Home স্বাস্থ্য পরামর্শ কিডনির অসুখ: বুঝবেন কিভাবে, প্রতিকারই বা কি? | Chronic Kidney Disease &...

কিডনির অসুখ: বুঝবেন কিভাবে, প্রতিকারই বা কি? | Chronic Kidney Disease & Kidney Stone Symptoms

আমাদের শরীরের ভেতরে সবসময়ই কিছু-না-কিছু বিপাক কার্য সম্পন্ন হচ্ছে। এই সমস্ত বিপাকক্রিয়া শরীরের পক্ষে একান্তওয়োজনীয় এই বিপাকক্রিয়ার মাধ্যমে শরীর যেমন প্রয়োজনীয় পুষ্টিরস পাচ্ছে, দেহের সমস্ত কাজকর্ম করার জন্য অতি প্রয়োজনীয় তাপশক্তি উৎপন্ন হচ্ছে, তেমনি বিপাকক্রিয়ার ফলেই দেহের অভ্যন্তরে উৎপন্ন হচ্ছে বিভিন্ন ধরণের বর্জ্য পদার্থ, যা আমাদের শরীরের পক্ষে খুবই ক্ষতিকর আর এই সমস্ত বর্জ্য পদার্থগুলোকে সঠিক সময়ে দেহের বাইরে বের করতে মুখ্য ভূমিকা নেয় কিডনি বা বৃক্ক। শতকরা ৭৫ ভাগ রেচন পদার্থই নিঃসৃত হয় কিডনির মাধ্যমে। তাই কোনো কারণে কিডনি নষ্ট হয়ে গেলে আমাদের শরীর রেচন পদার্থগুলিকে বাইরে বের করতে না পেরে গুরুতর সমস্যা ডেকে আনে। ওই অসুস্থ বৃক্ক তখন আমাদের শরীরের বিভীষিকা। হয় মৃত্যুরও কারণ।

সাধারণভাবে কিডনির যে সমস্ত রোগ হয়, তাদের লক্ষণ, কারণ, প্রতিকার প্রভৃতি বিষয়েই এখানে আলোচনা করা হল।

নেফ্রাইটিস | Nephritis

সাধরণ মানুষের কাছে রোগটি নেফ্রাইটিস নামে পরিচিত হলেও রোগটির প্রকৃত নাম গ্লোমেরুলো নেফ্রাইটিস। এই রোগটার আবার দু’ভাগ । একটার নাম নেফ্রোটিক সিনড্রোম। অপরটার নাম নেফ্রিটিক সিনড্রোম।

কিডনি সমস্যার লক্ষণ | Chronic Kidney Disease

চোখ, পা প্রভৃতি শরীরের বিভিন্ন অংশ ফুলে যায়। রোগীর প্রস্রাব পরীক্ষায় প্রোটিন, লোহিত রক্তকণিকা, প্রভৃতি পাওয়া যায়। প্রস্রাবের সঙ্গে যদি শুধু প্রোটিন নির্গত হয় এবং সঙ্গে দেখা যায় যে রোগীর শরীর ফুলেছে, তাহলে জানতে হবে রোগীর নেফ্রোটিক সিনড্রোম দেখা দিয়েছে। বয়স্কদের এই রোগ হলেও বাচ্চাদের মধ্যেই এই রোগ বেশি।

প্রস্রাবের সঙ্গে যদি অল্প অল্প প্রোটিন এবং রক্ত নির্গত হয় এবং তার সঙ্গে রোগীর উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যা থাকে তাহলে আশঙ্কা, রোগী  নেফ্রিটিক সিনড্রোমে আক্রান্ত। এছাড়া র‍্যাপিডলি প্রোগ্রেসিভ ও গ্লোমেরুলো নেফ্রাইটিস বলে আর এক ধরনের নেফ্রাইটিস আছে যা খুব ভয়ঙ্কর। এই ধরনের নেফ্রাইটিসে রোগী ওষুধে সাড়া দেয় না বললেই চলে। সাধারণত আক্রান্ত হবার এক থেকে দু’মাসের মধ্যেই রোগীর কিডনি খারাপ হয়ে যায়। এছাড়াও পোস্ট স্টেপ্টোকক্কাস গ্লোমেরুলো নেফ্রাইটিস হলে প্রথমে সর্দি-কাশি, গলা ব্যথা, জ্বর হয় তারপর ইনফেকশন হয় কিডনিতে। চামড়ায় ঘন ঘন ঘা হলেও হয় এই রোগ। এছাড়াও সিস্টেমিক লুপাস নামের রোগ থেকেও নেফ্রাইটিস হয়। এটা বেশি হয় কমবয়সী মেয়েদের। কিছু নেফ্রাইটিসের আবার কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না।

কিডনি সমস্যার সমাধান ( প্রতিরোধ, নিরাময় ও নিয়ন্ত্রণ )

দু’মাসের বাচ্চা থেকে ৮০ বছরের বুড়ো সবারই এই রোগ হতে পারে। তবে সর্দি-কাশি বা চামড়ার ঘা জনিত নেফ্রাইটিস এড়ানো যায় সতর্ক থাকলে। সাধারণত দেখা গেছে যত জনের কিডনি খারাপ হয় তাদের মধ্যে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ ব্যক্তির কিডনি রোগের করণ এই গ্লোমেরুলো নেফ্রাইটিস। এমনকী সুস্থ হয়ে যাবার পরও এই রোগ ফিরে আসতে পারে। বার বার এমন চলতে থাকলে ১০-২০ বছরের মধ্যে কিডনি কিন্তু পুরোপুরি খারাপ হয়ে যায়। তাই রোগের চিকিৎসা করার সময় বায়োপসি করে দেখে নিতে হয় যে ভবিষ্যতে এই রোগ কীরকম গ্রোথ করবে।নেফ্রোটিক সিনড্রোম প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে স্টেরয়েড চিকিৎসায় সেরে যায়। নেফ্রিটিক সিনড্রোমে রোগীর রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখার জন্য চিকিৎসা করতে হয়। প্রয়োজনে রোগীর খাদ্য নিয়ন্ত্রণ করা হয়। চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়। এছাড়া রোগীকে তরল পদার্থ, জল এবং নুন গ্রহণের ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ মেনে চলতেই হয়।

Nephrosclerosis 

উচ্চ রক্তচাপক্তনিত কারণে শরীরে যে সব জটিলতা দেখা দিতে পারে, তারই একটা হল Nephrosclerosis। এই রোগে কিডনি নষ্ট হয়ে যায়। অথচ প্রথমে এই রোগের কোনো লক্ষণ থাকে না পরবর্তীকালে কিডনি ক্ষতিগ্রস্থ হলে তার লক্ষণ হিসাবে দেহে রক্ত কমে যায়, প্রস্রাবে অল্প অল্প প্রোটিন পাওয়া যায়। দীর্ঘদিন কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকলে একসময় কিডনি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়। ব্লাডপ্রেসার নিয়ন্ত্রণে রেখে রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সঙ্গে সঙ্গে রোগীকে ডাক্তারবাবুর পরামর্শমতো ডায়েট কন্ট্রোল করতে হবে। লবণ এবং জল গ্রহণের ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে।

chronic kidney disease

উইলমস টিউমার | Wilms Tumor

উইলমস টিউমার কিডনির এক ধরনের ক্যানসার। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই ক্যান্সার সাধারণত ছোটোদের অর্থাৎ পাঁচ থেকে দশ বছর বয়স্ক শিশুদেরই বেশি হয়। রোগের লক্ষণ হল প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত পড়া শিশুদের পেট এই রোগে ফুলে ওঠে। সাধারণত প্রস্রাব পরীক্ষা করার পর আল্ট্রাসাউন্ড করে স্পষ্টভাবে এই রোগ নির্ণয় করা যায়। এই রোগের একমাত্র চিকিৎসা হল টিউমারটিকে অস্ত্রোপচার করে বাদ দিয়ে দেওয়া।

কিডনি স্টোন | Kidney Stones

কিডনিতে পাথর হওয়া অর্থাৎ আমরা যাকে বলি কিডনি স্টোন তার ডাক্তারি নাম হল নেফ্রলিথিয়েসিস শরীরে ক্যালসিয়াম, ইউরিক অ্যাসিড, অক্সালিক অ্যাসিড বেশি হলে অথবা প্রস্রাবে কোনো কারণে বার বার ইনফেকশন হলে সাধারণত কিডনিতে পাথর হতে দেখা যায়। রোগীর পেটে প্রচণ্ড ব্যথা থাকে এবং প্রস্রাবের সঙ্গে মাঝে মাঝে পাথর পড়তে পারে। এক্স-রে করলে কিডনিতে স্টোনের অস্তিত্ব সঠিকভাবে বোঝা সম্ভব অনেক সময় প্যারাথাইরয়েড হরমোনগ্রন্থি থেকে হরমোন নিঃসরণের পরিমাণ বেশি হলে বা শরীরে সিস্টিন বেশি হলে কিডনিতে স্টোন হতে পারে। রেনাল টিবিউলার আসিডোসিস্ হলে শরীরের দুটি কিডনিতেই প্রচুর পরিমাণে স্টোন হয়। মেডালারি স্পঞ্জ রোগেও দুই কিডনিতেই প্রচুর স্টোন হয়। বারবার প্রস্রাবে ইনফেকশন হলে কিডনিতে স্টোন হবার সম্ভাবনা বাড়ে। এছাড়া মুত্রনালীতে যদি কোনো বাধা থাকে, তাহলেও কিডনিতে স্টোন হবার সম্ভাবনা বাড়ে। কিডনিতে স্টোন থাকলে ভিটামিন-সি খেলে ফসফেট গুলে গিয়ে আরও স্টোন তৈরিতে সাহায্য করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

কিডনি স্টোনের চিকিৎসা হিসেবে বলা যায় যাদের শরীরে ক্যালশিয়ামের পরিমাণ বেশি তাদের দুধ কম খেতে হবে এবং সঙ্গে বেশি করে জল। এছাড়া এই সমস্ত সমস্যা থাকতে অম্বলের ওষুধ বেশি না খাওয়াই উচিত। সাধারণত দেখা যায় কিডনিতে পাথরের আকৃতি ছোট থাকলে প্রস্রাবের সঙ্গেই তা বেরিয়ে আসে। আর যদি পাথরের আকৃতি বড় হয়, তাহলে লিথোট্রিপসির সাহায্য নিয়ে পাথরগুলোকে ভেঙে টুকরো টুকরো করে নেওয়া হয়। যাতে ঐ টুকরোগুলো প্রস্রাবের সঙ্গে বেরিয়ে আসতে পারে।

ডায়াবেটিস নেফ্রোপ্যাথি

ডায়াবেটিস দু’রকম : ডায়াবেটিস মেলিটাস এবং ভায়াবেটিস ইনসিপিটাস। ডায়াবেটিস ইনসিপিটাসে সরাসরি কিডনির কোনো ক্ষতি হয় না। শুধুমাত্র প্রচুর প্রস্রাব হয়। কিন্তু ডায়াবেটিস মেলিটাসে দীর্ঘদিন ভুগলে এবং সঠিকভাবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ না করা হলে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একে বলে ডায়াবেটিস নেফ্রোপ্যাথি। কিডনি নষ্ট হয়ে যাবার এটি একটি অন্যতম প্রধান কারণ। সাধারণভাবে এই রোগে ১৫ থেকে ২০ বছর ভোগার পর কিডনি খারাপ হয়ে যায়। তবে দু’বছরের ভেতরও কিডনি খারাপ হতে দেখা গেছে। আসলে দীর্ঘদিন ডায়াবেটিসে ভুগলে রক্তবাহী নালীগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তখন প্রস্রাবের সঙ্গে প্রোটিন নির্গত হতে থাকে। শরীর ফুলে যায় এবং রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়। এই সময় কিডনি পরীক্ষা করলে দেখা যাবে কিডনি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এই রোগের প্রধান চিকিৎসা ডায়াবেটিস এবং প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখা। এছাড়াও ব্যাথানিবারক ওষুধ খাওয়া বন্ধ করতে হবে।

পেইনকিলার যন্ত্রণাই বাড়ায়

কিডনির অসুখে যারা ভুগছেন, তাদের অবশ্যই উচিত ব্যথা নিবারক বিভিন্ন ওষুধ এড়িয়ে চলা। এই সমস্ত ওষুধ কিডনির ভীষণ ক্ষতি করে। সিস্টেমেটিক অসুখ যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ প্রভৃতি থাকলে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, এই সমস্ত অসুখ কারোর থাকলে তার উচিত ব্যথা নিবারক ওষুধ না খাওয়া। পেইন কিলারগুলির মধ্যে বিভিন্ন ধরনের নন-স্টেরোয়ডাল anti inflammatory ওষুধ যেমন নাইস, ব্রুফেন প্রভৃতি খেলে ক্ষতির পরিমাণ বাড়ে। নিতান্তই ব্যথা নিবারক ওষুধ খেতে হলে প্যারাসিটামল, প্রক্সিভন জাতীয় ওষুধগুলি খাওয়া চলে। এবং অবশ্যই তা খেতে হবে শুধুমাত্র ডাক্তারবাবুর পরামর্শ অনুযায়ী।

কিডনির বংশগত অসুখ। কিডনির কিছু অসুখ আছে যা বংশগত। এদেরই মধ্যে একটি হল পলিসিস্টিক কিডনি। এই রেগে ফিডনির ভিতরে অনেকগুলে। লিস্ট গঠিত হয়। ফলে রক্তচাপ উচ্চ হয়, কিডনি বড় হয়ে যায়। প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত পড়ে। শেষ পর্যন্ত কিডনিটাই নষ্ট হয়ে যায়। আর একটি রোগ হল অ্যালপট সিনড্রোম (Autoimmune lymphoproliferative syndrome) এই রোগে রোগী কানে কম শোনে রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়। এরই সঙ্গে গ্লোমেরুলো নেফ্রাইটিসের সমস্যাগুলোও দেখা দিতে থাকে। কারোর বংশে এই রোগগুলো থাকলে তাদের সন্তানদের দু’একজন ছোট বয়স থেকেই এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা বলতে আছে ডায়ালিসিস আর কিডনি পাল্টাবার ব্যবস্থা।

সিস্টাইটিস

কিডনির আর একটি অসুখ হল সিস্টাইটিস বা মূত্রথলিতে প্রদাহ। মহিলাদের এই রোগ বেশি হয়। এই রোগের অপর একটি নাম লেয়ার ইউরিনারি ট্রাক্ট ইনফেকশন এই রোগের লক্ষণ হল প্রস্রাব করার সময় জ্বালা, বারবার প্রস্রাব, তলপেটে ব্যথা, জ্বর প্রভৃতি। এই রোগ হতে পারে যে-কোনো বয়সেই। ইউরিন কালচার করে নিশ্চিতভাবে এই রোগ নির্ণয় করা যায়। এই রোগের চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে ইনফেকশন নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এছাড়া রোগীকে বেশি করে জল খেতে বলা হয়। এই রোগে বেশিক্ষণ ধরে প্রস্রাব চেপে রাখা একেবারেই উচিত নয়। তাহলে ইনফেকশন আরও বাড়ে। তাই যাতে ঘন ঘন প্রস্রাব হয়, সেজন্যই জল খেতে বলা হয়।

দায়ী ভিটামিন ‘A’

কিডনির বিভিন্ন অসুখের জন্য ভিটামিন-এ কেও দায়ী করা যায়। ভিটামিন-এ  অভাব দেখা দিলে মূত্রনালীগুলিতে কেরাটিন নামক একটি পদার্থ জমে যায়। ফলে সেকেন্ডারি ইনফেকশন এবং রেনাল ক্যানালিকুলি হতে পারে। আর শরীরে ভিটামিন এ বেশি হলে ভিটা অ্যামিনোসিস হতে পারে। এই রোগে শরীরের নরম কলাগুলিতে বিশেষ করে বৃক্ক-কলাগুলিতে ক্যালসিয়াম জমা হতে থাকে। মুত্রে প্রচুর ক্যালসিয়াম পাওয়া যায় কিডনি নষ্ট হয়ে যায়। তাই কিডনির রোগ থাকলে বেশি ভিটামিন না খাওয়াই ভালো। তবে কিডনি খারাপ হয়ে গেলে দেহের মাংসপেশির দুর্বলতা ও হাড়ের ব্যথা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য রোগীকে ভিটামিন, ক্যালসিয়াম খেতে দেওয়া হয়।

কিডনির আরও কিছু রোগ | Other Kidney Diseases

আবস্ট্রাকটিভ ইউরোপ্যাথি এবং ক্রনিক পাইলোনেফ্র্যাটিস হল কিডনির রোগ। এছাড়া কোলাজিনের প্রভাবেও কিডনি খারাপ হয়। একে বলে সিস্টেমেটিক লুপাস নেফ্রাইটিস। অবস্ট্রাকটিভ ইউরোপ্যাথিতে কিডনি নষ্ট হয় না কিন্তু অবহেলায় রোগ মারাত্মক আকার ধারণ করে। সঠিক চিকিৎসায় এই রোগ অবশ্য সম্পূর্ণ সেরে যায়। অনেক সময় দেখা যায় যে বাচ্চাদের প্রস্রাবের নালী ভাল্টব দিয়ে বন্ধ থাকে। ফলে প্রস্রাব আটকে যায়। মূত্রথলি ফুলে যায়। এই সময় ভালোভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রোগটিকে নির্ণয় করতে পারলে সঠিক চিকিৎসায় রোগীর সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব হয়। কিন্তু সঠিক চিকিৎসা না হলে বাচ্চা মারাও যেতে পারে। এছাড়া বৃদ্ধ বয়সে এনলার্জ প্রস্টেট হলে অস্ত্রোপচার করে বাদ দিয়ে দিতে হবে। তার অবহেলা করলে কিডনি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়।

ক্রনিক পইলোনেফ্রইটিস হলে লক্ষণ হিসেবে জ্বর হবে। প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত ও পুঁজ পড়বে এবং কোমরে ব্যথা হবে। এই রোগ সারাতে গেলে অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে। এছাড়া সেপ্টিসমিয়া রোগেও কিডনি নষ্ট হয়ে যায়। ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, কোলাজেন প্রভৃতি সিস্টেমেটিক রোগের কারণে দেহের বিভিন্ন অঙ্গের সঙ্গে সঙ্গে কিডনি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। সাপে কাটলেও কিডনি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। হার্ট অ্যাটাক করলেও অনেক সময় হঠাৎ করে কিডনি ফেল করতে পারে। কোনো মানুষ অনেকটা পুড়ে গেলেও কিডনি নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়া কলেরা রোগে ঠিকমতো সালাইন না দেওয়া হলে রোগী কিন্তু মারা যায় কিডনি ফেলিওর হয়েই।

ডায়ালিসিস | Dialysis

যখনই কিডনি ফেলিওর হয় তখন কৃত্রিম পদ্ধতিতে একজন রোগীর দেহ থেকে বর্জ্য পদার্থ বের করাকেই ডায়ালিসিস বলে। দু’ ধরনের ডায়ালিসিস পদ্ধতি প্রচলিত আছে। পেরিটোনিয়াম বা ওয়াটার ডায়ালিসিস এবং হিমো বা ব্লাড ডায়ালিসিস। ওয়াটার ডায়ালিসিসে কোনো যন্ত্রের সাহায্য লাগে না। বাড়িতে রোগীকে রেখেও একজন এই ডায়ালিসিস যথাযথভাবে ট্রেনিং নিয়ে করতে পারেন। ওয়াটার ডায়ালিসিসের আবার দুটি পদ্ধতি আছে। প্রথম পদ্ধতিতে পেটে ক্যাথিটার দিয়ে একটি বিশেষ ধরণের তরল পদার্থ পেটে পাঠানো হয়। এই তরল পদার্থটির সঙ্গে পেটের পেরিটোনিয়াল স্তরের অভিস্রবণ প্রক্রিয়া শুরু হয়। ফলে শরীরের বর্জ্য পদার্থ এবং অতিরিক্ত জল ঐ তরল পদার্থের সঙ্গে মিশে যেতে থাকে। আধঘন্টা এইভাবে বিশেষ তরল পদার্থটিকে পেটে রেখে দেহের বাইরে বার করে আনলে দেখা যায়, এক লিটার তরল পদার্থ পাঠানো হলে তা বেড়ে প্রায় এক লিটার ৪০০ ঘন মিলিলিটার হয়েছে। এইভাবে প্রতি ঘণ্টায় একবার করে দু-তিন দিন করতে হয়।

আর একটি ওয়াটার ডায়ালিসিসের নাম কন্টিনিউয়াস অ্যাম্বুলেটরি পেরিটোনিয়াম ডায়ালিসিস। এই পদ্ধতিতে রোগীকে বিছানায় শুয়ে থাকতে হয় না। রোগী ঘুরে বেড়াতে পারেন। এতে পেটের ভিতর ক্যাথিটার বসিয়ে দেওয়া হয় এবং তাতে বিশেষ তরল পদার্থটি দিয়ে দেওয়া হয় তখন রোগী ঘণ্টা দুয়েকের জন্য দিব্যি কোথাও ঘুরে আসতে পারেন। এরপর তরল পদার্থকে দেহ থেকে বার করে নিতে হয়। এই পদ্ধতিতে রোজ ডায়ালিসিস করতে হয়। ওয়াটার ডায়ালিসিস ব্যবহৃত তরল পদার্থটির দাম খুব বেশি হওয়ায় এই ধরনের ডায়ালিসিসে মসে প্রায় ২০,০০০ টাকা খরচ পড়ে।

হিমে৷ ডায়ালিসিসে বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি লাগে। তাই সপ্তাহে দু’-তিনবার এই ডায়ালিসিস হাসপাতাল বা নসিংহোমে থেকে করতে হয়। এই ধরনের ডায়ালিসিস বাড়ির লোকের পক্ষে করা সম্ভব নয়। এই ডায়ালিসিসে বিভিন্ন ধরনের বিধি-নিষেধ মেনে চলতে হয়। মাসে প্রায় ১৫,০০০ টাকা খরচ হয়। যদি রোগীর সামর্থ থাকে তাহলে ডায়ালিসিস করে তাকে ১৫-২০ বছর বাঁচিয়ে রাখা যায়।

কখন পাল্টাতে হবে | Kidney Failure Symptoms

কিডনি খারাপ হয়ে গেলে আমাদের শরীরে বিশেষ কতকগুলি লক্ষণ স্পষ্ট হয়। রোগীর রক্ত কমে যায়। শ্বাসকষ্ট হয়। শরীর ফোলে। শরীরে ইউরিয়া, ক্রিয়েটিনিন প্রভৃতির পরিমাণ বেড়ে যায়। আন্ট্রাসাউন্ড করে নিশ্চিত হতে হয় কিডনির প্রকৃত অবস্থা সম্বন্ধে। এরপর শুরু হয় চিকিৎসা। চিকিৎসকরা সব সময় চেষ্টা করেন ওষুধ দিয়ে কিডনি পাল্টানোর ব্যাপারটা এবং ডায়ালিসিসকে পিছিয়ে নিতে। হ্যাঁ, কিডনি খারাপ হলে হয় কিডনি পাল্টাতে হয়, না হলে ডায়ালিসি করতে হয়। তবে ওষুধ দিয়েই রোগীকে পাঁচ বছর বা তারও বেশি সময় ডায়ালিসিস্ বা কিডনি পাল্টানো থেকে দূরে সরিয়ে রাখা যায়।

কোথায় পাবেন

কিডনি পাল্টাবার প্রয়োজন হলে রোগীর আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে প্রথমেই প্রশ্ন ওঠে কিডনি কোথায় পাবো? প্রথমেই বলে রাখি, পরিবারেরই কারোর কিডনি দেওয়া উচিত। প্রথমে দাতার এবং গ্রহীতার ব্লাড গ্রুপের মিল খুঁজতে হবে। তারপর দেখতে হবে দাতার হেপাটাইটিস-বি, এইড্স প্রভৃতি রোগ আছে কি না। এরপর ব্লাড গ্রুপ মিললে এবং ঐসব রোগ না থাকলে ক্রস ম্যাচ কারে দেখতে হবে যে নেগেটিভ রিঅ্যাকশন হচ্ছে কি না। নেগেটিভ রিঅ্যাকশন হলে সমস্ত শরীরে পরীক্ষা হবে এবং যদি দেখা যায় দাতা সম্পূর্ণ সুস্থ এবং মানসিকভাবে প্রস্তুত তাহলেই তিনি কিডনি দান করতে পারবেন কিডনি দান করার পর দাতা সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন।

পরিবারের কারোর সঙ্গে ব্লাড গ্রুপ না মিললে বা পরিবারে কোনো দাতা না থাকলে তখন প্রশ্ন আসে বাইরে থেকে কিডনি জোগাড় করার। আমাদের দেশে, সত্যি কথা বলতে কী, এটা খুবই দুরূহ। তবে বিদেশে অনেকেই তাদের কিডনি, হৃৎপিণ্ড, যকৃত প্রভৃতি দান করে যান। যখন রোগীর মৃত্যু আসন্ন বা আরও ভালো করে বললে বলা হয়, রোগীর মস্তিষ্কের মৃত্যু ঘটে গেছে কিন্তু কৃত্রিমভাবে তাকে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে তখন বিটিং হার্টে কিডনি দুটি বের করে নিতে হবে। এই দুটি কিডনি কিন্তু দুটি মানুষের জীবন বাঁচাতে পারে। তাই এব্যাপারে আমাদের সচেতনতা বাড়ানো জরুরি।

বদলের খরচ

কিডনি পাল্টানোর জন্য দুটো অস্ত্রোপচার করা জরুরি। একটি অস্ত্রোপচার করা হয় দাতার শরীরে, অপরটি করা হয় গ্রহীতার শরীরে। দাতার শরীর থেকে অস্ত্রোপচার করে কিডনিটি বের করে দেওয়া হয় এবং গ্রহীতার শরীরে অস্ত্রোপচার করে তার কিডনি বড় হয়ে গেলে বা ইনফেকশনে নষ্ট হলে বাদ দিতে হয়। না হলে অন্য কারণে কিডনি নষ্ট হলে তা শরীরের ভিতরে রেখেই নতুন কিডনি বসাবার ব্যবস্থা করতে হয়। এজন্য দাতা এবং গ্রহীতা উভয়কেই ২৫-৩০ দিন হাসপাতালে থাকতে হয়। ওষুধ দিয়ে কিডনিকে রক্ষা করা হয়। ওষুধগুলো খুব দামি। অস্ত্রোপচার এবং হাসপাতালে থাকার খরচও আছে। তাই সব মিলিয়ে খরচ হয় দেড় লাখ টাকার মতো। কিডনি বদলের পর সারা জীবন প্রতি মাসে প্রায় আট-দশ হাজার টাকার ওষুধ খেতে হয়। তাই কিডনি পাল্টানো যথেষ্ট ব্যায় বহুল। সাধারণ মানুষের পক্ষে প্রায় অসম্ভব।

কিডনি বদল করার পরেও কিডনি অনেক সময় শরীরের সঙ্গে খাপ খায় না। তখন ধরে নেওয়া যায় যে শরীর কিডনি গ্রহণ করছে না। তখন আবার ডায়ালিসিস করতে হবে। কিডনি বদল করার পর সঠিকভাবে বিধিনিষেধ মেনে চললে ২০-২৫ বছর পর্যন্ত একজন বাঁচতে পারে। কিডনি যেকোনো বয়সেই পাল্টানো যায়। তবে ৭০ বছরের ওপর কারোর কিডনি পাল্টানোর প্রয়োজন হলে আমরা তাকে কিডনি পাল্টাতে নিষেধ করি। অবশ্য সে যদি সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয়, তাহলে ৭০ বছর বা তার বেশি বয়সেও কিডনি পাল্টানো যেতে পারে কিডনি পাল্টাবার পর এমনকী বিয়ে করাও যেতে পারে।

সতর্কতা

কিডনি পাল্টাবার পর প্রোটিন ও পটাশিয়াম লবণ গ্রহণের ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা মেনে চলতে হবে। খুব বেশি বা খুব কম জল না খেয়ে সঠিক পরিমাণে জল খেতে হবে। ডাক্তারবাবুর পরামর্শ ছাড়া উল্টোপাল্টা অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ এবং পেইনকিলার একদমই খাওয়া চলবে না। লক্ষ্য রাখতে হবে, রোগীর ডায়াবেটিস, ব্লাডপ্রেসার প্রভৃতি যেন নিয়ন্ত্রণে থাকে।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Exit mobile version