Home পারম্পরিক ঔষধি রোগ চিকিৎসায় পরিচিত ফলের ব্যবহার । Fruit: Nature’s Secret Weapon for Disease...

রোগ চিকিৎসায় পরিচিত ফলের ব্যবহার । Fruit: Nature’s Secret Weapon for Disease Prevention and Wellness

আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় যে সমস্ত দ্রব্য ব্যবহার হয় তাদের মধ্যে উদ্ভিদ অন্যতম। বিভিন্ন উদ্ভিদের বিভিন্ন অংশ স্বাস্থ্যরক্ষায় এবং রোগের উপশম তথা নিরাময়ের জন্য ব্যবহার হয়ে থাকে। উদ্ভিদের ব্যবহৃত বিভিন্ন অংশের মধ্যে অন্যতম হল ফল। প্রকৃতির নিয়মে বিভিন্ন উদ্ভিদে ভিন্ন ভিন্ন ঋতুতে ফল ফলে থাকে। যদিও চাহিদার প্রয়োজনে এবং কৃষি বিজ্ঞানের প্রযুক্তিগত উন্নতিতে অনেক ফল এখন অন্য ঋতুতেও হচ্ছে।

আজ থেকে প্রায় আড়াই থেকে তিন হাজার বছর পূর্বে রচিত আয়ুর্বেদের বিভিন্ন গ্রন্থে বিভিন্ন ফলের শ্রেণীবিভাগ করে সেগুলোর গুণাগুণ, সাময়িক প্রয়োগ প্রভৃতি উল্লেখ করা হয়েছিল। যেমন সুশ্রুত সংহিতার সূত্রস্থানের ৪৬ অধ্যায়ে (অন্নপান বিধি) চর্ব্য, চোষ্য, লেহ্য, পেয় এই চার প্রকার খাদ্যের বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা আছে। এর মধ্যে ফলবর্গ অন্যতম।

অম্লফল বর্গ

দাড়িম, আমলকী, কয়েতবেল, ছোলেঙ্গা লেবু, কচি মাতুলুঙ্গ, আম, আমড়া, করমচা, পিয়াল, চালতা, পেয়ারা, তেঁতুল, কেওড়া, জামির লেবু প্রভৃতি ।

ক্ষীরবৃক্ষ ফল

বট, অশ্বত্থ, পাকুড়, ডুমুর, জাম, বকুল, তিন্দুক, ফলসা, বেল, তেলাকুচা, কুন্দরুকী প্রভৃতি ফল । তাছাড়া তাল, নারকেল, কাঁঠাল, কলা, দ্রাক্ষা, গাম্ভারী, খেজুর, বাদাম, আখরোট, পেস্তা, নিচুল, নিচোলক, বেড়েলা, ভল্লাতক, করঞ্জ, পলাশ, নিম, বিড়ঙ্গ, হরীতকী, বহেড়া, জায়ফল, জৈত্রী প্রভৃতির গুণাগুণ ও প্রয়োগের উল্লেখ আছে।

আয়ুর্বেদে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বহুল ব্যবহৃত কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ফল সম্বন্ধে সংক্ষেপে উল্লেখ করা হল।

Haritoki

হরীতকী : অধিকাংশ দ্রব্যে বা ভেষজে মধুর, অম্ল, লবণ, কটু, তিক্ত, কষায় এই ছয়টি রস কম-বেশি থাকে। কিন্তু হরীতকীতে পাঁচটি রস (মধুর, অম্ল, তিক্ত, কটু ও কষায়) আছে। এতে লবণ রস থাকে না। আবার এই পাঁচ প্রকার রসের মধ্যে কষায় রসেরই আধিক্য থাকে।

বি.দ্র : আর একটি ভেষজ আছে যাতে পাঁচটি রস থাকে। তা হল রসুন। এতে মধুর, লবণ, তিক্ত, কটু ও কষায় এই পাঁচটি রস থাকে। এতে অম্লরস নেই। অতএব একটি রস ঊন (হীন), বলে একে ‘রসোন’ নামে অভিহিত করা হয়েছে।

প্রধানত কোষ্ঠবদ্ধতায় প্রত্যহ সকালে হরীতকী চূর্ণ চার গ্রাম থেকে ছ’গ্রাম ঈষদুষ্ণ জল সহ খেলে উপকার হয়।

আয়ুর্বেদে বছরে বিভিন্ন ঋতুতে বিভিন্ন রকম অনুপান সহ হরীতকী খাওয়ার উল্লেখ আছে। যেমন বর্ষায় সৈন্ধব লবণ সহ, শরৎকালে চিনিসহ, হেমন্তে শুকনো আদা চূর্ণ সহ, শীতে পিপুল চূর্ণ সহ, বসন্তকালে মধুসহ, গ্রীষ্মকালে গুড় (আখের) সহ খেলে রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়ে বা রোগ প্রতিরোধ হয়।

তাছাড়া বিভিন্ন রোগে হরীতকী উপকারী। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে ব্যবহার করা উচিত। হরীতকী, আমলকী ও বহেড়া ক্যানসার প্রতিরোধ করতে পারে বলে প্রমাণিত।

হরীতকী কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যবহার করা অনুচিত : দুর্বল, শীর্ণ শিশু, অভিসার, রক্তপাত হলে এবং গর্ভাবস্থায় হরীতকী খাবেন না।

আমলকী : আমলকী অম্লরস বিশিষ্ট বলে বায়ু, মধুর রস ও শৈত্যগুণের জন্য পিত্ত এবং রুক্ষ ও কষায় রস বিশিষ্ট বলে কফ নাশ করে। অর্থাৎ আমলকী ত্রিদোষনাশক।

ব্যবহার : ভাতের সঙ্গে একটি আমলকী সিদ্ধ নিয়মিত খেলে শরীরের রুক্ষতা নষ্ট হয়, দুর্বল হৃদযন্ত্র সবল হয়, অনিয়মিত রক্তচাপে স্থিরতা আসে। বিশেষত ডায়াস্টোলিক রক্তচাপকে সমতায় আনতে সাহায্য করে।

অম্বল বা অম্লপিত্ত রোগে : কাঁচা আমলকীর রস দুই চা-চামচ অথবা আমলকীর শুকনো চূর্ণ এক গ্রাম মাত্রায় চিনিসহ কয়েকদিন খেলে অম্লরোগে উপকার হয় । অন্যান্য ওষুধের পরিবর্তে আমলকী ও অন্যান্য ভেষজসমন্বিত ওষুধ খেলে দ্রুত উপকার হবে।

চুলকানি ও শীতপিত্ত রোগে : শীতপিত্ত অর্থাৎ আর্টিকেরিয়া রোগে আমলকী চূর্ণ ও নিমপাতা চূর্ণ সমান মাত্রায় মিশিয়ে দেড়গ্রাম মাত্রায় সকালে ও সন্ধ্যায় জলসহ খেলে উপকার হয়।

মাথার যন্ত্রণায় : আমলকীর রসে সাদা চন্দন ঘষে কপালে প্রলেপ দিলে মাথার যন্ত্রণা কমে। 

(সতর্কতা: তবে মাথার যন্ত্রণা খুব বেশি হলে ও অন্যান্য উপসর্গ থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।)

পেয়ারা : মধুর, কষায় রস প্রধান। বলকারক, হৃদয়গ্রাহী, রুচিকর ও শুক্রজনক । এটি কৃমি, তৃষ্ণা, ভ্রম, শ্রম ও শোষ বিনাশক। এর এতই পুষ্টিগুণ যে সাধারণত বলা হয় যে আপেল না খেয়ে সহজলভ্য এবং দামে তুলনামূলক কম পেয়ারা খাওয়া খুবই উপকারী। তাছাড়া পেয়ারা গাছের পাতা সিদ্ধ জলে কুলি করলে মুখগহ্বরের ক্ষত নিরাময় হয়।

বেল: কচি বেল ধারক, অগ্নির দীপক, আমরসের পাচক, কটু, কষায়, তিক্তরস, উষ্ণবীর্য, লঘু, স্নিগ্ধ, বায়ু ও কফনাশক। পাকা বেল গুরু, ত্রিদোষজনক, দুষ্পাচ্য, বায়ুজনক, বিদাহী (যা খেলে টক ঢেকুর ওঠে, পিপাসা পায় ও বুকে জ্বালা এবং দেরিতে পরিপাক হয়।) এবং অগ্নিমান্দ্যকর। কচি বেল পুড়িয়ে বা শুকিয়ে গুঁড়ো করে বেলশুঁঠ তৈরি করা হয়। এই গুঁড়ো ধারক, অমির দীপক ও হজম কারক।

পুরাতন আমাশা ও গ্রহণী রোগে কচি বেল পুড়িয়ে গুঁড়ো করে খেলে উপকার মেলে। প্রসঙ্গত, পাকা বেলের থেকে কাঁচা বেলই – শ্রেষ্ঠ। অবশ্য যাদের কোষ্ঠ পরিষ্কার হয় না বা অর্শ আছে, তাদের পক্ষে পাকা বেল উপকারী। কিন্তু অম্বল ও অজীর্ণ রোগ থাকলে না খাওয়াই ভালো।

তেঁতুল : কাঁচা তেঁতুল বায়ুনাশক, গুরু। পিত্ত ও কফজনক। পাকা তেঁতুল অগ্নিদীপক, রুক্ষ, কফ ও বায়ু নাশক। 

ব্যবহার: আঘাতজনিত ব্যথা ও ফোলায় কাঁচা তেঁতুল অল্প জলে সিদ্ধ করে, চটকে অল্প – সৈন্ধব লবণ অথবা সোরা মিশিয়ে সামান্য গরম করে উষ্ণ অবস্থায় ফোলা ও ব্যথাস্থানে প্রলেপ দিলে যন্ত্রণা ও ফোলা দুই-ই কমে।

অরুচিতে পাকা তেঁতুল লবণ ও গুড় সহ খেলে অরুচি নাশ হয়। পুরাতন আমাশা রোগে পুরাতন তেঁতুল চটকে বীজ বাদে মাড় বেশ কয়েকদিন খেলে উপকার হয়।

পলাশ: কৃমিরোগে পলাশ বীজের উপরের ত্বক ফেলে ওই বীজচূর্ণ ও যোয়ান সমান মাত্রায় মিশিয়ে পাঁচশো মিলিগ্রাম মাত্রায় দিনে দু’-তিনবার চালধোয়া জলসহ কয়েকদিন খেলে পেটের কৃমি মরে যায়। রাউন্ড ওয়ার্ম ও ফিতাকৃমি বা টেপ ওয়ার্মও বিনষ্ট করতে পারে পদ্মকাঁটা এবং হাতে-পায়ের হাজা জল ঘেঁটে হাতে-পায়ে হাজায় এবং পদ্মকাঁটায় পলাশবীজ লেবুর রসে মেখে হাজায় লাগালে উপকার হয়। পদ্মকাঁটাতেও লাগালে উপশম হবে

মৌরি : অজীর্ণ ও পেট ফাঁপায় পাঁচ গ্রাম মৌরি দু’কাপ জলে সিদ্ধ করে, এক কাপ থাকতে নামিয়ে, ছেঁকে সকালে ও বিকেলে খেলে উপকার হবে। তাছাড়া গর্ভকালীন বমিতে এবং স্তনের স্বল্পতায় পূর্বোক্ত নিয়মে খেলে উপকার হবে।

চালতা : শুক্রাল্পতায় পাকা চালতার রস (মিষ্টি হওয়া চাই) সকালের দিকে দু’ চা-চামচ ও বিকেলে দু’চা-চামচ সামান্য গরম করে বেশ কয়েকদিন খেলে উপকার হবেই।

পিয়াল : বীজ কফ নিঃসারক, রোগ প্রতিরোধক, কামোদ্দীপক, হৃদযন্ত্রের বলবৃদ্ধিকারক। বীজের তেল মাথার টাকে, দাড়ি বা ভ্রূতে এবং যে স্থানে লোম উঠে ফাঁকা হয়ে যায় এই সব ক্ষেত্রে ঘষে ঘষে দিনে দু’বার করে কিছুদিন লাগালে উপকার হবে। তাছাড়া মেচেতায় অর্থাৎ মুখের ওপর, গালে কালো ছোপ ছোপ হলে এই তেল লাগালে উপকার হয়। যদি তেল না পাওয়া যায়, তবে পিয়াল বীজ চন্দনের মতো ঘষে মুখমন্ডলে লাগালেও হবে।


কাবাবচিনি : রক্তার্শে, শ্বেতপ্রদরে, যৌন শীতলতায়, স্নায়বিক দুর্বলতায়, শুক্রতারল্যে উপকারী। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে বিভিন্ন অনুপান সহ খেলে রোগগুলো উপশম হবে।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Exit mobile version