Home স্বাস্থ্য পরামর্শ Symptoms of Gout: কোথায় কোথায় আক্রমণ শানায়?

Symptoms of Gout: কোথায় কোথায় আক্রমণ শানায়?

অমিতবাবু বেশ স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ। কিন্তু কিছুদিন আগে এক বন্ধুর বিয়ের নিমন্ত্রণে গিয়ে বেশ করে পাঁঠার মাংস খেয়ে ফেললেন। পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখেন বাঁ পায়ের বুড়ো আঙুল লাল হয়ে ফুলে গেছে। যন্ত্রণাও হচ্ছে বেশ। এর আগেও মাঝে মধ্যে এই বুড়ো আঙ্গুলে যন্ত্রণা হয়েছে। অত গা করেননি। কিন্তু এবার স্বাভাবিক কর্ম করাই অসম্ভব হয়ে গেল। অফিস কামাই করতে হল কয়েকদিন। বছর চল্লিশের অমিতবাবু আবার ওষুধ-বিষুধ যত কম খাওয়া যায় ততই মঙ্গল-এই চিন্তায় বিশ্বাসী। মা-বাবাকে আর্থাইটিসের জন্য আকুপাংচার নিতে দেখেছেন। ফলে প্রথমে মাথায় এল আকুপাংচার চিকিৎসার কথা। চিকিৎসার আগে ভদ্রলোকের রক্তের ইউরিক আসিড পরীক্ষা করানো হল। দেখা গেল ৭.৭ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার মাত্রায় ইউরিক অ্যাসিড রয়েছে। অর্থাৎ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। নিয়ন্ত্রিত খাবার গ্রহণ করার পরামর্শ দিয়ে চিকিৎসা শুরু করা হল। পায়ের রোগগ্রস্ত আঙুলের কাছাকাছি, দু-তিনটি পয়েন্টে সূচ ফুটিয়ে মৃদুভাবে স্টিমুলেট করার পাশাপাশি মক্সা নামক ভেষজের গরম সেঁকও দেওয়া হল। ১৫-২০ টি সিটিং দেবার পর দেখা গেল যন্ত্রনা, ফুলো ভাব, লালচে ভাব, প্রভৃতি কমে গেছে। এতে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রাও কমেছে এবং অমিতবাবু সাধারণ জীবনযাপন করতে পারছেন। 

গাউট রোগটি কী

গাউট হল একটি মেটাবলিক ডিজিজ বা বিপাকক্রিয়ার ত্রুটিজনিত রোগ। পিউরিন যুক্ত প্রোটিন গ্রহণ করলে তা বিপাকক্রিয়ার সাহায্যে ভেঙে ইউরিক আসিড তৈরি করে। কোনো কারণে এই ইউরিক অ্যাসিড উৎপাদন অস্বাভাবিক রকম বেড়ে গেলে বা উৎপাদন স্বাভাবিক হলেও যদি শরীর থেকে উপযুক্ত মাত্রায় বেরিয়ে না যায় তবে রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বেড়ে যায়। শেষ পর্যন্ত ওই অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড বিভিন্ন জয়েন্টে, কার্টিলেজে এবং কিডনিতে জমা হয়ে নানা রোগের সৃষ্টি করে। 

গাউটের কারণ

অতিরিক্ত মদ্যপান, কিডনির কিছু রোগ, থাইরয়েডের রোগ, সোরিয়াসিস জাতীয় চর্মরোগ, বিভিন্ন ধরনের ক্যানসার এবং কিছু ওষুধ যেমন থায়াজাইড, পাইরেজিমাইড প্রভৃতি।

গাউটের লক্ষণ

সাধারণত কমবাসী এবং পুরুষদের মধ্যেই রোগটির প্রকাশ বেশি। রোগটির মূল লক্ষণ  জয়েন্টে তীব্র যন্ত্রনা। মূলত পায়ের আঙুলের ছোট ছোট জয়েন্টগুলো বেশি আক্রান্ত হয়। তবে হাঁটু গোড়ালি কব্জিতেও রোগটি হতে পারে। আক্রান্ত জয়েন্টটি লাল হয়ে ফুলে যায়, গরম হয়ে থাকে। ছুঁলে তীব্র ব্যাথা হয়। রোগগ্রস্ত অংশের চামড়া খসখসে হয়ে যায়।

এছাড়া জ্বর, ক্ষুধামাদ্য ইত্যাদি হতে পারে। চিকিৎসা না হলে রোগটি  ক্রনিক  আকার ধারণ করে। সেক্ষেত্রে আক্রান্ত জয়েন্ট গুলো বেঁকে যায়। জয়েন্টগুলোর কাছে সোডিয়াম বাই ইউরেট ক্রিস্টাল জমা হয়। জয়েন্টগুলি ফুলে যায় এবং ব্যথা ও যন্ত্রনা দেখা দেয়।

gout in depth

প্রয়োজনীয় পরীক্ষা

রক্তে ইউরিক অ্যাসিড, শ্বেতকণিকা ও ই.এস.আর পরীক্ষা করা হয়। এবং স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মাত্রায় থাকে। আর জয়েন্টের এক্স-রে পরীক্ষা করলে কার্টিলেজে ক্ষয় ধরা পড়ে।

গাউটের আকুপাংচার চিকিৎসা 

আকুপাংচার যে অতি সূক্ষ্ম সূচ ফুটিয়ে করা হয় তা বোধ হয় অনেকেরই জানা। সূচ গুলি প্রত্যেক রোগীর ক্ষেএে আলাদা আলাদা এবং চিকিৎসার আগে উপযুক্ত পদ্ধতিতে পরিশোধন করা হয়। সূচগুলি শরীরের ত্বকের ওপর অবস্থিত বিভিন্ন পয়েন্টে ফোটানো হয়। পয়েন্ট গুলি আবার থাকে বিভিন্ন চ্যানেলের ওপর। আকুপাংচার শাস্ত্রের দৃষ্টিকোণ থেকে অস্থি বা হাড় কিডনি চ্যানেলের সাথে এবং বিপাকক্রিয়া স্প্লিন চ্যানেলের সাথে সম্পর্কিত। ফলে ওই দুটি চ্যানেল থেকেই মূলত দুই থেকে পাঁচটি বিন্দু নির্বাচন করা হয়। এছাড়া প্রদাহ কমানোর জন্য নির্দিষ্ট কিছু পয়েন্ট আছে, সেগুলোও ব্যবহৃত হয়। এভাবে কিছু পয়েন্ট নির্বাচনের পর অতিসূক্ষ্ম সূচ ব্যথাহীনভাবে ফোটানো হয় এবং প্রায় ২০ মিনিট রেখে দেওয়া হয়। একিউট গাউটে কোনোরকম স্টিমুলেশন ব্যবহৃত না হলেও ক্রনিক গাউটে স্টিমুলেশন দেওয়া হয়। এছাড়া মক্সা নামক পাহাড়ি ভেষজ থেকে তৈরি চুরুটের সাহায্যে গরম সেঁকও দেওয়া হয়। এরপর সূচগুলি তুলে নেওয়া হয়। সম্পূর্ণ পদ্ধতিটিতে কোনো ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভূত হয় না।

 অনেকের মনে হতে পারে বাইরে থেকে কোনো ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে না অথচ রোগ কমছে কীভাবে? আসলে সূচগুলি শরীরে ফোটালে পয়েন্টের নীচে থাকা প্রান্তীয়  স্নায়ুগুলি উত্তেজিত হয়। এই উত্তেজনাস্নায়ু মারফত স্পাইনাল কর্ড এবং ব্রেইনের বিভিন্ন অংশে পৌঁছে যায়। এর ফলে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতঙ্গ এবং গ্রন্থি সক্রিয় হয়ে ওঠে। ব্রেনের নির্দিষ্ট অংশ থেকে নির্গত হওয়া এন্ডোর্ফিন, এনকেফালিন রক্তে মিশে ব্যাথা কমাতে সাহায্য করে। এভাবেই শরীরের নিজস্ব উপাদনকে কাজে লাগিয়ে আকুপাংচার চিকিত্সা করা হয়।

খাদ্য নিয়ন্ত্রণ 

গাউটে খাদ্যের ভূমিকা বিরাট। তাই নির্দিষ্ট কিছু খাদ্য বর্জন করা যেমন দরকার, তেমনই নিয়ম করে কিছু খাদ্য গ্রহণও করতে হবে। 

বর্জন করাতে হবে খাসির মাংস, সামুদ্রিক মাছ, মাছের ডিম, ঢেঁড়শ, কড়াইশুঁটি, ফুলকপি, বাঁধাকপি টমেটো। মদ্যপানও বর্জনীয়। 

অন্যদিকে গ্রহণ করতে হবে লেবু, আমলকি  জাতীয় ভিটামিন সি  সমৃদ্ধ খাবার সারাদিনে চাই পরিমাণ মতো জল (তিন লিটার বা তার বেশি)। 

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Exit mobile version