মনে পড়ে সেদিনের কথা, যখন বারাণসী থেকে এসে বড়বাজারের একটা ছোট্ট ঘরে প্রবীণ ভেষজ বিজ্ঞানী প্রফেসর শিবা শঙ্কর ত্রিবেদিরা দুই ভাই, প্রাচীন আয়ুর্বেদিক মতে বিভিন্ন মানবীয় ভোজ্য পদার্থের পোষক শক্তি বা নিউট্রিয়েন্ট এনার্জি সহযোগে ক্যানসার নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছিলেন। বিভিন্ন মানবীয় ভোজ্য পদার্থ থেকে সংগ্রহ করা পোষক শক্তিই তাদের চিকিৎসার মূল উপাদান। তাদের মতে এই পোশক শক্তিই রোগীর অনিয়মিত মেটাবলিজমকে নিয়মিত ও সশক্ত করে তুলতে সাহায্য করে এবং তার জীবনী শক্তিকে বাড়িয়ে দেয়।
গবেষণার পাশাপাশি ত্রিবেদিজিরা কখনও সখনও রোগীদের ওষুধও দিতেন। লোক সংখ্যা তখন তিন। একজন ধোপা কাম রাঁধুনি কাম বাজার সরকার, দ্বিতীয়জন প্রফেসরের সাহায্যকারী, তৃতীয়জন ত্রিবেদিজি নিজে। খরচটুকু নিয়ে খুব সামান্য পয়সায় বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে হতাশ হয়ে ফিরে আসা আগ্রহী কোনো কোনো ক্যানসার রোগীকে সে সময়ে ত্রিবেদিজি ওষুধ দিতেন। উদ্দেশ্য শুধুই তৈরি ওষুধের পরীক্ষা-নিরীক্ষা। আর লক্ষ্য, ক্যানসার রোগীদের যথাসম্ভব সহায়তা করা এবং তাদের কষ্ট লাঘব করা। কোনো প্রচার নেই, লোক ডেকে আনার কোনো ব্যাপার নেই। সেন্টারের ওই ওষুধে যারা উপকার পেতেন মাঝেমাঝে,তারাই আবার অন্যান্য রোগীদের পাঠিয়ে প্রচারের কাজটা চালিয়ে দিতেন।
সেই শুরু, গবেষণার পাশাপাশি দীর্ঘ প্রায় পাঁচ দশক ধরে আজও সফল ভাবে ক্যানসারের চিকিৎসা করে আসছে ডি.এস.রিসার্চ সেন্টার। বড়বাজার থেকে সেন্টারের নিজস্ব ক্লিনিক উঠে এসেছে ফুলবাগানে। ঝাঁ-চকচকে বহুতল বাড়িতে আয়ুবেদাচার্য, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, আহার বিশেষজ্ঞ ইত্যাদি সহ সেখানে নানা সম্ভাব্য সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরিষেবা দিতে ক্লিনিকে লোকের সংখ্যা বেড়েছে কয়েক গুণ। উপকার পাওয়া মানুষের তালিকা দীর্ঘ থেকে হয়েছে দীর্ঘতর। বারাণসী, কলকাতার পর সেন্টারের পরিধিও বেড়েছে। কলকাতার পর গুয়াহাটি, বেঙ্গালুরু, মুম্বই ও হায়দরাবাদেও খোলা হয়েছে ডি.এস.রিসার্চ সেন্টারের ক্লিনিক। প্রস্তুতি চলছে দিল্লি-চেন্নাইয়ের। বলাবাহুল্য, চিকিৎসার সুনামই বাড়িয়েছে সেন্টারের পরিধি। কারণ মানুষ উপকার পান তাই আসেন। বহু মানুষই এইসব ক্লিনিক থেকে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা নিয়ে ক্যানসারের মতো ভয়ানক রোগকেও পরাস্ত করতে পেরেছেন।
![Cancer Treatment: ক্যান্সারের চিকিৎসায় আলোর দিশা আয়ুর্বেদে 1 Cancer Treatment in bengali](http://banglaobangali.in/wp-content/uploads/2024/02/ayurveda-and-cancer.png)
ক্যানসারের মতো রোগেও মানুষ উপকার পাচ্ছেন তাও আবার আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায়। সত্যি বলতে কি বিশ্বাস করতে কষ্টই হয়। কিন্তু এটাই আজ বাস্তব। এই সেদিনও ঘুরে এলাম সেন্টারের নতুন ক্লিনিক থেকে। সেন্টারের নিচের তলায় রিসেপশন। সার দিয়ে বসে রয়েছেন রোগীরা। কোলন ক্যানসার, খাদ্যনালির ক্যানসার, স্টমাক ক্যানসার, লিভার ক্যানসার, এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যানসার, রক্ত ক্যানসার, স্তন ক্যানসার, বোন ক্যানসার, মাথা ও গলার ক্যানসার, ক্যানসার ইত্যাদি প্রায় সব ধরনের ক্যানসারে আক্রান্ত রোগী অথবা তাদের বাড়ির লোক। কলকাতা ও শহরতলি ছাড়াও কেউ এসেছেন বর্ধমান থেকে, কেউ এসেছে বীরভূম থেকে, কেউ বা মুর্শিদাবাদ-শিলিগুড়ি-দার্জিলিং- জলপাইগুড়ি-বালুরঘাট থেকে। আবার কেউ- কেউ এসেছে সুদূর বিহার-ওড়িশা এমনকী নেপাল, ভূটান, বাংলাদেশ থেকেও। নতুন রোগীর পাশাপাশি রয়েছেন পুরনো রোগীরাও। রোগীরা নিজেদের মধ্যে আলাপচারিতায় ব্যস্ত।
খড়দহ থেকে সুধীরকুমার বালা নিজেই এসেছেন সেন্টারে। তিনি সেন্টারের পুরনো রোগী। বেশ ভালোই আছেন এখন। কোনো সমস্যাই নেই তাঁর। জানালেন, ১৯৯৭ সালে তিনি প্রথম লক্ষ্য করেন প্রস্রাব দিয়ে রক্ত আসছে। চিকিৎসকের পরামর্শে আলট্রাসোনোগ্রাফি ও সিস্টোস্কোপি করে জানা যায় টিউমার আছে। সেই টিউমার অপারেশনের পর বায়োপসি করে ধরা পড়ল ইউরিনারি ব্লাডারে ক্যানসার। কোথাও কোনো চিকিৎসা না করিয়ে তিনি সোজা চলে আসেন ডি.এস.রিসার্চ সেন্টারে। ১৯৯৯ সাল। নিয়মিত চিকিৎসা চলতে থাকল। সেই সঙ্গে চলতে থাকে চেক-আপও। ক্রমশ উন্নতি হতে থাকে। দীর্ঘ ১৮ বছরে অন্য কোথাও কোনো চিকিৎসা নেওয়ার প্রয়োজন হয়নি। অনিয়মিত হলেও, চিকিৎসাটা তিনি এখনও চালিয়ে যাচ্ছেন। কথা হল আরও কয়েকজনের সঙ্গে। প্রত্যেকেই পিছনে ফেলে এসেছেন ভয়ঙ্কর দিনগুলোকে। এক-একজন রোগীর এক-একরকম কাহিনী। কথা হল রিসেপশনিস্ট ভদ্রমহিলার সঙ্গেও। জানালেন, আয়ুর্বেদিক ডাক্তার, অঙ্কোলজিস্ট, প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ডায়াটিশিয়ান পালা করে এখানে রোগীর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেন। এখানে রোগীর বিবরণ ও রিপোর্টস-এর উপরই সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়, তাই রোগীকে সব সময় না নিয়ে এলেও চলে। সবচেয়ে বড় কথা এই চিকিৎসার কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা ক্ষতিকারক দিক নেই।