Home স্বাস্থ্য পরামর্শ লো-ব্যাক পেন থেকে মুক্তি | Lower Back Pain Treatment

লো-ব্যাক পেন থেকে মুক্তি | Lower Back Pain Treatment

লোব্যাক পেন আজকাল বহু মানুষের মধ্যেই দেখা যাচ্ছে। এই ধরনের ব্যথা কোমরের পিছন থেকে পায়ের পাতা অবধি নেমে যায়। রোগীরা ডাক্তারবাবুর কাছে এসে সাধারণত বলেন -তার পা’টা ঝিনঝিন করছে, পা অবশ হয়ে যাচ্ছে, পা ভারী ভারী লাগছে। এই ধরনের লক্ষণগুলোকে ডাক্তারি ভাষায় র‍্যাডিকুলোপ্যাথি বলে। সাধারণত এই ধরনের ব্যথা নার্ভ রুট কমপ্রেস থেকে হয়। এর পেছনে কিছু কারণ লুকিয়ে থাকে। যেমন ভারী জিনিস তোলা, কিংবা ঝুঁকে কোনো কাজ করতে যাওয়ার মতো ঘটনা। কিংবা হঠাৎ নীচু হয়ে কিছু তোলার ফলে এই ধরনের ব্যথা হয়। যাকে অ্যাকিউট লো-ব্যাক পেইন বলে। অনেক সময় দুটো ভার্টিব্রার মধ্যবর্তী যে ডিস্ক থাকে সেটাতে একটা বিশেষ ধরনের পরিবর্তন দেখা দেয় যার ফলে ডিস্কের অংশ বিশেষ মেরুদন্ডের স্নায়ুর ওপর চাপ দিয়ে প্রচন্ড ব্যথার সৃষ্টি করে। ডিস্কের ভিতরে থাকা জেলির মতো পদার্থটি বেরিয়ে যায় এবং অ্যাকিউট লো ব্যাক পেইনের সৃষ্টি করে ।

অ্যাকিউট লো-ব্যাক পেইনে তেমন সমস্যা হয় না যদি ডিস্ক প্রোলাপ্স সামান্য ধরনের হয়। কোমরে ব্যথা বা মাংসপেশিতে টান ধরে কিছুটা অস্বস্তির সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু যদি প্রোলাপ্স খুব বেশি না হয় তাহলে ওই বহিরাগত ডিস্ক নার্ভ রুটে চাপ দিয়ে পা দুটোকে অবশ করে দিতে পারে।

অ্যাকিউট লো-ব্যাক পেইনের সমস্যা সাধারণত রোগের লক্ষণ এবং ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় বোঝা যায়। রোগের চিকিৎসা করতে গিয়ে রোগীর ইতিহাস জানাটা জরুরি। অনেক সময় এক্স-রে’ও করা হয়। এছাড়া নিউরোলজিক্যাল পরীক্ষাও করানো হয়। এল- ফোর এবং এল-ফাইভের জন্য সাধারণত এই ব্যথা হয় ।

স্লিপড ডিস্ক বোঝা যায় কীভাবে

  • রোগীর ইতিহাস নিলে দেখা যাবে কোনো ভারী বস্তু তোলার বিবরণ কিংবা আচমকা পড়ে যাওয়ার মতো ঘটনা থাকে।
  • কোমরে অসহ্য ব্যথার সাথে পায়ের পাতা পর্যন্ত প্রচন্ড কনকনে, ঝিনঝিনে ব্যথা অনুভূত হয়।
  • ব্যথা এতই প্রবল হতে পারে যে রোগী শয্যাশায়ী হয়ে পড়ে। পাশ ফিরতে, দাঁড়াতে কষ্ট হয়।
  • হাঁটলে বা কাজ করলে ব্যথা বাড়ে। বিশ্রামে থাকলে ভালো লাগে।

স্লিপ ডিস্ক হলে কী করবেন

  • ব্যথা অসহ্য হলে সম্পূর্ণ বিশ্রাম নিতে হবে।
  • যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের কাছে পৌঁছানো দরকার।
  • ফিজিওথেরাপি করা দরকার ।
  • প্যারাসিটামল দেওয়া হয় যন্ত্রণা কমার জন্য।
  • সামনে ঝুঁকে কোনো কাজ করতে বারণ করা হয়।
  • খেলাধুলো বন্ধ, ওজন তোলা যাবে না। চিকিৎসার দুটো দিক। একটা হচ্ছে যাতে ডিস্ক প্রোলাপ্স না হয়, আর অন্যটা হল উপসর্গের নিরাময় ।

প্রতিটি মানুষকেই দৈনন্দিন কাজের সময় খেয়াল রাখতে হবে যাতে সামনে ঝুঁকে দীর্ঘক্ষণ কাজকর্ম করতে না হয়। ঝুঁকে ভারী জিনিস ভোলা না হয়। কারণ এতে মেরুদন্ডে চাপ পড়ে স্লিপ ডিস্ক হতে পারে ।

চিকিৎসার প্রথম ধাপে রোগীকে বিশ্রাম নিতে বলা হয়। মেডিকেশন ও ফিজিওথেরাপি করে রোগীকে ভালো করার চেষ্টা চলে। অনেক সময় সাময়িক বাধা কমে গেলেও পরে আবার সমস্যা দেখা দিতে পারে

কোমরের এক্স-রে, সিটিস্ক্যান বা এম.আর.আই করে স্লিপ ডিস্ক হয়েছে কিনা দেখা দরকার। চিকিৎসা সঠিক পদ্ধতিতে সময়মতো করলে বেশিরভাগ রোগীই সেরে ওঠেন। ওষুধ ও ফিজিওথেরাপি করেও যাদের ডিস্ক প্রোলাপ্স সারে না তাদের দরকার হয় অপারেশন। আজকাল মাইক্রোসার্জারি করেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে রোগীকে সুস্থ করে তোলা যায়। তবে ওষুধ ও ফিজিওথেরাপি ঠিকমতো না করলে পরবর্তীকালে রোগীকে ভুগতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এপিডুরাল ইঞ্জেকশন দিয়ে উপকার পাওয়া যায়। এছাড়া উন্নতমানের ওষুধ, ইঞ্জেকশন ব্যবহারেও সুফল পাওয়া যায়।

স্লিপড ডিস্ক একবার হলে চিকিৎসা করে সুস্থ হলেও আবার যে হবে না এটা হলফ করে বলা যায় না, সেজন্য সাবধানে থাকতে হবে।

কোমরে ব্যথা বা ক্রনিক লো ব্যাক পেইন সামান্য থেকে তীব্র ধরনের হতে পারে। এই ধরনের ব্যথা বারবার হতে পারে। এবং চিকিৎসা সত্ত্বেও ব্যথার উপশম হতে চায় না। এই কারণে রোগীরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। কোমরের ব্যথাকে দীর্ঘস্থায়ী বলা হয় তখন, যখন সেই ব্যথা তিন থেকে ছ’মাস পর্যন্ত থাকে। এই সময়ের মধ্যে মাঝে মাঝে ব্যথা তীব্র হতে পারে।

Lower Back Pain Treatment

দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে—

  • ক্রমাগত এক নাগাড়ে ঝুঁকে বসে কাজ করা বিশেষ করে অফিসে টেবিল চেয়ারে বসে কাজ করা।
  • শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে কম্পিউটারের সামনে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ করলে কোমরে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা হতে পারে।
  • স্লিপড ডিস্ক ও কোমরের লিগামেন্টে টান ধরলে প্রয়োজন সঠিক চিকিৎসা। না হলে কোমরে লাগাতার ব্যথা হয়।
  • পেটের কোনো অপারেশনের পর বিশেষ করে জরায়ু, অ্যাপেনডিক্স কিডনি অপারেশনের পর ক্রনিক পেইন হতে পারে ।
  • কোমরে প্রদাহজনিত কোনো রোগে বিশেষ করে টিউবারকুলোসিস, অ্যাঙ্কাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিস, রিউম্যাটয়েড স্পন্ডিলাইটিস থাকলে সেটা দীর্ঘদিন ধরে ব্যথার কারণ হতে পারে।
  • জন্মগত বিকৃতি যেমন স্পাইনাবাইফিডা স্কোলিওসিসের জন্য কোমরে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা হতে পারে।
  • কোমরের মাংসপেশি দুর্বল হলে মেরুদন্ডের শক্তি কমে যায় যার ফলে একটা ব্যথা তৈরি হয় যা দীর্ঘদিন ধরে ভোগায় ।

এছাড়া কোমরের কশেরুকায় কোনোরকম অস্বাভাবিকতা থাকলে যেমন লাম্বার ভার্টিব্রাগুলো সোজা হয়ে থাকলে কোমরে দীর্ঘদিনের জন্য ব্যথা তৈরি করে। এই ধরনের ব্যথার উৎসস্থল এক্স-রে করলে ধরা পড়ে।

সমস্যা হলে কী করা উচিত

  • ডাক্তারবাবুকে দেখিয়ে এক্স-রে করে মেরুদন্ডের কশেরুকার অ্যানাটমি কতটা বিঘ্নিত হয়েছে সেটা যাচাই করে নিতে হবে।
  • সামনে ঝুঁকে কোনো কাজ করা চলবে না। 
  • কোমরে বেল্ট বাঁধতে হবে।
  • দরকারে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো কোমরে ট্র্যাকশন নিতে হবে।
  • নরম বা গদির বিছানায় শোয়া যাবে না। হার্ড ম্যাট্রেসের ওপর পাতলা তোষক বিছিয়ে শুতে হবে।
  • কোমরে গরম সেঁক নিলে আরাম হবে। আলট্রাসোনিক থেরাপি, শর্টওয়েভ ডায়াথার্মি ইন্টারফারেনশিয়াল থেরাপি বেশ উপকার দেয়।
  • রোজ সকালে ও সন্ধ্যায় ভুজঙ্গাসন, শলভাসন করলে উপকার পাওয়া যায়।

এছাড়াও লাগাতার কোমরের ব্যথার অন্যতম কারণ হচ্ছে কোষ্ঠকাঠিন্য, কোলাইটিস, আমাশা, অজীর্ণ ইত্যাদি। সেজন্য খাবারের দিকে নজর রাখতে হবে। বেশি পরিমাণে শাকসবজি খাবেন। কারণ এগুলো পারগেটিভের কাজ করে।

কোমরে ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হলে কয়েকটি ব্যাপার জানা দরকার। সেগুলো হল- 

  • কতদিন ধরে ব্যথা হচ্ছে।
  • ব্যথার তীব্রতা কতখানি।
  • আঘাতের কোনো ইতিহাস আছে কি না। অর্থাৎ পড়ে গিয়ে কখনও চোট লেগেছে কিনা বা লাগলে আঘাতের তীব্রতা কতটা।
  • ব্যথা এক নাগাড়ে হয় নাকি মাঝেমধ্যে হয়, তাও জানতে হবে।

ব্যথার প্রকৃতি ও গভীরতা জেনে পরীক্ষা- নিরীক্ষার মাধ্যমে ব্যথার কারণ বুঝে সত্বর চিকিৎসা করতে হবে। বেশি দেরি হলে ব্যথার তীব্রতা বাড়তে পারে। কোমরের ব্যথা শুধুমাত্র লাম্বার রিজিয়নে আছে নাকি কোমর থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত নেমে গেছে সেটা দেখতে হবে। সায়টিকা হলে প্রচন্ড ঝিনঝিনে বা কনকনে ব্যথা হতে পারে এবং সেই ব্যথা এতই তীব্র হয় যে রাতে ঘুমের ব্যাঘাত হতে পারে। কারো কারো পা ছোট-বড় থাকলে কোমরে চাপ পড়ে বেশ ব্যথার সৃষ্টি করতে পারে।

ক্রনিক পেইনের জন্য কী কী পরীক্ষা-নিরীক্ষা

প্রথমে ব্যথার ইতিহাস নিতে হবে। দেখতে হবে ওই ব্যথার জন্য বিশেষ কোনো আঘাত বা রোগ কিংবা জন্মগত ও বংশগত কোনো কারণ আছে কি না।

রক্ত পরীক্ষা, এক্স-রে ছাড়াও প্রয়োজনমতো ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং (এম.আর.আই), সিটি স্ক্যান করা দরকার। এগুলোর মাধ্যমে কোনো গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা যেমন স্লিপড-ডিস্ক, স্পাইনাল ক্যানসার, ক্যানাল স্টেনোসিস হলে ধরা পড়বে।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Exit mobile version