তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার ভারতে খুবই প্রচলিত। তামাকজাত দ্রব্যসমূহের বিশেষ করে ধূমপান হিসাবে প্রচলন আপামর জনসাধারণের মধ্যে এক ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। মানুষের মধ্যে বিড়ি, সিগারেট, গুটকা ইত্যাদির প্রচলন বেড়েই চলেছে। ধূমপান ও অসুস্থতা আজ প্রায় সমার্থক। ধূমপানের সঙ্গে বিভিন্ন শারীরিক ব্যাধির উপস্থিতি বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি করে ।
ধূমপানের কুফল শুধু ধূমপায়ীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। গর্ভাবস্থায় ধূমপানের ফলে মহিলারা অসুস্থ বাচ্চার জন্ম দিতে পারে। এমনকী মৃত্যুও হতে পারে । যারা ধূমপান করেন না তারাও ধূমপায়ীর ধোঁয়া থেকে বিভিন্ন রোগের শিকার হচ্ছেন।
কিছু মানুষ ধোঁয়াহীন সিগারেট বা তামাক চেবানো প্রভৃতির মাধ্যমে কম ক্ষতির আশঙ্কা করেন। কিন্তু তা আদৌ সত্য নয়। বহু প্রচার সত্ত্বেও উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েরা নির্বিচারে ধূমপানে আসক্ত হচ্ছে। কিন্তু অনেকেই জানে না যে, ধূমপানের ফলে বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য বিভিন্ন ধরনের শারীরিক অসুস্থতার জন্ম দিতে পারে।
তামাক তামাকই এবং যেকোনো ধরনের তামাকই সমস্যার সৃষ্টি করে। ধূমপান বা ধূমহীন তামাক মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া, ঘা অথবা দাঁতের রোগ সৃষ্টি করে যা সব শেষে ক্যানসারে রূপান্তরিত হয়। এছাড়া তামাক ব্যবহারে অভ্যস্ত উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েরা ধীরে ধীরে ধূমপানে আকৃষ্ট হয়। কারণ যাই হোক তামাক বা ধূমপান স্বাস্থ্যের পক্ষে অতীব ক্ষতিকর।
বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা থেকে দেখা যায় যে ধূমপান মুখ ছাড়াও ফুসফুস, হার্টের অসুখ বা স্ট্রোকের অন্যতম কারণ। ধূমপান থেকে মুখ, গলা, খাদ্যনালী, প্যাংক্রিয়াস, কিডনি বা অন্যান্য অঞ্চলে মারণরোগ হতে পারে। আমেরিকায় ক্যানসারে আক্রান্ত পাঁচজনের মধ্যে একজনের মৃত্যু ধূমপানের জন্য ঘটে।
ধূমপান সম্পর্কিত বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায় যে, হৃদ ও রক্ত সংবহনতন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যা ধূমপানে বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। তামাকজাত ধোঁয়ার মাধ্যমে কার্বন মনো-অক্সাইড শরীরে প্রবেশ করে অক্সিজেনের মাত্রা কমিয়ে দেয় । শরীরের অত্যাবশ্যকীয় অঙ্গ যথা মস্তিষ্ক, হার্ট বা ফুসফুস যথাযথ অক্সিজেনের অভাবে প্রকৃত কাজ করতে পারে না। ধূমপানে আসক্ত মানুষ উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট অ্যাটাক, রক্ত জমাট বাঁধা বা রক্ত সংবহনতন্ত্রের অন্যান্য রোগে সহজেই আক্রান্ত হয়। ধূমপানের ফলে রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইডের পরিমাণ বাড়ে বা এইচ.ডি.এল কোলেস্টেরল কমে যায়। ফলে করোনারি হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোকের সম্ভাবনা বাড়ায় এবং রক্তবাহী নালীর কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
ফুসফুসের ক্যানসারের অন্যতম কারণ ধূমপান। ফুসফুসের কর্কটরোগ বিভিন্ন দেশে মৃত্যুর অন্যতম বড় কারণ। যার মধ্যে ৯০ শতাংশ মৃত্যু ধূমপানের জন্য ঘটে। এছাড়াও মুখ খাদ্যনালী, প্যাংক্রিয়াস, কিডনি, লিভার প্রভৃতি প্রত্যঙ্গে ক্যানসারের উৎপত্তির অন্যতম কারণ সেই ধূমপান। ধূমপানের ফলে শরীরে ভিটামিন- এ’র পরিমাণ কমে যাওয়াতে বয়সের আগে বার্ধক্যের ছাপ পুড়ে যায়।
![অপ্রত্যক্ষ ধূমপানও ডেকে আনতে পারে সর্বনাশ | Is Passive Smoking More Dangerous | Effects of Second-Hand Smoke 1 effects of passive smoking](http://banglaobangali.in/wp-content/uploads/2023/10/Effects-of-Second-Hand-Smoke.jpg)
অপ্রত্যক্ষ ধূমপানও আমাদের শরীরে অত্যন্ত ক্ষতিকারক বার্তা নিয়ে আসে। ধূমপায়ীদের আশপাশে থাকা ব্যক্তিরা ধূমপায়ীদের মতোই সমানভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কারণ এই ধোঁয়া একইভাবে তাদের শরীরে প্রবেশ করে। নিউমোনিয়া, যক্ষ্মা, উচ্চ রক্তচাপ, ফুসফুস ও হার্টের বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতা, হাঁপানি, ক্যানসার বা অন্যান্য অসুখে স্রেফ কিছু সময় আগে বা পরে তারা আক্রান্ত হয়। শিশুরা বা মাতৃগর্ভে থাকাকালীন বাচ্চারাও একইভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
তামাক সেবন বা ধূমপান সারা পৃথিবীতে লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যুর কারণ। তাহলে প্রশ্ন, আমরা কি সব জেনেশুনেও এই বিষ পান করব ? তামাক বা ধূমপানের ফলে প্রায় চার হাজার রাসায়নিক দ্রব্য যথা নিকোটিন, টার, ফরমালডিহাইড, বেঞ্জিন, কার্বন মনোঅক্সাইড, হাইড্রোজেন সায়ানাইড প্রভৃতির বিষক্রিয়া শরীরে লক্ষ করা গেছে। এটা ঠিকই যে একবার মানুষ তামাক সেবনে অভ্যস্ত হলে তা ত্যাগ করা খুবই কষ্টসাধ্য। কিছু মানুষ দৈনন্দিন চাপ বা স্ট্রেস, স্ট্রেনের থেকে পরিত্রাণের জন্য তামাকের ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে যায়। কেউ আবার আনন্দের জন্য শুরু করে, পরে নেশার বশীভূত হয়। বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দেখা গেছে ধুমপানের ফলে ধূমপায়ীরা মুখ ও গলার নানা অসুস্থতা বা ক্যানসারে আক্রান্ত হয়। বিভিন্ন ধরনের মুখগহ্বরের চামড়ার অসুখও খুবই কমন। ধোঁয়ার সঙ্গে নির্গত কার্বন মনোঅক্সাইড রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ কমিয়ে দেয় ও কতকগুলি আবশ্যিক অর্গান যথা হার্ট, ফুসফুস, মস্তিষ্ক প্রভৃতির কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়। উচ্চ রক্তচাপ, করোনারি হার্ট ডিজিজ, স্ট্রোক বা সেরিব্রোভাসকুলার স্ট্রোকের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। আর ফুসফুসের ক্যানসার খুবই পরিচিত ব্যাধি। তাছাড়াও যেসব অসুখের সম্ভাবনা থাকে সেগুলি হল পেপটিক আলসার, হাঁপানি, নিউমোনিয়া, ডায়াবেটিস, ছানি, ব্লাড ক্যানসার, যক্ষ্মা প্রভৃতি।
তামাক চিবানো বা ধুমপান মুখগহ্বরে বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি করতে পারে। মাড়ির প্রদাহ, মুখের ঘা, কালো বা ব্রাউন দাগ, দাঁতের ক্ষয়, লাইকেন প্রেনাস, লিউকোয়েকিয়া প্রভৃতি। ধূমপানের ফলে বাড়ির শিশু, বৃদ্ধ, মহিলা সবাই কমবেশি পরিমাণে প্রভাবিত হয়। ওপরে উল্লেখিত অসুস্থতাসমূহ সবই অপ্রত্যক্ষ ধূমপায়ীদের হওয়ার সম্ভাবনাও পূর্ণমাত্রার বিদ্যমান।
ভারতবর্ষে ধূমপান বিরোধী আন্দোলনে দাঁতের ডাক্তারদের সংগঠন IDA এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ১ আগস্ট সারা দেশে ধূমপান বিরোধী দিবস হিসাবে পালন করা হয়। আই.ডি.এ-র উদ্যোগে সারা দেশে প্রায় সাতশোর বেশি ধূমপান বিমুক্তকরণ কেন্দ্র খোলা হয়েছে, যেখানে সিগারেট বা তামাক আসক্তির চিকিৎসা করা হয়। শরীরের সঙ্গে মুখের স্বাস্থ্যও যে সমান গুরুত্বপূর্ণ এই চিন্তাভাবনার প্রসার ঘটাতে ইন্ডিয়ান ডেন্টাল অ্যাসোসিয়েশন সমানভাবে উদ্যোগী।