Home ত্বকের যত্ন নক – আউট চর্মরোগ | Knock Out Skin Diseases 2024

নক – আউট চর্মরোগ | Knock Out Skin Diseases 2024

আমাদের শরীরের বৃহত্তম অঙ্গ চামড়া বা ত্বক। তাই এখানে রোগ ভোগেরও শেষ নেই। বিশেষত বাইরের অঙ্গ বলে জল, বাতাস, রোদ, বৃষ্টি, দূষিত রাসায়নিক পদার্থ সবই চামড়ার ওপর খারাপ বা কুপ্রভাব ফেলে। চামড়ার যে কোনো রোগ হলে প্রথমেই তা সবার চোখে পড়ে; রোগীর কুণ্ঠা বাড়ে, বিশেষ করে রোগের ফলে যদি কোনো সৌন্দর্যহানি ঘটে তবে আত্মবিশ্বাস কমে। সমাজে গ্রহণযোগ্যতা কমে, অনেক প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় এবং মনটা ভেঙে পড়ে বা অবসাদগ্রস্ত হয়। তাই এই সব ক্ষেত্রে রোগের চিকিৎসা খুবই জরুরি। আর তার থেকেও জরুরি আমরা এমন কিছু যেন না করি যা রোগবৃদ্ধির সহায়ক হয় বা রোগকে আরও খারাপের দিকে নিয়ে যায় অথবা নতুন ভাবে আমরা যেন কোনো রোগই সৃষ্টি করে না ফেলি। এই সব ক্ষেত্রে রোগের চিকিৎসা ছাড়াও রোগের প্রতিরোধ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। আজ সেইসব কিছু রোগের ক্ষেত্রে কী করে আমরা সুস্থ থাকতে পারি বা কী করলে ভালো থাকা যায় সেই বিষয়েই আলোচনা করব।

মেচেতা | Melasma Treatment | Hyperpigmentation

মেচেতা মুখে কালো দাগের অন্যতম কারণ। অনেক সময় গর্ভাবস্থায় এই রোগ শুরু হয়। এই ধরনের কালোদাগ সৃষ্টিতে সূর্যালোকের প্রভাব অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বলে ভাবা হয়ে থাকে। কসমেটিক্স বা প্রসাধনী দ্রব্য ব্যবহারও এর কারণ হতে পারে। হেয়ার ডাই-এ পি.পি.ডি (p-Phenylenediamine) থাকার ফলে মুখে কালোদাগ আসতে পারে। একে পিগমেন্টেড কনট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস বলে। তাই প্রসাধন ব্যবহারে মানুষের সবসময়ই সাবধান হওয়া উচিত। কিছু হরমোনের ব্যবহার মুখে কালো দাগ তৈরি করতে পারে। জন্মনিরোধক ট্যাবলেট বা হাইপোথাইরয়েডের জন্য ব্যবহৃত ওষুধ এর মধ্যে অন্যতম।:

কী করবেন বা করবেন না :

  • রোদে বেরোনো বন্ধ করুন। বিশেষত দশটা থেকে চারটের রোদ একদম নয় ।
  • লম্বা হাতার বা শরীর-ঢাকা জামাকাপড় ও ছাতা ব্যবহার করুন। জমাট বুনোনের হালকা রঙের জামাকাপড় পরুন ।
  • মাথায় হ্যাট কিংবা ক্যাপ ও চোখে কালো চশমা ব্যবহার করুন।
  • সানস্ক্রিন লাগানো শুরু করুন। কীভাবে, কখন ও কী ধরনের সানস্ক্রিন লাগাবেন তা ডাক্তারবাবুর কাছে জেনে নিন। মুখে ও শরীরের খোলা জায়গায় অবশ্যই লাগাবেন ।
  • চামড়ার গঠন অনুসারে সানস্ক্রিন বেছে নিন। শুষ্ক চামড়ায় ক্রিম ও তৈলাক্ত চামড়ায় লোশনই বেশি গ্রহণযোগ্য। ব্রণ থাকলে জেল লাগান ৷
  • কেমিক্যাল সানস্ক্রিন থেকে ফিজিক্যাল সানস্ক্রিন ভালো। জিঙ্ক অক্সাইড, টাইটেনিয়াম ডাইঅক্সাইড, আয়রন অক্সাইড হল ফিজিক্যাল সানস্ক্রিন।
  • ইউ.ভি.এ ও ইউ.ভি.বি প্রতিরোধ করে এমন স্পেকট্রাম সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। এস.পি.এফ- ৩০ বা তার বেশি রাখুন।
  • রোদে বেরোবার অন্তত কুড়ি মিনিট আগে সানস্ক্রিন লাগান। কান, ঘাড় ও মাথায় লাগাতে ভুলবেন না।
  • সারা শরীরে লাগাতে প্রায় এক আউন্স সানস্ক্রিন লাগে। ভালোভাবে লাগালে দু’এম.জি লাগাতে হয়। তাই এর ব্যবহার খুব খরচ সাপেক্ষ।
  • সকাল ন’টা থেকে অন্তত বিকেল চারটে পর্যন্ত, দু’ থেকে আড়াই ঘণ্টা অন্তর সানস্ক্রিন লাগাতে হয় ।
  • সর্বোপরি যে সব ওষুধ, হরমোন বা কসমেটিক্স (হেয়ার ডাই, সুগন্ধি দ্রব্য ও অনেক সময় সিঁদুর) কালোদাগের জন্ম দিতে পারে তা বন্ধ করুন।

নির্দিষ্ট’ ওষুধ ব্যবহার ছাড়াও এই সব নিয়মগুলো মেনে চললে উপকার বই কখনও অপকার হবে না।

Knock Out Skin Diseases

শ্বেতী | Vitiligo

শরীরের কিছু অংশে বা বিস্তৃত অংশে সাদা দাগ হয়। রোগী মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। রোগের প্রাথমিক অবস্থায় যে কোনো চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন। রোগ সারানোর প্রক্রিয়া দীর্ঘ হলেও ধৈর্য ধরে লেগে থাকুন। কিছু কিছু রাসায়নিক পদার্থ বা কসমেটিক ব্যবহারের ফলশ্রুতি হিসেবে শরীরের কোনো কোনো অংশে সাদা দাগ হয়ে যায়। একে কেমিক্যাল লিউকোডার্মা বলে। সতর্ক নজর রাখুন। কিছু ডাই এর কারণ। বেশি মাত্রায় প্রখর রোদে ঘুরলেও অনেকসময় শ্বেতী রোগ বৃদ্ধি পেতে পারে। যারা শ্বেতী রোগে ভুগছেন তাদের কোথাও কেটে গেলে বা পুড়ে গিয়ে শুকোনোর সময় ওই সব জায়গাও সাদা হয়ে যেতে পারে। বিন্দি, জুতো, সুতো ব্যবহারে সতর্ক হোন।

কী করবেন বা করবেন না :

  • দুপুরের প্রখর রোদ এড়িয়ে চলুন, সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
  • পি.পি.ডি, অ্যাজোডাই ব্যবহারে কৃপণ হোন বা সতর্ক হোন ।
  • প্লাস্টিক, স্যান্ডাক রবার, জুতো ব্যবহারে নজর রাখুন। ভেজা জুতো একদম নয়। এমনকী কালো মোজাও পরিহার করুন।
  • লাল ও কালো সুতোর রাখি ব্যবহার করবেন না। করলেও তা হবে খুবই স্বল্প সময়ের জন্য।
  • চোট, আঘাত বাঁচিয়ে চলুন।
  • সব খাবারই খাবেন, ভিটামিন-সি বন্ধ করার কোনো কারণ নেই। নির্দিষ্ট পরিমাণে খেলে ক্ষতিও নেই।

দাদ | Ringworm

এটি একটি ছত্রাক জনিত রোগ। সাম্প্রতিককালে এর ব্যাপ্তি এক ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। একই পরিবারের অনেকেই একই সাথে বা ঘুরেফিরে আক্রান্ত হচ্ছেন। আগে গ্রীষ্ম বা বর্ষায় এই রোগ বেশি হলেও এখন সারা বছর জুড়ে এই রোগের প্রাদুর্ভাব। সব বয়সেই সমান বিস্তার। রোগের ধরনও অনেক বদলেছে। চামড়ার ওপর স্টেরয়েড মলম বা কম্বো মলম লাগানোয় রোগের চরিত্র ও লক্ষণ বদলাচ্ছে। অনেকসময় রোগ চিনতেও অসুবিধে হচ্ছে। শরীরের বিভিন্ন অংশে ভিন্ন লক্ষণ নিয়ে এই রোগ প্রকাশিত হচ্ছে। সর্বোপরি সব ওষুধেও আর সমানভাবে কাজ হচ্ছে না।

কী করবেন বা করবেন না :

  • রোগের প্রাথমিক অবস্থায় ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নিন। বন্ধু, বান্ধব, প্রতিবেশী, ঠাকুমা-. দিদিমার উপদেশ বর্জন করুন।
  • স্টেরয়েড ক্রিম বা মলমকে বিষ ভাবুন। স্টেরয়েডের সাথে অ্যান্টিফাঙ্গালের কম্বো ক্রিম খুবই ক্ষতিকারক। এটা বর্জন করুন। সবাইকে করতে বলুন।
  • ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যের দিকে যত্নবান হোন। অন্য কোনো রোগ থাকলে নিরাময়ের ব্যবস্থা করুন।
  • ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বাড়ান। সাবান সহযোগে স্নান করুন। ঘামমুক্ত শুকনো ঝরঝরে শরীর রাখুন। পারলে একবারের বেশি স্নান করুন। শরীরের খাঁজগুলো ঘামমুক্ত ও শুষ্ক রাখুন।
  • জামা, গেঞ্জি ও সবরকম অন্তর্বাস প্রত্যেকদিন পাল্টান। বিছানার চাদর ও বালিশের ওয়াড় পাল্টে ব্যবহার করুন।
  • হালকা গরম জলে জামাকাপড় সাবানে কাচুন। ওয়াশিং মেশিন ব্যবহার করবেন না ।
  • পায়ের আঙুলের ফাঁক শুকনো রাখুন। 
  • জিনস কাচতে না পারলে গরম ইস্ত্রি চালান । 
  • নিয়মিত ওষুধ ব্যবহার করবেন। চিকিৎসার মাঝে ওষুধ বন্ধ করা চলবে না। পরিবারের আক্রান্ত সবাইকে একই সাথে চিকিৎসা করাতে হবে।

হাতের একজিমা | Eczema

হাত ও বৃত্তি অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। হাতের সাহায্যেই আমরা প্রাত্যহিক কাজকর্মগুলো সুষ্ঠুভাবে করে থাকি। হাতের যে কোনো ধরনের একজিমাই তাই সাংসারিক কাজকর্মে বিশেষ সমস্যার সৃষ্টি করে। প্রত্যেক মানুষ তার কর্মক্ষেত্রে বিশেষ করে গৃহিণীরা সংসারের নানা ধরনের কাজের জন্য বিভিন্ন ধরনের জিনিসের সংস্পর্শে আসে। সংসারের বিভিন্ন কাজে জল, সাবান, সবজি, মশলা প্রভৃতির ব্যবহার প্রায় নিত্ত নৈমিত্তিক ব্যাপার। এইসব ব্যবহার্য জিনিস থেকেই একজিমার জন্ম হতে পারে। মুখ্যত এই ধরনের একজিমা দু’রকমের হয়; ইরিট্যান্ট ডার্মাটাইটিস ও অ্যালার্জিক কনট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস। যে জিনিসের ব্যবহারে এই একজিমার জন্ম তার ব্যবহার বন্ধ না করলে নিরাময় একদমই সম্ভব নয়।

কী করবেন বা করবেন না :

  • সন্দেহজনক যে বস্তু থেকে একজিমার উৎপত্তি তা বন্ধ করতে হবে। বন্ধ করার সাথে সাথেই পূর্ণ নিরাময় সম্ভব নয়। পুরোপুরি ভালো হওয়া বেশ সময়সাপেক্ষ।
  • অত্যধিক জল ঘাঁটা বন্ধ করতে হবে। শুধুমাত্র জলের ব্যবহারেও অনেকের একজিমা হতে পারে।
  • সাবান দিয়ে কাপড় কাচা ও বাসনমাজা, মিউরিটিক অ্যাসিড ব্যবহার, মশলার ব্যবহার বন্ধ করাই উপশমের প্রাথমিক শর্ত।
  • সবজি কাটা, ফুল তোলা, মালা গাঁথা ও চন্দন বাটা বন্ধ করতে হবে।
  • চুন, সিমেন্ট, সার, কাদা এড়িয়ে চলতে হবে।
  • হেয়ার ড্রেসার ও নার্সদের ক্ষেত্রে সন্দেহজনক কসমেটিক ও ওষুধ ব্যবহার একদমই করা যাবে না।
  • ব্যবহারিক অসুবিধে হলেও গ্লাভস ব্যবহার করতে হবে। বাইলেয়ার গ্লাভস অর্থাৎ ভিতরটা কাপড়ের ও বাইরে রাবার বা পি.ভি.সি, এমন গ্লাভস অন্তত ঘণ্টাখানেক পরার অভ্যেস করতে হবে। যাদের রবার বা ল্যাটেক্স অ্যালার্জি আছে তারাই শুধুমাত্র রবার গ্লাভস ব্যবহারের আওতার বাইরে থাকবে। রোগ নিরাময়ে গ্লাভসের ভূমিকা কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
  • প্রয়োজন বিশেষে হালকা গরমজলের কমপ্রেস ও চামড়ায় শুকনো ভাব এলে পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহারে উপকার পাওয়া যায়।

এসব পদক্ষেপ নেবার পরও কিন্তু হ্যান্ড একজিমার উপশম করা খুব একটা সহজসাধ্য ব্যাপার নয়। উন্নত ধরনের চিকিৎসা ও প্রতিরোধের সমস্ত ব্যবস্থা নিলে জীবনযাত্রার মান অনেকাংশে বৃদ্ধি পায়, দীর্ঘদিন সুস্থ ও রোগমুক্ত থাকা যায়।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Exit mobile version