উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায় | Hypertension | High Blood Pressure Symptoms

আলোচনার আগে একবার চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক একটা ছোট্ট পরিসংখ্যানের ওপর। সচেতনতা আর স্বাস্থ্য পরিষেবায় এক নম্বরে থাকা দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৬ কোটি মানুষ উচ্চ রক্তচাপের শিকার। আর ভারতে ১৫ থেকে ২০ কোটি মানুষ। কী প্রাচ্যে, কী পাশ্চাত্যে— লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রাতের সংখ্যা। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বাড়ছে উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যা। বাড়ছে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রক ওষুধের বিক্রি।  সমস্যা যে কতটা ভয়ঙ্কর এবং গভীর, তা সহজেই বোঝা যায় ওষুধের বিক্রির বহর দেখে। সারা পৃথিবীতে এখন রক্তচাপ কমানো ওষুধের বিক্রিই সব থেকে বেশি।

রক্তচাপ কী এবং কত স্বাভাবিক?

রক্তচাপ হল ধমনীতে প্রবাহিত রক্তের পার্শ্বচাপ। হার্টের নিলয়ের সংকোচনকালে প্রবাহমান ধমনীর প্রাচীরের ওপর যে চাপ সৃষ্টি হয়, তাকে বলে সংকোচনশীল রক্তচাপ (সিস্টোলিক ব্লাড প্রেসার) আর নিলয়ের প্রসরণকালের চাপকে বলে প্রসারণকালীন রক্তচাপ (ডায়াস্টোলিক ব্লাড প্রেসার)। স্বাভাবিক রক্তচাপ সবসময়ই ১৪০/৮৫ মিলিমিটার পারদের কম হওয়া উচিত। অর্থাৎ সিস্টোলিক বা সংকোচনকালীন রক্তচাপ হতে হবে ১৪০ মিলিমিটার পারদের কম এবং ডায়াস্টোলিক বা প্রসারণকালীন চাপ হবে ৮৫ মিমি, পারদের কম। 

প্রশ্ন হল, রক্তচাপ কত হলে তা উচ্চ রক্তচাপ বলে গণ্য হবে? সাধারণভাবে সংকোচনকালীন রক্তচাপ ১৪০ থেকে ১৫৯ হলে মৃদু রক্তচাপ এবং ১৬০ এর বেশি থাকলে অতিরিক্ত রক্তচাপ বা উচ্চরক্তচাপ আর প্রসারণকালীন রক্তচাপ ৮৫ থেকে ৮৯ হলে স্বাভাবিকের উচ্চমাত্রা ৯০ থেকে ১০৪ সামান্য রক্তচাপ, ১০৫ থেকে ১১৪ মাঝারি এবং ১১৫ মিমি এর বেশি হলে তখন অতিরিক্ত বা উচ্চ রক্তচাপ বলা হয়। তবে বয়স, ওজন এবং নারী-পুরুষ ভেদে রক্তচাপের এই সীমারেখার কিছুটা হেরফের ঘটে।

blood pressure problem

উচ্চ রক্তচাপের কারণ

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উচ্চ রক্তচাপের তেমন কোনও সুনির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না তবে লক্ষ্য করে দেখা গেছে, ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রেই দায়ী বংশগত প্রভাব। মুখ্য এই কারণ ছাড়া বাকি ১০ শতাংশের ক্ষেত্রে যে-সব গৌণ কারণ প্রভাব বিস্তার করে সেগুলো হল কিডনির অসুখ, হরমোনজনিত অসুখ, জন্মনিয়ন্ত্রণের বড়ি, অ্যাড্রেনালিন, স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধের ব্যবহার ইত্যাদি। তা ছাড়া মহাধমনীর সংকোচন বা গর্ভাবস্থায় বিষক্রিয়ার ফলেও রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে। এ-সবের সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপকে জটিল স্তরে পৌঁছে দিতে পারে নিজস্ব কিছু বদভ্যাস  বা জীবনযাপন। যেমন— মেদবৃদ্ধি, ধুমপান, চর্বিজাতীয় খাদ্যদ্রব্য, খাবারে নুনের আধিক্য, কোষ্ঠবদ্ধতা এবং মানসিক চাপ।

কি ভাবে বুঝবেন এটি ?

সমস্যার কথা, অনেক ক্ষেত্রেই কোনওরকম লক্ষণ ছাড়াই ধীরে ধীরে শরীরে জাঁকিয়ে বসে এই রোগ। আবার অনেক সময় থাকে খুবই সাধারণ লক্ষণ। তাই এই রোগ আগেভাগেই নির্ণয় করতে প্রয়োজন রুটিন মাফিক রক্তচাপ পরীক্ষা করা। তাহলে লাগাম্‌ছাঁড়া হয়ে ওঠার আগেই এই রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে। হাইপারটেনশন যে সব সাধারণ লক্ষণ নিয়ে আসে, তা হল: মাথাব্যাথা —বিশেষ করে মাথার পেছন দিকে, মাথা ঘোরা, বুকে ব্যথা, বুক ধড়ফড় করা, চোখে ঝাপসা দেখা এবং দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া, পা ফোলা, মাংসপেশির দুর্বলতা, সহজে ক্লান্ত হয়ে পড়া, শ্বাস প্রশ্বাসে কষ্ট। বাড়াবাড়ি পর্যায়ে নাক থেকে রক্তপাত, রক্তপ্রস্রাবও হতে পারে। রোগী হারাতে পরে যৌনক্ষমতাও। আবার বংশগত কারণে না হয়ে উচ্চ রক্তচাপ যদি অন্য কোনও অসুখের প্রভাবে হয়, তাহলে সেক্ষেত্রে সেই রোগের লক্ষণও রোগীর শরীরে হাজির থাকে।

 কি কি ক্ষতি হতে পারে ?

উচ্চ রক্তচাপের ফলে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় হৃদযন্ত্র। তা ছাড়া চোখের মধ্যে রক্তক্ষরণ হতে পারে। ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যায় কিডনির কর্মক্ষমত। এবং মস্তিষ্কে রক্ত রক্তসরবরাহকারী ধমনী সংকুচিত বা একেবারে বন্ধ হয়ে গিয়ে সেরিব্রাল থ্রম্বোসিস বা স্ট্রোক ঘটাতে পারে। তাই ম্যালিগন্যান্ট ব্লাড প্রেসারের ক্ষেত্রে একমুহূর্তও নষ্ট না করে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করে দেওয়া উচিত। না হলে মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে মারাত্মকভাবে। রক্তচাপ যখন ২০০/১৮০ মিমি বা তারও বেশি হয়ে যায়, তখন তা ম্যালিগন্যান্ট ব্লাড প্রেসার। এই অবস্থাতেই সাধারণত এই রোগের মারাত্মক উপসর্গগুলো দেখা যায়। যেমন – চোখের মধ্যে রক্তক্ষরণ, প্রচণ্ড মাথা ঘোরা, হাতে-পায়ে খিঁচুনি, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।

কখন শুরু করা উচিত চিকিৎসা ?

অনেকেই প্রশ্ন করেন, উচ্চ রক্তচাপ কোন সীমারেখা ছাড়ালে চিকিৎসা শুরু করা উচিত, এ-বিষয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মধ্যেই মতবিরোধ রয়েছে তবে অধিকাংশ চিলিৎসকের মত – সংকোচনশীল রক্তচাপ ১৪০ এবং প্রসারণকালীন রক্তচাপ ৯০-এর বেশি হলেই চিকিৎসা শুরু করে দেওয়া উচিত। বিশেষ করে যাদের ডায়াবেটিস, মেদবাহুল্য ইত্যাদির পারিবারিক ইতিহাস আছে। তা হলে সহজেই এড়ানো সম্ভব হয় উচ্চ রক্তচাপ জনিত জটিলতা।

তবে একটা কথা মাথায় রাখা উচিত, বয়সভেদে স্বাভাবিক রক্তচাপের সামান্য হেরফের ঘটে। কেননা, বয়স বাড়লে ধমনীগুলোর স্থিতিস্থাপকতা কমে যায়, ধমনীর নালীপথ কিছুটা সরু হয়ে যায়। তাই রক্তচাপ কিছুটা বাড়ে। কিন্তু ওই সামান্য বাড়তি রক্তচাপের জন্য অযথা টেনশন বাড়াবেন না। তাহলে সেটাই হবে বিপদের। কারণ অনেকের আবার মাঝে মধ্যেই হঠাৎ করে রক্তচাপ অনেকটা বেড়ে যায় আবার কিছুক্ষণের মধ্যেই তা ফিরে আসে স্বাভাবিক অবস্থায়। এই বাড়া-কমা করে রক্তচাপ। এটাকে বলা হয় ফ্লাকচুয়েটিং ব্লাডপ্রেসার। এরকম হওয়ার পেছনে মূলত দায়ী মানসিক চাপ। মানসিক চাপ হু হু করে বাড়িয়ে দেয় ব্লাডপ্রেসার। মানসিক চাপ কমলে কমে রক্তচাপও। তা ছাড়া কিছু অসুখ যেমন ফিওক্রোমো-সাইটোমা ইত্যাদিতে রক্তচাপ হঠাৎ করে বেড়ে যেতে পারে।

উচ্চ রক্তচাপ কমানোর খাবার

সত্যি কথা বলতে কী, প্রচলিত একটা ধারণা ধূমপান নাকি রক্তচাপ বাড়ায়। যদিও এমন কোনও তথ্য গবেষণায় পাওয়া যায়নি। তা সত্ত্বেও উচ্চ রক্তচাপের রোগীদেরকে ধূমপান করতে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়। কেননা, ধূমপানের সঙ্গে হাইপ্রেসারের সরাসরি যোগসূত্র না থাকলেও হার্টের সঙ্গে ধূমপানের শত্রুতা প্রমাণিত। আর এটাও প্রমাণিত যে, হাইপ্রেসার মারাত্মক ক্ষতি করে হাদযন্ত্রের। হাইপ্রেসারের সঙ্গে ধূমপান যৌথভাবে আক্রমণ চালায় হৃদরোগ থেকে হৃদযন্ত্রকে বাঁচানো দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। তাই উচ্চরক্তচাপ থাকলে ধূমপান কঠোরভাবেই নিষিদ্ধ। তবে ধূমপানের সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপ বাড়া কমার সরাসরি কোনো যোগসূত্রের প্রমাণ না পাওয়া গেলেও এটা প্রমাণিত সত্য যে মদ্যপান রক্তচাপ বাড়ায়। দেখা গেছে, অতিরিক্ত মদ্যপান রক্তচাপ বাড়াতে যথেষ্ট সহায্য করে। তাই স্বাভাবিকভাবেই মদ্যপান-কমলে রক্তচাপও কমে। তবে দিনে দু-এক পেগ মদ্যপানে রক্তচাপের তেমন একটি হেরফের ঘটে না। যদিও অধিকাংশ চিকিৎসক মদ্যপান পুরোপুরি ত্যাগ করার পরামর্শই দিয়ে থাকেন।

উচ্চ রক্তচাপে চর্বি জাতীয় খাবার সমস্যাটা সৃষ্টি করে অন্যরকম ভাবে। আসলে চর্বিজাতীয় খাবার, বিশেষ করে স্যাচুরেটেড ফ্যাট রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। যা হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে। আর স্নেহ পদার্থ ধমনীর অভ্যন্তরে জমে গিয়ে ধর্মনীকে শক্ত এবং সরু করে দেয়, ফলে ব্যাঘাত ঘটে রক্ত চলাচলে এবং এর ফলে রক্তচাপ বেড়ে যায়। তবে এসব ক্ষেত্রে কেবলমাত্র সংকোচনশীল রক্তচাপেরই বৃদ্ধি ঘটে তাই এধরনের রক্ত চাপকে বলা হয় ‘সিস্টোলিক হাইপারটেনশন।’ 

বহুল প্রচলিত একটা ধারণা, উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা নাকি সামান্যতেই রেগে যান। এই ধারণার পেছনে তেমন কোনও সত্যতা এখনও পর্যন্ত মেলেনি। কেননা, উচ্চরক্তচাপের অনেক রোগীই অসম্ভব রকমের শান্ত হন। আবার উচ্চ রক্তচাপের শিকার নন, এমন লোকও হঠাৎ হঠাৎ রেগে যান। আসলে চট করে রেগে যাওয়া বা না যাওয়ার জন্য দায়ী সেই ব্যক্তির মানসিক গঠন, রক্তচাপ নয়। তবে হ্যাঁ, উচ্চ রক্তচাপ আছে এমন রোগীদের সবসময়ই ঝগড়া বা উত্তেজনা এড়িয়ে চলা উচিত। কেননা, উত্তেজিত অবস্থায় ক্যাটিকোলামাইন নামে এক হরমোন নিঃসৃত হয়ে রক্তচাপের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উচ্চ রক্তচাপ যেহেতু বংশগত, তাই পুরোপুরি উচ্চ রক্তচাপের ছোবলমুক্ত হওয়া প্রায় অসম্ভব। তবে কয়েকটা সাবধানতা নিতে পারলে সহজে বাগে আনা যায় এই রোগকে। এজন্য যেসব ব্যবস্থা নেওয়া উচিত, তা হল –

  • নিয়মিত ও পরিমিত ব্যায়াম।
  • মেদ ঝরানো।
  • ধূমপান ত্যাগ করা।
  • পরিমিত সুষম খাদ্যগ্রহণ।
  • স্নেহজাতীয় খাবার যেমন ঘি, মাখন, রেড মিট, ডিম ইত্যাদি ত্যাগ করা।
  • দৈনিক ৫ গ্রামের বেশি নুন না খাওয়া।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করা এবং মানসিক চাপ কমানো।

চিকিৎসা পদ্ধতি 

একটা কথা পরিষ্কার করে জানিয়ে দেওয়াই ভালো, এই রোগ সম্পূর্ণ নিরাময় করা সম্ভব নয়। তবে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য বেশ কিছু ভালো ওষুধ রয়েছে। আর রক্তচাপ এড়ানোর উপায়গুলোও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনেরই অঙ্গ। যেহেতু এই রোগ পুরোপুরি নিরাময় করা যায় না, তাই নিয়ন্ত্রণে রাখতে ওষুধ খেতে হয় আজীবন।

তবে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের বেশ কিছু ভালো ওষুধ থাকলেও একটা সমস্যা আছে। সমস্যা হল ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। যেমন—রক্তচাপ হঠাৎ কমে যাওয়া, রক্তে পটাসিয়াম কমে যাওয়া, হার্টের গতি কমে যাওয়া, পুরুষত্বহীনতা, পা ফোলা, বমি ভায়, শুকনো কাশি ইত্যাদি দেখা যায় ওষুধগুলোর দীর্ঘদিন ব্যবহারে। তাই রক্তচাপ সামান্য বেশি হলে সাধারণত ব্যায়াম, সুষম খাদ্য গ্রহণ ইত্যাদির মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। যখন ওষুধ ছাড়া কোনও উপায়ই থাকে না তখন বিবেচনা করতে হয় কম পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়াযুক্ত ওষুধের কথা। এবং অবশ্যই তা দামে কম হতে হবে এবং ওষুধের কার্যকরী ক্ষমতা যেন ২৪ ঘণ্টা স্থায়ী হয়, তা-ও দেখতে হবে।

চিকিৎসার মূল উদ্দেশ্য হবে প্রাথমিকভাবে প্রসারণকালীন রক্তচাপ ৯০-এর কমে রাখা এবং পরবর্তীকালে ধীরে ধীরে ৮৫-র কম করা। এর থেকে কম হলে নানা অসুবিধার সৃষ্টি হতে পারে।

তবে সঙ্কোচনকালীন রক্তচাপ কত’র মধ্যে রাখা উচিত সেই বিষয়ে মতভেদ আছে। মোটামুটিভাবে বলা যায় রক্তচাপ ১৪৫-এ রাখা উচিত। এর থেকে কম হলে নানা উপসর্গ দেখা দিতে পারে, বিশেষত বয়স্কদের ক্ষেত্রে।

একটা কথা আবার মনে করিয়ে দিই, যে কোনও রক্তচাপের রোগীকেই অন্তত ছ’মাস ওষুধ না দিয়ে চিকিৎসা করা উচিত।

ওষুধ ছাড়া চিকিৎসা পদ্ধতি 

উচ্চ রক্তচাপ স্বাভাবিক মাত্রায় রাখাই চিকিৎসার উদ্দেশ্য। কিন্তু শুধু ডাক্তারি করলেই হবে না, চাই রোগীর চেষ্টা। ওষুধ নয়, খাওয়া দাওয়া তার দৈনন্দিন কাজকর্মের মধ্যে আছে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের প্রথম ধাপ। তাই আপনার যা যা করা উচিত :

  • ধূমপান বন্ধ করা।
  • মেদ বেশি থাকলে তা কমিয়ে স্বাভাবিক মাত্রায় আনা।
  • দৈনিক মোট ৫ গ্রামের বেশি নুন না খাওয়া। অবশ্য আমাদের মতো গরম দেশে, যেখানে সারাদিনে ঘামের সঙ্গে অনেক নুন বেরিয়ে যায় সেখানে একেবারে নুন ছাড়া খাওয়া অনেক সময় ক্ষতিকর হতে পারে।
  • আঁশযুক্ত খাবার বেশি খাওয়া।
  • সম্পৃক্ত চর্বি জাতীয় খাবার, যেমন—ঘি, মাখন, মালাই, চিজ না খাওয়া।
  • চা, কফি কম খাওয়া।
  • মদ্যপান ত্যাগ করা বা না করা।
  • শারীরিক পরিশ্রম বজায় রাখা।
  • যোগব্যায়ামের সাহায্যে মানসিক দুশ্চিন্তা দূর করা।

ওষুধ ছাড়া রক্তচাপের চিকিৎসায় রোগীর সহযোগিতার খুবই প্রয়োজন। এতে ফল লাভে অনেক সময় অনেক দেরি হয় বলে অনেকেই ধৈর্য হারিয়ে ফেলেন। এমনকী কোনও কোনও ক্ষেত্রে চিকিৎসকরাই এই চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা বুঝতে চান না।

এছাড়া উপযুক্ত এবং পর্যাপ্ত চিকিৎসার পরেও অনেক সময় রক্তচাপ কমতে চায় না। তার সম্ভাব্য কারণ হল- 

  • রোগীর ওষুধ ব্যবহারে অবহেলা। 
  • অতিরিক্ত নুন খাওয়া। 
  • রোগীর ওজন বৃদ্ধি। 
  • সঙ্গে ব্যবহূত অন্য ওষুধের প্রতিক্রিয়া যেমন জন্মনিয়ন্ত্রণের বড়ি, স্টেরয়েড, এড্রিনালিন এফিড্রিন ইত্যাদি। 
  • অন্য কোনও অসুখের কারণে উচ্চ রক্তচাপ।

সঠিক রক্তচাপ নির্ণয়ের পদ্ধতি 

  • রক্তচাপ অন্তত তিনবার মেপে তার গড় হিসাবটি সঠিক মাপ হিসাবে ধরা।
  • রক্তচাপ মাপার একঘণ্টা আগে থেকে চা বা কফি পান না করা।
  • ১৫ মিনিটের মধ্যে ধূমপান না করা।
  • চোখে বা নাকের ফেনিলেফ্রিন যুক্ত ড্রপ ব্যবহার না করা।
  • অন্তত ১৫ মিনিট বিশ্রামের পর রক্তচাপ মাপা।
  • বয়স্ক লোকের ক্ষেত্রে শুয়ে বা বসে রক্তচাপ পরীক্ষার পর দাঁড়ানো অবস্থায় আবার রক্তচাপ দেখা।

রক্তচাপ নির্ণয়ে ভুল হবার কারণ ।

  • স্ফিগমোম্যানোমিটারে ত্রুটি—রবারের থলি সঠিক মাপের না হওয়া। 
  • সঠিকভাবে মাপ না নেওয়া।
  • রবারের থলি সঠিকভাবে না লাগানো।
  • হৃদস্পন্দন অনিয়মিত হলে রক্তচাপ সঠিকভাবে মাপা অসুধিজনক হতে পারে।
  • যে যন্ত্রে রক্তচাপ মাপা হচ্ছে তা হার্ট থেকে উঁচুতে বা নিচে রাখা।
  • খুব দ্রুত পারদের চাপ কমিয়ে আনা।
  • অতিরিক্ত ধীরে ধীরে পারদের চাপ কমানো। 
  • উপযুক্ত বিশ্রামের আগেই রক্তচাপ নেওয়া। 
  • খুব ঠাণ্ডা না গরম জলে স্নানের অব্যবহিত পরেই রক্তচাপ মাপা।
  • রাতভর অনিদ্রার পর সকালেই রক্তচাপ নেওয়া।
  • অতিরিক্ত মানসিক উত্তেজনার মধ্যে রক্তচাপ মাপা ইত্যাদি ইত্যাদি।

পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রক্তচাপ সব থেকে বেশি থাকে দুপুরে এবং সব থেকে কম ঘুমের মধ্যে। এই ঘুম দুপুরে বা রাতে যে সময়েই হোক ঘুমের সময় রক্তচাপ কমে যাওয়া করোনারি থ্রম্বোসিসের কারণ হতে পারে। ঘুম ভাঙার পর থেকেই রক্তচাপ বাড়তে থাকে। অন্যান্য যে সব সাধারণ কারণে রক্তচাপ সাময়িকভাবে বাড়তে পারে, তার মধ্যে অন্যতম ধূমপান। এই বৃদ্ধি ১৫-২০ মিনিট স্থায়ী হয়। মূত্রথলিতে প্রস্রাব জমে থাকলেও রক্তচাপ বাড়তে পারে।

প্রয়োজনীয় পরীক্ষা

  • প্রস্রাব পরীক্ষা, বিশেষত অ্যালবুমিন, সাদা কণিকা, লাল কণিকা, 
  • প্রস্রাবে জীবাণুর সংক্রমণ, 
  • রক্তের হিমোগ্লোবিন, 
  • রক্তে সোডিয়াম ও পটাসিয়াম; 
  • রক্তে ইউরিয়া ও ক্রিয়েটিনি, 
  • রক্তে গ্লুকোজ, কোলেস্টেরল, 
  • বুকের এক্স-রে, 
  • ই সি জি 
  • ইকোকার্ডিওগ্রাম, 
  • আই. ভি. পি . 
  • কিডনির আলট্রাসোনোগ্রাম,
  • প্রস্রাবে ও রক্তে ক্যাটেকলামিন  
  • রক্তে কর্টিসল, 
  • অ্যানজিওগ্রাফি, 
  • রক্তে বিভিন্ন হরমোনের মাত্রা, 
  • রক্তে রেনিনের পরিমাণ।

অন্যান্য যেসব অসুখের কারণে উচ্চ রক্তচাপ দেখা যেতে পারে 

কিডনির অসুখ

  • ক্রনিক পায়েলো
  • একিউট নেফ্রাইটিস
  • ক্রনিক নেফ্রাইটিস
  • পলিসিস্টিক কিডনি
  • রেনাল আর্টারি স্টেনোসিস্  
  • রেনাল  ইনফার্কসন 
  • কিডনির কয়েক প্রকার টউমার।

.

অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির অসুখ

  • কুসিন্স সিনড্রোম 
  • অ্যাক্রোমেগ্যালি 
  • ফিওক্রোমোসাইটোমা 
  • মিক্সিডিমা
  • হাইপার এলড্রটেরোনিসম
  • হাইপার প্যারাথাইরোয়েডিজম  
  • জন্মগত অ্যড্রিনাল গ্রন্থির বৃদ্ধি।

.

অন্যান্য কারণ 

  • গর্ভাবস্থা 
  • এক্লাম্পসিয়া 
  • কেয়ার্কটেশন অব এওরটা 
  • পলিনিউরাইটিস
  • পরফাইরিয়া 
  • হাইপার ক্যালসিমিয়া 
  • পলি আর্টেরাইটিস নডোসা।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Exit mobile version