Home মহিলাদের স্বাস্থ্য বন্ধ্যাত্ব থেকে মুক্তির উপায় | Infertility Treatment

বন্ধ্যাত্ব থেকে মুক্তির উপায় | Infertility Treatment

কোনোরকম গর্ভনিরোধক ব্যবহার না করা সত্ত্বেও এক বছর নিয়মিত সহবাসের পরেও কোনো বিবাহিত দম্পতির যদি সন্তান না আসে তবে ভাবা যেতে পারে তাদের বন্ধ্যাত্বজনিত সমস্যা আছে। এক্ষেত্রে কোনোরকম সময় নষ্ট না করে কোনো স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

প্রতিটি মাসিক চক্রের ক্ষেত্রে নারীর ডিম্বাশয় বা ওভারি থেকে একটি ডিম্বাণু বা ওভাম বেরিয়ে আসে। এটি এসে অবস্থান করে ‘অ্যামপ্লা’(Ampulla)তে। এবারে, পুরুষের স্পার্ম ‘ভ্যাজাইনা’ পথে ঢুকে একে নিষিক্ত করে।

এর পরে নিষিক্ত ডিম্বাণু আসে জরায়ুতে। এখানেই ভ্রূণটি বেড়ে ওঠে। এই প্রক্রিয়ার কোনও একটিতে বিভ্রাট ঘটলেই আসে বন্ধ্যাত্ব।

পরিসংখ্যানের মাপকাঠিতে বন্ধ্যাত্বের সমস্যায় শতকরা ৩৫-৪০ ভাগ ক্ষেত্রে দায়ী হয় স্বামী। এবং শতকরা ৩৫-৪০ ক্ষেত্রে সমস্যা পাওয়া যায় স্ত্রীর। আর ১৫- ২০ শতাংশ ক্ষেত্রে সমস্যা বা ত্রুটি যৌথ। অর্থাৎ দায় ভাগ স্বামী-স্ত্রী উভয়েরই সমান। আর এক ধরনের সমস্যা পাওয়া যায় সেক্ষেত্রে স্বামী বা স্ত্রী উভয়েই সমস্যাহীন তবু বন্ধ্যাত্ব। এরকম ঘটনা পাওয়া যায় শতকরা ১৫-২০ শতাংশ দম্পতির মধ্যে ৷

Table of Contents

পুরুষের বন্ধ্যাত্বের কারণ | Causes of Male Infertility

শুক্রাণুর স্বল্পতা | Oligospermia or Azoospermia :

মূলত শুক্রাণুর সংখ্যার স্বল্পতা ও তাদের প্রয়োজনীয় গতিশীলতার অভাব বন্ধ্যত্বের জন্য দায়ী থাকে। সাধারণভাবে প্রতি মিলিলিটার বীর্যে ২ কোটি শুক্রাণু থাকে এবং গতিশীল হয় ৫০-৬০ শতাংশ। বীর্যে যখন শুক্রাণুর সংখ্যা কম থাকে তখন স্বাভাবিক উপায়ে সন্তান সৃষ্টি সম্ভব হয় না । মাম্পস, টাইফয়েড, আর্থাইটিস প্রভৃতি রোগে শুক্রাশয় সংক্রামিত হলে, বীর্যে শুক্রাণুর সন্ধান পাওয়া যায় না। তবে বীর্যে শুক্রাণু অনুপস্থিত থাকলেও শুক্রাশয়ে কিছু শুক্রাণু থাকা কিন্তু অসম্ভব নয়। শুক্রাশয় থেকে সরাসরি শুক্রাণু সংগ্রহ করে ইকসি পদ্ধতির মাধ্যমে গর্ভসঞ্চার করা হয়। প্রশ্ন হল এইসব সমস্যা কেন আসে? দৈনন্দিন জীবনচর্চায় অসংযম যেমন ড্রাগের নেশা, অতিরিক্ত ধূমপান, মদ্যপান ইত্যাদি নানা কারণেই শুক্রাণুর সংখ্যা কমে যেতে পারে। আবার কিছু রোগের ফলেও (যেমন অর্কাইটিস, ডায়াবেটিস, মাম্পস, হাইড্রোসিল ইত্যাদি) কমে যায় শুক্রাণুর সংখ্যা। অতিরিক্ত গরমে কাজ করলেও এই সমস্যা আসতে পারে। অবশ্য বীর্যে শুক্রাণুর সংখ্যা কম থাকলেও আকৃতি ও গতিশীলতা ঠিক থাকলে চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাহায্য নিয়ে বন্ধ্যাত্ব দূর করা তুলনামূলকভাবে সহজ। এতেও যদি সমস্যার সমাধান সম্ভব না হয় তবে নিতে হয় কৃত্রিম উপায়ের সাহায্য।

ইনফেকশন | Infected Testis :

মাম্পস, অর্কাইটিস, টাইফয়েড প্রভৃতি রোগের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় শুক্রাশয় ফুলে যায়। এমনকী ক্ষতিগ্রস্ত হতেও পারে। সেক্ষেত্রে সৃষ্টি হয় জন্মদানের অক্ষমতা।

আনডিসেনডেড টেসটিস | Undescended Testis :

যদি কোনো নবজাতকের এক বছরের মধ্যেও শুক্রাশয় স্বাভাবিকভাবে দেখা না যায়, তবে সেই শিশুর থাকে জন্মদানে অক্ষমতার সম্ভাবনা। তাই কোনো নবজাতকের শুক্রাশয় যদি স্বাভাবিকভাবে বাইরে না থাকে তবে তাড়াতাড়ি অপারেশন করিয়ে নেওয়া প্রয়োজন। এই ব্যাপারে কখনোই অবহেলা করা উচিত নয়। কারণ অবহেলা সন্তানের ভবিষ্যৎ জীবনে বন্ধ্যাত্বের অভিশাপ ডেকে আনবে।

ডাক্ট ব্লকেজ | Duct Blockage :

অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায় শুক্রাশয়ে শুক্র উৎপাদিত হলেও ডাক্ট ব্লকেজ ( শুক্রাশয়-জননেন্দ্রিয় পথে বাধা ) থাকার জন্য নিষ্কাশিত হতে পারে না। এর জন্যও জন্মদানে অনেকেই অক্ষম হয়ে পড়েন। জন্মদানের ক্ষেত্রে এটাও একটা বিরাট সমস্যা। তবে শল্য চিকিৎসকের সাহায্যে এই সমস্যা থেকে মুক্তি সম্ভব। কোনও কারণে যদি সাফল্য না আসে, তখন সন্তান উৎপাদনে অত্যাধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাহায্য নিতেই হয়। পুরুষদের যে সব শারীরিক সমস্যা পরবর্তী জীবনে বন্ধ্যাত্ব আনতে পারে :

  • আনডিসেনডেড টেসটিস। অর্থাৎ অন্ডথলিতে অন্ডকোষ যদি না নামে।
  • ১৫-১৬ বছর বয়স হয়ে যাওয়ার পরও যাদের টেসটিসের সাইজ ছোট এবং বাড়ছে না।
  • পুরুষাঙ্গ বৃদ্ধির লক্ষণ নেই।
  •  বয়স ২০, কিন্তু দাড়ি গোঁফ নেই কিংবা গালের এদিক ওদিকে সামান্য খোঁচা দাড়ি।
  • টেসটিসের পুরনো চোট। খেলতে গিয়ে বা অন্য কোনো ভাবে লাগা টেসটিসে চোট। যা ওষুধ খেয়ে অনেক ঝামেলা করেই সারাতে হয়েছে। এসবক্ষেত্রে ভবিষ্যতে শুক্রাণু উৎপাদনে গন্ডগোল হতে পারে।
  • মাম্পস বা জননাঙ্গে টিউবারকিউলোসিস হলে বন্ধ্যাত্বের আশঙ্কা থাকে।

এইসব সমস্যা কোনও সময় যাদের ছিল তারা বিয়ের আগে কোনো চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নিতে পারেন।

Infertility Treatment

মহিলাদের বন্ধ্যাত্বের কারণ | Causes of Female Infertility

পেলভিক ইনফেকশন | Pelvic Inflammatory Disease: 

গনোরিয়া, সিফিলিস প্রভৃতি যৌনরোগ বা যক্ষ্মা ইত্যাদির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ফলে পেলভিক ইনফেকশন বা শ্রোণী-সংক্রমণ হতে পারে। এছাড়া পেলভিক বা শ্রোণী সরাসরি কোনও রোগে আক্রান্ত হয়েও সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। পেলভিকে যক্ষ্মার ফলে শতকরা ৫ জন নারী সন্তান ধারণের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। সমস্যার কথা হল এই ধরনের যক্ষ্মার জন্য নারী-শরীরে কোনো কষ্ট হয় না। জ্বরের কোনো প্রকাশ দেখা যায় না। তবে ডাক্তারি পরীক্ষায় এই রোগ ধরা পড়ে। পেলভিক ইনফেকশন অধিকাংশ সময়ই ফ্যালোপিয়ান টিউব বা ডিম্বনালীকে ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ফলে নেমে আসে বন্ধ্যাত্বের অভিশাপ ।

এন্ডোমেট্রিওসিস | Endometriosis:

এই সমস্যার জন্য মাসিকের সময় প্রচণ্ড ব্যথা হয়, জরায়ুর আকৃতি বা নরমাল লাইনিং-এর সমস্যা এর জন্য দায়ী। আমাদের দেশে যদিও এই রোগের আক্রমণের হার পাশ্চাত্যের তুলনায় কম। শতকরা ২০ জন নারী স্রেফ এই রোগের ফলেই বন্ধ্যাত্বের শিকার হন।

পলিসিস্টিক ওভারিয়ান ডিজিজ | Polycystic Ovarian Disease:

ডিম্বাশয়ে অনেক সময় ছোট ছোট সিস্ট বা পুঁজ-কোষ দেখা যায়। ফলে মাসিক অনিয়মিত হয়ে পড়ে। ডিম্বাণু তৈরি বা নিঃসরণের ক্ষেত্রে ব্যাঘাত ঘটে। এই রোগের সঠিক কারণ এখনও জানা যায়নি, অবশ্য বহু চিকিৎসক মেদবৃদ্ধিকে কারণ মনে করেন। তাঁদের মতে, এর ফলে ডিম্বাণু তৈরিতে ব্যাঘাত ঘটে। এক্ষেত্রে মেদ ঝরাতে পারলে বা স্বাভাবিক ওজন ধরে রাখতে পারলেই এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ওষুধ বা সার্জারির প্রয়োজন হয়।

যোনির সমস্যা | Vaginal Dryness:

বন্ধ্যাত্বের অন্যতম কারণ। শতকরা ৩ জন নারীর মধ্যে এই কারণ প্রবল। সহবাসের সময় এক ধরনের তরল পদার্থ জরায়ু থেকে নিঃসৃত হয়ে শুক্রকীটের জরায়ুতে যাবার পথ সহজ করে দেয়। তরল পদার্থটির অভাবজনিত কারণ নারীকে সন্তান-সুখ থেকে বঞ্চিত করতে পারে। যোনির এই ত্রুটির চিকিৎসা ওষুধের সাহায্যে করা যেতে পারে।

শল্যচিকিৎসকের অসাবধানতা :

এ ধরনের ঘটনা কমই ঘটে। তবে ঘটা একেবারে অসম্ভব নয়। অসাবধানতায় শল্যচিকিৎসার সময় (যেমন অ্যাপেনডিক্স অপারেশনের সময়) যদি ডিম্বনালী কেটে যায় বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়— সেক্ষেত্রে বন্ধ্যাত্বের সম্ভাবনা যথেষ্ট।

জরায়ুতে টিউমার | Uterus Tumor:

নারীর বন্ধ্যাত্বের আর একটি বড় কারণ টিউমার। আমাদের দেশে এক সমীক্ষায় দেখা গেছে শতকরা ৫ ভাগ মহিলার বন্ধ্যাত্বের পেছনে থাকে জরায়ুর টিউমার। অ্যাডেনোমায়োসিস ( Adenomyosis )ও ফাইব্রয়েড ( Fibroids )— এই দুই ধরনের টিউমার হতে পারে। যথাসময়ে চিকিৎসা করা গেলে টিউমার সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান সম্ভব।

অসময়ে রজোনিবৃত্তি | Menopause:

ঋতু পর্বটি নারীর জীবনের পরিপূর্ণতার সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য শর্ত। এই পর্বের ওপরেই নির্ভর করে নারীর জন্মদানের ক্ষমতা। দেখা গেছে, বেশ কিছু মহিলার সেকেন্ডারি অ্যামেনোরিয়া হয় অর্থাৎ নির্দিষ্ট বয়সে পৌঁছবার আগেই হঠাৎ ঋতু বন্ধ হয়ে যায়। এরকম ঘটনায় বন্ধ্যাত্বের ব্যাপার আসে। মুশকিল হল এ জাতীয় সমস্যায় চিকিৎসা করেও তেমন উল্লেখযোগ্য ফল পাওয়া যায় না। এই সমস্যায় পীড়িত নারীর মা হওয়ার উপায় অন্য মহিলার ডিম্বাণুর সাহায্য নেওয়া।

জন্মগত দোষত্রুটি | Birth Defects :

শুধু মহিলারাই নন, অনেক ক্ষেত্রে পুরুষরাও জন্মগত কিছু দোষ-ত্রুটি নিয়ে জন্মান। জন্মগত দোষের কারণে অনেক মহিলারই একটির বদলে দুটি জরায়ু থাকে। এছাড়াও আরো কিছু গঠনগত ত্রুটি নিয়ে কিছু মহিলা আসেন। শতকরা ২ জন এই সমস্যা জনিত বন্ধ্যাত্বের শিকার।

অক্ষত সতীচ্ছদ | Unbroken Hymen:

এমনও লক্ষ্য করা যায় যে অক্ষত সতীচ্ছদের জন্য অনেক সময় সন্তানধারণে অক্ষম হয়ে পড়েন কিছু মহিলা। সতীচ্ছদ বা হাইমেন অক্ষত থাকার বিভিন্ন কারণ আছে। যেমন-

  • কিছু নারীর যোনিপথ খুব ছোট হওয়ার জন্য সঙ্গম ঠিকঠাক না হওয়ায় সতীচ্ছদ অক্ষত থাকে। হেমাটোকোলাপস বা ঋতুস্রাবের জন্য সতীচ্ছদ ( Hymen ) বন্ধ থাকায় স্রাব বাইরে না বেরিয়ে যোনিতে জমতে থাকে। 
  • শারীরিক মিলনের সঠিক উপায় বা জ্ঞান স্বামী-স্ত্রীর না থাকার জন্যও অনেকের সতীচ্ছদ ( Hymen ) অক্ষত থাকে। সতীচ্ছদ ( Hymen ) অক্ষত থাকলেও বন্ধ্যাত্ব আসে। অনেকের দেখা গেছে, সতীচ্ছদাটি বেশ মোটা। শল্য চিকিৎসকের সাহায্যে অবশ্য এর থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। সঙ্গমের সঠিক উপায় জানার জন্য বা অন্য কোনো সমস্যা থাকলে নিঃসঙ্কোচে চিকিৎসকের পরামর্শ করা উচিত।

বিয়ের আগেব্দই জানার কথা

  • বিয়ের আগে থেকেই অনেকের মাসিকের গণ্ডগোল দেখা যায়, কারোর দু’মাস অন্তর বা দেড় মাস অন্তর একবার মাসিক হয়। বছরে একবার আধবার এ ধরনের সমস্যা আসা স্বাভাবিক। কিন্তু যারা ধারাবাহিক ভাবে এ ধরনের সমস্যায় আক্রান্ত হন কিংবা আবার যাদের মাসে দু’বার মাসিক হয় তাদের সকলের ক্ষেত্রেই এই সমস্যাগুলি হরমোনের গণ্ডগোল বা ডিম্বাণু উৎপাদনের গণ্ডগোলকেই নির্দেশ করে।
  • বিয়ের আগে শরীরের ওজন স্বাভাবিকের থেকে অত্যন্ত বেশি হওয়া, অবাঞ্ছিত স্থানে লোম দেখা দেওয়াও সমস্যার ইঙ্গিত দেয়। তাই এ সব ক্ষেত্রে উপেক্ষা না করে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত কাজ।
  • মাসিকের সময় পেটে অল্প ব্যথা, পেট ভার, কোমর ব্যথা, পায়ের পাতা ভার ইত্যাদি লক্ষণগুলি কিন্তু ভালো। যা নির্দেশ করে ডিম্বাণু সঠিকভাবে তৈরি হচ্ছে। কিন্তু মাসিকের প্রথম দিনেই পেটে অসহ্য ব্যথা, দ্বিতীয় দিনে আরো বেশি, তৃতীয় দিনে তার থেকে বেশি, মারাত্মক ব্যথায় ছটফট করা এন্ডোমেট্রিওসিস ( Endometriosis ) নামক রোগের নির্দেশক হতে পারে।

বন্ধ্যাত্বের আধুনিক চিকিৎসা | Infertility Treatment

দোষ রোগ নয়, শারীরিক ত্রুটিকে মেনে নেওয়া, তারজন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করার ধারণা কিন্তু ধীরে ধীরে গড়ে উঠছে। অশিক্ষিত মানুষদের মধ্যে না হলেও শহুরে শিক্ষিত সম্প্রদায়ের মধ্যে ছুৎমার্গতা কাটছে। বেশি সংখ্যায় চিকিৎসকের কাছে আসছেন সন্তানহীন দম্পতি।

বন্ধ্যাত্ব এখন অনেকাংশই নিয়ন্ত্রণে। প্রথাগত চিকিৎসা ছাড়াও বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসায় কয়েকটি আধুনিক পদ্ধতিরও সাহায্য নেওয়া হয়। যেমন হরমোন প্রয়োগ, আই. ইউ. আই. ( IUI- intrauterine insemination ) ইত্যাদি। তাতেও ফল না পাওয়া গেলে আই.ভি.এফ ( IVF- In vitro fertilization ), ইকসি ( ICSI- Intracytoplasmic sperm injection ), গিফট্ ( GIFT- Gamete intrafallopian transfer ) ইত্যাদির মতো অত্যাধুনিক চিকিৎসার সাহায্যই নেওয়া যেতে পারে। কিছুটা ব্যয়বহুল ঠিকই। কিন্তু বন্ধ্যাত্বের অভিশাপ … শেষ – এটা কিন্তু দম্পতিদের কাছে অবশ্যই বিরাট খবর।

চিকিৎসায় বয়সের গুরুত্ব

বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসায় দম্পতির বয়স অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত মহিলাদের বয়স। কারণ মহিলার বয়সের ওপরেই চিকিৎসার সাফল্য-অসাফল্য অনেকটাই নির্ভর করে।

২৫-২৬ বছরের আশপাশে কিংবা ৩০-এর মধ্যে থাকলে চিকিৎসায় সাফল্যের সম্ভাবনা ভালোই থাকে। কোনো মহিলা ৩৮ বছরের পর এলে সাফল্যের সম্ভাবনাও অনেকটাই কমে আসে। প্রসঙ্গত, ‘টেস্টটিউব বেবি’র ক্ষেত্রে ৩০ বছরের আগে এলে সাফল্যের হার ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ। বয়স যদি ৩৮ থেকে ৪০-এর মধ্যে হয় তবে সাফল্যের সম্ভাবনা মাত্র ২৫ শতাংশ।

হ্যাঁ, স্ত্রীর যদি ওভুলিউশন বন্ধ হয়ে যায়, ডিম্বাশয় শুকিয়ে যায়, নির্দিষ্ট বয়সের আগেই মাসিক বন্ধ হয়ে যায়, স্বামীর ক্রোমোজোম বা অন্য কোনো ত্রুটির কারণে একটিও শুক্রাণু না পাওয়া যায় তখন এই সন্তানের আশা দুরাশাই। অবশ্য অন্যজনের ডিম্বাণু বা শুক্রাণুর সাহায্য নিয়ে সন্তান ধারণ সম্ভবপর।

মানসিক সমস্যা

নারী-পুরুষের মিলন অতি সাধারণ এবং স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু এই ইন্টারকোর্স, সম্বন্ধে অনেকের মনে অহেতুক আতঙ্ক থাকে। যা সৃষ্টি করে নানারকম জটিলতা। যেমন মেয়েদের অনেকের ধারণা থাকে ব্যাপারটা খুব যন্ত্রণাদায়ক অথবা কারো যদি আগের অভিজ্ঞতা সত্যি সত্যিই যন্ত্রণাদায়ক হয়, তবে একটা অদ্ভুত অবস্থা তৈরি হয়। মেয়েটির ‘লিভেটার অ্যানি’ ও ‘অ্যাভকটর ফিমোরিস’ ও অন্যান্য প্যারাভ্যাজাইনাল পেশির সঙ্কোচন ঘটে এমন জটিল পরিস্থিতি হয় স্বাভাবিক ইন্টারকোর্স অসম্ভব হয়ে পড়ে—চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে ভ্যাজাইনিসমাস ( Vaginismus )।

পুরুষের বহুগামিতা অনেক সময় তার মধ্যে বিবেক দংশন জাগায়, ফলে স্ত্রীর সঙ্গে স্বাভাবিক মিলনের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। আবার কখনও দেখা যায় ‘ল’ বাবু শুধু মাত্র ‘স’ দেবীর বেলাতেই মিলিত হওয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন, অন্যান্যদের ক্ষেত্রে দিব্যি স্বাভাবিক, আবার এর ঠিক উল্টোটাও দেখা যায়। স্বামী-স্ত্রীর সহজ স্বাভাবিক সম্পর্ক, পারস্পরিক সহানুভূতি, বোঝাপড়া সমস্যার সমাধানে অনেকাংশে প্রয়োজন

আর চিকিৎসকের সহানুভূতি তো বটেই। কারণ এই ধরনের সমস্যায় আক্রান্ত দম্পতিরা এক ধরনের হীনম্মন্যতায় ভোগেন। মাতৃত্বে নারীত্বের পূর্ণতা— মেয়েদের জীবন দর্শনটাই এখনো এরকম হওয়ার জন্য অনেক ক্ষেত্রেই এরা মানসিক ভাবেও খানিকটা পিছিয়ে থাকেন। চিকিৎসার ক্ষেত্রে তাই সব সময় মনে রাখা উচিত অনেক মানসিক যন্ত্রণা নিয়ে এরা এসেছেন। সহানুভূতির ঘাটতি যেন না পড়ে।

আধুনিক চিকিৎসা সম্পর্কে কয়েকটি ভ্রান্ত ধারণা

  • বন্ধ্যাত্ব কোনো অভিশাপ নয়। স্বামী বা স্ত্রীর কতকগুলি শারীরিক ত্রুটি বা রোগের বহিঃপ্রকাশ। রোগ যেমন চিকিৎসায় নিরসন সম্ভব, বন্ধ্যাত্বরও তেমনি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিরসন সম্ভব।
  • এই পদ্ধতিতে সন্তানদের জন্ম হয় স্বাভাবিক পদ্ধতিতেই। অনেক ক্ষেত্রে সিজারও করতে হয় না। নর্মাল ডেলিভারি হয়। ‘টেস্ট টিউব বেবি কোনো টিউবে জন্মায় না। স্বাভাবিক ভাবে মায়ের গর্ভেই বেড়ে ওঠে। আধুনিক চিকিৎসাপদ্ধতিতে জন্মানো সন্তানটি সম্পূর্ণভাবেই আপনাদের। কারোর অগোচরে তৃতীয় ব্যক্তির শুক্রাণু বা ডিম্বাণু ব্যবহার করা হয় না।
  • যে সব পদ্ধতিগুলোর আলোচনা করা হয়েছে এগুলি কোনো ম্যাজিক দেখায় না। যে কোনো রোগের চিকিৎসায় যে সময় লাগে তেমনি এর চিকিৎসায়ও সময় হাতে নিয়ে আসুন। ‘দু’মাস দেখব’ এরকম মানসিকতা নিয়ে আসবেন না। এতে আশাভঙ্গ ঘটে আপনাদেরও। কারণ এসব পদ্ধতিতে ফল পেতে হলে ক্রমাগত চিকিৎসার প্রয়োজন।

বন্ধ্যাকরণের পর সন্তানধারণ সম্ভব

অনেকেই একটি বা দুটি সন্তানের জন্মের পর বন্ধ্যাকরণ করিয়ে নেন। কোনো কারণে বাচ্ছা মারা গেলে বা অন্য কোনো কারণে আবার কেউ মা হতে চাইলে, সেক্ষেত্রে দেখা হয় ফ্যালোপিয়ান টিউবটি কতটা বাদ দেওয়া হয়েছে। যদি ভালো কোনো জায়গায় অপারেশন করা হয় তবে টিউবটি সামান্য একটুই বাদ দেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে আবার অপারেশন করে টিউব দুটিকে জুড়ে দিতে পারলে স্বাভাবিক ভাবেই গর্ভবর্তী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তা না হলে আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির সাহায্যে নিয়ে সন্তানধারণ সম্ভব।

  • প্রথম সন্তান কখনো কোনো কারণে নষ্ট করা উচিত নয়। এতে পরবর্তীকালে বন্ধ্যাত্বের সমস্যা আসতে পারে।
  • তাবিজ, কবজ, মাদুলির পেছনে সময় নষ্ট না করে  বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির সাহায্য নিন। চিকিৎসা শুরু করার জন্য অযথা সময় নষ্ট করবেন না। মনে রাখবেন চিকিৎসার সাফল্য বহুলাংশে নির্ভর করে স্ত্রীর বয়সের ওপর এবং পর্যাপ্ত সময়, ধৈর্য প্রভৃতির উপর। মনে রাখবেন, নিরাময় শুধুমাত্র চিকিৎসার মাধ্যমেই সম্ভব।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Exit mobile version