Home মানসিক স্বাস্থ্য শিশুর মন ও শিক্ষা | Mental Growth of a Child

শিশুর মন ও শিক্ষা | Mental Growth of a Child

0

শিশু নিজেকে জানতে শুরু করে খুব অল্প বয়সে, তিন বছরের শেষ সময়ে শুরু হয় সচেতনতা। – ওই সময় থেকে নজর দিতে হয় সহজ অভ্যাসগুলো আয়ত্তে আনানোর। বাচ্চা তার অধিকারের জায়গা অথবা দায়িত্বের জায়গায় খুব মনোযোগ দেয়। কিন্তু বাবা-মা যদি জায়গাটা সীমিত রাখার চেষ্টা করেন তাহলে সক্রিয় ভাবে শিশুর প্রতিরোধের ইচ্ছা প্রকাশ পেতে পারে। শিশু পালন অনেক সময় কষ্টকর হতে পারে, কিন্তু স্বাভাবিক মনোমতো বিকাশের উপলব্ধির বিবেচনায়, স্থিতিশীল লালন-পালন জয়যুক্ত হবেই। অন্যদিকে অতিরিক্ত স্নেহশীল বাবা-মা যাদের প্রশ্রয় দিয়ে ভুল বোঝান সেই সব শিশুই প্রকৃত পক্ষে বাবা-মায়ের অনুরোধের বিরোধিতা করে। পরবর্তীকালে আকাঙ্খা ও অপ্রাপ্তির দ্বন্দ্ব তীব্র রূপ পায় তার আচরণে। মর্ত ও বাক্য নিয়ে বিবাদ করে অধীর ভাবে, নিজের মত প্রতিষ্ঠা করার তীব্র বাসনায় অহংকার সুতীব্র হতে পারে। কৃত্রিম অভ্যাস তাদের আয়ত্তে আসে না দুর্মর অনিচ্ছায়। এই ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা হল অনিচ্ছা । এ কোনো রোগ নয় |

আমার কেবল খেলতে ভালো লাগে। এই বাক্যে কোনো সমস্যা নেই আপাতত। এই খেলা করতে ভালো লাগে যার, তার বয়স যখন এগারো ছাড়িয়ে বারোর ঘরে পা বাড়ায়, বাবা-মায়ের রাতের ঘুম কমতে শুরু করে। একটি বাচ্চা পড়ে না কখন? হয় সে পড়া ব্যাপারটার মূল্য বোঝে না, কেউ হয়তো তাকে অভ্যাস করায়নি, অথবা সে দারুণ আতঙ্কগ্রস্ত, মন খারাপের কার্নিশে দাঁড়িয়ে আছে। এই আতঙ্কের শিকড় শিশুবেলায় ‘পাওয়া কোনো ভয়ের ঘটনার সাথে যুক্ত থাকতে পারে। মারকুটে বাচ্চা কিছুতেই ভয় নেই, বাধ্যতার মুখোমুখি হয় না আবার কাউকে বোঝাতেও পারে না যে অক্ষরগুলো তার কাছে কোনো অর্থ বহন করে না। স্বাভাবিক বা অস্বাভাবিক অবস্থা কোনোটাই তার বোধগম্য নয় । অন্যের নির্মাণে তার ছবি গড়ে ওঠে না বলে মার খেতে থাকে। লার্নিং ডিসঅর্ডার আছে কি না কেউ ভাবে না, জন্মগত বুধ্যঙ্ক কম কি না এবং কেন হয়েছে তাও কেউ খবর রাখে না। অক্ষর চিনতে না পারা বা লেখা বুঝতে না পারা যে কী কষ্টের তা যে বাচ্চা পারে না, সেই বোঝে সব থেকে বেশি। কিন্তু এটা মনে রাখতে হবে এই ক্ষেত্রে মেন্টাল রিটারডেশন অথবা পারভেসিভ ডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার থাকে না। লেফট হেমিস্ফিয়ার, যাকে শব্দ তথা ভাষার উৎপত্তিস্থল হিসেবে ধরা হয়, তা কোনো অজানা কারণে প্রপারলি ডেভেলপ না হওয়ায় ডিসলেক্সিয়া হতে পারে, যা হতে পারে পড়াশুনো না বুঝতে পারার একটি কারণ। পরিবারে, পরিচিত পরিবেশে ‘নিকুম্ভ স্যার’ থাকলে এদেরও দিশা দেখানো যায়। মেন্টাল রিটারডেশন যদি খুব অল্প মাত্রার থাকে তাহলে প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু লেখাপড়া হয়। কিন্তু ইনফর্মেশন প্রসেসিংয়ের ব্যাপারে তারা খুব বয়সোচিত সক্ষমতা অর্জন করতে পারে না। এছাড়া জন্মের সময় সঠিক মাত্রায় অক্সিজেন “ব্রেনে না পৌঁছলে, পরবর্তীতে পড়াশুনোয় অসুবিধে হতে পারে। আর, যে বায়োলজিক্যাল সমস্যায় ইনট্যালেক্ট- -এর ডেফিসিয়েন্সি হয় তার মধ্যে কিছু হল ডাউন সিনড্রোম, টার্নার সিনড্রোম, ম্যাক্রোসেফালি, মাইক্রোসেফালি, হাইড্রোসেফালি ইত্যাদি।

আমি বাচ্চাকে কত সহায়তা করি, কিন্তু সে কথা শোনে না, পড়তেও বসে না। আমার কত ইচ্ছে বাচ্চা বড় হয়ে ডাক্তার, উকিল, পাইলট, ইঞ্জিনিয়ার, টিচার হবে, কিন্তু তারা সে পথে যায় না। এই সব কথা শুনলে বিশ্লেষণাত্মক চিন্তার উদয় হয়। কারণ জানার চেষ্টা চলে, প্রিস্কুলের সময় থেকে বাচ্চা যদি কোনো কারণে আতঙ্কগ্রস্ত হয় তবে তা এগারো, বারো বছরে আচরণে প্রকাশ পেতে পারে। কখনো কখনো এমন হয় যে পড়াশুনো ছেড়ে স্কুল যাওয়াও বন্ধ করে দিতে পারে। অনেক সময় দেখা যায় সাত-আট বছরের পর থেকে হঠাৎ বাচ্চা ভীষণ ডেফিয়ান্ট হয়ে উঠল, তার মধ্যে অসামাজিক ব্যবহারের প্রবণতা দেখা দিতে পারে। ঝগড়া করা, মারামারি করা, গালি দেওয়া ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকলে ও.ডি.ডি-র শিকার কি না দেখতে হবে। এই ব্যবহারের বাচ্চাদের অনেকেই কম বুধ্যঙ্ক বা স্নায়ুতান্ত্রিক অসুবিধেয় ভুগছে, এমনটাই দেখা যাবে। ফলে পড়াশুনোয় অনাগ্রহ থাকবেই। কখনোবা দেখা যায় স্কুল থেকে ফিরেই বাচ্চা মন খারাপ করে থাকে, অথবা পড়তে বসতেই চায় না, সেখানে অবশ্যই ভেবে দেখবেন বাচ্চা বুলিংয়ের শিকার হচ্ছে কি না। যারা বুলিং করে তারা ধারাবাহিকভাবে আগ্রাসন দেখিয়ে থাকে, অপর দিকে বুলিং ভিক্টিমদের ক্ষেত্রে ভয়টা সমস্ত মনোযোগ নষ্ট করে দিতে পারে। কখনো কখনো বাচ্চার মধ্যে অতিরিক্ত চঞ্চলতা, যেমন এই দৌড়চ্ছে, লাফাচ্ছে, এটা ভাঙছে, ওটা টানছে, “অনবরত কথা বলে যাচ্ছে, যার ফলে মনোযোগের সাথে কোনো কাজই করতে পারে না। এদেরকে অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপার অ্যাক্টিভ ডিসঅর্ডারের আওতায় আনা হয়। এদের বুধ্যঙ্ক স্বাভাবিক অবস্থা থেকে কিছু কম হয়। অপরিণত ব্যবহার এবং পড়াশুনোতে আগ্রহ ও মনোযোগ খুব কম থাকে। হাইপার অ্যাক্টিভ বাচ্চা অতিরিক্ত অস্থির, কিন্তু দুশ্চিন্তা বা উদ্বেগের মধ্যে থাকে না। বিদ্যালয় কেন্দ্রিক কাজ বা পড়ার ক্ষেত্রে তারা পিছোতে থাকে। মনোযোগ দিয়ে কথাও শোনে না কখনো কখনো, নিয়মানুবর্তিতার প্রতি অনীহা, মনোযোগের ভিন্নতর অবস্থানে পড়াশুনোর অবনতি ঘটে।

Mental Growth of a Child

উদ্বেগজনিত চাপ শিশু থেকে একটু বড় বাচ্চার ক্ষেত্রেও ভীষণ সমস্যা তৈরি করে। মা- বাবা থেকে যে বাচ্চা দূরে থাকে, অথবা অনেকক্ষণ একা থাকে, তাদের মনে অজানা ভয় জন্ম নিতে পারে। তারা এত বেশি সেনসিটিভ হয়ে পড়ে যে পড়াশুনোর প্রতি অমনোযোগ দুয়ে দুয়ে চারের মতো যোগ হয়ে যায় স্বভাবে।

শরীরের সাথে পাল্লা দিয়ে মনের বিকাশ না হলে তিমির ঘোচার আশা দেখা যায় না। শুধু সমালোচনা বা বকা, মারায় অবস্থা পরিবর্তিত হবে না। সমস্যা থাকলে চাপা দিয়ে না রেখে সামনে আনুন, পথ আছে। একবার খিদে তৈরি করে দিতে পারলে স্বাভাবিক ভাবে জ্ঞানের খিদে বেড়ে ওঠার সাথে পাল্লা দেয়। শিশু বয়সে যে ভাব, জ্ঞান ও অভ্যাস তৈরি করা যায় বড় বয়সে বক্তৃতার দ্বারা তা সম্ভব হয় না। মাতৃভাষাতে শিক্ষা গ্রহণে সক্ষম বাচ্চাকে যদি গ্ল্যামারের মোহে ইংরেজি ভাষায় নিয়ে যাওয়া হয়, অনেক সময় দেখা যায়, সমস্ত শিক্ষা লাভই শূন্যে গিয়ে ঠেকবে। বাচ্চার বুদ্ধি বিন্দুমাত্র নেই, এই অপবাদও লাগতে পারে। পড়শুনো করার জন্য এক নির্দিষ্ট পরিবেশের খুব দরকার। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সাযুজ্য থাকা প্রয়োজন। সর্বোপরি বিদ্যালয়ে শিক্ষণের গুণগত মানও উন্নত হওয়া জরুরি।

ব্যবহারকেন্দ্রিক চারিত্রিক বিন্যাসের বদল, বিশ্লেষণাত্মক পরিশীলন পদ্ধতি, বাবা-মায়ের ব্যবহারের আঙ্গিকের বদল এবং পরিবেশের পরিবর্তন অমনোযোগী শিশুদের এগিয়ে চলায় দিশা দেখাবে। কাকে কতটা সহায়তা দেওয়া যায় তা সমস্যা দেখেই ঠিক করা যায়, অন্যথায় বিড়ম্বনা বাড়ে। সকলে প্রথম হতে না পারলেও তার নিজস্ব ক্ষমতায় শক্ত হয়ে দু’পায়ে দাঁড়াতে পারবে। বলবে, আমিও পারব। অনেকেই জানেন তবু উল্লেখ না করে পারছি না সেই যুগান্তকারী হেলেন কেলারের ঘটনা। ১৮৮০ সালে জন্মেছিলেন তিনি, ছ’মাস বয়সে কথা বলতে শুরু করেন, অন্যদের মতো দেখতেও পেতেন, কিন্তু তার জন্য অন্য কিছু নির্দিষ্ট ছিল। স্কারলেট রোগ অথবা মেনিনজাইটিস রোগে তার দৃষ্টিশক্তি এবং শ্রবণ শক্তি লোপ পায়। ১৮৮৭ সালে মুক্তির দূত হয়ে আসেন অ্যান সুলিভান, কেলারের টিচার। তিনি তাকে এমনভাবে সাহায্য করেন যার ফলে তিনি দারুণ উন্নতি করেন। ষাট রকমের সংকেত তৈরি করে তার ভাব বিনিময়ের ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলেন, তারপর তো সবটাই কালজয়ী ঘটনা।

তাই সুযোগ দিন তাদের, স্নেহের হাত বাড়িয়ে দিন, যত্নের আঙুলে মুঠো করে ধরুন তাদের হাত। শুধু ইচ্ছে কিন্তু বাচ্চার ভবিষ্যত নয়, আপনার, আমার সকলের বজ্র কঠিন পণই পার করে দেবে অন্ধকারের অমানিশা। এগিয়ে যাবে আগামীর ভবিষ্যতে।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Exit mobile version