Home মহিলাদের স্বাস্থ্য Irregular Periods: ঋতুস্রাব হচ্ছে না?

Irregular Periods: ঋতুস্রাব হচ্ছে না?

আক্ষরিক অর্থে রজঃস্রাব বা মাসিক না হওয়াকে অ্যামেনোরিয়া বলা হয়। প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি দুটো কারণেই এটা হতে পারে। প্রাইমারি অ্যামেনোরিয়া সাধারণত মেয়েদের ৯-১০ বছর বয়সে রজঃস্রাব শুরু হয়। স্তনের গঠন সম্পূর্ণ হয় এবং শরীরের বিশেষ বিশেষ জায়গায় রোমের বিকাশ হয়। যদি কারো ১৬ বছরেও এসব লক্ষণ প্রকাশ না পায় তখন একে বলে প্রাইমারি অ্যামেনোরিয়া। 

সেকেন্ডারি অ্যামেনোরিয়া- এক্ষেত্রে মেয়েটির রজঃস্রাব শুরু হয় কিন্তু নিয়মিত হয় না। সাধারণভাবে রজঃস্রাব বন্ধ থাকার কারণ যেমন, সন্তানসম্ভবা হওয়া, সন্তানকে দুধ খাওয়ানো, জন্ম নিয়ন্ত্রণের বড়ি খাওয়া কিংবা মেনোপজ—এসব কোনো কিছু না থাকা সত্ত্বেও তিন-চার মাস রজঃস্রাব বন্ধ থাকা কিন্তু ইঙ্গিতবাহী।

যেসব মহিলার নিয়মিত রজঃস্রাব হয় বুঝতে হবে তার হাইপোথ্যালামাস, পিটুইটারি গ্ল্যান্ড, ওভারি ও ইউটেরাস সব কিছু স্বাভাবিকভাবেই — কাজ করছে। হাইপোথ্যালামাস থেকে নিঃসৃত হরমোন পিটুইটারি গ্রন্থিকে সাহায্য করে ফলিকল স্টিমুলেটিং হরমোন বা এফ.এস.এইচ এবং লিউটেনাইজিং হরমোন বা এল.এইচ নিঃসরণে। এই দুই হরমোনের প্রভাবে ওভারি থেকে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোন নিঃসৃত হয়। ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোন জরায়ুর এন্ডোমেট্রিয়ামে পরিবর্তন এনে ঠিক সময়ে রজঃস্রাব হতে সাহায্য করে। এছাড়া রজঃস্রাব ঠিকমতো হওয়ার জন্য জেনিটাল ট্রাক্ট বা জননাঙ্গের পথে কোনো বাধা না থাকাটাও জরুরি। কাজেই অ্যামেনোরিয়া দেখা দিতে পারে এই পুরো বিষয়টার সঙ্গে যুক্ত অঙ্গপ্রতঙ্গে । যেমন হাইপোথ্যালামাস, পিটুইটারি, ওভারি, ইউটেরাস এমনকী জননাঙ্গে কোনো সমস্যা থাকলে।

কারণ 

হাইপোথ্যালামাস বা মস্তিষ্কের সমস্যা

পিটুইটারি গ্ল্যান্ডের সমস্যা

হাইপো প্রোল্যাক্টিনেমিয়া অর্থাৎ প্রোল্যাক্টিন হরমোনের অতিরিক্ত নিঃসরণ। স্তন্যপান করানো মহিলাদের সাধারণত এই হরমোন বেশি নিঃসৃত হয় দুধের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য। কিন্তু কখনো কখনো পিটুইটারি গ্ল্যান্ডে প্রোল্যাক্টিনোমা নামে টিউমারের জন্য এই হরমোনের পরিমাণ বাড়তে পারে। তখন অ্যামেনোরিয়া দেখা দেয়।

  • পিটুইটারি গ্ল্যান্ডের অন্যান্য সমস্যা যেমন, কুশিং সিনড্রোম, অ্যাক্রোমেগালি অথবা থাইরয়েড স্টিমুলেটিং হরমোনের প্রভাবেও এমন হতে পারে।
  • পোস্টপারটাম পিটুইটারি নেক্রোসিসের জন্য এমন হতে পারে। সন্তানের জন্ম দেওয়ার পর অনেক সময় পিটুইটারি কোষের মৃত্যু ঘটে তখন এমন সমস্যা হতে পারে।
  • অটোইমিউন হাইপোফাইসিস অর্থাৎ পিটুইটারি গ্ল্যান্ডের কোষের বিরুদ্ধে শরীর প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
  • ক্রেনিওফ্যারিঞ্জিওমা (পিটুইটারি গ্ল্যান্ডের টিউমার)।
  • পিটুইটারি রেডিয়েশন। 
  •  সারকয়েডোসিস।

ওভারিয়ান বা ডিম্বাশয়ের সমস্যা

  • ঠিকমতো ডিম্বাণু নিঃসৃত না হওয়া 
  • অ্যানড্রোজেন বা পুরুষ হরমোন বেশি নিঃসৃত হওয়া
  • পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম থাকা 
  • প্রিম্যাচিওর ওভারিয়ান ফেলিওর বা সময়ের আগে মেনোপজ দেখা দেওয়া
  • টার্নার সিনড্রোম
  • ওভারির গঠনগত ত্রুটি বা পিওর গোনাডাল ডিসজেনেসিস
  • অটোইমিউন উফোরাইটিস
  • ফ্র্যাজাইল এক্স প্রিমিউটেশন
  • রেডিয়েশন অথবা কেমোথেরাপি 
  • গ্যালাক্টোসেমিয়া
  • জননাঙ্গের গঠনগত ত্রুটি
  • ইন্ট্রা ইউটেরাইন অ্যাডহেশনস
  • ইমপারফোরেট হাইমেন বা সতীচ্ছদ পর্দা না ছেঁড়া
  • অ্যাপ্লাসিয়া অর্থাৎ যোনি, জরায়ু ইত্যাদির যে কোনোটার টিস্যু না থাকা।

ফাংশনাল বা কার্যগত

  • অ্যানোরেক্সিয়া বা বুলিমিয়া
  • ক্রনিক ডিজিজ যেমন অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি বা হ্রাস অতিরিক্ত শরীরচর্চা
  • জন্মনিরোধক বড়ি খাওয়া
Irregular periods

চিকিৎসার প্রস্তুতি

পুষ্টির অভাব থাকলে তাদের সুষম খাবার খেতে বলা হয়। ওজন খুব বেশি থাকলে ডায়েট চার্ট মেনে খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এছাড়া শরীরচর্চার মাধ্যমেও ওজন কমাতে হবে। সপ্তাহে ৮ ঘণ্টার বেশি অতিরিক্ত এক্সারসাইজে অ্যামেনোরিয়া হতে পারে। এক্ষেত্রে মডারেট এক্সারসাইজ করতে বলা হয়। অ্যানোরেক্সিয়া নারভোসা কিংবা বয়স ও উচ্চতা অনুপাতে ওজন খুব কম থাকলে খাবার, ওষুধ ইত্যাদির মাধ্যমে ওজন স্বাভাবিক করতে হয়। মানসিক চাপের কারণে হলে সাইকোলজিক্যাল কাউন্সেলিং করাতে হবে। মদ, সিগারেট ছেড়ে একটা স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের প্রয়োজন।

মেডিকেল ট্রিটমেন্ট

চিকিৎসা নির্ভর করে অ্যামেনোরিয়ার কারণের ওপর। কারণ জানা গেলে সেই অনুযায়ী সমস্যা দূর করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হয়। কিছু ক্ষেত্রে অপারেশনের দরকার হতে পারে। যেসব ক্ষেত্রে ওষুধ দেওয়া হয় সেগুলো হল— 

  • ডোপামিন অ্যাগোনিস্ট-এর সাহায্য নেওয়া হয় হাইপারপ্রোল্যাক্টিনেমিয়া থাকলে।
  • হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপির সাহায্যে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোনের তারতম্যের কারণ দূর করা হয়।
  • মেটফরমিন ব্যবহার করা হয় পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম থাকলে।
  • কিছু ক্ষেত্রে ওরাল কন্ট্রাসেপটিভ পিল দিয়েও অ্যামেনোরিয়ার সমস্যা দূর করা হয়। 

কখন অপারেশনের দরকার

  • পিটুইটারি এবং হাইপোথ্যালামাসে টিউমার থাকলে অপারেশন করার দরকার হয়।
  • ইন্ট্রা ইউটেরাইন অ্যাডহেশন থাকলেও অপারেশনের প্রয়োজন হয়।
  • জননাঙ্গের প্রতিবন্ধকতা বা গঠনগত ত্রুটি দূর করার জন্য অপারেশনের দরকার হয়। যেমন- জননাঙ্গে কোনো ছিদ্র না থাকলে।
  • অনেকক্ষেত্রে ছিদ্র ছোট হলে, অ্যাডোলেসেন্স সার্জারি করা হয় ।
  • জরায়ু খুব ছোট হলে অপারেশন করতে হতে পারে।
  • ভ্যাজাইনা না থাকলে কৃত্রিম ভ্যাজাইনা তৈরি করা যেতে পারে ।
  • অনেক সময় ইউটেরাস থাকে, জরায়ু মুখ থাকে না, সেক্ষেত্রে জরায়ু মুখ করে দিয়ে কানেকশন করা হয় প্লাস্টিক সার্জারির মাধ্যমে।
  • স্ট্রমা ওভারি — ডারময়েড টিসু বেশি থাকলে অর্থাৎ ডারময়েড টিউমারের জন্য ৫০%- এর বেশি থাইরয়েড হরমোন নিঃসৃত হয়। এসব ক্ষেত্রে ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারির মাধ্যমে গঠনগত ত্রুটি দূর করা যায়।

অনেক সময় একটা বাচ্চা হওয়ার পর রজঃস্রাব হয় না। তখন দেখা যায় জরায়ুর দুটো দেওয়াল জোড়া লেগে গেছে। হিস্টেরোস্কোপির মাধ্যমে সেই জোড়া ছাড়িয়ে দেওয়া হয় এবং সেখানে ওষুধ দিয়ে দেওয়া হয় যাতে পুনরায় জোড়া না লাগে।

যাদের উইটেরাস খুব ছোট তারা বাচ্চা ধারণ করতে পারবেন না। কিন্তু টেস্ট টিউব বেবি হতে পারে।

বর্তমানে ইউটেরাস ট্রান্সপ্ল্যান্ট করা যায়। পুনেতে এমন তিনজনের ইউটেরাস ট্রান্সপ্ল্যান্ট হয়েছে। এক্ষেত্রে তাদের বাচ্চা ধারণ ও জন্ম দেওয়ার কোনো সমস্যা থাকে না।

অ্যামেনোরিয়ার ফলো আপ

অসুখ একবার সেরে গেলেও নির্ধারিত সময়ের ব্যবধানে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে।

প্রতিরোধের উপায়-

ওজন স্বাভাবিক রাখাই প্রতিরোধের একমাত্র উপায়। এটা কোনো প্রাণঘাতী সমস্যা নয়। ওষুধ, জীবনযাপনে পরিবর্তন এবং সার্জারির মাধ্যমে- অ্যামেনোরিয়া থেকে রেহাই পাওয়া যায়। আর যত দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করা যায় ততই ভালো। কারণ এটা বেশিদিন থাকলে হাড়ের ঘনত্ব কমে গিয়ে হাড় ভঙ্গুর হতে পারে।

সবশেষে বলি, আমেনোরিয়ার চিকিৎসা করে বিবাহ দিতে কোনো বাধা নেই এবং মা হতেও তার অসুবিধা নেই।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Exit mobile version