Home মহিলাদের স্বাস্থ্য বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসায় রামবাণ ক্লোমিফেন | Infertility Treatment with Clomiphene | 2024

বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসায় রামবাণ ক্লোমিফেন | Infertility Treatment with Clomiphene | 2024

সেই ১৯৬৭ সাল থেকে ক্লোমিফেন বড়ির চল শুরু হয়েছে। এই ওষুধ ডিম্বথলির বৃদ্ধিতে সহায়তা করে, যার ফলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। ক্লোমিফেন বড়িতে দুই ধরনের যৌগ থাকে: এন-ক্লোমিফেন এবং জু-ক্লোমিফেন। এন-ক্লোমিফেন বেশি কার্যকর, তবে শরীর থেকে দ্রুত বের হয়ে যায়। অন্যদিকে, জু-ক্লোমিফেন কম কার্যকর হলেও শরীরে দীর্ঘস্থায়ী হয়।

Table of Contents

ক্লোমিফেন ওষুধ কোন বন্ধ্যা মহিলাদের ক্ষেত্রে দিতে হবে?

যেসব মহিলার একেবারেই ডিম তৈরি হয় না বা হলেও দু’-চার মাস অন্তর অন্তর তৈরি হয়, তাদের ক্ষেত্রে এই ওষুধ একেবারে ধন্বন্তরী। সস্তার এই বড়ি খেয়ে পৃথিবীতে যে কত লক্ষ মহিলার গর্ভসঞ্চার হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। এই বড়ি দামেও সস্তা ও খাবার নিয়মাবলীও খুব সহজ-সরল। বন্ধ্যাত্বের নিরাময়ে আর পাঁচটা ওষুধের মতো এই ওষুধ খাওয়াকালীন বারে বারে নানারকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার বালাইও নেই । 

কী আছে এই বিশল্যকরণীতে ?

অনেকে এই ক্লোমিফেনকে সংক্ষেপে ‘সি.সি’ বলে থাকেন (আদতে নাম হচ্ছে ক্লোমিফেন সাইট্রেট)। সেই বহুলব্যবহৃত ক্লোমিফেন খাওয়ার নিয়মকানুন জানাটা চিকিৎসারই একটা অঙ্গ।

ক্লোমিফেন বড়ি কীভাবে গর্ভসঞ্চারে সহায়তা করে? সি.সি বড়ি ডিম্বথলি বৃদ্ধি এবং ডিম্বনিরসণে কতটা সহায়ক

ক্লোমিফেন ওষুধটি খেলে সেই ওষুধ মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাসে প্রবেশ করে যেসব স্ত্রী হরমোন গ্রাহক কোষ আছে সেগুলিকে সাময়িকভাবে অকেজো করে দেয়। তাতে করে হাইপোথ্যালামাসে অবস্থিত নিউক্লিয়াসগুলি ভেবেই নেয় যে রক্তে স্ত্রী হরমোনের (ইস্ট্রোজেনের) সাময়িক ঘাটতি হয়েছে। ফলে হাইপোথ্যালামাস থেকে অনেক পরিমাণে ‘এল.এইচ.আর.এইচ’নামক (LH-RH) হরমোন নিঃসরণ হয়। এই হরমোনটির অপর নাম ‘GnRH’। এই LHRH ( GnRH) হরমোনটি পিটুইটারি গ্রন্থিকে তাগাদা দেয় ‘এফ.এস.এইচ’ ও এল.এইচ হরমোন বেশি মাত্রায় নির্গত করতে। আর ওই দুটি হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি পেলেই ডিম্বাশয়ে অবস্থিত বেশ কয়েকটি ডিম্বথলি (ফলিকল) যেমন বাড়তে শুরু করে, তেমনি ডিম্বস্ফোটনেও সাহায্য করে । অর্থাৎ যেসব মহিলা ক্লোমিফেন বড়ি খাবেন তাদের ডিম্বাশয়ে অবস্থিত ডিম্বথলিগুলি একটা সঠিক ছন্দে বৃদ্ধি পায় এবং সিসি ওষুধটি ডিম্বস্ফোটনেরও সহায়ক হয় ।

আরো পড়ুন : সাপের থেকেও বড়ো বিপদ

ক্লোমিফেন খাবার টাইম টেবিল। কী মাত্রায় বড়ি, কী নিয়মে খাওয়া শুরু হবে?

“সিসি” বড়ি সাধারণত রজঃস্রাব শুরু হলে দ্বিতীয় বা তৃতীয় দিনের দিন থেকে খাওয়া শুরু করা হয়। পরপর পাঁচ দিন খেতে হয়। তবে পঞ্চম দিনের দিন থেকে খাওয়া শুরু করলেও প্রায় একই ফল মেলে।

কতদিন বা কতমাস ক্লোমিফেন খেতে হবে?

যেসব ক্ষেত্রে বন্ধ্যাত্বের মূল কারণ ডিম্বথলির বৃদ্ধি না হওয়া (অ্যান-ওভিউলেশন) বা ডিম্বস্ফোটন না হওয়া তাদের ক্ষেত্রে এই ওষুধ বেশ কার্যকরী। সাধারণত পরপর ছ’ মাস এই বড়ি খেয়ে সুফল না মিললে তখন ডিম্বথলি বৃদ্ধির জন্য অন্য ওষুধের কথা বিবেচনা করা হয়ে থাকে- সেইসব বিকল্প ওষুধের নাম হচ্ছে—ট্যামক্সিফেন, লেট্রোজল। এইগুলো ক্লোমিফেনের মতোই রজঃস্রাবের তিন দিনের দিন থেকে শুরু করে পরপর পাঁচ দিন খেতে হয়। এইসবেও কাজ না হলে তখন গোনাডোট্রফিন ইঞ্জেকশনের কথা ভাবতে হবে। যা সাধারণত রজঃস্রাব শুরু হলে তিন দিনের দিন থেকে 75 Unit (মতান্তরে 50 Unit) করে মাসলে দিয়ে যেতে হয়। অনেক সময় ডিম ফাটাবার জন্য শুধু গোনাডোট্রফিন ব্যবহার করে IUI পদ্ধতি ব্যবহার করলে সুফল মেলে।

যেসব মহিলার নিয়মিত ডিম্বনিঃসরণ হয়ে চলেছে তাদেরও কি ক্লোমিফেন দেওয়া হয়?

মজার কথা, যেসব মহিলার নিয়মিত ডিম্বস্ফোটন হয়ে চলেছে তারাও যদি এই বড়ি খান তাহলে তাদের ক্ষেত্রেও GnRH হরমোনটি মস্তিষ্ক থেকে খুব ঘন ঘন বের হবে। ফলে রক্তে অনেক পরিমাণে FSH হরমোন নির্গত হবার দরুন জরায়ুর আস্তরণ যেমন বড় হয়ে প্রাণ প্রতিস্থাপিত হওয়ার সহায়ক হয়, তেমনি ডিম্বকোষের অন্যান্য অনেক আনুষঙ্গিক কাজেরও সহায় হয়। অর্থাৎ ক্লোমিফেন যে শুধু অ্যান ওভিউলেশনের ক্ষেত্রেই দেওয়া হবে সেকথা ঠিক নয় বরং একথা মানতে দ্বিধা নেই যে ক্লোমিফেন ডিম্বথলি ছাড়াও ডিম্বাশয়ের অন্যান্য কাজেও ইতিবাচক ভূমিক নেয়।

clomiphene citrate 02

কাকে বলে ক্লোমিফেন রেজিস্ট্যান্স বা কাকেই বলে ‘ক্লোমিফেন ফেলিওর’?

প্রথমেই বলে নিই যে, এমন নয় যে সব রোগীর ক্ষেত্রে ‘সিসি’ বড়ি ডিম্বথলির বৃদ্ধি করবে। অর্থাৎ অনেক ঝাড়াই বাছাই করে সিসি বড়ি প্রেসক্রাইব করলেও এবং সঠিক নিয়মে সিসি বড়ি চার পাঁচ মাস খেয়েও বেশ কিছু মহিলার ডিম্বস্ফোটন হয় না। সেইসব মহিলাদেরই ‘ক্লোমিফেন রেজিস্ট্যান্স’ মহিলা বলে ডাক্তারবাবুরা আখ্যা দেন। কিন্তু ক্লোমিফেন খেয়ে যে ডিম্বস্ফোটন সত্যি সত্যি হচ্ছে না তা বুক বাজিয়ে বলতে গেলে প্রমাণ চাই। কী সেই প্রমাণ? দুই ধরনের পরীক্ষা করলেই জানা যাবে। যে ডিম্বস্ফোটন সেই মাসটিতে হচ্ছে কি হচ্ছে না। সেগুলি হচ্ছে—রজঃচক্রের দশম দিন থেকে একদিন অন্তর অন্তর ডিম্বথলির সনোগ্রাফিক পদ্ধতিতে মাপজোক নেওয়া। স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতে দশম দিন থেকে ১.৫ থেকে ২ মিমি করে রোজ ডিম্বথলি বৃদ্ধি পাওয়ার কথা এবং বড় ডিম্বথলিটি (ডমিন্যান্ট ফলিকল) যখন ১৮-২৪ মিমি হবে অর্থাৎ রজঃচক্রের ১৬-১৮ দিনের দিন ওই ডমিন্যান্ট ফলিকল ফেটে গিয়ে পরিপূর্ণ ডিম্বাণু বের হওয়ার কথা। আর তা যদি না হয় তাহলে বুঝতে হবে ক্লোমিফেন রেজিস্ট্যান্স হচ্ছে।

একটি রজঃচক্রে ডিম্বস্ফোটন হচ্ছে কি হচ্ছে না তা জানা যায় আরেকটি পদ্ধতিতে। সেটি হচ্ছে রজঃচক্রের শুরুর দিনটি প্রথম দিন ধরে ২১-২৩ দিনের মধ্যে রক্তে প্রোজেস্টেরন হরমোন মেপে নেওয়া। কোনো কোনো ডাক্তারবাবু একই মাসে দু’ রকম পদ্ধতি অবলম্বন করে নিশ্চিত হন যে ডিম্বাণু তৈরি হচ্ছে না, যাকে বিজ্ঞানীরা বলেন ক্লোমিফেন রেজিস্ট্যান্স।

আরো পড়ুন : এবার যৌবন হবে দীর্ঘজীবী, আর বয়স হবে সংখ্যা মাত্র

কাদের বলে ক্লোমিফেন ফেলিওর?

আবার এমন কিছু মহিলা আছেন যাদের ওষুধ খেয়ে ডিম্বথলি সঠিক ছন্দে বৃদ্ধিও হচ্ছে এবং ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু নিজে থেকেই সময়মতো নির্গত হচ্ছে কিন্তু অন্য কিছু হরমোনের সমস্যার জন্য বা জরায়ুর কিছু অজানা ব্যাধির কারণে ডিম্বস্ফোটন হলেও গর্ভসঞ্চার বাধাপ্রাপ্ত হয়। এই সব মহিলাদের বলা হয় ‘ক্লোমিফেন ফেলিওর’।

এদের বয়স কম হলে চার-পাঁচ মাস সিসি বড়ি খাওয়ার পরে বিকল্প চিকিৎসার কথা বিবেচনা করতে হবে। যেমন টিউব ব্লক, এন্ডোমেট্রিওসিস বা জরায়ুর আস্তরণের দোষত্রুটি ইত্যাদি নিয়ে কিছু বিশেষ পরীক্ষা করতে হবে। এটাই দস্তুর। যেহেতু সস্তার ওষুধ খেয়ে ডিম্বস্ফোটন হচ্ছে ‘দেখি আরও কয়েক মাস সিসি খেয়ে কী হয় এই মানসিকতা বেমানান ।

যেসব ক্ষেত্রে ক্লোমিফেন খেয়ে ডিম্বস্ফোটন হলেও সন্তান আসে না তাদের ল্যাপারো-হিস্টোরোস্কোপি করাই শ্রেয়। কারণ তাতে করে সময়মতো ডিম্ব নিঃসরণ হওয়া সত্ত্বেও কেন যে গর্ভসঞ্চার হচ্ছে না তা বহুলাংশেই নিখুঁতভাবে জানা যায়। যেমন এন্ডোমেট্রিওসিস, ডিম্বাশয়ে জড়িয়ে থাকা যক্ষ্মা, টিউব ব্লক। এছাড়াও জরায়ুর ভিতরের আস্তরণটি জড়িয়ে জড়িয়ে থাকলে বা ছোটখাটো পলিপ থাকলে বন্ধ্যাত্বের কারণ এক নিমেষে নির্ধারিত হয়ে যায়। সেজন্য ডাক্তারবাবুরা ল্যাপারো- হিস্টোরোস্কোপি করে নেন। যার খরচ আনুমানিক ১২ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা। আখেরে লাভটা তো আপনারই।

কাদের ক্ষেত্রে ক্লোমিফেন খাওয়া সমীচীন হবে না?

  • যারা খুব স্থূলকায়া যতদিন না তার জীবনশৈলীর পরিবর্তন করে বি.এম.আই কমিয়ে ২৮ (মতান্তরে ২৫) করতে পারছেন। অনুরূপভাবে যারা ক্ষীণকায়া তাদের খাওয়া- দাওয়া বৃদ্ধি করে বি.এম.আই অন্তত ২০-২২ করতে হবে। তারপরে ক্লোমিফেন শুরু করা যেতে পারে। বিশেষত যদি মহিলাটির বয়স ২৫ এর নীচে হয় ।
  • যাদের রক্তে ইনসুলিন, সুগার, পুং- হরমোনের মাত্রা বেশ বেশি, যাদের রজঃচক্রের তিন দিনের দিন এল.এইচ নামক হরমোনের মাত্র (>12 IU/ml) বেশি, তাদের রোগ অনুযায়ী মেটফরমিন দু’-তিন মাস (গর্ভরোধক বড়ি, যা পুং-হরমোনের মাত্রা বা LH হরমোনের মাত্রা কমায়) খাইয়ে পরে সিসি বড়ি দেওয়াটাই বিচক্ষণতার কাজ হবে।
  • যারা মানসিক অবসাদে ভুগছেন এবং প্রোজেস্টেরন জাতীয় ওষুধ খেয়েও যাদের রজঃস্রাব চালু হচ্ছে না তাদেরও যথাযথ কাউন্সেলিং এবং নানাবিধ হরমোন বিশেষত AMH নামক অত্যাধুনিক হরমোন পরীক্ষা করে তারপরেই ক্লোমিফেন দেওয়ার কথা বিবেচনা করতে হবে। অর্থাৎ যেকোনো বন্ধ্যা মহিলাকেই ধরে বেঁধে ক্লোমিফেন খাওয়ানো একেবারেই গর্হিত কাজ কারণ আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি বেশ কিছু ক্ষেত্রে ক্লোমিফেন কাজ করবে না। মাঝখান থেকে শুধু শুধু দম্পতিটির বয়স বেড়ে যাবে।

সেই ১৯৬৭ সাল থেকে ক্লোমিফেন বড়ির চল শুরু হয়েছে। এই ওষুধ ডিম্বথলির বৃদ্ধিতে সহায়তা করে, যার ফলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। ক্লোমিফেন বড়িতে দুই ধরনের যৌগ থাকে: এন-ক্লোমিফেন এবং জু-ক্লোমিফেন। এন-ক্লোমিফেন বেশি কার্যকর, তবে শরীর থেকে দ্রুত বের হয়ে যায়। অন্যদিকে, জু-ক্লোমিফেন কম কার্যকর হলেও শরীরে দীর্ঘস্থায়ী হয়।

ক্লোমিফেন ওষুধ কোন বন্ধ্যা মহিলাদের ক্ষেত্রে দিতে হবে

যেসব মহিলার একেবারেই ডিম তৈরি হয় না বা হলেও দু’-চার মাস অন্তর অন্তর তৈরি হয়, তাদের ক্ষেত্রে এই ওষুধ একেবারে ধন্বন্তরী। সস্তার এই বড়ি খেয়ে পৃথিবীতে যে কত লক্ষ মহিলার গর্ভসঞ্চার হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। এই বড়ি দামেও সস্তা ও খাবার নিয়মাবলীও খুব সহজ-সরল। বন্ধ্যাত্বের নিরাময়ে আর পাঁচটা ওষুধের মতো এই ওষুধ খাওয়াকালীন বারে বারে নানারকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার বালাইও নেই । 

কী আছে এই বিশল্যকরণীতে 

অনেকে এই ক্লোমিফেনকে সংক্ষেপে ‘সি.সি’ বলে থাকেন (আদতে নাম হচ্ছে ক্লোমিফেন সাইট্রেট)। সেই বহুলব্যবহৃত ক্লোমিফেন খাওয়ার নিয়মকানুন জানাটা চিকিৎসারই একটা অঙ্গ।

ক্লোমিফেন বড়ি কীভাবে গর্ভসঞ্চারে সহায়তা করে? সি.সি বড়ি ডিম্বথলি বৃদ্ধি এবং ডিম্বনিরসণে কতটা সহায়ক

ক্লোমিফেন ওষুধটি খেলে সেই ওষুধ মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাসে প্রবেশ করে যেসব স্ত্রী হরমোন গ্রাহক কোষ আছে সেগুলিকে সাময়িকভাবে অকেজো করে দেয়। তাতে করে হাইপোথ্যালামাসে অবস্থিত নিউক্লিয়াসগুলি ভেবেই নেয় যে রক্তে স্ত্রী হরমোনের (ইস্ট্রোজেনের) সাময়িক ঘাটতি হয়েছে। ফলে হাইপোথ্যালামাস থেকে অনেক পরিমাণে ‘এল.এইচ.আর.এইচ’নামক (LH-RH) হরমোন নিঃসরণ হয়। এই হরমোনটির অপর নাম ‘GnRH’। এই LHRH ( GnRH) হরমোনটি পিটুইটারি গ্রন্থিকে তাগাদা দেয় ‘এফ.এস.এইচ’ ও এল.এইচ হরমোন বেশি মাত্রায় নির্গত করতে। আর ওই দুটি হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি পেলেই ডিম্বাশয়ে অবস্থিত বেশ কয়েকটি ডিম্বথলি (ফলিকল) যেমন বাড়তে শুরু করে, তেমনি ডিম্বস্ফোটনেও সাহায্য করে । অর্থাৎ যেসব মহিলা ক্লোমিফেন বড়ি খাবেন তাদের ডিম্বাশয়ে অবস্থিত ডিম্বথলিগুলি একটা সঠিক ছন্দে বৃদ্ধি পায় এবং সিসি ওষুধটি ডিম্বস্ফোটনেরও সহায়ক হয় ।

ক্লোমিফেন খাবার টাইম টেবিল। কী মাত্রায় বড়ি, কী নিয়মে খাওয়া শুরু হবে

“সিসি” বড়ি সাধারণত রজঃস্রাব শুরু হলে দ্বিতীয় বা তৃতীয় দিনের দিন থেকে খাওয়া শুরু করা হয়। পরপর পাঁচ দিন খেতে হয়। তবে পঞ্চম দিনের দিন থেকে খাওয়া শুরু করলেও প্রায় একই ফল মেলে।

কতদিন বা কতমাস ক্লোমিফেন খেতে হবে

যেসব ক্ষেত্রে বন্ধ্যাত্বের মূল কারণ ডিম্বথলির বৃদ্ধি না হওয়া (অ্যান-ওভিউলেশন) বা ডিম্বস্ফোটন না হওয়া তাদের ক্ষেত্রে এই ওষুধ বেশ কার্যকরী। সাধারণত পরপর ছ’ মাস এই বড়ি খেয়ে সুফল না মিললে তখন ডিম্বথলি বৃদ্ধির জন্য অন্য ওষুধের কথা বিবেচনা করা হয়ে থাকে- সেইসব বিকল্প ওষুধের নাম হচ্ছে—ট্যামক্সিফেন, লেট্রোজল। এইগুলো ক্লোমিফেনের মতোই রজঃস্রাবের তিন দিনের দিন থেকে শুরু করে পরপর পাঁচ দিন খেতে হয়। এইসবেও কাজ না হলে তখন গোনাডোট্রফিন ইঞ্জেকশনের কথা ভাবতে হবে। যা সাধারণত রজঃস্রাব শুরু হলে তিন দিনের দিন থেকে 75 Unit (মতান্তরে 50 Unit) করে মাসলে দিয়ে যেতে হয়। অনেক সময় ডিম ফাটাবার জন্য শুধু গোনাডোট্রফিন ব্যবহার করে IUI পদ্ধতি ব্যবহার করলে সুফল মেলে।

যেসব মহিলার নিয়মিত ডিম্বনিঃসরণ হয়ে চলেছে তাদেরও কি ক্লোমিফেন দেওয়া হয়?

মজার কথা, যেসব মহিলার নিয়মিত ডিম্বস্ফোটন হয়ে চলেছে তারাও যদি এই বড়ি খান তাহলে তাদের ক্ষেত্রেও GnRH হরমোনটি মস্তিষ্ক থেকে খুব ঘন ঘন বের হবে। ফলে রক্তে অনেক পরিমাণে FSH হরমোন নির্গত হবার দরুন জরায়ুর আস্তরণ যেমন বড় হয়ে প্রাণ প্রতিস্থাপিত হওয়ার সহায়ক হয়, তেমনি ডিম্বকোষের অন্যান্য অনেক আনুষঙ্গিক কাজেরও সহায় হয়। অর্থাৎ ক্লোমিফেন যে শুধু অ্যান ওভিউলেশনের ক্ষেত্রেই দেওয়া হবে সেকথা ঠিক নয় বরং একথা মানতে দ্বিধা নেই যে ক্লোমিফেন ডিম্বথলি ছাড়াও ডিম্বাশয়ের অন্যান্য কাজেও ইতিবাচক ভূমিক নেয়।

কাকে বলে ক্লোমিফেন রেজিস্ট্যান্স বা কাকেই বলে ‘ক্লোমিফেন ফেলিওর’?

প্রথমেই বলে নিই যে, এমন নয় যে সব রোগীর ক্ষেত্রে ‘সিসি’ বড়ি ডিম্বথলির বৃদ্ধি করবে। অর্থাৎ অনেক ঝাড়াই বাছাই করে সিসি বড়ি প্রেসক্রাইব করলেও এবং সঠিক নিয়মে সিসি বড়ি চার পাঁচ মাস খেয়েও বেশ কিছু মহিলার ডিম্বস্ফোটন হয় না। সেইসব মহিলাদেরই ‘ক্লোমিফেন রেজিস্ট্যান্স’ মহিলা বলে ডাক্তারবাবুরা আখ্যা দেন। কিন্তু ক্লোমিফেন খেয়ে যে ডিম্বস্ফোটন সত্যি সত্যি হচ্ছে না তা বুক বাজিয়ে বলতে গেলে প্রমাণ চাই। কী সেই প্রমাণ? দুই ধরনের পরীক্ষা করলেই জানা যাবে। যে ডিম্বস্ফোটন সেই মাসটিতে হচ্ছে কি হচ্ছে না। সেগুলি হচ্ছে—রজঃচক্রের দশম দিন থেকে একদিন অন্তর অন্তর ডিম্বথলির সনোগ্রাফিক পদ্ধতিতে মাপজোক নেওয়া। স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতে দশম দিন থেকে ১.৫ থেকে ২ মিমি করে রোজ ডিম্বথলি বৃদ্ধি পাওয়ার কথা এবং বড় ডিম্বথলিটি (ডমিন্যান্ট ফলিকল) যখন ১৮-২৪ মিমি হবে অর্থাৎ রজঃচক্রের ১৬-১৮ দিনের দিন ওই ডমিন্যান্ট ফলিকল ফেটে গিয়ে পরিপূর্ণ ডিম্বাণু বের হওয়ার কথা। আর তা যদি না হয় তাহলে বুঝতে হবে ক্লোমিফেন রেজিস্ট্যান্স হচ্ছে।

একটি রজঃচক্রে ডিম্বস্ফোটন হচ্ছে কি হচ্ছে না তা জানা যায় আরেকটি পদ্ধতিতে। সেটি হচ্ছে রজঃচক্রের শুরুর দিনটি প্রথম দিন ধরে ২১-২৩ দিনের মধ্যে রক্তে প্রোজেস্টেরন হরমোন মেপে নেওয়া। কোনো কোনো ডাক্তারবাবু একই মাসে দু’ রকম পদ্ধতি অবলম্বন করে নিশ্চিত হন যে ডিম্বাণু তৈরি হচ্ছে না, যাকে বিজ্ঞানীরা বলেন ক্লোমিফেন রেজিস্ট্যান্স।

কাদের বলে ক্লোমিফেন ফেলিওর

আবার এমন কিছু মহিলা আছেন যাদের ওষুধ খেয়ে ডিম্বথলি সঠিক ছন্দে বৃদ্ধিও হচ্ছে এবং ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু নিজে থেকেই সময়মতো নির্গত হচ্ছে কিন্তু অন্য কিছু হরমোনের সমস্যার জন্য বা জরায়ুর কিছু অজানা ব্যাধির কারণে ডিম্বস্ফোটন হলেও গর্ভসঞ্চার বাধাপ্রাপ্ত হয়। এই সব মহিলাদের বলা হয় ‘ক্লোমিফেন ফেলিওর’।

এদের বয়স কম হলে চার-পাঁচ মাস সিসি বড়ি খাওয়ার পরে বিকল্প চিকিৎসার কথা বিবেচনা করতে হবে। যেমন টিউব ব্লক, এন্ডোমেট্রিওসিস বা জরায়ুর আস্তরণের দোষত্রুটি ইত্যাদি নিয়ে কিছু বিশেষ পরীক্ষা করতে হবে। এটাই দস্তুর। যেহেতু সস্তার ওষুধ খেয়ে ডিম্বস্ফোটন হচ্ছে ‘দেখি আরও কয়েক মাস সিসি খেয়ে কী হয় এই মানসিকতা বেমানান ।

যেসব ক্ষেত্রে ক্লোমিফেন খেয়ে ডিম্বস্ফোটন হলেও সন্তান আসে না তাদের ল্যাপারো-হিস্টোরোস্কোপি করাই শ্রেয়। কারণ তাতে করে সময়মতো ডিম্ব নিঃসরণ হওয়া সত্ত্বেও কেন যে গর্ভসঞ্চার হচ্ছে না তা বহুলাংশেই নিখুঁতভাবে জানা যায়। যেমন এন্ডোমেট্রিওসিস, ডিম্বাশয়ে জড়িয়ে থাকা যক্ষ্মা, টিউব ব্লক। এছাড়াও জরায়ুর ভিতরের আস্তরণটি জড়িয়ে জড়িয়ে থাকলে বা ছোটখাটো পলিপ থাকলে বন্ধ্যাত্বের কারণ এক নিমেষে নির্ধারিত হয়ে যায়। সেজন্য ডাক্তারবাবুরা ল্যাপারো- হিস্টোরোস্কোপি করে নেন। যার খরচ আনুমানিক ১২ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা। আখেরে লাভটা তো আপনারই।

কাদের ক্ষেত্রে ক্লোমিফেন খাওয়া সমীচীন হবে না

  • যারা খুব স্থূলকায়া যতদিন না তার জীবনশৈলীর পরিবর্তন করে বি.এম.আই কমিয়ে ২৮ (মতান্তরে ২৫) করতে পারছেন। অনুরূপভাবে যারা ক্ষীণকায়া তাদের খাওয়া- দাওয়া বৃদ্ধি করে বি.এম.আই অন্তত ২০-২২ করতে হবে। তারপরে ক্লোমিফেন শুরু করা যেতে পারে। বিশেষত যদি মহিলাটির বয়স ২৫ এর নীচে হয় ।
  • যাদের রক্তে ইনসুলিন, সুগার, পুং- হরমোনের মাত্রা বেশ বেশি, যাদের রজঃচক্রের তিন দিনের দিন এল.এইচ নামক হরমোনের মাত্র (>12 IU/ml) বেশি, তাদের রোগ অনুযায়ী মেটফরমিন দু’-তিন মাস (গর্ভরোধক বড়ি, যা পুং-হরমোনের মাত্রা বা LH হরমোনের মাত্রা কমায়) খাইয়ে পরে সিসি বড়ি দেওয়াটাই বিচক্ষণতার কাজ হবে।
  • যারা মানসিক অবসাদে ভুগছেন এবং প্রোজেস্টেরন জাতীয় ওষুধ খেয়েও যাদের রজঃস্রাব চালু হচ্ছে না তাদেরও যথাযথ কাউন্সেলিং এবং নানাবিধ হরমোন বিশেষত AMH নামক অত্যাধুনিক হরমোন পরীক্ষা করে তারপরেই ক্লোমিফেন দেওয়ার কথা বিবেচনা করতে হবে। অর্থাৎ যেকোনো বন্ধ্যা মহিলাকেই ধরে বেঁধে ক্লোমিফেন খাওয়ানো একেবারেই গর্হিত কাজ কারণ আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি বেশ কিছু ক্ষেত্রে ক্লোমিফেন কাজ করবে না। মাঝখান থেকে শুধু শুধু দম্পতিটির বয়স বেড়ে যাবে।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Exit mobile version