Home মানসিক স্বাস্থ্য দুশ্চিন্তা, হতাশা, ভয় – কেন হয় ? কিভাবে দূর করবেন ?

দুশ্চিন্তা, হতাশা, ভয় – কেন হয় ? কিভাবে দূর করবেন ?

স্বাস্থ্য মৌলিক অধিকার গুলোর অন্যতম। সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতো বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর দ্বারাও এই আদর্শ সমর্থিত হয়ে এসেছে। দুর্ভাগ্যবশত স্বাস্থ্য কাউকে দান বা বণ্টন করা যায় না, তাকে যত্নের দ্বারা অর্জন ও অধিকার করতে হয়। একদিকে স্বাস্থ্য রক্ষা ও স্বাস্থ্য সংবর্ধন এবং অন্যদিকে রোগ প্রতিরোধ ও রোগ জয়ের রীতিগুলো জানতে হলে স্বাস্থ্য ও রোগের মূল তত্ত্ব গুলো জানা আবশ্যক।

পরিপূর্ণ দৈহিক, মানসিক ও সামাজিক সমুন্নতির অবস্থাকেই স্বাস্থ্য বলা হয়। নিছক রোগ বা অসুস্থতার অনুপস্থিতিকে স্বাস্থ্য বলে না। সেইজন্য স্বাস্থ্য রক্ষার নিয়ম বা জ্ঞান অর্জন করা গেলে, এই জ্ঞানও একটা শক্তিরূপে কাজ করে। খাদ্য, পরিচ্ছন্নতা, ব্যায়াম, বিশ্রাম, মেডিটেশন ও মানসিক সঞ্চালন, যা কিনা পরিপূর্ণ স্বাস্থ্য রক্ষার অঙ্গীকার রূপেই অভিহিত। যে বিষয় নিয়ে বর্তমান বিশ্বে বিভিন্ন গবেষণা হচ্ছে এবং উপদেশ দেওয়া হচ্ছে তা হল, হতাশা ও নিরাশা বিভিন্নভাবে আমাদের জীবনকে ব্যতিব্যস্ত করে রাখে, যা ইচ্ছা করলেই সহজে দূর করা যায় না (নানান কারণে)। ফলে এই হতাশা ও নিরাশা নানান রোগকে আমন্ত্রণ করে নিয়ে আসে। অনেকে এতটাই ভারাক্রান্ত হয়ে যান  যে আত্মহত্যা করতেও পিছু পা হন না। 

কিশোর থেকে বৃদ্ধ কেউই এই অনাহত আক্রমণ থেকে রেহাই পাননি বা পাচ্ছেনা অথচ সঠিক পথ জানা থাকলে এই হতাশা ও নিরাশা কে সহজেই গুডবাই জানানো যাই।

হতাশা কত প্রকারের হতে পারে

  • অর্থনৈতিক: প্রতিযোগিতার দৌঁড়ে অর্থনৈতিক অসামঞ্জস্যতা বার বার হতাশা এনে দেয়। নিরাশা সৃষ্টি করে থাকে। অর্থের প্রয়োজনীয়তা নিশ্চয় আছে, কিন্তু তা যেন ক্ষমতার বাইরে না চলে যায়। অর্থই যেন সব কিছু, এই ভাবনাটাই সমস্যা সৃষ্টি করে।
  •  ব্যক্তিগত: পৃথিবীতে ব্যক্তিগত হতাশার শেষ নেই। প্রতি মুহূর্তে ছোট ছোট বিষয়কে চিন্তা করে করে বৃহৎ আকারে পরিণত করার ক্ষেত্রে মানুষের তুলনা নেই। যে কোনো সমস্যা তা কখনোই বড় হয় না, বড় করি আমরা, আমাদের ভাবনা ও চিন্তা দ্বারা। সমস্যা তো থাকবেই। সমস্যা ছাড়া জীবন তো অচল। যতদিন জীবন আছে ততদিনই সমস্যা থাকবে। সমস্যাকে সমস্যা মনে করলেই বাড়ে সমস্যা। আর এই সমস্যার কথা যত ভাবব এবং সমাধান করতে না পারব ততই হতাশা ও নিরাশা মনকে ভরিয়ে রাখবে।
  • ধর্মীয়: ধর্ম হল যা ধারণ করা হয়। প্রত্যেকের একটা নিজস্ব ধর্ম আছে। যেমন জলের ধর্ম শীতলতা, অগ্নির ধর্ম দহন করা তেমনি মানুষের ধর্ম হল মানবতাবাদ, শাস্তি ও পবিত্রতা। প্রায় প্রতিটি ধর্মে কথাগুলো বলা হয়েছে কেবলমাত্র অনুসরণ করা যাচ্ছে না বা হচ্ছে না। ফলে শাস্তির, মানবতার ও পবিত্রতার অভাবে মানুষের অন্তর জগতে বিকার জায়গা করে নিয়েছে। সেই বিকারমুক্ত হওয়ার জন্য ধর্মের পথে যাত্রা করার প্রয়াস নেওয়া হয়। কিন্তু সংস্কার ও চরিত্রের বিভিন্নতার কারণে ধর্মীয় অনুশাসন কে গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না। আবার ধর্মের অপব্যবহারও সহ্য হচ্ছে না। ফলে ধর্ম নিয়ে হতাশা সৃষ্টি হয় যা এক অবৈজ্ঞানিক চিন্তাধারা।
  • শিক্ষাগত : শিক্ষার মান নিয়ে হতাশা। শিক্ষা (ডিগ্রি) নিয়েও কাজে লাগানো গেল না; তাই হতাশা; শিক্ষার ক্ষেত্রে বিভিন্ন নৈরাজ্য—সেটাও হতাশার কারণ হয়ে ওঠে।

শিক্ষা প্রতিটি মানুষ মাত্রেই দরকার। কারণ শিক্ষা মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করে থাকে। শিক্ষাকে ব্যবসায়িক ভাবধারায়, চিন্তাধারায় চিন্তা করলে কখনোই হতাশা মুক্ত থাকা যাবে না। দৃঢ়তা থাকলে সফলতা আসবেই। বরং নিরাশ হয়ে গেলে আর উঠে দাঁড়ানো যাবে না। সেইজন্য শিক্ষা দরকার কিন্তু তা নিরাশা বা হতাশা যেন না নিয়ে আসে বরং দূর করতে যেন সাহায্য করে। কারণ জ্ঞান একটা শক্তি। আর এই শক্তিকে কাজে লাগাতে পারলে হতাশা আসবে না।

  • দৈহিক : আমরা অনেকেই কোনো না কোনো সময় দৈহিক কারণে হতাশ হয়ে পড়ি। এ ধরনের হতাশা অনেক সময় আত্মহননে উদ্বুদ্ধ করতে সাহায্য করে। অথচ এমন ব্যক্তিত্বও আছেন যিনি ক্যানসার নামক কঠিন ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েও জীবনের হাল ছেড়ে দেননি। সুস্থ হয়ে আবারও মূল স্রোতে ফিরে এসেছেন। কালো না ফর্সা, লম্বা না বেঁটে, ব্রাহ্মণ বা শূদ্র, অটিজম না বোধবুদ্ধি কম ইত্যাদি কোনোটাই আমাদের হাতে নেই। যা আছি, যেমন আছি, ভালো আছি। ভালো থাকতে হবে। এই বোধ হতাশামুক্ত থাকতে সাহায্য করবে। শারীরিক অসুস্থতার জন্য চিকিৎসা তো করতেই হবে কিন্তু তা যেন মানসিক ভাবে অসুস্থ (ভেবে ভেবে) না করে দেয়।
  • হীনম্মন্যতা মূলক: আমরা অনেকেই অন্যের সাথে তুলনা করে প্রায়শই হীনম্মন্যতায় ভুগতে থাকি। কিন্তু হীনম্মন্যতা হতাশাকে সহজেই আমন্ত্রণ করে নিয়ে আসে। এবং যখন নিজেকে নিজে ম্যানেজ করতে পারি না (অন্যের সঙ্গে তুলনা করে) তখনই সমস্যা দেখা দেয়। এই সমস্যা থেকে মানসিক চাপ নিতে নিতে ডিপ্রেশনের শিকার হতে হয়। মনটাকে ইতিবাচক করে তুলতে পারলে এই ধরনের সমস্যা বা হতাশার সৃষ্টি হয় না।
হতাশা বিহীন জীবনের জন্য অতিরিক্ত চিকিৎসা

হতাশা ও নিরাশা থেকে কী কী হতে পারে

হতাশা ও নিরাশা থেকে হতে পারে হাইপারটেনশন, ব্লাড প্রেসারের সমস্যা, হার্টের সমস্যা, বদহজম, অনিদ্রা। সুগারের সমস্যা থাকলে বৃদ্ধি হতে সাহায্য করে। মাইগ্রেন, আথ্রাইটিস, স্কিনের সমস্যা, শ্বাসকষ্ট, ডিপ্রেশন ও আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।

হতাশা ও নিরাশা থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য কী কী করতে হবে?

  • সবসময় ইতিবাচক থাকুন। ব্যর্থ ও নেতিবাচক চিন্তাকে ইতিবাচক করে তুলুন। 
  • সব শেষ হলেও, কিছু এখনো শেষ হয়নি, জীবন হল একগুচ্ছ আশা। আশাকে মরতে দেবেন না। সফল হবেনই।
  • লাইফ ইজ এ চ্যালেঞ্জ — দৃঢ়তার সঙ্গে ফেস করুন, সফলতা আসবেই।
  • পিঁপড়ে হাতিকে মারতে পারে, তাই বলে পিঁপড়ে হাতির চেয়ে বড় হতে পারে না। দুঃখ- কষ্ট আসবে কিন্তু অভিজ্ঞ করে দিয়ে যাবে। সেই জন্য নিজেকে নিজে সাপোর্ট করুন (ইতিবাচক) অন্যথায় অভিভাবক বা ভালো বন্ধুর সাহায্য নিন।
  • অতীত নিয়ে ভাববেন না। ভুলে যাওয়ার প্রয়াস নিন। মন হালকা থাকবে।
  • নিজের কাউন্সেলিং নিজে করুন, সহজেই হতাশাকে জয় করতে পারবেন।
  • হালকা থাকার চেষ্টা করুন। একসাথে অনেক কাজ বা দায়িত্ব নেবেন না। গুরুত্ব অনুসারে একের পর এক করে যান।
  • লাইফ স্টাইল (ইতিবাচক) সুন্দর ও নিয়মানুবর্তিতার মাধ্যমে গড়ে তুলুন। সুফল পাবেন।
  • রোজ আধ্যাত্মিক থেরাপির সাহায্য নিন, হতাশা ও নিরাশা থেকে নিজেকে মুক্ত করে দিন। আধ্যাত্মিক থেরাপি হল আধ্যাত্মিক পাঠ, মেডিটেশন বা ধ্যান, প্রার্থনা বা শুভ ভাবনা নিজের ও অন্যের জন্য করা দরকার।

আধ্যাত্মিক পাঠ : যা মনকে ইতিবাচক করতে সাহায্য করে। ব্যর্থ ও নেতিবাচক চিন্তামুক্ত থাকতে সাহায্য করে।

মেডিটেশন : মনের ব্যায়াম। মনকে শক্তিশালী ও একাগ্র করার জন্য এবং মনের সব সমস্যাকে দূরীভূত করে সুস্থ মনের অধিকারী হওয়ার জন্য সকাল রাত্রে পনেরো-কুড়ি মিনিট মেডিটেশন অভ্যাস করুন।

প্রার্থনা : আমরা মনে করি প্রার্থনা, প্রাপ্তির জন্য, বিঘ্ন থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য। এখানে রোজ নিজেকে নিজে শুভ ভাবনার দান ও সাত রঙের রে দিতে হয়, যার দ্বারা শারীরিক ও মানসিক ভাবে সুস্থ থাকা যায়। আবার অন্যের প্রতি শুভ ভাবনার দান দিলে তা রিটার্ন হয়ে ফিরে আসে, আরও শক্তিশালী করে তোলে।

কোনো মেডিটেশন বা প্রার্থনা আধ্যাত্মিকতা ছাড়া হয় না। সেইজন্য আধ্যাত্মিক হওয়া দরকার (আধ্যাত্মিকতা কোনো ধর্ম নয়, এও একপ্রকার বিজ্ঞান)। আধ্যাত্মিকতা, হতাশা সৃষ্টিকারি সব সমস্যাকে সমাধানের পথে নিয়ে যায়। হতাশা, নিরাশা (মনের সমস্যা) ও আত্মহত্যা সহ নানাবিধ মানসিক সমস্যাকে যেমন গুডবাই জানানো যায় তেমনি শারীরিক বহু সমস্যাকে সহজেই নিয়ন্ত্রিত রাখা যায়। সুস্থতার পথে নিয়ে যেতে পারা যায়। দীর্ঘায়ু ও সুনিদ্রার অধিকারী হওয়া যায়। শাস্তি ও আনন্দে থাকা যায় ৷

যদি এরপরও না হয় তাহলে হতাশাকে দীর্ঘায়িত না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন ৷

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Exit mobile version