজন।
নিয়ন্ত্রণকারী ওষুধ :
- কাশি এবং শ্বাসকষ্ট থেকে দীর্ঘস্থায়ী উপশম দেয়।
- এগুলো আপনার বা শিশুদের ফুসফুসের ফোলাভাব কম করে। এবং বায়ুপথগুলোকে জ্বালাভাবের থেকে কম সংবেদনশীল করে তোলে যা কাশি এবং শ্বাসকষ্ট সৃষ্টি করে।
- এগুলোকে রোজ নিতে হয় উপসর্গ থাকুক বানা থাকুক। এই ওষুধগুলো বিভিন্ন রূপে নেওয়া যায়, যেমন ইনহেলার, ট্যাবলেট অথবা সিরাপ। তবে ট্যাবলেট অথবা সিরাপের থেকে ইনহেলারের অনেক সুবিধা আছে। ইনহেলার দ্রুত কাজ করে। অনেক ছোট বা কম মাত্রার ওষুধ প্রয়োগ করা যায়। খুব কম বা কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। দীর্ঘদিনের জন্য লাভজনক।
ইনহেলার কেন? ট্যাবলেট বা সিরাপ নয় কেন?
আপনি নিশ্চয়ই চাইছেন যে আপনার শিশু সবচেয়ে কম পরিমাণ ওষুধ নিক, যা নিরাপদ, কার্যকরী এবং সুফলদায়ী। সেজন্য ট্যাবলেট বা সিরাপের চেয়ে বেশি ভালো ইনহেলার। কেননা ইনহেলার একদম কম মাত্রায় ওষুধ বের করে একেবারে সরাসরি পাঠিয়ে দেয় দরকারের জায়গায় অর্থাৎ ফুসফুসে। তাই প্রচন্ড কার্যকরী। ট্যাবলেট বা সিরাপে অত্যন্ত বেশি মাত্রায় ওষুধ থাকে যা ইনহেলারের তুলনায় দশ থেকে কুড়ি গুণ বেশি হতে পারে। আর তা ফুসফুসে পৌঁছানোর আগে সারা শরীর ঘুরে যায় বলে ট্যাবলেটে বেশি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। হাঁপানির ওষুধ দেওয়ার ক্ষেত্রে ইনহেলার প্রকৃতই এক অত্যন্ত সুবিবেচিত পন্থা। ঠিক যেন সরাসরি ত্বকে মলম লাগানো বা চোখে আই ড্রপ দেওয়ার মতো ব্যাপার।
এটা কি সবচেয়ে স্বীকৃত উপায়
তিরিশ বছরের বেশি সময় ধরে ইনহেলারের প্রচলন রয়েছে। আর বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি রোগীর মধ্যে নিরাপত্তা ও কার্যকারিতার সঙ্গে ইনহেলার ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে। এই জন্য ডাক্তাররা এমনকী গর্ভবতী মহিলা এবং কমবয়সী শিশুদের ক্ষেত্রেও অত্যন্ত ভরসার সঙ্গে এটা ব্যবহারের পরামর্শ দেন।
কতদিন এই চিকিৎসা করাতে হয়
মৃদু হাঁপানি থাকা কিছু শিশুর বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোগ চলে যায়। কিন্তু আমরা সঠিকভাবে জানি না যে কেন বা ঠিক কোন শিশুর ক্ষেত্রে এমনটা ঘটবে। তাই আপনার শিশুসোনার মৃদু হাঁপানি থাকলেও ভবিষ্যতের জন্য তাকে মারাত্মক হতে দেবেন না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সঠিক চিকিৎসা শুরু করান, ডাক্তারের পরামর্শ নিশ্চিতরূপে মেনে চলুন এবং আপনার শিশুকে নিয়মিত চেক-আপ করাতে নিয়ে যান। যাতে সে স্বাভাবিক, সক্রিয় উপায়ে নিজের ছেলেবেলা উপভোগ করতে পারে।
ফুসফুসের ক্ষমতা পরীক্ষা
নিয়মিত ইনহেলার নেওয়ার পরে, শিশুর ফুসফুসের ক্ষমতা পরীক্ষা করার জন্য একটি পরীক্ষা করা হয়। পিকফ্লোমিটার নামক একটি যন্ত্র ফুসফুসের ক্ষমতা নির্দেশ করে। পিক ফ্লো মিটার অনেকটা থার্মোমিটারের মতো। একবার রিডিংগুলো স্বাভাবিক রেঞ্জের মধ্যে এসে গেলে শিশু তার স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে। যেমন ব্যায়াম সহ সম্পূর্ণরূপে শারীরিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ, ব্যাঘাতহীন ঘুমোনো, কাশি এবং শ্বাসকষ্টের কম আক্রমণ; কাজ, পড়াশোনা বা অন্যান্য রোজকার কাজ না ফস্কানো।
জিনবাহিত হাঁপানির লক্ষণ
- সায়ানোসিস মানে ঠোঁট এবং জিভ নীলবর্ণ হওয়া।
- শ্বাস-প্রশ্বাসের হার প্রতি মিনিটে একশো দশ বা তার বেশি।
- পিকফ্লোমিটারে ফুঁ দেওয়ায় অক্ষমতা।
- কথা বলা বা শয়নে অক্ষমতা।
- বিভ্রান্তি, আচ্ছন্নতা।
- রক্তের নিম্নচাপ।
সংকটকালীন চিকিৎসা
- অক্সিজেন দেওয়া।
- নেবুলাইজারের মাধ্যমে বা স্পেসার সহ মিটার ডোজ ইনহেলারের মাধ্যমে স্যালবুটামলের বাষ্প।
- স্টেরয়েড-এর ইঞ্জেকশন।
- অ্যামাইনোফাইলিনের ড্রিপ ইত্যাদি।
পৃথিবীতে হাঁপানি রোগের ঘটনা ক্রমবর্ধমান ৷ দৈনিক অনেককেই ওষুধপত্র ব্যবহার করতে হয়। পরামর্শের প্রয়োজনে বেশ কিছু সংখ্যক রোগী নিয়মিত চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞের দ্বারস্থ হয় ৷ বলা বাহুল্য অনেক ওষুধ ও ওষুধ প্রয়োগের সাজসরঞ্জাম আবিষ্কৃত হয়েছে, সেগুলো যতটা সম্ভব রোগটি নিয়ন্ত্রণ করে মাত্র কিন্তু এত করেও প্রাচীন এই ব্যাধিটির নিশ্চিত নিরাময় আজও সম্ভব হয়নি। উপসংহারে বলা যায়, শিশুর কাছে তার পাওয়া সেরা উপহার স্বয়ং তার সচেতন মা।