Home মানসিক স্বাস্থ্য WAY TO SUCCESS: সফলতার চাবিকাঠি কি?

WAY TO SUCCESS: সফলতার চাবিকাঠি কি?

জীবনে সাফল্য পেতে হলে অনেক ছোটখাটো ব্যর্থতাকে সফলভাবে অতিক্রম করতে হয়। জীবন-যুদ্ধে সাফল্য মানে চরম যুদ্ধজয়কে বোঝায়, প্রত্যেক লড়াই জেতাকে বোঝায় না। প্রসঙ্গত বলি এক যুবকের কথা। যুবকটি একুশ বছর বয়সে একটা বিজনেস করে অসফল হয়েছিলেন। ২২ বছর বয়সে লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলির ভোটে দাঁড়িয়ে পরাজিত হয়েছিলেন। ২৪ বছর বয়সে আবার একটা বিজনেস করে লস খেয়েছিলেন। ২৬ বছর বয়সে প্রণয়িনীর মৃত্যু তাঁর জীবনকে হতাশাময় করে তুলেছিল। ২৭ বছর বয়সে তিনি স্নায়বিক রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। ৩৪ বছর বয়সে মার্কিন কংগ্রেসের ভোটে দাঁড়িয়ে আবারো পরাজয় বরণ করেছিলেন। ৪৭ বছর বয়সে ভাইস-প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ধরাশায়ী হয়েছিলেন। ৪৯ বছর বয়সে আবার একবার সিনেটের নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে যথারীতি পরাজিত হয়েছিলেন। সেই তিনিই ৫২ বছর বয়সে ইউনাইটেড স্টেটস-এর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন। হ্যাঁ, তিনিই। বলুনতো কে এই মহান ব্যক্তিত্ব ? – আমেরিকার জাতির জনক— আব্রাহাম লিঙ্কন। তাঁকে কি আপনি ব্যর্থ মানুষ বলবেন? এত পরাজয়ের গ্লানিতে তিনি তো হাল ছেড়ে দিতে পারতেন। তিনি মনে করতেন, ব্যর্থতা জীবনের এক-একটা বাঁক মাত্র, অন্ধগলি নয়। তাহলে আমরা দেখলাম, সফল লোকেরা অসামান্য কাজ করেন না, তাঁরা সামান্য কাজ অসামান্যভাবে করেন। 

আপনি একজন ক্রীড়াবিদ বা যেকোনো খেলার কোচকে জিজ্ঞাসা করুন— একটা ভালো টিম আর একটা খারাপ টিমের মধ্যে পার্থক্য কী? তিনি বলবেন, তাঁদের শারীরিক গঠন, নৈপুণ্য এবং প্রতিভাতে খুব বেশি পার্থক্য নেই। আপনি ভালো টিমের মধ্যে সবচেয়ে বড় যে গুণটা দেখবেন, সেটা হল তাঁদের আবেগ-গত উৎকর্ষতা— জয়ের উদ্দেশ্যে নিজেদের উৎসর্গ করা এবং অতিরিক্ত প্রচেষ্টা। কোনো একটা ক্লাসের দু’ জন ছাত্রের মধ্যে একজন ফেল করল, আর একজন পাশ করল। একই বই, একই সিলেবাস, একই টিচার, দুজনেই সারা বছর পড়াশোনা করেছে—তাহলে একজন ফেল করল কেন? সহজ উত্তর। অতিরিক্ত প্রচেষ্টার সাহায্যে পরীক্ষায় ভালো ফল করার জন্য সে নিজেকে উৎসর্গ করেনি।

পৃথিবীতে ভালো করবার ভার যখন কেউ নিজের উপর নিয়েছেন, চিরদিনই তাঁর শত্রু সংখ্যা বেড়েছে। সেই ভয়ে যারা পিছিয়ে দাঁড়ান, আপনিও তাদের দলে গিয়ে যদি মেশেন তাহলে চলবে কী করে? ডিমে তা দিলে তবে ডিম ফুটে বাচ্চা জন্ম নেয়। বাইরে থেকে ডিমের খোলা ঠুকরে ভিতরের জীবকে মুক্তি দিলে সে মুক্তি পায় না—মরে। আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়ে জীবনের চলার পথকে তাই মসৃণ করে নিতে হয়। 

একজন জীবন-বিজ্ঞানের শিক্ষক তাঁর ছাত্রদের শেখাচ্ছিলেন—শুঁয়োপোকা থেকে কীভাবে প্রজাপতিতে রূপান্তর ঘটে। শিক্ষক মহাশয় ছাত্রদের বললেন, আর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে গুটি ভেঙে প্রজাপতি বেরিয়ে আসবে। প্রজাপতিটা যখন বেরোনোর জন্য ছটফট করবে, তখন তোমরা কেউ ওকে বেরিয়ে আসার জন্য কোনোরকম সাহায্য করবে না। একথা বলে তিনি ক্লাস থেকে বেরিয়ে গেলেন। ছাত্ররা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল— কখন পোকাটি গুটির মধ্যে থেকে বেরিয়ে আসে। একটু পরেই কাঙ্ক্ষিত মুহূর্তটি এসে গেল। প্রজাপতিটা গুটির মধ্যে থেকে বেরিয়ে আসার জন্য প্রাণপণ সংগ্রাম করতে লাগল। কিন্তু কিছুতেই সে সফল হতে পারছিল না। কিছুক্ষণ দেখার পর ছাত্রদের মধ্যে একজনের খুব দয়া হল। সে ভাবল প্রজাপতিটাকে বেরিয়ে আসার জন্যে সে সাহায্য করবে। শিক্ষক মহাশয়ের আদেশকে অগ্রাহ্য করে দয়াপরবশ ছাত্রটি গুটির মুখটা একটু কেটে দিল।এবং সঙ্গে সঙ্গে রঙিন প্রজাপতিটা মাটিতে পড়ল কিন্তু একটু পরেই ওটা মরে গেল। শিক্ষক মহাশয় ফিরে এসে যা ঘটেছিল সব শুনলেন। তারপর তিনি ছাত্রদের বোঝালেন তোমাদের সাহায্যই প্রজাপতিটার মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াল। কেননা, গুটি থেকে বেরিয়ে আসার সংগ্রাম করার প্রক্রিয়াতেই প্রাকৃতিক নিয়মে প্রজাপতিটার গা থেকে লালা ঝরে যেত এবং ওটা ওড়ার জন্যে তার ডানায় শক্তি সঞ্চয় করত। এবং তারপর ‘ওটা বেরিয়ে এসে উড়ে চলে যেত। তোমরা অযাচিতভাবে প্রজাপতিটার উপকার করতে গিয়ে তার মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ালে। আমাদের নিজেদের জীবন সম্পর্কেও একই কথা প্রযোজ্য। জীবনের প্রত্যেকটা বাধা-বিপত্তিকে অতিক্রম করার জন্য নিজের মধ্যে চাই আত্মশক্তির উন্মোচন। হতাশ হয়ে বসে না থেকে প্রত্যেক মানুষেরই ভাগ্য পরীক্ষা করা উচিত।

প্রথমে যা করা দরকার বলে মনে করেন আপনি তাই করুন, তারপর যা করা সম্ভব তাই করুন— হঠাৎ দেখবেন আপনি অসাধ্য সাধন করে ফেলেছেন। আমি মনে করি- জীবনটাকে কেঁদে ভাসিয়ে দেওয়ার চেয়ে হেসে উড়িয়ে দেওয়াই ভালো। জীবনের সুস্পষ্টতাই জীবনের সফলতা। যাকে আমরা দুঃখের মধ্যে – দিয়ে কঠিনভাবে লাভ করি, হৃদয় তাকেই নিবিড়ভাবে, সমগ্রভাবে বরণ করে নেয়। কাঙ্ক্ষিত বস্তুকে পাবার জন্যে সবাই যে সাধনা করছে, আপনি তার থেকে একটু বেশি মনোনিবেশ করুন—সাফল্য আপনার হাতের মুঠোয়। নিজের অন্তর্নিহিত শক্তির ওপর বিশ্বাস করতে শিখুন। সাধারণ মানুষের সাথে পুণ্যাত্মাদের তফাৎ কি জানেন? গুনতিতে তাঁরা একটা-দুটো, আমরা

অনেক। মানুষের মন যা কল্পনা করে এবং বিশ্বাস করে, নিষ্ঠার সাথে সম্পাদিত সেই কর্মের দ্বারা সে তা অর্জন করে। নিজের ইচ্ছাশক্তি যত দৃঢ় হবে, আত্মশক্তির তত বিকাশ হবে। অপর ব্যক্তির কোলে পিঠে চড়ে অগ্রসর হওয়ার মধ্যে কোনো মাহাত্ম্য নেই, কারণ চলবার শক্তি লাভই যথার্থ লাভ, অগ্রসর হওয়া মাত্রই লাভ নয়। আত্মশক্তিতে বলীয়ান হলে তবেই মানুষের মধ্যে উদগ্র আকাঙ্ক্ষা জন্ম নেয়। আমরা জানি, পাওয়া জিনিসে বিতৃষ্ণা না জন্মালে নতুন করে আকাঙক্ষার জন্ম হয় না। কোনো উদ্দেশ্য পূরণের জন্য উদগ্র বাসনা জীবনে সফল হবার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা।

the life and times of the ancient greek philosopher socrates

একজন সক্রেটিসকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, জীবনে সফলতার রহস্য কী? সক্রেটিস তাকে বলেছিলেন— কাল সকালে তুমি নদীর পাড়ে এসো-তোমাকে সব বলব। পরদিন সকালে দু’জন নদীর ধার ধরে হাঁটছেন। হাঁটতে হাঁটতে সক্রেটিস ছেলেটিকে জলের মধ্যে নিয়ে গেলেন। ধীরে ধীরে দু’জনে নদীর আরও গভীরে নামতে লাগলেন। জল যখন দু’জনের গলা পর্যন্ত উঠে এল, আচমকা সক্রেটিস ছেলেটিকে জলের মধ্যে মাথা শুদ্ধ চেপে ধরলেন। ছেলেটি জল থেকে বেরিয়ে আসার জন্যে প্রাণপণে চেষ্টা করতে লাগল। সক্রেটিস ততোধিক জোরে তাকে চেপে ধরে রাখতে চাইলেন যতক্ষণ না ছেলেটির মুখ ফ্যাকাশে পাংশুটে হয়ে যায়। তারপর তিনি ছেলেটিকে ছেড়ে দিলেন। সে দম ফুরিয়ে হাঁপাতে থাকল এবং হাঁ করে জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগল। সক্রেটিস এবার ছেলেটিকে জিজ্ঞাসা করলেন—যখন তুমি জলের মধ্যে ছিলে, তখন তুমি সবচেয়ে বেশি কী পেতে চাইছিলে? ছেলেটি উত্তর দিল—’বাতাস’। সক্রেটিস বললেন- এটাই সাফল্যের গোপন চাবিকাঠি। 

যখন যা আপনার দরকার, সেটাকেই যদি আপনি সর্বক্ষণ আকাঙ্ক্ষা করেন, তবেই আপনি তা পাবেন। যাদের ভিতরে আগুন জ্বলছে আর যাদের শুধু ছাই জমা আছে, তাদের কর্মের ওজন এক তুলাদণ্ডে করা যায় না। মনে রাখবেন, সামান্য একটু আগুন যেমন প্রচন্ড উত্তাপ দিতে পারে না, দুর্বল আকাঙ্ক্ষা তেমনি কোনো বৃহত্তর সাফল্য এনে দিতে পারে না। আমি বলি কি, দীর্ঘকাল ধরে ধোঁয়া ছাড়ার চেয়ে মুহূর্তের জন্যে জ্বলে ওঠা ভালো। মুহুর্তং জ্বলিতং শ্রেয়ো ন তু ধুমায়িতং চিরম্।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Exit mobile version