Home পারম্পরিক ঔষধি আধুনিক রোগ প্রতিরোধে হোমিওপ্যাথির ভূমিকা | Homeopathy Medicine

আধুনিক রোগ প্রতিরোধে হোমিওপ্যাথির ভূমিকা | Homeopathy Medicine

0

রোগপ্রতিরোধের ক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথিতে বহু ওষুধ রয়েছে যেমন লিডাম, প্যারোটিডিনাম, মরবিলিনাম, ভ্যাকসিনিনাম, ল্যাথাইরাস, ডিপথিরিনাম, কিউপ্রাম আর্স ইত্যাদি সহ জেনাস এপিডেমিকাস শ্রেণীর ওষুধ। এবং আরও বহু ওষুধ আছে যেগুলো উপযুক্ত পরীক্ষা ও গবেষণা এবং সরকারি সহযোগিতার অভাবে জনপ্রিয় হতে পারছে না। এগুলোর কার্যকারিতা সরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন শাখার বৈজ্ঞানিকদের দিয়ে যাচাই করা দরকার।

এছাড়া হোমিওপ্যাথিতে রয়েছে ধাতুগত চিকিৎসার জন্য সকল রোগের প্রতিরোধক ওষুধ। হাজার হাজার জরুরি ও পুরনো রোগের (অ্যাকিউট ও ক্রনিক) প্রতিরোধের ব্যবস্থা না করে মাত্র দশ-কুড়িটি ছোঁয়াচে রোগের প্রতিরোধ ব্যবস্থায় মহামারির মতো ঘটনা রোখা গেলেও সামগ্রিক ভাবে রোগ প্রতিরোধের কাজটির কিছুই এর দ্বারা সম্পন্ন হবে না। কঠোর আইন, পুলিশ, আদালত, জেল, কারাদন্ড, ফাঁসি ইত্যাদির ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও যেমন খুন, ধর্ষণ, দুর্নীতি, জাল- জোচ্চুরি দিনে দিনে বেড়ে চলেছে, তেমনি নানা কড়া কড়া আধুনিক ওষুধ আবিষ্কার করে রোগ বাড়বে। রোগ প্রতিরোধ করা আদতে কোনো দিনই সম্ভব হবে না। নতুন, অজানা এবং অদ্ভুত ধরনের রোগ যুগে যুগে মানব সমাজকে গ্রাস করে চলেছে। এটা হতেই পারে তথাকথিত আধুনিক জীবনদায়ী ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও কুফল থেকেও সৃষ্ট।

Homeopathy Medicine

আমাদের দেখা কিছু ঘটনা থেকেই বুঝতে পারি কৃত্রিমভাবে ওষুধ দ্বারা রোগ প্রতিরোধ কাজটি করার ক্ষেত্রে গবেষণা ঠিক কী ধরনের হওয়া দরকার। মাঝে মাঝেই দেখতে পাই পৌরপ্রতিষ্ঠানের কিছু শ্রমিক ওই ঢাকা নর্দমার বিষাক্ত জলে ডুবে ডুবে কাজ করছে। ডুব দিয়ে ময়লা তুলে ওই হাতেই আবার খৈনি ধরনের কিছু খেতেও দেখেছি। খোঁজ নিয়ে জেনেছি তারা কেউ ওই কাজ করার পর সাধারণত অসুস্থ হয় না। তারা অন্য সময় বিভিন্ন রোগে অন্যদের মতো আক্রান্ত হলেও ওই কাজ করার জন্য সঙ্গে সঙ্গে অসুস্থ হয়ে পড়ে না।

আর একটি আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি যারা পাহাড়ি অঞ্চলে জন্ম থেকে কাটিয়ে কলকাতা, হাওড়া ইত্যাদি জনবহুল এলাকায় কাজ করতে আসেন তারা যক্ষ্মা, সর্দিকাশি, হাঁপানি, পুরাতন পেটের পীড়া, বাত, ইত্যাদি কিছু রোগের সহজ শিকার হয়ে পড়েন আবার যে সকল মানুষ বহুতল বাড়িতে, খোলা আবহাওয়ায় থাকে তাদের চেয়ে বস্তিবাসীদের মঝ্যে কিছু রোগের প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রকৃতিগত ভাবেই বেশি। যদিও তারা প্রকৃতি বিরুদ্ধ কিছু কাজ ও জীবন যাপনের পরিবর্তনে বেশি অপুষ্টির শিকার ও অসুস্থতা বেশি ভোগ করে। এবং কখনও কখনও এর ফলে কিছু সংক্রামক ও ছোঁয়াচে রোগের কবলে বস্তিবাসীরাই বেশি আক্রান্ত হয়। এমনকী আন্ত্রিক, কলেরা, টাইফয়েড, ম্যালেরিয়া ইত্যাদি সংক্রামক ব্যাধিগুলোর কবলে তারা বেশিই পড়ে। মানুষ প্রকৃতির কোলে পাহাড়, জঙ্গল, মরুভূমি, মেরু, সমুদ্র বক্ষে বিভিন্ন পরিবেশে তাদের জীবন যাত্রা নির্বাহ করে। আদিম যুগে জঙ্গল-গুহার মধ্যে নিজেদের অস্তিত্ব বাঁচিয়ে রেখে বর্তমানে নিজেদের সংখ্যা সারা বিশ্বে কোটি কোটি করতে পেরেছে। সুতরাং মানুষ বংশানুক্রমিক ভাবে যেকোনো পরিবেশে নিজেদের মানিয়ে নিয়ে সুস্থভাবে কাজকর্মের মাধ্যমে অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিজেদের অস্তিত্ব বজায় রাখতে পারে।

সেজন্য শিশুকাল থেকেই যাদের বংশানুক্রমিক সর্দিকাশি থাকে তাদের ধীরে ধীরে জল, রোদ, ঠান্ডা, কুয়াশা, বৃষ্টি ইত্যাদিকে একেবারে এড়িয়ে না চলে, এগুলোকে সহ্য করার চেষ্টা করলে ঠিক সহ্য হবে। অনেক মা তাদের সম্পূর্ণ সুস্থ শিশুদের শীত, বর্ষা, রোদ ইত্যাদি সহ্য করাবার সামান্যও চেষ্টা না করে অতি সাবধানতায় বেশি অসুস্থ করে তোলে। রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা প্রকৃতিকে বাদ দিয়ে করার চেষ্টা হলে সেটাই বেশি অসুস্থ করে তুলবে। তাই রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা প্রকৃতিকে বাদ দিয়ে করার চেষ্টা বৈজ্ঞানিকরা যদি করেন তবে চেষ্টা কোনোদিনই সফল হবে না। চাই উপযুক্ত গবেষণার দ্বারা পরিবেশ থেকে সকল প্রকার দূষণকে দূর করার পাশাপাশি মানুষের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা। আর এক্ষেত্রে মানুষে মানুষে তাদের ব্যক্তিগত পেশা অনুসারে পার্থক্য থাকা দরকার। এই ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যই হচ্ছে হোমিওপ্যাথির মূলমন্ত্র। সুতরাং এই ব্যক্তি- স্বাতন্ত্র্যকে বজায় রেখেই আধুনিক গবেষকদের রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে অগ্রসর হতে হবে।

হোমিওপ্যাথিতে লিডাম, হাইপেরিকাম, মরবিলিনাম ইত্যাদি বিভিন্ন সুনির্দিষ্ট হোমিওপ্যাথিক ওষুধগুলোর সঙ্গে ধাতুগত ওষুধ যেমন ক্যাল-কার্ব, সোরিনাম, টিউবারকিউলিনাম ইত্যাদি হোমিওপ্যাথিক ওষুধ এবং সংক্রামক রোগের প্রতিরোধের জন্য জেনাস্-এপিডেমিকাস নামে যে ওষুধ ব্যবহার করা হয় সেগুলো আমরা বাস্তব ক্ষেত্রে প্রয়োগ করে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সুফল পেতে পারি।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Exit mobile version