Home মানসিক স্বাস্থ্য Migraine Pain: সাধারণ মাথাব্যথা নাকি মাইগ্রেন কীভাবে বুঝবেন?

Migraine Pain: সাধারণ মাথাব্যথা নাকি মাইগ্রেন কীভাবে বুঝবেন?

মাইগ্রেন বা মিগ্রেন শব্দটি ফ্রেঞ্চ শব্দ, এসেছে মেগ্রেন থেকে তার উৎপত্তি ল্যাটিন শব্দ হেমিগ্ৰেনিয়া থেকে। সাধারণত হেমিগ্ৰেনিয়া বলতে বোঝায় আধকপালি। হেমি অর্থে অর্ধেক, হেমিগ্ৰেনিয়া অর্থে অর্ধেক মাথা, কপাল জুড়ে মাথার অর্ধেক ব্যথা বা আধকপালি।

কাদের বেশি হয়?

মাইগ্রেন সাধারণত মহিলাদের বেশি হয় পুরুষের তুলনায়। শতকরা সত্তর ভাগ মহিলাদের এ রোগে ভুগতে দেখা যায়। দশ থেকে তিরিশ বছর বয়সি মেয়েদের মধ্যে এর প্রবণতা বেশি। বিশেষজ্ঞদের মতে তরুণী মহিলারাই অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ রোগে আক্রান্ত হন।

প্রকারভেদ

ইন্টারন্যাশনাল হেডেক সোসাইটি মাইগ্রেনকে দুটো পর্যায়ে ভাগ করেছে—

  • উপসর্গের বহিঃপ্রকাশ সহ মাইগ্রেন বা মাইগ্রেন উইথ অরা। এই ধরনের মাথা ব্যথার আগে সুনির্দিষ্ট কিছু লক্ষণ থাকে। যেমন চোখের সামনে নানা রকম বর্ণ দেখা, হাত-পা অসাড় হয়ে আসা, কানে কম শোনা, মাথা ঘোরা, বমি হওয়া, চোখের মণি অচল হয়ে পড়া, চোখে অন্ধকার দেখা, ভীষণ রকমের মাথা ব্যথা হওয়া ইত্যাদি।
  • উপসর্গের বহিঃপ্রকাশ হীন মাইগ্রেন বা মাইগ্রেন উইদাউট অরা। এদের পূর্ব লক্ষণ থাকে না। বাইরে থেকে কোনো প্রকাশ থাকে না। অন্ধকার ঘরে চুপ করে শুয়ে থাকলে স্বস্তি বা আরাম বোধ হয়। উল্লেখযোগ্য উপসর্গগুলোর  কোনোটাই এক্ষেত্রে থাকে না। চিকিৎসকদের তাই রোগ নিরাময় করা শক্ত হয়। এই ধরনের রোগী অনেক বেশি পাওয়া যায়। এই প্রকার মাইগ্রেনকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন-

১. অপথার্মোক্লিটিক মাইগ্রেন : এতে দু’-তিন ঘন্টার মারাত্মক ব্যথা হয়।

২.রেটিনাল মাইগ্রেন : রক্তপ্রবাহ কমে চোখে অন্ধকার দেখে।

৩.ফ্ল্যামেলিয়াল হেমিপ্লেজিক মাইগ্রেন : মানুষের শরীরের এক পাশ দুর্বল হতে পারে।

চিকিৎসকদের মতে, এছাড়াও আরো কয়েক প্রকারের মাইগ্রেন হতে পারে। যেমন-

  • ক্লাসিক মাইগ্রেন। 
  • কমন মাইগ্রেন। 
  • কমপ্লিকেটেড মাইগ্রেন।

ক্লাসিক মাইগ্রেনের যন্ত্রণা শুরু হওয়ার আগে কিছু পূর্বাভাস দেখা দেয়। তারপর যন্ত্রণা শুরু হয়। চোখের দৃষ্টি ঝাপসা বা ডবল ভিশন, অন্ধকার দেখা, কিংবা আলোর ঝলকানি পরিলক্ষিত হয়। কথা জড়িয়ে আসা, শরীর অবশ লাগা, ঘুম কম হওয়া এই পর্যায়ে পড়ে।

কমন মাইগ্রেনের কোনো পূর্বাভাস থাকে না। রোগী আগে থেকে কিছু বুঝতে পারে না। হঠাৎ যন্ত্রণা শুরু হয়, কয়েক ঘণ্টা বাদে কমে যায় মাথার যন্ত্রণা। শুয়ে বিশ্রাম নিলে আপনা থেকেই কমে যায়।

কমপ্লিকেটেড মাইগ্রেনে বেশ কয়েক দিন ধরে ব্যথা চলতে থাকে। দেহের কোনো অঙ্গ অবশ লাগা, অর্ধেক অবশ লাগা বোধ হয়। বমি বমি ভাব বা বমি হওয়ার প্রবণতা থাকে।

বিভিন্ন চিকিৎসা বিভিন্ন ভাবে রোগ সারাবার উপায় নিবারণ করে। অ্যালোপ্যাথি, হোমিওপ্যাথি, কবিরাজি, সিদ্ধাই, ইউনানি ইত্যাদি বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে। যোগশাস্ত্রে বিভিন্ন আসন রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে ও নার্ভের ওপর প্রভাব ফেলে মানসিক ও দৈহিক ব্যথা নিরাময় ও রোগ সারাতে সাহায্য করে।

মাইগ্রেনের লক্ষণ

আলো, আওয়াজে অস্বস্তিভাব, মাথায় ও কপালে দপদপে ব্যথা, একদিকে কখনো দু’দিকে, ব্যথা হয়। বমি বমি ভাব বা বমি হলে উপশম ঘটে। নিউরোলজিক্যাল ডিসঅর্ডারে মাথার ‘একদিক বা পুরোটা জুড়ে তীব্র যন্ত্রণা হয়। উজ্জ্বল আলো বা চিৎকার অসহ্য লাগে। সেই সঙ্গে কারো কারো চোখের যন্ত্রণা, দৃষ্টির অস্পষ্টতা, খিদে কমে যাওয়া, মেজাজ খিটখিটে হয়ে থাকা, মাথা টলমল করা দেখা যায়। কখনো মাইগ্রেন রোগীর কথা জড়িয়েও যেতে পারে।

মাইগ্রেনের কারণ

রোগটি বংশগত রোগ হিসেবে খুব পরিচিত। বংশের কোনো সদস্যের এ রোগ থাকলে পরবর্তী প্রজন্মের কারো এ রোগ হতে পারে। যারা খুব বুদ্ধিমান, অতিরিক্ত সচেতন, উচ্চাভিলাষী এবং করিৎকর্মা, উৎসাহ প্রবণ, তারাই এ রোগে বেশি ভুগে থাকেন। এছাড়া অতি আলোর ঝলকানি, গান-বাজনা, পরিবেশ দূষণ, শব্দ দূষণ, হর্ন ও মাইকের শব্দ, অশোধিত আলোর প্রতিসরণ ইত্যাদি থেকে এবং বয়সন্ধির পূর্বাবস্থায় ঋতুমতী হওয়ার পূর্বে এই ব্যথার সম্মুখীন হতে হয়। টাইরামাইন জাতীয় খাদ্য, চীজ, চকলেট, পেঁয়াজ, ভাজা জাতীয় খাদ্য, মাদক জাতীয় দ্রব্য গ্রহণে এই ব্যথা হয়ে থাকে। অনেক বিশিষ্ট চিকিৎসকদের মতে অত্যধিক খাওয়া, মানসিক – চাপ, কম ঘুম মাইগ্রেনকে ডেকে আনে।

চিকিৎসা বিজ্ঞান এখনও পর্যন্ত মাইগ্রেনের সঠিক কারণ বিজ্ঞানসম্মত ভাবে চিহ্নিত করতে পারেনি। বিশেষজ্ঞদের মতে পরিবেশগত কারণ উত্তেজক হিসেবে মস্তিষ্কের মধ্যে কিছু রাসায়নিক ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়। ফলে নিউরোট্রান্সমিটার গুলোর ভারসাম্য নষ্ট হলে বা সেরোটনিনের স্বাভাবিক কাজকর্মে বাধা পড়লেই মস্তিষ্কে রক্তবাহী নালীগুলো প্রসারিত বা সংকুচিত হয়। তখনই শুরু হয় মাথা জুড়ে তীব্র যন্ত্রণা। স্নায়ুঘটিত ইন্টারক্রেনিয়াল অ্যানিউরিজম– (ক্রেনিয়াল ভেইন ও আর্টারির প্রসারণের ও সংকোচন এর অভাব)। কোনো কোনো বিশেষজ্ঞের মতে অত্যধিক অথবা অনিয়মিত খাওয়া, মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা, ক্লান্তি, কম ঘুম মাইগ্রেনের অন্যতম কারণ। সেরোটনিনের মাত্রা অত্যধিক বেড়ে গেলেও মাইগ্রেন হয়ে থাকে। মহিলাদের শরীরে যদি ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায় তাহলেও মাইগ্রেন হতে পারে।

botox for migraines treatment

কি করবেন না

বেশি তেল, ঘি, ভাজা, মশলা জাতীয় খাদ্য পরিহার করুন। অতিরিক্ত লজেন্স, চকলেট, জাঙ্ক ফুড ও পানমশলা জাতীয় খাদ্য ত্যাগ করুন। শব্দ দূষণ, বায়ু দূষণ যুক্ত পরিবেশ এড়িয়ে চলুন। অতিরিক্ত আলোর ঝলকানি থেকে নিজেকে মুক্ত করুন। অতিরিক্ত রাত জেগে টিভি দেখা এ রোগের প্রকোপ বাড়াতে সাহায্য করে।

করণীয়

নিত্য যোগাসন অভ্যাস করুন। প্রত্যহ স্নান করা, দাঁত মাজা, চুল আচড়ানোর মতো নিয়মিত যোগাভ্যাস করুন। সকালে বা বিকেলে অথবা যেকোনো সময়ে (শুধু দুপুরে খাওয়ার পর আড়াই ঘণ্টা বাদে ও সকালের টিফিনের আধঘণ্টা বাদে) যোগাসন করুন। নিত্য যোগাসন করলে বেশি ওষুধ খাওয়ার দরকার হবে না। যে সকল আসনগুলো এই রোগে উপকারী সেগুলো হল শশঙ্গাসন, মৎস্যাসন, বিপরীতকরণী, সর্বাঙ্গাসন, শীর্ষাসন, অর্ধমৎস্যেন্দ্রাসন, ভ্রামরী, সূর্যভেদ প্রাণায়াম, ধ্যান ও রিলাক্সেশন ইত্যাদি।

বয়স বাড়ার সাথে সাথে মাইগ্রেন কমে যায়। যাদের কৈশোরেই এই ব্যথা শুরু হয় তাদের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ কৈশোরের পর একদম ভালো হয়ে যায়। আর যাদের একটু বেশি বয়সে এই ব্যথা শুরু হয় তারাও দশ-বারো বছর পরে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যায়। অনেকক্ষেত্রে কিছুদিন পরে মাইগ্রেন আবার ফিরে আসে। মাইগ্রেন শুনলেই ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই। নিয়ম মেনে চললে, সাথে যোগাসন অভ্যাস করলে একদম বশে রাখা যায়।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Exit mobile version