Home পারম্পরিক ঔষধি Homoeopathy: স্বাস্থ্য ও হোমিওপ্যাথি

Homoeopathy: স্বাস্থ্য ও হোমিওপ্যাথি

বছরের শ্রেষ্ঠ উৎসব আসন্ন। তার প্রস্তুতি তো অনেক দিন ধরেই চলছে। জুতো, জামা, কসমেটিক্স তো আছেই। তার সঙ্গে কোথায় যাব, কোথায় খাব, কী কী খাব—এতসব প্ল্যান করা কি সহজ কথা! আবার এত সব কিছুর সঙ্গে শরীরটাকেও সুস্থ রাখতে হবে। কাজেই পুজোয় খাওয়া-দাওয়া করে বা ঘুরতে গিয়ে যেন কেউ না অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাহলে তো পুজোর আনন্দটাই মাটি! আর সেটা যাতে না হয় সেই জন্যই এই নিবন্ধ।

পুজোর দিনগুলোতে বাঁধ ভাঙা খাওয়া- দাওয়া করেও সুস্থ থাকতে দরকার নাক্স ভমিকা ৩০পালসেটিলা-৩০। ছেলেরা নাক্স ভমিকা- ৩০ ও মেয়েরা পালসেটিলা-৩০ দিনে দু’বার করে খেলে পেটের গন্ডগোলের সম্ভাবনা কম থাকবে। কিন্তু প্রচুর পরিমাণে জল খেতে হবে। আর মনে রাখবেন যেখানেই খান, যাই খান, খাবারের গুণগত মান যেন ঠিক থাকে। পুজোর দিনগুলোতে মন্ডপের আশেপাশে ব্যাঙের ছাতার মতো অনেক অস্থায়ী দোকান পাঁচ দিনের জন্য গজিয়ে ওঠে। এদের উদ্দেশ্য হল পাঁচদিনে কিছু উপার্জন করা। সেই জন্য এই দোকানগুলো থেকে উচ্চদামে নিম্নমানের খাবার সরবরাহ করা হয়। এই দোকানগুলোকে তাই বর্জন করাই মঙ্গল।

হ্যাঁ, যেখানে সেখানে জল খাবেন না, কারণ জল থেকেই বেশির ভাগ ইনফেকশন হয়। মাছ, মাংস, ডিম ও দুধের খাবার থেকেও বিপদ ঘটে। চালু দোকান ছাড়া এই ধরনের খাবার খাবেন না। মাছ, মাংস, ডিম যা খাবেন গরম খাবেন। পুজোর দিনগুলোতে স্টমাক ইনফেকশন খুব বেশি হয়। পেটে ভীষণ ব্যথা, গা বমি, বমি ও পাতলা পায়খানা স্টমাক ইনফেকশনের প্রধান লক্ষণ। এই ধরনের ইনফেকশনে আর্সেনিক- এল, নাক্স ভমিকা অ্যালোপ্যাথিক অ্যান্টিবায়োটিকের মতো কাজ করে। খাবার বিষয়ে একটা কথা মনে রাখবেন যে, একদিনে মাছ, মাংস, ডিম ও দুধের জিনিস খাবেন না। রাস্তার ধারের কাটা ফল খাবেন না। অত্যধিক গরম অবস্থায় কোল্ড ড্রিঙ্কস বা আইসক্রিম খাবেন না। একটু ঠান্ডা হয়ে তারপর খাবেন। পুজোর দিনগুলোতে যেভাবে চুটিয়ে খোলা ঠান্ডা পানীয় বা রঙিন পানীয় বিক্রি হয় তা অত্যন্ত বিপজ্জনক। এই খোলা পানীয় থেকে জলবাহিত রোগ আসবেই। এই ধরনের পানীয় থেকে ডায়রিয়া, ভমিটিং, কলেরার মতো রোগে আক্রান্ত হওয়া খুব সহজ।

পুজো মানে অনেকের কাছে মদ, সিগারেট ছাড়া কিছুই নয় ৷ আমি অনেককেই জানি যারা পুজোর দিনগুলো চায়না টাউনে বসেই কাটিয়ে দেয়। যাদের অভ্যাস নেই তারাও বন্ধুদের সঙ্গে আকণ্ঠ পান করে বমি করে রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে। এদের শারীরিক ও মানসিক অবসাদ কাটাতে এভেনা, গ্লোনোইন, নাক্স ভোম ভালো কাজ করে। কিন্তু সাময়িক একটু আনন্দের জন্য পুজোর একটা বেলা তো নষ্ট হয়েই যাবে।

পড়তে খারাপ লাগলেও একটু জানাতে হবে বলে আমি মনে করি, পুজোর দিনগুলোতে এখন আমাদের সমাজে যুবক-যুবতীদের মধ্যে সেক্স পলিউশন অনেক বেড়ে গেছে। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দৌড়তে গিয়ে যৌন বাধাও লঙ্ঘন করে ফেলছে। আর এদেরকে সাহস যোগাচ্ছে আপদকালীন গর্ভনিরোধক বড়ি, বিজ্ঞাপনের যুগে, যা আজ সবার জানা ও অতি সহজলভ্য। আপনারা শুনলে অবাক হবেন পুজোর আগে বহু ওষুধের দোকান প্রচুর পরিমাণে গর্ভনিরোধক বড়ি স্টক করে রাখে, বিশেষ করে কলেজের আশেপাশের দোকানগুলোতে। কিন্তু এই ছোট ছোট মেয়েরা জানে না তারা কোন বিষ খাচ্ছে। অপ্রয়োজনে এই ধরনের ওষুধ বেশি খেলে বিয়ের পর সঠিক সময়ে মাতৃত্বে বাধা আসতে পারে। আজকের এই লাগাম ছাড়া আনন্দ ভবিষ্যতে চোখের জলের কারণ হতে পারে। পুজোর পরে অনেক কমবয়সী অবিবাহিত মহিলারাই আসেন তাদের এই ভুলের ওষুধ নিতে। কিন্তু প্রেগনেন্সি পজিটিভ হলে হোমিওপ্যাথি ওষুধে কিছু করা যায় না।

পুজোয় খাওয়া-দাওয়ার সঙ্গে আছে সাজগোজ। মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত নিজেকে সাজিয়ে নিতে প্রত্যেকেই ব্যবহার করেন হাজার প্রোডাক্ট। কিন্তু সব প্রোডাক্ট সবার সহ্য হয় না। এই ধরনের প্রোডাক্ট থেকে অনেকের অ্যালার্জি হয়। বিশেষ করে চুলের কালার ও ফর্সা হবার ক্রিম, যার থেকে মাথা ও মুখ চুলকে ফুলে ওঠে, লাল লাল দানাদানা র‍্যাশ হয়, খুব চুলকোয়। এই অ্যালার্জির ভালো ওষুধ হল এপিস মেল, নেট্রাম মিউর। কসমেটিক অ্যালার্জি এতটাই ভয়ঙ্কর হতে পারে যে হসপিটালেও যেতে হতে পারে। তাই বিজ্ঞাপন দেখে সব প্রোডাক্ট নিজের ওপর টেস্ট করতে যাবেন না। যে কোম্পানির যে প্রোডাক্ট যার সহ্য হয় সেটাই ব্যবহার করবেন। ঘুরে এসে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মেকআপ তুলে ফেসওয়াশ দিয়ে ধুয়ে নেবেন।

যে সব কমবয়সী ছেলেমেয়েদের ব্রণ’র সমস্যা আছে তারা ভীষণ মানসিক অস্থিরতায় ভোগে। পুজো যত এগিয়ে আসে অস্থিরতাও বাড়তে থাকে, ও একের পর এক ভুল করতে থাকে। যেমন বাজারের আজেবাজে প্রোডাক্ট মেখে ফেলে, পার্লারে যায়, কিন্তু অর্থ ব্যয় ছাড়া আর কিছুই হয় না। কাজেই এখনও সময় আছে, সঠিক চিকিৎসা করাও। ওষুধ খেয়ে ভিতর থেকে ব্রণ সারাতে হবে। শুধু বাইরে থেকে লাগিয়ে কিছু হবে না।

পুজোর জন্য মেয়েরা ইমিটেশনের গহনা কেনেন। কিন্তু এই নকল গহনার থেকেও ভীষণ অ্যলার্জি বা র‍্যাশ হয়। বিশেষ করে কানে, গলায় ও হাতে। লাল হয়ে ফুলে যায় ও চুলকোনোর পর জ্বালা করে, রস পড়ে, রক্ত বেরিয়ে ঘামের মতো হয়ে যায়। এসব ক্ষেত্রে ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ খেতে হবে। মনে রাখবেন হোমিও প্যাথিতেও অ্যালোপ্যাথির মতো তাড়াতাড়ি কাজ হয়। যাদের স্কিন খুব সেনসিটিভ তারা এই ধরনের গহনা পরবেন না। র‍্যাশের ওপর দিনে দু’বার করে ইচিসেনিয়া মাদার টিনচার দিলে শীঘ্র শুকিয়ে যাবে। র‍্যাশের ওপর তেল ও সাবান দেবেন না।

homeopathy medicine

পুজোর সঙ্গে এখন তো বৃষ্টি লেগেই থাকে। পাঁচদিন পুজোর মধ্যে তো ভিজতেই হবে। কিন্তু নিজেকে সুস্থ রাখতে খেতে হবে রাস টক্স বা বেলেডোনা। পুজোতে দেদার ঠান্ডা খেয়ে গলা ব্যথা হলে গরম জলে নুন দিয়ে ভেপার নিতে হবে ও ফাইটোলক্কা খেতে হবে।

পুজোয় নতুন জুতো পরতে সবার ভালো লাগে। নতুন জুতো পরলে এক বা একাধিক ফোস্কা হয়, পায়ে ব্যথা হয়। এই ফোস্কা খুব তাড়াতাড়ি সারাতে হলে এলিয়াম সেপা-৬ দিনে চারবার করে খেতে হবে ও এলিয়াম সেপা মাদার দিনে দু’-তিনবার লাগাতে হবে। পায়ে মোজা পরে নতুন জুতো পরলে ফোস্কা পড়ার সম্ভাবনা কম হয়।

পুজোয় অনেকেই বাইরে ঘুরতে যান, কেউ পাহাড়ে বা কেউ সমুদ্রে, আবার কেউ অরণ্যে। ঘুরতে গিয়ে অসুস্থ যাতে না হতে হয় সেজন্য কিছু ওষুধের ‘টুর প্যাক’ করা ভালো। যেমন ঠান্ডার জায়গায় ঘুরতে গেলে নিতে হবে ব্রায়োনিয়া-৩০, ওয়াইথিয়া-৩০। বৃষ্টির জায়গায় গেলে নিতে হবে ডালকামারা-৩০, রাস টক্স-৩০। এই ওষুধগুলো নিয়মিত দিনে দু’বার করে সেবন করলে জ্বর-সর্দি-কাশির সম্ভাবনা কম থাকবে। সমুদ্রে বা জাহাজে ঘুরতে গেলে অনেকের গা বমি বা বমি হয়। এর জন্য দরকার ইপিকাক-৬, ককুলাস ইন-৬। যাবার তিনদিন আগে থেকে দিনে তিনবার করে খেতে থাকলে এই অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয় না। পাহাড়ে গিয়ে অনেকের শ্বাসকষ্ট হয়, মাথা ঘোরে ও বমি হয়। এর প্রধান ওষুধ কোকা-৬/৩০। এটিও ঘুরতে যাবার তিনদিন আগে থেকে খেলে কাজ হয়। ঘুরতে গিয়ে ভারী ব্যাগ নিতে গিয়ে মাংসপেশিতে টান ধরলে খেতে হবে রাসটক্স ২০০। পড়ে গিয়ে বা অন্য কোনো ভাবে আঘাতের জন্য নিতে হবে আর্নিকা-৩০, আর্নিকা ক্রিম। কেটে গেলে ক্যালেনডুলা ক্রিম। পাতলা পায়খানা হলে এলো- ৩। পেট ব্যথায় কোলোসিন্থ-২০০। এগুলো প্রয়োজনে ঘনঘন খেলে অ্যালোপ্যাথিক অ্যান্টিবায়োটিকের থেকেও তাড়াতাড়ি কাজ করে।

যেখানেই ঘুরতে যান মিনারেল ওয়াটার কিনে খাবেন অথবা জলে জিওলিন মিশিয়ে নেবেন। বাইরে গিয়ে জলবাহিত জীবাণুর কারণেই বেশিরভাগ লোকের পেট খারাপ বা ডায়রিয়া হয়। ঘুরতে গেলে মনে করে সঙ্গে কিছু নুন ও  চিনি বা ও.আর.এস, মুড়ি, মেরি বিস্কুট নিতে হয়। পেট খারাপ হলে নুন-চিনির জল বা ও.আর.এস জলে মিশিয়ে খেতে পারবেন। শুকনো মুড়ি বা মেরি বিস্কুট খেতে পারেন পথ্য হিসেবে।

কিছু জিনিস মনে রাখলে ভালো। সমুদ্রের ধারে মাছ ভাজা বা কাঁকড়া ভাজা খেলেই পেট খারাপ হতে পারে। পাহাড়ে ঝর্ণার জল খেলেই যেমন বমি-পায়খানা হতে পারে। যেখানে সেখানে মাংস খেলেই পেটে ইনফেকশন হবে। 

 অনেক জার্নি করে রিচ খাবার খেলে ইনডাইজেশন হবেই। অচেনা ওয়েদারে হঠাৎ করে স্নান করলে সর্দি-গর্মি হতে পারে। নিজেকে আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে তবেই স্নান করবেন। পাহাড়ে গিয়ে হঠাৎ করে মাথায় জল দেবেন না। স্নান করুন কিন্তু মাথায় জল দিলেই  মাথা ব্যথা করবে। একদিন পর গরম জলে মাথা ভিজিয়ে স্নান করবেন। বরফে বা ঠান্ডার জায়গায় গেলে কান ঢেকে রাখবেন তাহলে ঠান্ডা লাগবে না। ভুলেও বরফ কুড়িয়ে খাবেন না, সঙ্গে সঙ্গে গলা চোকড হয়ে যাবে। বরফ নিয়ে খেলার পর। যত তাড়াতড়ি পারবেন ভিজে জামাকাপড় ছেড়ে নেবেন।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Exit mobile version