Home ত্বকের যত্ন দীর্ঘজীবী হওয়া সম্ভব: আপনিও হতে পারেন

দীর্ঘজীবী হওয়া সম্ভব: আপনিও হতে পারেন

ঈশ্বর মানুষের পরমায়ু কম-বেশি শতবর্ষের উপযোগী করে তৈরি করেছেন। কিন্তু খুব কম সংখ্যক মানুষই দীর্ঘজীবী হন। বর্তমানে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের আশীর্বাদে অকালমৃত্যু নিশ্চয়ই অনেক কমেছে। মানুষের গড় পরমায়ু আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। কিন্তু অনেকে দীর্ঘজীবী হয়েও সক্রিয় জীবন থেকে বঞ্চিত। আধুনিক চিকিৎসায় কেউ কেউ শয্যাশায়ী থেকে কিছুদিন হয়তো নামেমাত্র বেঁচে থাকেন।

এক আন্তর্জাতিক সমীক্ষা অনুযায়ী গত চার দশকে মানুষের গড় আয়ু নাটকীয় ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এটা শুনে উল্লাস অনুভূত হওয়া বিচিত্র নয়। বেশিদিন বাঁচার ইচ্ছা তো অধিকাংশ মানুষের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রার্থনা। আরও দীর্ঘজীবী হব, আরও ভোগ করব— এটা তো অধিকাংশ মানুষের ইচ্ছা। ওই সমীক্ষাতেই বলা হয়েছে, এই বাড়তি আয়ুষ্কালে অধিকাংশ মানুষের জীবন খুব সুখে ও আনন্দে কাটছে না। অধিকাংশ বয়স্ক মানুষ শারীরিক ও মানসিক রোগে জর্জরিত হয়ে দিন কাটাচ্ছেন। অর্থাৎ কিছু মানুষ অসুস্থ অবস্থায় দীর্ঘজীবী হচ্ছে। ওষুধ ও যন্ত্রাদির অবদানে মানুষের আয়ু বেড়ে যাচ্ছে। তবে বেশি বয়স পর্যন্ত বাঁচার ফলে অধিকাংশ শরীর যন্ত্রগুলো অস্বাভাবিকভাবে কাজ করছে। তাই নানা কারণে, নিজেদের প্রবণতানুসারে কেউ উচ্চ রক্তচাপ, কেউ ডায়াবেটিস, কেউ কিডনি কিংবা যকৃত অথবা হৃৎপিন্ডের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। অনেকের পক্ষে চলাফেরাও অসম্ভব হচ্ছে। যদিও এসকল রোগ অবশ্যই যেকোনো বয়সে হতে পারে। অধিকাংশ রোগী আধুনিক চিকিৎসায় “সাময়িকভাবে সুস্থবোধ করছে।

এ প্রসঙ্গে একটা গল্প বলা প্রয়োজন বলে মনে করি : গ্যালিভার ভ্রমণ কালের এক পর্বে দেখা পেয়েছিল কিছু অমর মানুষের। তাদের দেখার আগে গ্যালিভারের মনে কৌতূহল ও উল্লাস দেখা দেয়। গ্যালিভার প্রথমে ভেবেছিল কী অকল্পনীয় সুখী মানুষেরই না দেখা পাবো। ওইসকল অমর মানুষ যুগের পর যুগ ধরে জ্ঞান, অভিজ্ঞতার রস সঞ্চয় করে অনাগত কালের প্রাচুর্য দেখার জন্য উৎসুক হয়ে জীবন বর্তিকা জ্বেলে রেখেছে। কিন্তু গ্যালিভার সেখানে গিয়ে দেখা পেয়েছিল অসম্ভব হতাশ ও বিমর্ষ কিছু অতি বৃদ্ধ মানুষের যারা অশেষ তিক্ততা নিয়ে তাকিয়ে আছে। তখন গ্যালিভার বুঝল অমরত্ব বলতে আমরা প্রথমেই ভাবি অশেষ যৌবন। কিন্তু তা নয়। অমরত্বের অর্থ হতে পারে মৃত্যুর অক্ষমতা। এই বেঁচে থাকা তো অনন্ত অভিশাপ। চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রকৃত সু-অবদান হবে কেবল জীবনকাল বাড়ানো নয়। সমগ্র আয়ূব্যাপী সুস্বাস্থ্য ভোগ করবার উপায় আবিষ্কার করা। আমরা অধিকাংশ মানুষই যৌবনটি চমৎকার ভাবে উপভোগ করে বাকি সময়টা কোনোরকমে কাটাবার মানসিকতা নিয়ে থাকি। কিন্তু না, বাঁচতে হবে বৃদ্ধদেরও যৌবনের পরাক্রম নিয়ে। যৌবনের পরাক্রম নিয়ে বয়স্কদের বাঁচতে হলে খাদ্যের ব্যাপারে তাদের জীবনের প্রথম থেকেই সাবধান হতে হবে। বাঁচার জন্যই খাওয়া। খাওয়ার জন্য বাঁচা নয়। সুষম খাদ্য পরিমিত এবং সুপাচ্য করে খেতে হবে। আমিষ খাদ্যই হোক আর নিরামিষ খাদ্যই হোক।

খাদ্য তিনপ্রকারের এবং প্রকৃতিতে তিন প্রকারের মানুষও রয়েছে। সাত্ত্বিক প্রকৃতির, রাজসিক প্রকৃতির ও তামসিক প্রকৃতির। সাত্ত্বিক প্রকৃতির মানুষদের সাত্ত্বিক আহার করলে তবেই তার পক্ষে সেটা মঙ্গল হবে। রাজসিক প্রকৃতির মানুষের রাজসিক খাদ্য খাওয়াই ভালো। আর -তামসিক প্রকৃতির মানুষের তামসিক খাদ্য খাওয়া উচিত। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় ভাত সাত্ত্বিক খাদ্য। পরমান্ন বা পায়েস রাজসিক খাদ্য। আর পান্তাভাত তামসিক খাদ্য। এ সকল উপদেশ স্বামী পরমানন্দজীর মুখনিঃসৃত বাণীর মধ্যেও পাওয়া যায়। তিনি তাঁর বাণীর মধ্যে এই তিন প্রকারের খাদ্যের ব্যাপারে বহু উদাহরণ দিয়েছেন।

যারা চেয়ারে বসে মস্তিষ্কের কাজ করে তাদের অল্প সুষম খাদ্য খাওয়া উচিত। আর যারা শ্রমিক শ্রেণীর এবং শারীরিক পরিশ্রম করে তাদের বেশি পরিমাণে সুষম খাদ্য খাওয়া দরকার।

 খাদ্য মুখরোচক করে খেলেও সহজপাচ্য হওয়া দরকার। আগে শুনতাম চল্লিশ বছর বয়স থেকে পরিমিত আহার করা উচিত। অতীতে যখন খাঁটি ও বিশুদ্ধ খাদ্য ছিল তখন বোধহয় কথাটার মানে ছিল। কিন্তু বর্তমানে সারা বিশ্বের বর্ধিত জনসংখ্যার জন্য খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে আধুনিক রাসায়নিক বস্তুর প্রচলন ঘটেছে। যার ফলে জল, মাটি, বাতাস ইত্যাদির বিশুদ্ধতা নষ্ট হচ্ছে। পরিবেশ দূষণের জন্য সকল খাদ্যশস্য, শাকসবজি, ফল  এমনকী পানীয় জলও দূষিত হয়ে পড়েছে। বর্তমান যুগে চল্লিশ বছর বয়স থেকে নয়, চার বছর বয়স থেকেই খাদ্য গ্রহণে সাবধানী হতে হবে।

happy old man

বেশি রাতে খাদ্য গ্রহণ করা উচিত নয়। তাছাড়া রাত্রের খাবার স্বল্প পরিমাণ ও সহজপাচ্য হওয়া দরকার। অনুষ্ঠান বাড়িতে যেমন বিবাহ, অন্নপ্রাশন ইত্যাদিতে যোগদান করলেও খাদ্য গ্রহণ করা স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। ভাত, রুটি, তরকারি ইত্যাদি যথেষ্ট সময় দিয়ে চিবিয়ে নরম করে খাওয়া দরকার। দাঁতের যত্ন নিয়ে সুস্থতা বজায় রাখতে হবে। কারণ দাঁতের জন্য বহু ক্ষেত্রে পেটের অসুখ ও বদহজম হয়।

আমার নিজের এক দিদি আমার চেয়ে দু’বছরের বড়। এখন তার বয়স নব্বই বছর। তার যখন দাঁতের রোগ ছিল তখন ‘প্রায়ই পেটের অসুখে ভুগত। দু’পাটি দাঁত বাঁধানোর পর পেটের যাবতীয় অসুখ সেরে যায় কোনো ওষুধ ছাড়াই। বর্তমানে ওই দিদি খুব স্বল্প আহার করে এবং সন্ধ্যায় আলু সিদ্ধ দিয়ে অল্প মুড়ি খেয়ে এবং রাত্রে অন্য কিছু না খেয়ে বেশ সুস্থ আছে।

আমার বাবা আটানব্বই বছর বেঁচেছিলেন। খুব ভোজনবিলাসী ছিলেন। শেষ বয়সেও প্রতিদিন দুটো করে ডিম খেতেন। তাঁর অতীতে যখন দাঁতের রোগ ছিল তখন তিনি প্রায়ই পেটের অসুখে ভুগতেন। দু’পাটি দাঁত বাঁধানোর পর সকল খাদ্য সহজে হজম করতে পারতেন।

আমার চিকিৎসক জীবনে খাদ্যগ্রহণ থেকে কীভাবে মানুষ অসুস্থ হয় সেটা অসংখ্য বার দেখেছি। বহু লোভী ও পেটুক রোগী মনে করে খাওয়ার জন্য বাঁচা দরকার। নিম্নমানের মুখরোচক খাবার হজম করার জন্য কেউ অ্যালোপ্যাথি আবার কেউ হোমিওপ্যাথি বা আয়ুর্বেদিক ওষুধ বাড়িতে রেখে দেয়। কোনো শিক্ষিত চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই নিজেরাই সে সকল ওষুধ খেয়ে উপশম লাভ করে । এর ফলে রোগটি দুরারোগ্য হয়ে পড়ে।

আবার অনেকে তাদের আত্মীয়, বন্ধু ও প্রতিবেশীকে অযাচিত ভাবে নানা ধরনের অম্বল বা হজমের ওষুধ খেতে বলে। দীর্ঘজীবী হওয়া ওইসকল মানুষের পক্ষে কিন্তু কোনোদিনই সম্ভব নয়।

কিছু পেটুক মানুষ কোনো অনুষ্ঠানবাড়িতে যাওয়ার আগে বাড়িতে রাখা কিছু হজমের ওষুধ খেয়ে নেয়। অনেকে ক্যাটারারদের নিম্নমানের মাছ, মাংস, বিরিয়ানি, সন্দেশ ইত্যাদি খাবার আকণ্ঠ খেয়ে থাকে। এরাই আবার পেটের অসুখে আক্রান্ত হলে কাঁচকলার ঝোল খায়। দোকান দেখলেই বাড়িতে না জানিয়ে উল্টোপাল্টা খাবার খেয়ে থাকে।

দীর্ঘজীবী হওয়ার জন্য সুখাদ্য খাওয়া বা আরও কিছু নিয়ম মেনে চলা দরকার। অনেকে কাজ থেকে বাড়ি ফিরে অধিক রাত্রে পেটপুরে বাড়ির রান্না করা খাবার খেয়েই বিছানায় ঘুমিয়ে পড়ে। সুতরাং এসকল মানুষদের পক্ষে কি দীর্ঘজীবী হওয়া কোনো দিনই সম্ভব?

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Exit mobile version