Home পারম্পরিক ঔষধি অম্বল-গলা বুক জ্বালা ? অ্যাসিড রিফ্লাক্স নয় তো । What are the...

অম্বল-গলা বুক জ্বালা ? অ্যাসিড রিফ্লাক্স নয় তো । What are the symptoms of Acid Reflux

পেটের অ্যাসিড গলায় চলে এলে খাদ্য গ্রহণের পর তা খাদ্যনালীর ভিতর দিয়ে। পাকস্থলিতে এসে পৌঁছয়। খাদ্যনালীর নীচের অংশে থাকে বিশেষ ধরনের একটি মাংসপিন্ড। স্বাভাবিক অবস্থায় এটি ভালভ বা গেটের মতো, প্রয়োজনে উন্মুক্ত হয়ে বা বন্ধ হয়ে খাদ্যদ্রব্যকে পাকস্থলিতে পৌঁছতে সাহায্য করে। সেই সাথে পাকস্থলির ভিতরের খাদ্যবস্তুকে পুনরায় খাদ্যনালীতে ফিরে আসতে বাধা দেয়। খাদ্যদ্রব্য হজমের জন্য পাকস্থলিতে অ্যাসিডের নিঃসরণ ঘটে। কিন্তু কখনো কখনো কোনো কারণে এই ভালভটি দুর্বল বা কার্যক্ষম হারালে এই অ্যাসিড পশ্চাৎদিকে অর্থাৎ গলা বা খাদ্যনালীর (ইসোফেগাস) দিকে নির্গত হয়। এটাকেই বলে ‘অ্যাসিড রিফ্লাক্স’ বা জি.ই.আর.ডি। যেহেতু এই অ্যাসিড খাদ্যনালীর প্রভূত ক্ষতি সাধন করতে পারে। তাই সঠিক সময় উপযুক্ত চিকিৎসা করা না হলে রোগটির মাত্রা এবং এ সংক্রান্ত জটিলতা বৃদ্ধি পেতে পারে এবং তা দীর্ঘস্থায়ী রূপ লাভ করতে পারে। এমনকী তীব্রতা বৃদ্ধির কারণে কোনও কোনও ক্ষেত্রে খাদ্যনালীর প্রচন্ড ক্ষতি সাধিত হতে পারে। তীব্র প্রদাহ দেখা দিতে পারে। খাদ্যনালী অত্যন্ত সরু হয়ে যেতে পারে। দাঁতের বহিরাবরণ, গলার কোষকলা এবং শ্বাসনালীর বায়ু চলাচলের পথ ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়তে পারে।

রোগের প্রধান লক্ষণ খাদ্যনালীর বুক ও গলায় জ্বালা অনুভূত হওয়া যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বেশ কষ্টদায়ক হয়ে ওঠে। এ রোগের অন্যান্য লক্ষণগুলো হল, দীর্ঘস্থায়ী কাশি, গলার ক্ষত, পাকস্থলি ভার হয়ে থাকা, খাওয়ার পর বমিভাব এবং পেটের ওপরের অংশে ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভূত হওয়া, খাদ্য গ্রহণের পর কখনো কখনো তরল ঝাঁঝালো কিছু পদার্থ উপরের দিকে উঠে আসা ইত্যাদি। 

রোগের লক্ষণ এবং তীব্রতা বিভিন্ন মানুষের ক্ষেত্রে বিভিন্ন হয়ে থাকে। একই সময়ে বেশি খাদ্য ও ভারী খাদ্যগ্রহণ, মশলাযুক্ত খাদ্য বা চর্বিজাতীয় খাদ্যগ্রহণ, খাওয়ার পরপরই চিৎ হয়ে শুয়ে থাকা, ভারী জিনিস তোলা বা ঝুঁকে কোনও কাজ করা ইত্যাদি ক্ষেত্রে এই অসুখের লক্ষণ বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। অনেকের ক্ষেত্রে রাতে শোয়ার পর এই রোগের লক্ষণগুলো বেশি প্রকাশ পায় এবং কষ্টের পরিমাণ বেড়ে যায়। রোগটি নির্ণয়ের জন্য বেরিয়াম নামক পদার্থ খাওয়ানোর পর এক্স-রে করা হয়। খাদ্যনালীতে গঠনগত কোনও অস্বাভাবিকতা যেমন সরু হয়ে যাওয়া, প্রদাহের কারণে সৃষ্ট কোনও ক্ষতের উপস্থিতি, পাকস্থলির দিকে খাদ্যনালীর ভালভের মুখ স্বাভাবিকের তুলনায় বড় হওয়া ইত্যাদি যেসব ত্রুটির কারণে অ্যাসিড উপরের দিকে উঠে আসতে পারে সেসব ত্রুটি এই পদ্ধতিতে নির্ণয় করা সম্ভব হয়। জি.ই.আর.ডি নির্ণয়ের অপর একটি পদ্ধতি এন্ডোস্কোপি। এর মাধ্যমে একজন চিকিৎসক রোগের অবস্থা সরাসরি পর্যবেক্ষণ করতে পারেন।

এছাড়াও পরবর্তী সময়ে আরও বিশ্লেষণের জন্য ছবিও তুলে রাখা সম্ভব হয়। বেরিয়াম এক্স- রের চাইতে এই পরীক্ষাটি অধিক ফলপ্রসূ কিন্তু কিছুটা ব্যয়বহুল। পি.এইচ মনিটরিংয়ের মাধ্যমেও খাদ্যনালীর ত্রুটি নির্ণয় করার চেষ্টা করা হয়। প্লাস্টিকের তৈরি অত্যন্ত সরু একটি নল (ক্যাথেটার) নাকের ছিদ্র পথে খাদ্যনালী পর্যন্ত ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এই নলের শেষপ্রান্তে থাকে একটি সূচক যা ওপরের দিকে উঠে আসা অ্যাসিডকে সনাক্ত করে এবং ২৪ ঘণ্টা যাবৎ এ সংক্রান্ত তথ্য একটি ধারকের সাহায্যে ধারণ করে কম্পিউটারের সাহায্যে বিশ্লেষণ করে রোগনির্ণয় করে। দীর্ঘদিন ধরে অ্যাসিড রিফ্লাক্সে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে কখনো কখনো ব্যারেটস ইসোফেগাসে আক্রান্ত হয়ে পড়তে দেখা যায়। ব্যারেটস ইসোফেগাস বলতে খাদ্যনালীর জটিল এক অবস্থাকে বোঝায়। এক্ষেত্রে খাদ্যনালীর অভ্যন্তরস্থ কোষকলার মধ্যে অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখা দেয় যা পরবর্তীতে ক্যানসারে রূপান্তরিত হয়ে উঠতে পারে। এই অবস্থ পর্যবেক্ষণের জন্য এন্ডোস্কোপি করার সময় কোষকলার নমুনা সংগ্রহ করে বায়োপসি করা হয়। তবে ক্যানসারের পূর্বাবস্থা থেকে কোষকলাকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার কোনো পদ্ধতি বা চিকিৎসা আধুনিক চিকিৎসায় আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি।

symptoms of Acid Reflux

এক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা বিশেষ ফলপ্রসূ। কারণ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলে এই ক্ষতি সারিয়ে তোলা সম্ভব ৷

অ্যান্টাসিড খাদ্যনালীর দিকে চলে আসা অ্যাসিডকে নিষ্ক্রিয় করে তোলে। কিন্তু বেশি বেশি অ্যান্টাসিড খাওয়া ভালো নয়। তাতে হাড়ের ঘনত্ব কমে যায়। চিকিৎসার পাশাপাশি জীবনযাত্রার কিছুটা পরিবর্তন এই অসুখের কষ্টকর লক্ষণসমূহ থেকে অনেকাংশে পরিত্রাণ দিতে পারে। এই অসুখে আক্রান্তদের বাইরের খাদ্য পরিহার করে যথাসম্ভব ঘরে তৈরি খাদ্য গ্রহণে অভ্যস্ত হতে হবে এবং ওজন হ্রাস করে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সচেষ্ট হতে হবে। সহজে হজম করা যায় এমন খাদ্য গ্রহণ, সাইট্রাস অ্যাসিড যুক্ত খাদ্য যেমন টমেটো, কমলালেব, লেবু ইত্যাদি পরিহার, ক্যাফিনযুক্ত খাদ্য ও পানীয় যেমন মদ, চা, কফি, সোডা, চকলেট গ্রহণ থেকে বিরত থাকা, তাজা মাংসের পরিবর্তে সেঁকা অথবা ঝলসানো মাংস খাওয়া, কম চর্বিযুক্ত এবং কম মশলাযুক্ত খাদ্য গ্রহণে সচেষ্ট হতে হবে। এছাড়া যে ধরনের খাদ্য গ্রহণে অস্বস্তি বেড়ে যায় খেয়াল করে সেসব খাদ্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে। একেবারে পেট ভরে না খেয়ে অল্প অল্প করে বারবার খাদ্য গ্রহণ এই অসুখে আক্রান্তদের কষ্ট লাঘবে কিছুটা সহায়ক হয়ে থাকে। পাকস্থলিতে চাপ পড়ে এমন ব্যায়াম এই অবস্থায় লক্ষণগুলো বাড়িয়ে তুলতে পারে। তাই একবারে খালি পেটে অথবা খাওয়ার পরপরই কোনও ব্যায়াম করা উচিত নয়। 

ঘুমের গন্ডগোলের সাথে এই রোগের যথেষ্ট সম্পর্ক আছে বলে জানা গেছে। অ্যাসিড রিফ্লাক্স আক্রান্ত রোগীর রাত্রিকালীন ঘুমের সমস্যা যেমন নাক ডাকা, কাশি, গলার অস্বস্তি ইত্যাদি কষ্টকর সমস্যায় আক্রান্ত হতে দেখা যায়। ঘুমের সময় বালিশের সাহায্যে মাথা অন্তত ছয় ইঞ্চি উঁচু অবস্থানে রাখলে এবং ঘুমের অন্তত তিন ঘণ্টা আগে আহার গ্রহণের পর্ব শেষ করলে এসব লক্ষণ থেকে কিছুটা পরিত্রাণ পাওয়া যায়। 

দিনের যেকোনো সময়েই অ্যাসিড রিফ্লাক্সের লক্ষণগুলোর প্রকাশ ঘটতে পারে। তাই সর্বদা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেতে হবে। কারণ লক্ষণ এবং মায়াজম মিলিয়ে ওষুধ নির্বাচন করলে উপকার হবে। সচরাচর যে সমস্ত ওষুধগুলি ব্যবহৃত হয় সেগুলি হল- নাক্সভূমিকা, পালসেটিলা, ন্যাট্রাম-আর্স, বল্ডো, চেলিডোনিয়াম ওরনিথগেলাম, কার্বোভেজ, রোবিনিয়া, ফ্যালটাওরি প্রভৃতি। তবে কখনোই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাওয়া উচিত নয়। কারণ চিকিৎসক তাঁর অভিজ্ঞতার আলোকে ওষুধের শক্তি নির্বাচন করে থাকেন। যা চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Exit mobile version